#গোধূলির_আলোয়
#পার্টঃ৭
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
–‘রাগ কমেছে আপনার?বাবা!কতো রাগ করতে পারেন আপনি৷ এখন আমার কাছে কেন এসেছিস বল তো তুই তোর রাগের কাছে থাকলেই পারতি৷ এই আদ্র কথা বলিস না কেন?’
————————-
–‘ওহহ হ্যাঁ,বুঝেছি!মিস্টার.রাগের ফ্যাক্টরির রাগ তো সহজে কমে না৷ কি করলে তোর রাগ কমবে বল তো?আচ্ছা ওয়েট কর তোর রাগ আজ গলে পানি পানি হয়ে যাবে৷’
নিনীতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
‘শরৎ এর কোল জুড়ে শিউলি মাখা গন্ধ৷’
‘শিউলির ভালোবাসায় ভালোবাসি প্রিয় তোমায়!’
–‘বাহ! নিনীতা ভালোই ছন্দ মেলাতে শিখে গেছিস দেখি৷’
পাশে থেকে আদ্রের কন্ঠ শুনে ওর চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে পিছনে ঘুরে দেখে শান্ত ওর একদম কাছে দাঁড়িয়ে আছে, আদ্র আর ফুল কিছুটা দূরে৷ নিনীতা শান্তর কাছে থাকে সরে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বলে,
–‘তুই আমার পিছনে দাঁড়ানো কেন শান্ত?এই ছেলে এই!তোর সাহস তো কম না আমাকে টাচ করেছিস৷’
–‘নিনীতা পাল্টি খাচ্ছো কেন?তুমি নিজেই তো আমাকে ডেকেছো৷ আমি তো তোমায় সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য চোখ ধরেছিলাম৷’
–‘শান্ত একদম মিথ্যা বলবি না তুই! আদ্র বিশ্বাস কর আমি ওকে তুই ভেবেছিলাম তাই কিছু বলি নি৷’ আদ্রের কাছে এসে মিনতির সুরে বলে নিনীতা৷ আদ্র ঠাস করে ওর গালে চড় লাগিয়ে বলে,
–‘সব কিছু মিথ্যা হতে পারে কিন্তু তোর আমাকে চিনতে কি করে মিথ্যা হলো নিনীতা? তোর মনে আমার জন্য কোনো ফিলিংস নেই তাই তো অন্য কারো সাথে আমায় গুলিয়ে ফেলিস৷’
–‘আদ্র শোন আমার কথা…..
–‘আজকের বিদায় অনুষ্ঠান তোর আর আমার জীবনের সম্পর্কেরও বিদায়৷ আজ এই কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর না আমি তোর মুখ দেখবো না তুই আমার৷ একটা ঘটনা মিথ্যা হতে পারে কিন্তু পরপর এইসব ঘটনা গুলো কি মিথ্যা?ফুল ঠিক বলে,তোর আমাকে পচ্ছন্দ না!আমিই পাগল তোর জন্য তোর পিছে হাত ধুয়ে পড়ে আছি৷ তোর উপর তো আমার কোনো অধিকার নেই৷ আর আধিকার যখন হবে নিজের অধিকার গুণে গুণে বুঝে নিবো৷’
–‘প্লিজ আদ্র একটা বার আমাকে সব বলতে দে৷’
–‘তোর মুখ থেকে কিছু শুনতে চাই না আমি৷ আমার সামনে থেকে সরে যা মিথ্যাবাদী৷’ আদ্রের কথার মাঝেই নিনীতা চড় মারে তাকে।
–‘একদিন তুই এইসব কথার জন্য অনেক পস্তাবি আদ্র৷ হয়তো সেদিন আমি তোর কাছে থেকেও থাকবো না৷ আর যারা তোকে ভুল বুঝিয়েছে তাদের প্রত্যেককে আমি ক্ষমা করে দিলাম৷ কারণ তোর তো আমার প্রতি বিশ্বাস ঠুনকো৷ সেইটা যে কেও টোকা দিলেই ভেংগে যায়৷ আমি অপেক্ষায় থাকবো কিন্তু ছেড়ে যাবো না৷ সবটা বিশ্বাস করেই একদিন তুই ফিরে আসবি আর সেইদিন আমি তোকে মেনে নিবো কারণ আমি তোকে ভালোবাসি বুঝেছিস তুই আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি৷’
আদ্র গালে হাত দিয়ে রেগে সবাইকে রেখেই চলে যায়৷ নিনীতা চোখ মুছে দৌড়ে বেরিয়ে যায়৷
সেই থেকে পুরো তিনমাস আদ্রের ছায়া পর্যন্ত চোখে দেখে নি নিনীতা৷ অনেক বার ওর বাড়ির সামনে, খেলার মাঠে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছে কিন্তু আদ্রের দেখা পায় নি৷ দূর থেকে আদ্রকে দেখলে ছুটে গিয়েছে ওর কাছে কিন্তু আদ্র তো আদ্রই সে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে গেছে তার নুনতা কে৷ নিনীতা পড়ার চাপে নিজেকে ব্যাস্ত রাখলেও আদ্রকে ভুলতে পারতো না৷ বোর্ড এক্সামের আগে আদ্রের মা আর নিনীতার মা এক সাথেই গাড়ী ভাড়া করে ওদের যাওয়ার জন্য৷ নিনীতা তো মহা খুশী৷ গাড়ির সামনে যাওয়ার পর ফুলের সাথে আদ্রকে বসে থাকতে দেখে কষ্টে তার চোখে পানি চলে আসে৷ আদ্রের চেহারা কেমন যেন হয়েগেছে৷ পুরো অচেনা আদ্র৷ তিনমাসে অনেক পরিবর্তন হয়েছে তার৷ নিনীতাকে গাড়ি পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্তিতে মুখ কুচকে ফেলে আদ্র৷ নিনীতা আদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর মা কে বলে,
–‘আম্মু,অন্য গাড়ি ঠিক করলেই পারতে৷ আমার ফ্রেন্ডরা কতো জোর করেছিলো আমায় শুধু তোমার জন্য ওদের সাথে যেতে পারলাম না । গেলে দরকারি জিনিস গুলোও পড়তে পারতাম৷’
–‘এই গাড়িতে কি সমস্যা তোর?আগের এক্সাম গুলো তো এইভাবেই দিয়েছিস তোরা৷ বেশি কথা না বলে গাড়িতে উঠে বস৷’
নিনীতাকে উঠে বসতে দেখে আদ্র সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে৷ প্রচন্ড অপমান লাগে নিনীতার৷ ফুল ওর সাথে কথা বলতে চাইলে এড়িয়ে যায় নিনীতা৷ বইয়ের ভাজে মুখ গুজে থাকে৷ সত্যিই আজ সে কতোটা তিক্ত হয়ে গেছে তার আদ্রের কাছে৷ যে ছেলে তার পাশে বসার জন্য হুড়োহুড়ি করতো আজ তাকে দেখে উঠেই চলে গেলো৷ গোপন একটা দীর্ঘশ্বাস নিনীতার বুক চিরে বেরিয়ে আসলো৷ হলে ঢোকার পর নিনীতা কেদে উঠে। আশেপাশের সবাই তাকে শান্তনা দিয়েছে যাতে ভয় না পায়৷ তার কান্নার কারণ টা তো এক্সামের হল না সেটা তো বাইরের ওই ছেলেটার জন্য৷ ফুলের সাথে কথা বলা,প্রশ্ন মিলানো,দুষ্টুমি করা বড্ড কষ্ট দিতো নিনীতাকে৷ এর জন্য তার পড়ায় মন বসতো না৷ পরের এক্সাম গুলো যাওয়ার সময় আদ্রের সাথে গেলেও আসার সময় তার ফ্রেন্ড লতা’র সাথে আসতো৷ আদ্রের রাগটা আরো বেড়ে যায় কারণ সেই গাড়িতে শান্তও যেত৷ ছোট ছোট অনেক কারণে অভিমানের পাহাড় জমা হয়েছিলো৷ আর সেই অভিমানে বিচ্ছেদে রুপ নিলো রেজাল্ট দেওয়ার পর৷ রেজাল্টের পরপরই আদ্র কোথায় যে চলে গেলো আর দেখা পায় নি নিনীতা৷ আদ্রের মা-বাবাও ঢাকায় চলে যায়৷ রায়হানের কাছে শুনেছিলো আদ্র নাকি কাকা-কাকি’কে জোর করে প্যারিসে তার মামার কাছে চলে যায়৷ অজুহাত ছিলো পড়ালেখার কিন্তু নিনীতা জানে শুধুমাত্র তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এতো দূর চলে গেছে৷ কতোবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু আদ্র নিজেই যোগাযোগ করে নি৷ একে একে প্রত্যেকটা দিন চলে গেছে সাত সাতটা বছর পর নিনীতার কাছে ফিরে এসেছে আদ্র৷ আজ নিনীতার একটা কথা বড্ড মনে পড়ছে আদ্রের,
–‘আমি তোর কাছে থাকবো কিন্তু থেকেও থাকবো না৷’
লেকের নীল পানির মধ্যে সূর্যের শেষ আলোটা পড়তেই উঠে দাঁড়ায় সে৷ সবটা আজ তার কাছে পরিষ্কার!সেদিন যদি একটু বুঝার চেষ্টা করতো তবে আজ এইদিন গুলো দেখতে হতো না৷ হসপিটালে পৌছে বড় একটা সারপ্রাইজ পায় সে৷ নিনীতার জ্ঞ্যান ফিড়েছে৷ আর বারবার শুধু তার খোজ করছে সে৷আদ্র খুশিতে কি করবে ভেবে পায় না৷ একছুটে আইসিউতে চলে যায়৷ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নিনীতার চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে পাশ ফিরে৷ আদ্র ধীর পায়ে তার নুনতার দিকে এগিয়ে যায়৷ পাশে অনেকটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে৷ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
–‘নু…..নুনতা!’
নিনীতা চোখ খুলে তাকিয়ে আদ্রকে দেখে মলিন হাসে। হাত উঠিয়ে ওর হাত ধরতে গিয়েও পারে না ।আদ্র নিজেই হাত বাড়িয়ে নিনীতার হাত শক্ত করে ধরে। আদ্রের চোখে পানির আভাস দেখে নিনীতা আস্তে আস্তে বলে,
–আমি মরে যাই নি,তোর কাছেই আছি।’
আদ্র ঢুকরে কেদে উঠে বলে,
–‘আমি ভুল ছিলাম নুনতা বড্ড ভুল ছিলাম। ভুল গুলো ঠিক করার সু্যোগ চাই আমি।’
–‘জানি না তোর ভুল গুলো ঠিক করার সুযোগ পাবি কিনা। তবে আমার বড্ড কষ্ট হয় তোকে সামনে দেখলে।’
–‘তোর কষ্ট গুলো আমি ভাগ করে নিবো নুনতা।’
নিনীতা চুপ করে থাকে। তার মাথা বড্ড ব্যাথা করছে। ঝাপসা হয়ে আসছে চোখ। ঝাপসা চোখে আদ্রকে বিরবির করে বলে…..
চলবে…