গল্প: বিস্মৃতির অন্তরালে পর্ব-০৪

0
1860

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
গল্প: বিস্মৃতির অন্তরালে পর্ব-০৪
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি

পরদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙল আমার। আমার খুব ইচ্ছে হলো একটু ছাদে যাবার। তাই নেহার রুমে গিয়ে ওকে ঘুম থেকে তুলতে চাইলাম। কত কষ্ট করে ডাকলাম তাকে কিন্তু কোনো খবর নেই। একেবারেই কুম্ভকর্ণের ঘুম যাকে বলে সেই ঘুম এই পিচ্চির। কোনোভাবেই নেহাকে ঘুম থেকে তুলতে পারলাম না। শেষমেশ আমি একাই চলে গেলাম। সিঁড়িতে এক পা দেওয়ার পর মনে হলো এক কাপ কফি হলে আরও বেশ ভালো লাগবে। তাই এক দৌড় দিলাম কিচেনের দিকে। কিচেনে গিয়ে পড়লাম এক মহাবিপদে। কোথায় যে কি রাখছে কে জানে! কফি কোথায় রাখছে কে জানে! অনেক খুঁজেও পেলাম না। শেষমেশ এক কাপ চা’ই বানিয়ে ফেললাম।

ছাদে উঠে আমার মনটাই ভালো হয়ে গেলো । নানান ফুলের গাছ এখানে। আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে হাঁটছি আর ফুলগুলোকে স্পর্শ করছি। একটা দোলনাও আছে । আমি সেখানে আয়েশ করে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলাম আর চারদিকে দেখছিলাম। কত কত বিল্ডিং চারদিকে। অনেকেই আবার ছাদবাগান করেছে। জায়গা সঙ্কটের এই সময় এই ছাদ’ই একমাত্র ভরসা নিজের মনমতো বাগান করার জন্য।

‘আমার দোলনাতে বসার আগে পারমিশন নিয়েছিস?’

নিশান ভাইয়ের হুঙ্কার শুনে আমি তার দিকে ফিরে তাকালাম। একটু ধাতস্থ হতেই চূড়ান্ত অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,’এখানে বসার জন্যেও পারমিশন লাগবে?’

‘আবার মুখে মুখে তর্ক! পারমিশন শব্দের সাথে কি এই মাত্র পরিচিত হয়েছিস?’

নিশান ভাইয়ার কথা শুনে আমার প্রচণ্ড রাগ হলো। আমি তারপরেও শান্ত স্বরে বললাম,’আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেন?’

‘এটা কি আমার প্রশ্নের উত্তর হলো?’ কথার পিঠে কথা বলছিস!

‘আপনারটাও তো আমার প্রশ্নের উত্তর হয় নি। তাছাড়া পারমিশন শব্দটাই হয়তো আমার ডিকশনারির প্রথম শব্দ। তবে আমার এটা জানা ছিল না যে, এই তুচ্ছ বিষয়েও পারমিশন লাগে!’ আমি মাথা নিচু করেই বললাম।

‘খুব বাড় বেড়েছিস। কোনো ম্যানার্স শিখিসনি! এইজন্যেই তোকে একদম টোলারেট করতে পারি না।’ নিশান ভাই কপালে ভাজ ফেলে রাগান্বিত কণ্ঠে বলল।

‘ঠিক আছে তাহলে আমি আপনাদের বাসা থেকে বাবার সাথে কালই চলে যাব। তখন তোমাকে আর আমাকে সহ্য করতে হবে না।’ আমি এবারো মাথা নিচু করেই নিশান ভাইয়াকে কথাগুলো বলে ফেললাম।

নিশান ভাই আমার দিকে আরো দু’কদম কাছে এসে উঁচু কণ্ঠে বলল, ‘চলে যাবি মানে কী! এখানে এসেছিস নিজের ইচ্ছায় যাবি আমার ইচ্ছায়। বুঝেছিস?’

আমি দু’কদম পিছনে সরে আসলাম। কিন্তু কোনো কথা বললাম না। নীরবে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে এলাম। রুমে এসেই ভাবতে লাগলাম আর যা’ই করি আমি এই নিশান ভাইয়ের সামনে যাব না। কক্ষনো যাব না । কক্ষনো না।

সকালের নাশতা খেতে ফুফু ডাকতে পাঠিয়েছেন নেহাকে। কিন্তু আমার একদমই যেতে মন চাইছে না। ওখানে যে মি: হনুমান থাকবে। কিছুক্ষণ পর ফুফু নিজেই এলেন আমাকে ডাকতে। অগত্যা আমাকে যেতেই হলো। এবারও মি: হনুমান আমার সামনের চেয়ারে বসে আছে। সে চুপচাপ খাচ্ছে। আর আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। হুট করেই আমার মনে হলো আমি কেন এই রাক্ষসটার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি একদম তাকাব না। একদম না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


‘কী রে ! তুই খাচ্ছিস না কেন?’ ফুফু একটু জোরেই বললেন।

আমি দ্রুত গতিতে এমনভাবে উত্তর দিলাম ,’খাচ্ছি।’যেনো শব্দটা আমার ঠোঁটের ওপাশে আসার জন্য অপেক্ষারত ছিল।

‘স্মৃতি , তোর কোচিং কবে থেকে?’

‘ফুফু , ক্লাস তো অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে। আমি ভর্তিই হয়েছি দেরিতে।’

‘এতে কী তোর সমস্যা হবে? সমস্যা হলে বলো। নিশান তো আছেই। তোদের সাবজেক্টও তো এক। ও মাঝে মধ্যে না হয় তোকে পড়াগুলো দেখিয়ে দেবে।’

ফুফুর কথা শুনে আমি বিষম খেলাম। বাবা আমাকে দ্রুত পানি দিল। পানি খেতে খেতেই আমি খেয়াল করলাম নিশান ভাই আড়চোখে আমার দিকে তাকালো ।

ফুফু বললেন,’ধীরে সুস্থে খাও। এত তাড়া কিসের?’

‘আস্তেই খাচ্ছিলাম ফুফু ।’ আমি কোনোমতে বললাম।

নেহা পানির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলল,’স্মৃতিপু! তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি ভয় পাচ্ছ! আচ্ছা, এখানে এত ভয় পাবার কী আছে?’

আমি যে কী বলব কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না! এরা এক একজন কথার প্যাঁচে ফেলেই আমাকে মেরে ফেলবে মনে হচ্ছে আমার। কেউ ম্যানার্স শেখায় তো কেউ বলে স্মৃতিপু তুমি হাসো না কেন? তুমি এত ভয় পাও কেন? হয়তো খুব করে হাসলে তখন বলবে এত হাসো কেন? মেয়েদের অত হাসতে নেই! জানো না তুমি?

বিকেলের দিকে আমি কোচিং এ যাবার জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম। আমাকে দেখে ফুফু বললেন,’কি রে একা যাচ্ছিস নাকি?’

আমি বললাম,’ জি, ফুফু। বাবা রেস্ট নিচ্ছে। তাছাড়া আমি একাই যেতে পারব।’

‘আরে দাঁড়া আমি নিশানকে বলছি তোকে নামিয়ে দিতে।’ এই বলেই ফুফু চিৎকার করে নিশান ভাইকে ডাকতে লাগলেন।

ওই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিল কোথাও গিয়ে লুকিয়ে যাই। এমন কোথাও লুকাই যেখান থেকে আমাকে আর কেউ যেন না দেখে। অথবা কয়েক মুহূর্তের জন্য যদি অদৃশ্য হতে পারতাম! অথবা যদি শুধু এই মি: চটাং পটাং এর সামনেই অদৃশ্য হতে পারতাম! আহ্! কিছু ইচ্ছা বোধহয় কখনোই পূরণ হবার নয়!

নিশান ভাই এসেই আমার মুখের সামনে তুড়ি মারলো। আমি গভীর ভাবনাতে মশগুল থাকার কারণে একটু চমকে গেলাম। সে আমার সামনে একটা হাত প্রসারিত করে বলল,’ চলেন মহারানি ।’

ফুফু কড়া গলায় বললেন,’নিশান!’

‘আবার কী করলাম আমি?’ নিশান মুখে একরাশ বিরক্তি এনে বলল।

‘মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ, নিশান।’ ফুফু বললেন।

নিশান ভাই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে একবার তাকিয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেল। আমি নিঃশব্দে তার পথ অনুসরণ করলাম।

আমি গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই ইমরানের সাথে দেখা হয়ে গেল। আমি নিশান ভাইকে কিছুই না বলে ইমরানের সাথে হেঁটে চলে গেলাম। নিশান ভাইয়ের সাথে কথা বলতে আমার রীতিমতো অস্বস্তি লাগে। কখন যে কী বলে বসবে কে জানে! আবার কখন কী সব পারমিশন, ম্যানার্স শেখাতে বসবে কে জানে! তার চাইতে ভালো এই জ্বলজ্যান্ত এলিয়েনের সাথে দূরত্ব বজায় রাখা। কিন্তু একই ছাদের নিচে থেকে আসলেই কি দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব?

চলবে…ইন শা আল্লাহ্

আগের পর্বের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/944147236015996/