গুমোট অনুভুতি পর্ব-৪৯+৫০+৫১

0
2245

গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_ ৪৯

সবকিছু জানার পর সবাই যেনো স্তব্ধ হয়ে আছে! কতোগুলো সত্যের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের, সবাই নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে, সায়ান মাথা নিচু করে বসে আছে। ঠিক এমন সময় কেউ একজন দৌঁড়ে সেখানে আসলো আর চন্দ্রিকাকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, সায়ান দেখেই বুঝতে পারলো এটা শাহেদ। ও তাকিয়ে দেখলো শাহেদের হাত থেকে রক্ত পড়ছে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত,এরমানে চন্দ্রিকার গায়ে লেগে থাকা রক্ত শাহেদের! সায়ান প্রশ্ন করে উঠলো

“এই অবস্থা কেনো তোমাদের?এতো আহত কি করে হলে তুমি?”

চন্দ্রিকা মুখ খুলে বললো

“শাহেদ এই এন্টিডোরের কথা প্রথম শুনে, তারপর আমাকে বলে এই ব্যাপারে। আমি বুঝতে পারি যেহেতু এই এক্সপেরিমেন্টাল ড্রাগ আর এন্টিডোর সামাদ খানের কাছে এরমানে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করবে। আমার দ্বারা তোমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে তাই আর ক্ষতি করতে চাইনা আর না চাই অন্যকেউ করুক। তাই ওকে বলি এন্টিডোর কোন ভাবে নিয়ে আসতে আর ও তাই করে কিন্তু শেষমুহুর্তে ধরা পড়ে যায়। আমি তখন সেই বাড়ির সামনেই ছিলাম, তাই দুজনে মিলে পালিয়ে আসি। তারপর আমরা লুকিয়ে পড়ি, যেখানে লুকিয়ে ছিলাম তা মেইন রোড থেকে অনেক দূরে ছিলো। তাই তাদের ডিস্ট্রেক্ট করার জন্য ও তাদের সামনে যায় আর আমি এন্টিডোর নিয়ে চলে আসি।সেখানেই ও এইভাবে ইঞ্জুরড হয়”

সায়ান ওদের দিকে তাকিয়ে বুঝলো ওরা মিথ্যে বলছে না, সত্যি বলতে সায়ান এই মুহুর্তে ওদের প্রতি কৃতজ্ঞ!কিন্তু সামাদ খানের সাথে শাহেদের সম্পর্ক বুঝতে পারছে না, ও বলেই ফেললো

“সামাদ খান কি হয় তোমার? তুমি তার বাড়িতে ছিলে কেনো? ”

“আমার বাবা হয় তাই ছেলে হিসেবে তার বাড়িতে থাকা অস্বাভাবিক নয়!”

তারপর চন্দ্রিকার দিকে তাকিয়ে বললো

“আর ইউ ওকে?কোথাও লাগে নি তো?”

চন্দ্রিকা মাথা নাড়িয়ে না বললো,ও শাহেদকে নিয়ে হাটা ধরলে সায়ান পেছন থেকে বললো

“সামাদ খান তো চন্দ্রিকার বাবা তাহলে তোমার বাবা কি করে?”

“চন্দ্রির বায়োলজিক্যাল ফাদার আর আমার নামমাত্র! তার তখনি আমার কথা মনে পড়ে যখন দরকার হয়, বলতে পারো আমি তার পোষা কুকুর। ছোট থেকে পেলে বড় করেছে বলে বহুদিন তার খারাপ কাজে জড়িত ছিলাম কিন্তু আপাদত নেই। সে হয়তো জানেই না আমি বেঁচে আছি তা! এনিওয়ে সে তোমাকে মারার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে, সে নিজের স্ত্রী মানে চন্দ্রির সৎমাকে মেরেই ফেলেছিলো প্রায় একদিন। অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন তিনি, সাবধানে থেকো তার থেকে”

” তুমি তার মানে তার বায়োলজিক্যাল সন্তান নও, ওয়েট…তোমার নাম শাহেদ! তুমি…”

সায়ান দ্রুত এগিয়ে গিয়ে শাহেদের কলার চেপে ধরলো আর সেটা সরিয়ে দেখতে লাগলো। হ্যা একটা চেইন আছে কিন্তু রুপোর! ও সেটা টেনে বের করে আনলো আর প্লাটিনামের লকেট দেখতে পেলো যাতে লিখা “শাহেদ জামান”।সায়ান দুইকদম পিছিয়ে গেলো আর কাঁপা স্বরে বললো

“ত্ তুমি…তুমি শাহেদ জামান! শাহিন আঙ্কেলের ছেলে!আমার খালাতো ভাই!”

“হোয়াট ননসেন্স!তোমার আমার মাঝে একটাই সম্পর্ক ছিলো তা হলো শত্রুতার যদিও এখন তোমাকে আমি আর শত্রু ভাবিনা।সেদিন রুশির সাথে ইচ্ছে করেই ওমনটা করেছি যাতে বুঝতে পারো নিজের ভালোবাসাকে অন্যের কাছে দেখলে কেমন লাগে! আর আমি শাহেদ জামান নই, শাহেদ নওয়াজ। এটা জাস্ট আমার সাথে ছোট বেলা থেকে ছিলো তাই খুলিনি।”

“আম নট লায়িং, তুমি আমার খালাত ভাই সম্পর্কে আর রুশির ভাই!তোমার বয়স বিশ বছর তাইনা?”

“তুমি কি করে জানলে?”

“কারণ রুশির বয়সও বিশ বছর এন্ড ইউ গাইজ আর টুইন। এই ওদের দেখতে পাচ্ছো! তারা তোমার বাবা মা সাথে রুশিরও। তোমাদের জন্মের পর সামাদ খান তোমাদের নিয়ে যায়, তোমাকে স্বার্থের জন্য রেখে দেয় কিন্তু রুশিকে মেরে ফেলতে বলে কিন্তু ও ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। তোমাদের বাবা মা অনেক খুঁজেছে দুজনকে, এই জন্যই তুমি আর রুশি অনেকটা একই রকম দেখতে! আমি সেদিন এটা বুঝতে পারলেও চোখের ভুল ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম”

সায়ান শাহেদেকে একে একে সব বললো। শাহেদ এই সবকিছু বিশ্বাস করতে পারছেনা, কিন্তু সায়ানের এভাবে বানিয়ে বলারও কোন কারণ নেই। এরমানে সামনের এই দুজন ওর বাবা মা আর ওই রুশি নামক মেয়েটি ওর আপন বোন?শাহেদের ভাবনার মাঝেই কেউ একজন ওর গালে হাত দিলো, অশ্রু সিক্ত নয়নে প্রিয়ানা তাকিয়ে আছে তার ছেলের দিকে,দুটো ছেলে মেয়েকে বিশ বছর পর খুঁজে পেয়েছে কিন্তু এভাবে? একজন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আর আরেকজন আহত!উনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো

“তুই আসলেই আমার ছেলে? আমার শাহেদ?”

সায়ান মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলতে বললো, শাহেদও তাই করলো! এই নারী ওর মা?আর উনি ওর বাবা। ওরও বাবা-মা আছে!সত্যিকারের বাবা-মা!ও হুট করে জড়িয়ে ধরলো তাকে,ও কোন অনাথ নয় আর না কারো দয়া বেঁচে থাকবে আর। ওর বাবা-মা আছে এখন!ওর নিজের বাবা-মা!

প্রিয়ানা পরম যত্নে শাহেদের বেন্ডেজ করতে লাগলো, আর শাহেদ চুপচাপ বসে রইলো। সবাই যেনো অনেকগুলো সত্য গ্রহন করার চেষ্টা মশগুল!

________________________

প্রায় তিনঘণ্টা পর অপারেশন থিয়েটরের দরজা খুললো, এতোক্ষন রুশির চিৎকার আর কান্না সায়ান নিতে পারছিলো না। মা হওয়া বড্ড কষ্টের তেমন প্রাপ্তিরও।রুশি হয়তো সব ভুলে যাবে একসময় যখন নিজের বাচ্চাকে প্রথম কোলে নিবে! সায়ান দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই নার্স একটা বাচ্চাকে নিয়ে বের হলো আর মুচকি হেসে বললো

“কনগ্রাজুলেশন মিস্টার খান! আপনার ঘরে জান্নাত এসেছে। আপনি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন!”

সায়ান স্থির দৃষ্টিতে তাকালো ওর সন্তানের দিকে,ও বাবা হয়ে গেছে!আজ থেকে কেউ আধো আধো শব্দে ওকে বাবাই বলবে,ওর হাত ধরে হাটবে ওর সাথে খেলবে! নার্স ওর কোলে বাচ্চা দিতে গেলে ও নিতে যেয়েও নিলো না,ওর ভয় করছে, এতো ছোট আর নরম শরীর। সায়ান না নেওয়াতে সামু জলদি করে নিয়ে নিলো। অদ্ভুত ভাবে বাচ্চাটি শান্ত ভাবে চেয়ে আছে সায়ানের দিকে, কি মায়া এই মুখখানিতে!রুশি হয়তো ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে নাহয় এই ছোট্ট প্রাণ পৃথিবীর মুখ দেখতো না, সায়ান নিজের সুখের কথা ভেবে নিজের সন্তানকেই হয়তো হারাতো। ও বাচ্চাটির কপালে চুমো খেয়ে বললো

“আম স্যরি!তোমার বাবাইটা বড্ড পচা মা”

তারপর ডক্টর বেরুতেই সায়ান তার কাছে চুটে গেলো,ওর বুক কাঁপছে!কি বলবে ডাক্তার?ও কাঁপা গলায় বলে উঠলো

“মিস্টার খান আপনার ওয়াইফের অবস্থা ভালো না,আমরা যতোটা না ভেবেছি সিচুয়েশন তার থেকেও ক্রিটিকাল! যে এন্টিডোর এনেছে তাতে আমরা ব্লিডিং বন্ধ করতে পেরেছে কিন্তু এতে কিছু সাইড ইফেক্ট ছিলো! আমরা বাহাত্তর ঘন্টার আগে কিছু বলতে পারছি না, আপাদত উনি ঠিক আছেন কিন্তু কতক্ষন ঠিক থাকবেন তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারছিনা। অনেকগুলো সম্ভাবনা হতে পারে,এন্টিডোর স্পেশিয়ালি ব্রেইনে ইফেক্ট করেছে তাই সে কোমায় চলে যেতে পারে, বা তার সকল স্মৃতি মুছে যেতে পারে কিংবা আংশিক!আর যদি ব্রেইন এই চাপ সহ্য করতে না পারে তবে…”

সায়ান রেগে ডাক্তারের কলার চেপে ধরলো

“কি বলতে চাইছেন আপনি?আমার রুশির কিছু এই হসপিটালের সবকিছু জালিয়ে দিবো আমি। আই ওয়ান্ট হার সেফ এট এনি কস্ট!আপনার যা দরকার আমি তা দিবো জাস্ট কিউর হার প্লিজ”

“কিছু কিছু জিনিস ডাক্তারদের হাতে থাকে না,আগেই বলেছি ড্রাগটা এনিমেল ড্রাগ ছিলো তাই তার সন্তানকে বাঁচাতে আমরা এনিমেল এন্টিডোর ইউজ করেছে এবং পরে আপনাদের আনা এন্টিডোর যার সাইড ইফেক্ট রয়েছে।আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, বাকিটা আল্লাহর হাতে!”

সায়ান দৌঁড়ে ঢুকে গেলো কেবিনে আর রুশির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও অজ্ঞান অবস্থায় আছে। ও সেখানে গিয়ে নিচে বসে রুশির হাত চেপে ধরে বললো

“প্লিজ কাম ব্যাক!আমি শ্বাস নিতে পারছিনা তোমাকে ছাড়া,প্লিজ এভাবে মেরো না আমায়। আমি পারবো না তোমায় ছাড়া থাকতে!”

#চলবে

গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৫০

সায়ান রুশির হাত ধরে বিড়বিড় করতে লাগলো, বারবার রুশিকে ওকে ছেড়ে না যাওয়ার অনুরোধ করতে লাগলো!হঠাৎ করে সায়ান নিজের হাতে শক্ত কিছু অনুভব করলো, ওর হাতের বন্ধনী শক্ত হয়ে উঠেছে। ও দ্রুত অশ্রুসিক্ত চোখে সেদিকে তাকালো, রুশির হাত ওর হাতকে খুব শক্ত করে ধরে আছে!ও রুশির মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো রুশি ওর দিকে তাকিয়ে আছে, ও উঠে দ্রুত রুশিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো আর বলতে লাগলো

“আমি জানতাম তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না, তুমি ফিরে আসবে আমি জানতাম!আমি কখনো তোমাকে চোখের আড়াল করতে চাইনা,তুমি আমাকে ফেলে চলে যাওয়ার চিন্তাও করবে না আর। মনে রেখো আজকের এই অনুরোধই শেষ ছিলো তোমার।এরপর আর আমি কিছুই শুনবো না!”

সায়ানের কথা রুশির কানে গিয়েছি কিনা সায়ান বুঝতে পারলো না, রুশি ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে, হাতের বন্ধন ধীরেধীরে শক্ত করছে। এর মানে রুশি কিছুতে ভয় পাচ্ছে, সায়ান রুশির মাথায় হাত রেখে ওকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলো, রুশি দুর্বল কন্ঠে বললো

“ডাক্তারের কথা আমি শুনেছি সায়ান! আমি যদি কোমায় না যাই তবে সবচেয়ে বেশি চান্স আমি তোমাকে ভুলে যাবো! আমি তোমাকে ভুলতে চাইনা,আমাদের কাটানো প্রতিটি মুহুর্ত আমার কাছে স্পেশাল! আমি সেই মুহুর্তগুলো ভুলতে চাইনা,আমি তোমাকে ভুলে গিয়ে কি করে থাকবো?আমি তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো, তুমি কিছু করোনা সায়ান! কিছু একটা করো, তুমিতো সব ঠিক করে দাও। এটাও ঠিক করে দাওনা প্লিজ!আমি তোমাকে ভুলতে চাইনা!এর চেয়ে তো আমার মরে যাওয়াই ভালো ছিলো!”

“সব ঠিক হয়ে যাবে রুশি!প্লিজ রিলাক্স,তুমি শান্ত হও। আমি ডাক্তার ডাকছি, সব ঠিক হয়ে যাবে”

সায়ানের কথায় রুশি হাতের বন্ধন আরো শক্ত করে ফেললো যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। সায়ানও জড়িয়ে ধরে রাখছে। দুজনেই কাঁদছে,রুশি সায়ানকে ভুলে যাবে এটা সায়ান নিজেও মানতে পারবে না। অনেক কষ্ট রুশিকে নিজের করে পেয়েছে, ওর সাথে সময় কাটানোর পুর্বেই ওদের সকল স্মৃতিগুলো রুশি ভুলে যাবে, এটা মানবে কি করে ও। রুশি ওকে ভুলে যাবে!রুশির কাছে ও একদম অপরিচিত হয়ে যাবে?সায়ান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রুশিকে কিন্তু রুশির বন্ধন ধীরেধীরে আলগা হয়ে গেলো। সায়ান বুঝতে পেরে আলতো করে ডাকলো

“রুশি! রুশি!প্লিজ কথা বলো আমার সাথে।আমার খুব ভয় করছে প্লিজ”

কিন্তু রুশির পক্ষ থেকে কোন সাড়াশব্দ এলো, সায়ান রুশিকে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে তাকালো।রুশি চোখ বন্ধ করে আছে, সায়ান কয়েকবার ডেকেও যখন কোন সাড়া পেলো না তখন ডাক্তার ডাকতে শুরু করলো। মুহুর্তেই কেবিনে সবাই এলো সাথে ডাক্তারও!
ইনান সায়ানকে কোন মত সরালো সেখান থেকে কিন্তু সামলাতে পারছে না ওকে। সায়ান পাগলামো শুরু করে দিয়েছে, বিড়বিড় করে বলছে

“ও ক্ কথা বলছে না, ওকে উঠতে বল না প্লিজ!আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ওকে ছাড়া।কিছু তো কর প্লিজ!”

ইনান বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না,কিভাবে শান্তনা দেবে তার ভাষা নেই। মনের কোথাও একটা এখনো আছে রুশি তাই ওর হৃদয়ও পুড়ছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। কি অধিকারে রুশির জন্য কিছু বলবে?সায়ানের মতো হয়তো না তবে খারাপ তো ওরও লাগছে,চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ‘রুশি প্লিজ উঠো, তুমি এভাবে ছেড়ে যেও না। অন্তত তোমায় ছাড়া আমাদের এই পাগলটা বাঁচবে না’
কিন্তু ওইযে অধিকার! সেটাই তো নেই, বলবে কি করে?সায়ানকে শক্ত করে ধরে বাইরে নিয়ে এসেছে ইনান,ওকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সায়ান ছুটে গিয়ে ওটির দরজায় লাথি মারা শুরু করলো,আর চিল্লাতে থাকতো। একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো, সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। প্রিয়ানা মাঝেমাঝে কেঁদে উঠছে, শাহেদ মাথা নিচু করে বসে আছে।সামু ছোট বাচ্চাটিকে নিয়ে বাইরে আছে হসপিটালের পরিবেশ পুরো থমথমে!

প্রায় আধঘণ্টা পর ডাক্তার বের হলো,সায়ান দুর্বল শরীরে উঠে দাঁড়ালো আর ডাক্তারের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, ডাক্তার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো

“পেইশেন্ট এখন আউট অফ ডেঞ্জার!তার ফিজিক্যাল কোন ইঞ্জুরি নেই আর মৃত্যুর ঝুঁকিও নেই।”

ডাক্তারের কথা সায়ান যেনো প্রান ফিরে পেলো সবাই, যাক রুশির আর কোন ঝুঁকি নেই। শি ইজ ফাইন।কিন্তু বলে না খুব তাড়াতাড়ি খুশি হয়ে গেলে খুশিটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।ডাক্তারের পরের কথা শুনে সায়ান স্তব্ধ হয়ে গেলো

“কিন্তু ওনার মাথায় খুব বেশি চাপ পড়েছে,আমি এইটারই ভয় পাচ্ছিলাম আর তাই হলো। পেইশেন্টকে এইসময় স্ট্রেসফ্রি রাখতে হয় কিন্তু উনি প্রচণ্ড স্ট্রেসে ছিলো তাই সেটার ইফেক্ট মাথায় পড়েছে। আমি আপাদত কিছু বলতে পারছিনা তবে উনি কিছুদিন বেজিটেবল অবস্থায় থাকবেন। তবে যখন নিজের হুশে ফিরে আসবেন তখন সবেচেয়ে বড় সম্ভাবনা হচ্ছে এমনিজায় ইফেক্ট হওয়ার। হয়তো উনি উনার স্মৃতির কিছু অংশ হারিয়ে ফেলবে কিংবা পুরোটা!মনে রাখবেন তাকে কিছুতেই স্ট্রেস দেয়া যাবে না কিংবা আগের কিছু মনে করানোর ট্রাই করানো যাবে না।এতে পেইশেন্টের অনেক ক্ষতি হতে পারে এমনকি মস্তিষ্কের কার্যক্রম বন্ধও হয়ে যেতে পারে মানে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না”

সায়ান নিচে বসে পড়লো, ওর সাথে কেনো এমন হয়?এই পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে কেনো ওর আর রুশির সাথে এমন হতে হবে?কেনো ওরা এতো চেষ্টা করেও সুখে থাকতে পারলো না?হোয়াই?
সায়ানের পাশে এসে সামু দাঁড়ালো তারপর ওকে বললো

“ভাই তুই এভাবে ভেঙে পড়লে কি চলবে?তুই এখন একা নস,তোমার একটা মেয়ে আছে!তুই এমন হলে ওকে কে সামলাবে?আর রুশি একদম ঠিক আছে, সব ঠিক হয়ে যাবে!তোর বাচ্চাকে একটু কোলে নে, ও কাঁদছে ভাই!”

সায়ান বাচ্চার কান্নার শব্দে উঠে দাঁড়ায় আর আলতো করে ওকে কোলে নেয়!তারপর কান্না থামানোর জন্য হাটতে থাকে,এটা ওটা বলতে শুরু করে কান্না থামানোর জন্য। আর বাচ্চাটি খুব দ্রুত থেমেও যায়!সবাই অবাক হয়ে সায়ানকে দেখছে, এতো তাড়াতাড়ি পরিবর্তন! সায়ান সবার দিকে তাকিয়ে বললো

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? বাবা হিসেবে আমার মেয়েকে তো আমাকেই সামলাতে হবে তাইনা?আমার রুশি বেঁচে আছে!এটাই যথেষ্ট আমার জন্য!তাই সবাই এভাবে মুখ ফুলিয়ে থাকবে না বলে দিলাম”

সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, সায়ান নিজে থেকে বুঝে গেছে মানে ভালো হয়েছে। যাইহোক না কেনো সায়ানের স্বাভাবিক থাকা জরুরী,তাহলে রুশিও হয়তো একদিন ঠিক হয়ে যাবে। আশা করা ছাড়া এখন আর কোন উপায় নেই,আশায় আশায় আজীবন কাটানো যায় কিন্তু আশা ছাড়া বাঁচা যায়না। সায়ানের জন্য হয়তো এটাই যথেষ্ট যে রুশি নিঃশ্বাস নিচ্ছে, বেঁচে আছে!আর সায়ান এই আশায় বেঁচে আছে রুশি একদিন উঠবে, কথা বলবে, হাসবে আর সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে!

#চলবে

গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৫১

হসপিটালের ছোট্ট কেবিনে ছোট্ট একটা পরিবারের বসবাস, বাবা-মা আর সাথে থাকে ছোট্ট রাজকন্যা! হসপিটালের কেবিনে প্রয়োজনীয় সকল কিছু রয়েছে, মোটকথা একটা পরিবার থাকতে যা যা প্রয়োজন। ছোট্ট মেয়েটি বর্তমানে কান্না করছে আর তার বাবা কিছুতেই তাকে চুপ করাতে পারছে না। অন্যদিন কান্না না থাকলে মায়ের কাছে নিলেই থেমে যায় কিন্তু আজ কিছুতেই যেনো কিছু হচ্ছে না! অনেকক্ষণ চেষ্টার পর বাবাটি বুঝতে পারলো বাচ্চার ডায়পার্ড চেঞ্জ করতে হবে, আর এইজন্যই বাচ্চাটি কান্না করছে! বাবা অসহায় চোখে বাচ্চার দিকে তাকালো! এই ডায়পার্ড চেঞ্জ করা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাগজগুলোর একটি, ডায়পার্ড যদিও খুলে ফেলা যায় তবে নতুন করে পরাতে কি মেয়ের সাথে একদফা যুদ্ধ হয়ে যায় বাবার। আজোও তার ব্যাতিক্রম কিছু নয়,বাবা এই পরিস্থিতিতে পড়লেই তার স্ত্রীর দিকে তাকায় আর ভাবে নিশ্চই সে তাকে এই অবস্থায় দেখে বেশ মজা পাচ্ছে!তাইতো আজ আড়াই মাস ধরে এই কাহিনী দেখেও তার দয়া হচ্ছে না আর উঠছেও না সে।

সায়ান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে নিজের মেয়েকে শান্ত করতে লাগলো,মেয়েটির নাম এখনো ঠিক করা হয়নি কিন্তু সায়ান আদর করে পাখি বলে ডাকে,ওর পরীর পাখি!সায়ান উপর দিয়ে বেশ শক্ত, নিজের মেয়েকে একাই বড় করছে। কোম্পানিও সামলাচ্ছে যদিও সাহিলের সহযোগীতায় এটা সম্ভব হচ্ছে, সাহিলের মতো বিশ্বস্ত লোক এযুগে পাওয়া যায় না! আর সবচেয়ে বড় কথা নিজেকে সামলাচ্ছে ও, নিজের সাথে প্রতিনিয়ত কিভাবে লড়ছে তা নিজেই জানে! প্রতিমুহুর্তে মনে করে নিজেকে এটা মনে করিয়ে দেয় যে ‘সায়ান ইউ আর অলরাইট!’
কিন্তু আসলেই কি ও ঠিক আছে?প্রতিনিয়ত ওর হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা কি করে দেখাবে সবাইকে?পাখি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ওকে আলতো করে দোলনায় শুইয়ে দিলো তারপর রুশির সামনে এসে বসলো।

আজ প্রায় আড়াইমাস ধরে রুশির এভাবে শুয়ে আছে, কোন সাড়াশব্দ নেই!চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে থাকার পরও সায়ানের ওকে ভালো লাগছে। ডাক্তার বলেছে যদিও রুশি ভেজিটেবল অবস্থায় আছে কিন্তু ও সবকিছু শুনতে পায় কারণ ওর বাঁচার তীব্র ইচ্ছে আছে! আর রুশি খুব দ্রুত রিকোভার করছে তারমানে রুশির জ্ঞান খুব দ্রুত ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে আর রুশির মৃত্যুর কোন আশংকা নেই। তবে স্মৃতি ফিরবে কিনা তার কোন গেরান্টি দিতে পারছে না, না ফেরার সম্ভাবনা বেশি!সায়ানের কাছে রুশির শ্বাস চলছে এতোটুকু খবরই অনেক,রুশি যদি ওকে ভুলে যায় তবে ও খুব কষ্ট পাবে ঠিক আছে কিন্তু ও রুশিকে আবার ভালোবাসতে বাধ্য করবে, এই দুনিয়ায় রুশি শুধুমাত্র তার। সেটা রুশি চাইলেও, না চাইলেও!

সায়ান রুশির হাতের পিঠে আলতো করে চুমু খেলো তারপর বললো

“আমি তোমার জন্য ওয়েট করছি মিসেস খান!আর কতো চুপ করে থাকবে?এবার তো উঠো! আমি পুরো দুনিয়ার কাছে শক্তিশালী হলেও আমি ভেতরে ভেতরে কত দুর্বল হয়ে পড়ছি তা শুধু আমি জানি। এই আমিকে সামলানোর জন্য তুমি নামক নারীর বড্ড প্রয়োজন!তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি উঠো, আমি আর আমাদের মেয়ে তোমার কন্ঠ শোনার জন্য অধীর আগ্রহে আছি। আমাদের বেবির জন্য হলেও প্লিজ কাম ব্যাক!”

সায়ান ওই অবস্থায় হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়লো, প্রতিদিন এভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে ও। আর সকালে ঘাড়ের ব্যাথায় কাবু হয়ে যায় কিন্তু তবুও পরম এক শান্তি পায়। রুশি আজ আড়াই মাস ধরে হাসপাতালে আছে বলে এই স্থানই এখন ওর বাড়ি হয়ে গেছে!রুশির কাছে অন্যরা এসে থাকতে চাইলেও সায়ান সম্পুর্ণ না করে দিয়েছে, কড়া কন্ঠে বলেছে ওর বউয়ের জন্য ও একাই যথেষ্ট। মাঝেমাঝে পাখির স্বাস্থ্যের জন্য বাইরের পার্ক থেকে ঘুরে আসে, প্রতি উইক্যান্ডে সায়ানের পরিবার ওদের সাথে এসে দেখা করে যায় তারপর চলে যায়।

মেয়েকে খুব সুন্দর করে ড্রেস পরিয়ে খাইয়ে বেরিয়ে পড়লো সায়ান,মেয়েটি বড্ড শান্তশিষ্ট ওর। প্রয়োজন ছাড়া কান্না করেনা, আবার রাতও জাগেনা। হয়তো বুঝে বাবার কষ্ট তাই তাকে জালাতন করে না!পার্কে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরির পর যখন ফিরছিলো তখন ওর ফোনে ফোন আসে, তুলে দেখে সামু কল করেছে!ও তুলে বললো

“কিরে সামু কি অবস্থা…”

সামু ওর কথা শুনেছে কিনা তা বুঝলো না কিন্তু সে তাড়াহুড়া করে বললো

“ভাই তুই কই?দ্রুত কেবিনে আয়, ভাবির জ্ঞান ফিরেছে!”

সায়ান হুট করে বসে পড়লো মেয়েকে নিয়ে, আজ আড়াইমাস পর রুশির জ্ঞান ফিরেছে। খুশিতে ওর চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো। ও দ্রুত দৌঁড়ে আসতে চাইলেও মেয়ের কারণে সাবধানে পা ফেলে আসলো, কেবিনের সামনে আসতে সবার হতাশ চাহনি দেখতে পেলো, ও জিজ্ঞেস করলো

“কি হয়েছে?সবাই এভাবে উদাস হয়ে আছো কেনো?”

“ভাই!ভাবি আমাদের কাউকে চিনতে পারছে না, শুধু তার পালক বাবাকে ছাড়া। উনি এখন ভেতরে তার সাথে কথা বলছে!ও হ্যা ইনানকেও চিনতে পারছে!”

সায়ান ঠিক যেই ভয়টা পেয়েছিলো ঠিক সেটাই হলো, রুশির স্মৃতি হারিয়ে গেছে। ওর মনে হচ্ছে কেউ ওর বুকে ছুরি চালাচ্ছে এতোটা যন্ত্রণা হচ্ছে। ও দ্রুত কেবিনে ঢুকতেই ইনান আর রুশির বাবাকে দেখতে পেলো!রুশির বাবা রুশিকে তার আসল বাবা মা সম্পর্কে বলছে!তারা ওকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেলেন তারপর আস্তে বেরিয়ে পড়লেন!সায়ান কাছে যেতেই রুশি ভ্রু কুচকে তাকালো আর প্রশ্ন করলো

“কে আপনি?আমি কি কোথাও আপনাকে দেখেছি?আমার মনে পড়ছে না কেনো আপনি কে!”

“রুশি ভালো করে তাকিয়ে দেখো! আমি সায়ান তোমার হাজবেন্ড! আর এইযে দেখো এটা আমাদের মেয়ে, আমি ওর নাম রাখিনি তবে পাখি বলে ডাকি। তুমি ওর নাম রেখে দিও হ্যা?তোমার মনে পড়ছে কিছু?আমাদের কিভাবে দেখা হয়েছিলো বা কি!তুমি কি আমাকে পুরোটাই ভুলে গেছো রুশি!”

“আ্ আমি কিছু মনে করতে পারছিনা কেনো?আ্ আমি আপনাকে চিনি কিন্তু কিভাবে চিনি?আমার কিছুই মনে নেই কেনো?আমার বুকে খুব ব্যাথা করছে! আমার মনে হচ্ছে আমি কিছু হারিয়ে ফেলছি কিন্তু আমি হারাতে চাইনা। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে! কিচ্ছু মনে পড়ছে না, কিচ্ছুনা! আমি মনে করতে চাই সব!”

রুশি কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো, তারপর মাথা চেপে ধরে বসে রইলো। সায়ান সেই কতোক্ষণ ধরে ডাকছে কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই। একসময় রুশি জ্ঞান হারালো!

কেবিনে ডাক্তার রুশির চেকয়াপ করছে আর সায়ান বাইরে মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ও নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, রুশি ওকে ভুলে গেছে এটা এতো চেয়েও মানতে পারছে না,কিছুতেই না। এতোদিনের সকল ধৈর্য রুশির ওই অবাক চাহনিতে যেনো গলে গেছে, রুশির ওর দিকে এমনভাবে চেয়ে আছে যেনো কোন বাইরের মানুষ ও! ভালোবাসার মানুষের এই চাহনি সহ্য করা বড্ড কষ্টের!ও পারেনি সে কষ্ট সহ্য করতে!ডাক্তার বেরিয়ে এসে হতাশার স্বরে বললো

“পেইশেন্টের মাত্র জ্ঞান ফিরেছে, এই মুহুর্তে তাকে পুরোনো স্মৃতি মনে করানোর চেষ্টা করা একদম ঠিক হয়নি!যদিও পেইশেন্টের আপাদত তেমন ক্ষতি হয়নি তবে নেক্সটাইম এমন হলে তাকে হয়তো বাঁচান যাবে না। আমি রিকোয়েস্ট করছি আপনাদের, এই ভুল আর করবেন না, নাহয় পেইশেন্টকে আর বাঁচানো যাবে না”

ডাক্তার চলে যাওয়ার পর সায়ান বাইরে থেকে রুশির দিকে তাকিয়ে আছে,নিজেকে কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে! ও বড় একটা বোকামি করে ফেলেছে যাতে রুশির অনেক ক্ষতি হতে পারতো!সায়ানের ভাবনার মাঝেই ওর প্রিয় আন্টি ওর কলার চেপে ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো

“আমি জানি সায়ান তুই রুশিকে অনেক ভালোবাসিস!সবার থেকেই বেশি হয়তো কিন্তু তাই বলে মা হিসেবে নিজের মেয়ের ক্ষতি মেনে নিবো না। তোর জন্য অনেক বড় কিছু হয়ে যেতো সায়ান, তুই রুশিকে ঠিকভাবে প্রোটেক্ট করতে পারবিনা। তাই আমি চাই তুই তার থেকে দূরে থাক!”

তারপর সে মিসেস খানের দিকে তাকিয়ে বললেন

“আমি জানি আপা আমি নিষ্ঠুরের মতো কাজ করছি! কিন্তু মা হিসেবে আমার কিছু করার নেই।আমি চাই রুশিকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যেতে চাইছি, রুশির অবস্থার উন্নতি হলে নিজে তাকে আবার ফিরিয়ে আনবো। কারণ আমরা জানি ও সায়ানের আমানত, খান বাড়ির বউ। দরকার হয় আবার বিয়ে দিবো আর প্রোটেক্টও করবো যাতে অন্যকোন কিছুতে না জড়ায় কিন্তু এখন ওকে এখানে রাখা সেফ মনে হচ্ছে না। সায়ানের নিজের উপর কন্ট্রোল নেই তাই ও চাইতেও কিছু করে ফেলতে পারে!আমার এটা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।”

“নাহ! তুমি কি বলছো তা বুঝতে পারছো আন্টি! এর থেকে ভালো আমায় মেরে ফেলো আমি কিছু বলবো না। তবুও রুশিকে নিওনা, আমি এমন কিচ্ছু করবো না আর সত্যি বলছি!”

সেদিন সায়ানের সকল পাগলামোও রুশিকে নিজের কাছে রাখতে পারে নি, রুশির বাবা-মা জোর করে তাকে নিয়ে চলে গেছে আর কোথায় নিয়ে গেছে তা কেউ জানেনা। যদিও সায়ানের ধারণা তারা লন্ডনে আছে! সায়ান সাথে সাথেই হয়তো যেতে পারতো সেখানে কিন্তু মেয়ের কথা ভেবে যায়নি,মেয়ে কয়েকবছরের হোক তবেই ও যাবে রুশিকে খুঁজতে আর বাবা মেয়ে মিলে তাদের মাকে মানিয়ে দেশে নিয়ে আসবে!মেয়ের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে সায়ান বললো

“তুমি তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে যাও পাখি!তারপর আমরা তোমার মাকে তোমার নানা-নানির থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসবো তারপর নিজেদের কাছে রেখে দিবো!কোথাও যেতে দিবো না”

মেয়েটি বুঝলো কিনা কে জানে?কিন্তু বাবার কথা শুনে খিলখিল করে হেসে দিলো যেনো সব বুঝতে পেরেছে। সায়ান মেয়েকে কোলে নিয়ে হাটতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো কবে ওর পাখিটা পড়ে হবে আর কবে ওর ছোট্ট পরীর কাছে যেতে পারবে!

এইটুকু পরে কুঞ্জন থামলো, কান্না করতে করতে ওর হিচকি উঠে গেছে! ও এই মানুষগুলোকে না চিনলেও তাদের কষ্টে যেনো নিজেই কষ্ট পাচ্ছে!এতো কষ্ট এই অনুভুতির ভেড়াজালে?ও পরের পেজ উল্টাতেই দেখে আর কিছু নেই, শেষপর্যন্ত দেখেও কিছু খুঁজে পেলো না। ও থম মেরে বসে রইলো, এরপর কি হয়েছিলো? সায়ান কি রুশিকে খুঁজে পেয়েছিলো? আর ওদের মেয়েটা? সে কেমন আছে এখন?কতো বয়স তার?কি করে জানবে ও এরপর কি হয়েছে?

রুম থেকে বেরিয়ে ও নিজের ঘরে গিয়ে মন বসাতে পারলো। কিভাবে জানবে এরপরে কি হয়েছিলো?ও বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ মনে পড়লো।লন্ডন! বলেছিলো লন্ডন থাকতে পারে!এরমানে লন্ডনে ও জবাব পেতে পারে সব কিছুর!আর বাবাতো লন্ডনেই গিয়েছিলো তাহলে তো আরো সহজ হয়ে যাবে! ও ভেবেই বাঁকা হাসি দিলো।বিড়বিড় করে বললো

“লান্ডান! আম কামিং দেয়ার!”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে