গাঁইয়া_বউ – পর্ব_৭

0
3399

গাঁইয়া_বউ।পর্ব_৭।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।

অনুর নানা নানু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন অপূর্বের দিকে।
আর মনে মনে ভাবছেন।
যেই অশান্তি থেকে আমাদের মেয়ে মুক্ত হয়ে নতুন জীবনে পা রাখলো।
সেই অশান্তিতো আমাদের মেয়ের পিছু ছাড়লোনা।
তবে কি অর্না আবার আঘাত পাবে?

তাদের ধ্যানের ব্যাঘাত ঘটিয়ে অয়নের ডাক।
-মা,বাবা ওখানে দাঁড়িয়ে কেন?এখানে আসুন।

অর্নার বাবা মা এগিয়ে সবার সামনে গেলেন।
-মা বাবা,পরিচয় করিয়ে দেই।ইনি হচ্ছেন আমার বাবা।এটা আমার বোন,আর ইনি আমার বোন জামাই।
-আসসালামু আলাইকুম।সবাই ভালো আছেন?
-জ্বী ভালো।আপনারা কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমরাও ভালো আছি।
-বিয়েতে আমরা উপস্থিত থাকতে পারিনি,কিছু মনে করেন নি তো আপনারা?

-কি যে বলেন ভাই,আপনাদেরই তো আরো মন খারাপ হবার কথা।আপনাদের ছেলের বিয়েটায় উপস্থিত থাকতে পারলেন না।
-আমার মনে কোন আফসোস নেই।যে লক্ষীর মত বউমা পেয়েছি।
-দোয়া করবেন ভাই ওদের জন্য।আর আমাদের মেয়েটাকে দেখে রাখবেন।
জীবনে অনেক কষ্ট পাড় করেছে আমার এই মেয়ে।

-আপনারা কোন চিন্তা করবেন না।এখন থেকে অর্না আমাদের মেয়ে।ওকে দেখে রাখার দায়িত্ব আমাদের।আপনারা এখন চিন্তামুক্ত।
-শুনে ভালো লাগলো ভাই।নিশ্চিন্ত হলাম।
-যাও মা তোমার বাবা মাকে নাস্তা দাও।
-না না আমরা নাস্তা করেই এসেছি মাত্র।

-কিছু তো খেতেই হবে, এই প্রথম আমাদের বাড়ীতে আসলেন আপনারা।
-না না সমস্যা নেই,আরো কত সময়ই তো আছে, এখনি তো আর চলে যাচ্ছিনা।
-আচ্ছা তবে বসুন আমরা গল্প করি।

অপূর্বর যেন এসব একদমই ভালো লাগছেনা।
অপূর্ব ওখান থেকে ওর রুমে চলে গেলো।

-শোনো মনা,আজ তুমি একটু শাড়ী পরোতো।
-আজ হঠাৎ শাড়ী পরতে বলছো যে?
-তুমি না শাড়ী পছন্দ করোনা।
-আরে এত কথা বলছো কেন?পরতে বলেছি পরবে।

-আমার কোন ভালো শাড়ী নেই।শাড়ীতো পরাই হয়না,তাই কেনাও হয়না।আর তুমিও পছন্দ করোনা।তাই আরো কিনিনা।
-আচ্ছা ঠিকাছে আমি নিয়ে আসছি।

এই বলে অপূর্ব মনার জন্য শাড়ী কিনতে চলে যায়।
বার বার অর্নার মুখ টা চোখের সামনে ভেসে উঠছে অপূর্বের।
আর অনুকে তো ও কিছুতেই ভুলতে পারছেনা।ওর মেয়ে ওরই চোখের সামনে,কিন্তু একটু কোলেও নিতে পারছেনা।
এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে।

অপূর্ব শাড়ী কিনে নিয়ে বাসায় পৌছে।
-মনা,এই মনা কই তুমি।
-এই তো।
-এই নাও শাড়ী,এখানে দুটো শাড়ী আছে,একটা তোমার আরেক টা অর্নাকে দিও।
-বাহ্ ভাই বউর জন্য এত টান।ভালোই করেছো।আমি এখনি দিয়ে আসছি ওকে।

মনা অর্নাকে গিয়ে শাড়ীটা দেয়,অর্নার মন না চাইলেও অয়নের জন্য শাড়ীটা রাখা লাগে।

দুপুরে সবাই এক সাথে খেতে বসেছে।
-বাবা বাবা তুমি আর আমি এক সাথে বসবো।

অয়ন অনুকে চুমু দিয়ে ওর কাছে বসে।

অপূর্বের কেমন যেন এক কষ্টময় অনুভূতি হয়।
সবার খাওয়া দাওয়া শেষে অর্নার বাবা মা চলে যায়।
আর অয়নকে বলে যায়,
আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো।ওকে কোন দিন কষ্ট পেতে দিওনা বাবা।

-অর্না এখন আমার স্ত্রী।আপনারা কোন চিন্তা করবেন না।

মনা অর্নাকে বলে তোমরা এবার হানিমুনে গিয়ে ঘুরে আসো।
-জ্বী আপু দেখি অয়ন কি বলে।
-আমি আবার কি বলবো?আমরা আগামী পরশুই যাচ্ছি হানিমুনে।
-আচ্ছা তোরা কথা বল আমি আসছি।

-এই যে বউটা,আপনি কি জানেন আপনাকে যে শাড়ীতে অনেক সুন্দর লাগে?
-ও তার মানে অন্য কিছুতে আমাকে পঁচা লাগে?
-আমি কি সেটা বলেছি?
-শাড়ীতে আমার বউ টাকে অনেক অনেক বেশি সুন্দর লাগে।
-আচ্ছা আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

-আমার তো ধন্যবাদ লাগবেনা।
-তাহলে?
-চুমু লাগবে চুমু দেন।
-ইশ শখ কত।
-আচ্ছা দিবেন নাতো?ওকে আমিই দিচ্ছি।
-এই না না অনু এসে যাবে।
-আচ্ছা অনু কই?
-অনু ওর দাদা ভাই এর সাথে গল্প করছে।
-ও আচ্ছা।

-শুনুন,
-না শুনবোনা।
-শুনবোনা মানে?
-ওই মেয়ে আমি কি দূরের কেউ যে আমাকে আপনি করে বলো?
-না মানে।
-না মানে কি?তুমি করে না বললে আমি কিছুই শুনবোনা।
-প্লিজ এমন করেনা,শুনুন না।
-উঁহু শুনবোনা।
-শুনুন না,
-আচ্ছা বলুন।
-বলুন?
-জ্বী বলুন।আপনি যেই পর্যন্ত আমাকে তুমি করে না বলবেন,আমিও সেই পর্যন্ত আপনাকে আর তুমি করে বলবোনা।
-উফ!
-উফফ!

-আচ্ছা শুনুন না, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার মেয়েটাকে একটা পরিবার দেয়ার জন্য।বাবার আদর দেয়ার জন্য।
-বাহ্ রে,মেয়েটা কি আপনার একার নাকি?
মেয়েটা আমারো,ওকে বাবার আদর দেবোনাতো কাকে দেবো?
-উম্মাহ্!
-আল্লাহ্‌ আমার বউ আমাকে আদর দিছে রে।

অর্না লজ্জা পেয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছিলো আর অয়ন ওর হাত টেনে ধরে বুকে জড়িয়ে নেয়।
-লাভ ইউ বউ পাখি।
-হুম,এখন ছাড়ুন,আমি একটু বাবা আর আপুর ওখানে যাই।
-আচ্ছা যাও।

অপূর্ব সিগারেট খাচ্ছে।
-তুমি সিগারেট খাচ্ছো?কি হয়েছে তোমার?তুমি তো সিগারেট খাওনা।
-খাইনা তাতে কি?তাই বলে কি খাওয়া যাবেনা?কিছু হয়নি।যাও তো এখান থেকে।

-কি হয়েছে তোমার?কোন সমস্যা?বলো আমাকে।
-বললাম না কিছুনা,যাও এখান থেকে,আমাকে একটু একা থাকতে দাও।এত ঘ্যান ঘ্যান করোনা।(ধমক দিয়ে)

অর্না ওর শশুড় মসাইর রুমে এসেছে।
-কি করে দাদা নাতিন?
-এইতো আম্মু আমরা গল্প করছি।
-দাদাভাইকে বিরক্ত করছো নাতো?
-কি যে বলোনা বউমা,ও এসেছে পরে আমার মনে হচ্ছে অর্ধেক রোগ ই ভালো হয়ে গেছে।আমার দাদু ভাই এখন থেকে আমার সাথেই থাকবে।
তাইনা দাদু ভাই?
-হ্যাঁ দাদা ভাই।
-বউ মা,
-জ্বী বাবা।
-এখন থেকে এই সংসারটা তোমার।নিজের মত করে সংসারটাকে সাজিয়ে নিবে।এই সংসারের দায়িত্ব এখন থেকে তোমার হাতে।
-জ্বী বাবা।
-আর একটা কথা,তুমি আমার পাগল ছেলেটাকে আগলে রেখো।কখনো ওকে কষ্ট দিওনা।ছোট বেলা থেকে ওকে আর মনাকে আমি নিজে হাতে মানুষ করেছি।
ছোট বেলায়ই ওদের মা মারা যায়।
ওদের যদি ওদের সৎ মা দেখতে না পারে,তাই আমি আর ২য় বিয়েও করিনি।
ভেবেছি বাকি জীবন টা ওদের মুখ দেখেই কাটিয়ে দেবো।

-না বাবা,আমি অয়নকে কখনোই কষ্ট পেতে দেবোনা।আপনি চিন্তা করবেন না।
আমি এ সংসার আর সংসারের সবাইকে আগলে রাখবো।

-আচ্ছা বাবা আপনারা গল্প করুন আমি আসি।
-আচ্ছা এসো মা।

মনা মন খারাপ করে ড্রইংরুমে বসে আছে।
-আপু?
-আপু।
-হুম,আমি খেয়াল করিনি।কিছু বলবে?
-কি হয়েছে আপনার?কোন সমস্যা?
-আরে না,কিছু হয়নি।
-আপনার মুখ দেখে কিন্তু তা মনে হচ্ছেনা।
কিছু তো একটা হয়েছে।বলা যাবে আমাকে?

মনা অর্নাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।
-কি হয়েছে আপু?বলুন আমাকে।বলুন।
-জানো,অর্নব কে আমি বিয়ের পর থেকে কোন দিনও সিগারেট খেতে দেখিনি।কিন্তু আজ ও সিগারেট খাচ্ছে,এই প্রথম দেখলাম ওকে সিগারেট খেতে।
ওকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করায় ও আমাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু আজকের আগে ও কোন দিন আমার সাথে এমন ব্যবহার করেনি।
খুব খারাপ লাগছে।

-আরে আপু ও কিছুনা।ছেলে মানুষ।
হয়তো কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত।তাই একটু জোড়ে কথা বলে ফেলেছে।
আপনি কোন অশুভ কথা চিন্তা করবেন না তো।
এবার হাসুন,হাসুন একটু।
এইতো লক্ষী আপু আমার।
আর এক্ষুনি গিয়ে তার দেয়া শাড়ীটা পরে ফেলুন।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে।শাড়ীটা পরে একটু সাজুগুজু করুন।
দেখবেন তার রাগ কোথায় পালিয়েছে।

-পরতে পারি এক শর্তে,
-কি শর্ত আপু?
-তোমাকেও এখন ওই শাড়ীটা পরতে হবে,যেটা অর্নব এনে দিয়েছে।আর আমরা দুজন শাড়ী পরে এক সাথে ছবি তুলবো।
-আপু আমি অন্য দিন পরবো ওটা।আজ না।
আজ আপনি পরুন।
-তুমি না পরলে আমিও কিন্তু পরবোনা,এবার ভেবে দেখো তুমি কি করবে।
-আচ্ছা ঠিকাছে,আমিও গিয়ে পরছি।
আপনিও পরে রেডি হোন,তারপর আমরা পিক তুলবো।
-আচ্ছা ঠিকাছে।

মনা গিয়ে শাড়ীটা পরে নেয়।
অপূর্ব ঘুমিয়ে আছে।
অর্নাও রুমে গিয়ে অপূর্বের দেয়া শাড়ীটা পরতে বাধ্য হয়।কারণ মনা নাহলে পরবেনা শাড়ী।

শাড়ী পরা শেষে অর্না অয়নের জন্য চা বানাতে কিচেন রুমে যায়।
আর এদিকে অনু আর অয়ন গল্প করতে থাকে।

অর্না চা বানাচ্ছে,
আর পেছন থেকে শুনতে পাচ্ছে,
-আসলে আমার মাথা ঠিক ছিলোনা।কেন যেন দিন কাল খারাপ যাচ্ছে,কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছিনা।
ডিপ্রেশন কাজ করছে।
তাই তোমার সাথে ওভাবে কথা বলে ফেলেছি।
সরি,আমাকে মাফ করে দাও।
আর কখনো এমনটা হবেনা,

এই বলে পেছন থেকে অর্নব অর্নাকে জড়িয়ে ধরে।
-লাভ ইউ মনা এন্ড সরি অসলো।
-কি করছেন এসব?ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন,(এই বলে অর্না অপূর্বকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়)
-আমি আপনার মনা না,আমি অয়নের অর্না, মিসেস অয়ন।সো দূরত্ব বজায় রাখুন।

(অর্নার আর মনার শাড়ী একই ডিজাইন আর একই রঙের,সেই জন্য অপূর্ব অর্নাকে মনা ভেবে জড়িয়ে ধরে আর কথা গুলো বলে)

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে