গল্প: বিস্মৃতির অন্তরালে পর্ব-০৩
#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি
নিচে গিয়ে দেখলাম সবাই ডাইনিং এ বসে আছে। ফুফু খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। আমি গিয়ে নেহার পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লাম। ফুফু এই অল্প সময়েও অনেক কিছু আয়োজন করে ফেললেন রূপচাঁদা মাছ , খাসির রেজালা, চিকেন ফ্রাই তিন রকমের ভর্তা। পায়েস আরও কত মিষ্টি জাতীয় খাবার। হয়তো আগে থেকেই রেডি করা ছিল।
বাবা চুপচাপ খাচ্ছেন। আমি ফুফুকে বললাম আমাদের সাথে বসার জন্য । ফুফুও বসলেন। কিন্তু নিশান ভাইকে কোথাও দেখলাম না। অবশ্য এক প্রকার ভালোই হয়েছে। নিশান ভাই থাকলে আমার আজ খাওয়া হতো না । উপরন্তু ঘাড় ব্যথা আরো তীব্রতর হতো।
আমি চুপচাপ খাচ্ছিলাম। আর নেহা আমার পাশের চেয়ারে বসেছিল। নেহা একটু পর পরই বলছে স্মৃতি আপু এটা নাও , ওটা নাও। তুমি এত কম খাও কেন? আমাদের খাওয়ার মাঝ পর্যায়ে নিশান ভাই চলে আসলো। এসেই বসে পড়ল আমার সামনের চেয়ারটাতে। আমি একপলক তাকালাম তার দিকে। তার গভীর কালো চোখ দেখা মাত্রই আমি চোখ নামিয়ে ফেললাম। মাথা নিচু করেই খাচ্চি এবার। বাবা খাবার খেয়ে উঠে চলে গেলেন। হঠাৎ নিশান ভাইয়ার কথা শুনে আমি মাথা তুলে তাকালাম।
‘মা, তোমার ভাইয়ের মেয়ে কি কুঁজো নাকি?’
ফুফু , নেহা তাকিয়ে আছে নিশান ভাইয়ার দিকে। আমার এত্ত লজ্জা করছিল। কষ্টও লাগছিল খুব। মনে হচ্ছিলো ওই মুহূর্তে পৃথিবীর সব থেকে দুঃখী মেয়েটা আমি।
ফুফু রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন,’এসব কী নিশান? এটা কোন ধরনের কথা?’
নেহা বলল,’ভাইয়া সরি বলো স্মৃতি আপুকে।’
নিশান বলল,’কী! আমি সরি কেন বলব?’
ফুফু আদেশ দেবার ভঙ্গিতে চোখ বড় বড় করে বললেন,’সরি বলো।’
নিশান মুখে একরাশ বিরক্তি এনে বলল,’সরি।’
আমি কোনোরকমে খাবার শেষ করে আমার রুমে চলে এলাম। রুমে বসে ভাবছি আমার এমন কেন হচ্ছে। এত্ত লজ্জা কোথা থেকে আর কীভাবেই বা আসলো? আমি কি রাঙ্গামাটি থেকে লজ্জার গোডাউন নিয়ে আসলাম? আজ এভাবে অতিরিক্ত লজ্জা পাওয়ার কারণে নিশান ভাইয়া আমাকে কথা শুনিয়ে গেল। যেই সেই আমিই তো তাকে সুযোগ করে দিলাম। না স্মৃতি তোকে, লজ্জার নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে!
বাবা আমাকে ভার্সিটির জন্য কোচিং এ ভর্তি করে দিলেন। সেখানেই পরিচয় হলো একজনের সাথে। সে আমার ফুফুর বাসার পাশের বাসায় থাকে। নাম ইমরান। দেখতে ভালোই। প্রথমদিন বিধায় বাবা অপেক্ষা করেছিলেন। ক্লাস শেষে বাবার সাথেই ফিরলাম।
পরের দিন বাবা চলে যাবে। তাই আমার খুব খারাপ লাগছিল। বাবা চলে যাবে ভাবতেই একরাশ কষ্ট আমাকে চেপে ধরল। আমি নিজের রুমে বসে ভাবছিলাম। ঠিক তখন বাবা আসলেন আমার রুমে। আমি বাবাকে বললাম,’বাবা আর দুটো দিন থেকে যাও না?’
‘না রে মা। সব কাজ রেখে আসছি। বেশি দেরি করলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে।’ বাবা একটু থেমে আবার বললেন,’আর তুই তো জানিস আমার শহরের পরিবেশ ভালো লাগে না। দম বন্ধ হয়ে আসে।’
‘প্রতিদিন ফোন করবে তো বাবা?’ আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম বাপির দিকে।
‘কেন? তুই ফোন করবি না তোর বাবাকে?’ বাবা মৃদু হেসে বললেন।
আমি আর কান্না আটকে রাখতে পারলাম না। বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম। বাবা আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন। তখনই হুড়মুড় করে নেহা আমার রুমে এসে ঢুকল। আমাদের কান্না দেখে নেহা বলল,’স্মৃতি আপু কান্না থামাও। নইলে আমিও কান্না করে দিব কিন্তু! জানো তো কান্না সংক্রামক ব্যাধি!’ নেহা ঠোঁট উল্টে আহ্লাদের সুরে বলল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
আমি নেহার মুখটা দেখে হেসে ফেললাম। বাবাও তাঁর চশমাটা খুলে চোখের পানি মুছলেন। তারপর বললেন,’ মন দিয়ে পড়াশুনা করবি।’
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। বাবি ধীর পায়ে চলে গেলেন আমার রুম থেকে। নেহা এবার বিছানায় পা তুলে বসে বলল,’ তুমি এত কান্নাকাটি করো কেন? একটু বেশি করে হাসতে পারো না?’
একটু থেমে নেহা আবার বলতে শুরু করল,’ জানো স্মৃতিপু! আমাদের ক্লাসে একটা মেয়ে আছে সে সব সময় হাসে। মনে করো তুমি তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করলে। এতেই সে হেসে গড়িয়ে পড়বে । আবার যদি সিরিয়াস কিছু জিজ্ঞেস করো তবে তো পুরো ক্লাসরুম জুরে একটা ছোটোখাটো ভূকম্পন হয়ে যাবে!
নেহা একটু দম নিয়ে আবার বলল,’ এই কারণে আমরা হাসিকে একদম সিরিয়াস কথা বলতে চাই না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে হাসি’ই ভালো। সব সময় মন খুলে হাসে । আর তুমি সবসময় কেমন যেনো মেপে মেপে কথা বলো। আবার মেপে মেপে হাসো ।’
‘হাসি কে?’
‘যে কথায় কথায় হাসে।’
‘কে কথায় কথায় হাসে?’
‘হাসি হাসে। স্মৃতিপু যে কথায় কথায় হাসে তার নামটাও হাসি। তুমি একদম বুদ্ধু!’
‘বাব্বাহ্! তার নামও হাসি।’ আমি অবাক হয়ে মৃদু হেসে বললাম।
আমাকে মৃদু হাসতে দেখে নেহা বলল,’মজার না। আমি হাসির কথা যাকেই বলি সেই হাসে।’
আমি এবারো মাথা নেড়ে সায় দিলাম। তাই দেখে নেহা আবারও বলল,’উফ্ফো স্মৃতিপু! এত্ত মাথা নাড়াও কেন? পাতলা জিহ্বাটা নাড়িয়ে একটা হ্যাঁ বলতে পারো না। আর এত্ত ভারী মাথাটা নাড়াতে পারো!’
আমি নেহার কথায় থতমত খেয়ে বললাম,’খুব মজার নেহা। খুব মজার। দেখ আমি কিন্তু এখনো হাসছি। হাসির মতো আমার হাসিও থামতেই চাইছে না।’ জোর করে হাসার এক ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।
এর মধ্যেই নিশান ভাইয়া হন্তদন্ত হয়ে আমার রুমে প্রবেশ করে বলল,’এই কূটনী বুড়ি! তুই আমার মোবাইলের চার্জার কোথায় রাখছিস?’
আমি একবার নিশান ভাইয়ার দিকে আর একবার নেহার দিকে তাকাচ্ছিলাম। দেখলাম নেহা রাগে ফুঁসছে । নেহা রাগে কটমট হয়ে বলল,’আর একবার যদি তুমি আমাকে ওই নামে ডেকেছ না, তবে দেখো আমি সত্যিই তোমার বিরুদ্ধে কূটনামি করে ছাড়ব।’
নিশান ভাই নেহার কথার পাত্তা না দিয়ে সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,’আমাকে কি দেখতে এলিয়েনের মতো দেখাচ্ছে ? এমন করে তাকাচ্ছিস যেন জীবনে প্রথম এমন হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং ছেলে দেখেছিস!’
নিশান ভাই আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গেলো। আমি নিশান ভাইয়ার কথায় অবাক হয়ে গেলাম। তার যাওয়ার পথেই আমি আর নেহা তাকিয়ে রইলাম । আমি কোনোভাবেই আমার হিসাব মেলাতে পারছিলাম না। এই পরিবারের সবাই এত পিকুলিয়ার কেন! এই নিশানের বাচ্চা নিশান তো আরও বেশি বেয়াড়া হয়ে গেছে। এর থেকে আমাকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এর ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না। কোনোভাবেই না।
চলবে…ইন শা আল্লাহ্
আগের পর্বের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/943454572751929/
বি.দ্র. একটু ধৈর্য ধরে পড়ুন। নিজেদের মূল্যবান মন্তব্য দিন। আশা করি আপনারা নিরাশ হবেন না।