গল্প: বিস্মৃতির অন্তরালে পর্ব: ০২

0
2044

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
গল্প: বিস্মৃতির অন্তরালে পর্ব: ০২
লিখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি

নিশান ভাইকে সেই সাত বছর আগে দেখেছিলাম। এর পর আর দেখা হয়নি। তাকে আমার একদম ভালো লাগে না। ছোটোবেলায় আমাকে অযথা বিরক্ত করতো। ছোটোবেলায় বেশিরভাগ সময়ই আমার চুলে দু’বেণী করা থাকত। আর নিশান ভাইয়া আমাকে ওই অবস্থায় দেখলেই আমার চুলের বেনুণী ধরে টেনে দিতেন। আর বলতেন,’কী রে স্মৃতি তোর দেখি গরুর লেজ গজিয়েছে । তাও দুইটা। এটা কী করে হলো স্মৃতি!’ এই বলেই সে হেসে গড়িয়ে পড়ত।’

আর তা দেখেই আমার পিত্তি জ্বলে যেত। আমি শুধু রাগে ফুঁসে উঠতাম। আর আমার তখন থেকেই রাগে অপমানে ইচ্ছা করতো নিশান ভাইয়ার চুলগুলো ইচ্ছেমতো টেনে দিই। কিন্তু তার মাথাই তো নাগাল পেতাম না। তাই আমার অপমানের শোধ আর নেওয়া হতো না। এরপর একদিন শুনি নিশান ভাইয়ারা ঢাকায় চলে আসবেন একেবারের জন্য । এই কথাটা শুনে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম । খুব হেসেছিলাম। ভেবেছিলাম যাক এবার আপদ বিদেয় হোক । কিন্তু নিশান ভাইয়া চলে আসার পর অদ্ভুতভাবে আমি তাকে মিস করেছিলাম। তার মাঝে মধ্যেই চুলের বেনুণী টেনে দেয়া , মাথায় চাটা মারা খুব, খুব বেশি মিস করতে শুরু করলাম। এরপর কেটে গেল বহু বছর। এখন আর তাকে মিস করি না।

শুনেছিলাম ফুফুর একটা মেয়ে হয়েছে ঢাকায় আসার পর। খুব ছোটোবেলায় একবার এনেছিল ফুফু তাকে। তবে এখন দেখলে হয়তো চিনতেই পারব না। নিশ্চয়ই অনেক বড় হয়ে গেছে। নিশান ভাইয়াকে চিনতে পারব কি না তাও জানি না। সাতটা বছরের মধ্যে তার কেমন পরিবর্তন হলো কে জানে!

‘নীলা চল সিএনজি অথবা রিকশা নিই।’ বাবা ফুফুকে বললেন।

‘ভাইয়া দাঁড়াও একটু । নিশান চলেই আসবে। তার সাথে ফোনে কথা হয়েছে আমার।’

এর মধ্যেই একটা গাড়ি এসে থামলো । ফুফু আমাদের বললেন,’ওই যে নিশান চলে এসেছে। চল রে স্মৃতি । ভাইয়া চলো।’

গাড়ি থেকে বের হলো একটা ফর্সা মতো ছেলে। পরনে নেভি ব্লু টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। চুলটা হালকা স্পাইক করা । চোখে সানগ্লাস । একেবারেই নায়ক নায়ক ভাব।

আমি মনে মনে ভাবছিলাম এটাই কি নিশান ভাইয়া ? হঠাৎ আমার মুখের সামনে এসে তুড়ি মেরে সে জিজ্ঞেস করলো,’দাঁড়িয়েই কি পার করে দিবি দিন, মাস,বছর, যুগ ও শতাব্দী?’

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

তার কথায় এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখি বাবা আর ফুফু গাড়িতে উঠে বসেছেন। আর আমি ভ্যাবলীর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে মনে ভাবলাম এই ছেলে যেই হোক একে একদম পাত্তা দেয়া যাবে না। যদি নিশান ভাইয়া হয়ে থাকে তবে তো কোনোভাবেই না। তারপর আবার ভাবছিলাম যে ফুফু তো বললেন’ই নিশান ভাইয়া গাড়ি নিয়ে আসবে। তার মানে এটাই নিশান ভাইয়া । তাছাড়া চেহারাতেও তো অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছি। বাদরামি বোধহয় এখনো ছাড়েনি। একদম পাত্তা দিব না একে। একদম না!

আমি এবারো উইন্ডো সিটে বসলাম। উইন্ডোর বাইরে তাকিয়ে দেখছি মানুষের ছুটোছুটি । জীবিকার তাগিদে, জীবনের তাগিদে মানুষ ছুটছে তো ছুটছেই। ফুফুর চেঁচানো কণ্ঠে আমার ভাবনার সুতো ছিড়ল।

‘নিশান,উইন্ডোগুলো বন্ধ করে এসিটা অন করে দে। আমার খুব গরম লাগতেসে।’

আমার খুব বিরক্ত লাগলো ফুফুর কথায় । কেন উইন্ডো বন্ধ করতে হবে? তারপরও কিছু বললাম না।

এসির কারণে এখন আমার নিজেরই সাফোকেট হচ্ছে। নিশান ভাই হয়তো ফ্রন্ট মিররে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল। কয়েকবার মিররে চোখাচোখি হয়ে গেল। আমার হঠাত্ খুব লজ্জা লাগছিল। আমি এবার মাথা নিচু করে রইলাম । মনে মনে ভাবলাম কোনো অবস্থাতেই সামনের আয়নার দিকে তাকাব না। তারপর আবার ভাবলাম আমি নিশান ভাইয়াকে লজ্জা পাচ্ছি কেন? ছোটোবেলায় কত দুষ্টামিই না করেছি। আর আজ সাত বছর পর দেখা তবুও কথা বলতে পর্যন্ত কেমন লজ্জা লজ্জা অনুভব করছি। সময়ের দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই কি এই লজ্জা? আমার কাছে এর কোনো উত্তর জানা নেই।

কিছুক্ষণ পর নিশান ভাইয়া এসি বন্ধ করে দিয়ে উইন্ডো নামিয়ে দিলো। হয়তো সে বুঝতে পারছিল আমার খুব সাফোকেট হচ্ছিল । উইন্ডো ওপেন করাতেই আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এসি বন্ধ করতেই ফুফুর হুংকার শুনা গেল।
‘কি রে নিশান এসি বন্ধ করলি কেন?’

‘আম্মু বাসায় তো চলেই এলাম।’ নিশান ভাই একেবারেই শান্ত স্বরে বলল।

‘ওহ তাই বল। কিন্তু তারপর ও এসি অফ করে একদম ঠিক করিসনি । তুই তো জানিস আমি একদম গরম সহ্য করতে পারি না ।’

নিশান ভাই কিছুই বললনা। আমি সেই যে মাথা নিচু করেছি আর মাথাটা উঁচু করিনি। আমার রীতিমতো ঘাড় ব্যথা করছে । কিন্তু মাথাটা উঁচু করছি না যদি এদিক সেদিক তাকাতে গিয়ে আবার নিশান ভাই এর সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়!

কিছুক্ষণ পর গাড়িটা থেমে গেলো। আমি এবার মাথাটা উঁচু করলাম। একটা দোতলা বাড়ির সামনে গাড়িটা থামল। গাড়ি থেকে আমরা সবাই নামার পর নিশান ভাই গাড়ি নিয়ে কোথায় যেন চলে গেল । আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । যাক এবার অন্ততপক্ষে আমি মাথাটা উঁচু করেই রাখতে পারব। আমি আনমনেই তাকিয়ে ছিলাম গেইটের দিকে । ফুফু চিৎকার দিয়ে ডাকলেন,’তুই কি বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবি? ভিতরে আসবি না?’

আমি ফুফুর কথা শুনে থতমত খেয়ে কোনোরকমে বললাম, ‘আসছি ফুফু।’

এবার চোখ পড়লো বাড়িটার দিকে। বাড়িটা বাইরের পুরো অংশটা অফ হোয়াইট কালারের। আর ব্লু কালারের পিলার । দেখতে অপূর্ব লাগছিল। জানালায় লাগানো থাইগ্লাস। দোতলায় বারান্দায় একটা ব্যালকনিতে সাজানো নানান ফুলের গাছ। একেবারেই আমার স্বপ্নের মতো। এবার বাড়ির থেকে নজর ফিরিয়ে আমার চারপাশে চোখ দিলাম। এবার তো আমার আরো বেশি আশ্চর্য হওয়ার পালা। এখানে তো নানান ফুলে ভর্তি । আহ্ অর্কিড ও আছে। আমার প্রিয় ফুল অর্কিড । আমাদের রাঙ্গামাটির বাসায় আছে । আমি নিজে লাগিয়েছি। গাছগুলোর পরিচর্যা কে করবে এখন সেই চিন্তায় পড়ে গেলাম।

ফুফু আবারও তাগাদা দিলো। আমি দ্রুত পায়ে ভিতরে ঢুকলাম। ড্রয়িং রুম এত্ত বড়! এতো দামি দামি সোফা। আমি মুগ্ধ নয়নে দেখছিলাম। এরপর তেরো কি চৌদ্দ বছরের এক মেয়ে দৌড়ে আসলো আমার দিকে । এসেই জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল,’ স্মৃতি আপু। কতদিন পর তোমাকে দেখলাম। ‘ আমি এই মেয়েটার কথা শুনে হতভম্ব ।

‘ওহ্ সরি! বড় হবার পরে জীবনে প্রথমবার দেখা হলো সামনাসামনি । তবে আমি তোমার ছবি দেখেছি । তুমি ছবির থেকেও অনেক বেশি সুন্দর ।’ সামনের মেয়েটা হেসে হেসে বলল। খুব কিউট করে হাসছে মেয়েটা ।

ফুপু বললেন,’এই হলো নেহা। তোর ফুপাতো বোন। তুই তো বড় হবার পরে দেখিসনি ওকে। অনেক ছোটোবেলায় অবশ্য দেখেছিলি।’

ফুফু আবারো ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললেন, ‘নেহা ,স্মৃতিকে ওর রুমটা দেখিয়ে দে।’

‘আর স্মৃতি তোকে বলছি। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি।’

‘ঠিক আছে ফুফু।’

এরপর ফুফু বাবাকে গেস্টরুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে চলে গেলেন। নেহা আমাকে একটা রুমে নিয়ে গেল। এই রুমটাও অনেক সুন্দর। নেহা বলল,’জানো স্মৃতিপু তোমার জন্য এই রুমটা আমি সাজিয়েছি। কেমন হয়েছে বলো?’

‘খুব সুন্দর হয়েছে ।’

‘জানো স্মৃতিপু । আমার না তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো । কিন্তু সবাই এতো ব্যস্ত থাকে যে তোমাদের ওখানে আমাকে একবারও নিয়ে গেল না। আর তুমিও তো আসোনি। কিন্তু আমি তোমার ছবি দেখেছি। আমি খুব ভালো করে জানি,তুমি কিন্তু আমার ছবি পর্যন্ত দেখনি। খুব ছোটবেলাতে দেখেছিলে । এইজন্যেই তো চমকে গিয়েছিলে যখন আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।’ আবারও নেহা তার কিউট মার্কা হাসি দিল।

‘ছবি কোথায় দেখেছ?’ আমি সন্দিহান দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলাম

‘আরেহ্ আপু এখন তো এখানেই থাকবে । জম্পেস আড্ডা হবে। এবার তুমি জলদি ফ্রেশ হয়ে নাও।’ এই বলে নেহা হনহন করে আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

আমি এটা কোনোভাবেই বুঝতে পারলাম না নেহা কীভাবে আমার ছবি দেখলো! আমি তো কাউকে নিজের ছবি দেইনি। আর আমি তো ফেসবুকেও ছবি দিইনি। তাহলে….?

আচ্ছা যাক পরে নেহার কাছ থেকে জেনে নেয়া যাবে। তারপর আমি ভালো করে দেখতে লাগলাম রুমটা। একটা খাট। খাটে খুব সুন্দর ডিজাইন করা আছে। খাটের ঠিক অপজিটে একটা ওয়্যারড্রব । একটা ড্রেসিং টেবিল ও আছে । আবার খাটের ঠিক পাশেই একটা ছোটখাট পড়ার টেবিল আর চেয়ার রাখা আছে। মনে হচ্ছে এই রুমটা আমার জন্যেই তৈরি করা হয়েছে। আর সাজানো হয়েছে একেবারেই আমার প্রয়োজন মাফিক । এটা দেখে আমি খুব অবাক হলাম। আমি তো হুট করেই এলাম । কিন্তু আয়োজন এত পরিপক্ক ! আমি আর বেশি চিন্তা করলাম না ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম। ওয়াশরুমেও আছে আভিজাত্য । একেবারেই ঝকঝকে আর বিশাল সাইজের ওয়াশরুম। আমি আর দেরি না করে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

চলবে…ইন শা আল্লাহ্

আগের পর্বের লিংক:

https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/942779622819424/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে