গল্প: বিস্মৃতির অন্তরালে পর্ব-০১
লেখনীতে : ফাতিমা আক্তার অদ্রি
মফস্বলের মেয়ে আমি। খুব সাধারণ গোছের চলাফেরা। কিন্তু পড়ালেখায় বরাবরের মতোই ভালো। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছি সবে মাত্র। ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য কোচিং করতে হবে। কিন্তু বাবা কোনোভাবেই আমাকে অচেনা অজানা পরিবেশে পাঠাতে মনস্থ করতে পারছেন না। আত্মীয় স্বজন কয়েকজন আছেন ঢাকায় । কিন্তু বাবা তাদের ঠিক ভরসা করতে পারছেন না। তাই আমার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। ভাবছি শেষমেশ আমার ভার্সিটিতে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না ? নাকি স্বপ্ন, স্বপ্ন হয়েই থাকবে! আমার বাবার আর্থিক অবস্থা বেশ ভালোই। মা সেই ছোটোবেলায় মারা গেছেন। সেই থেকে বাবা’ই আমাকে মানুষ করেছেন। বাবাকে রাজী করানোর জন্য ফুফুকেও বললাম। ফুফু থাকেন ঢাকায় । ফুফু এখানে না আসলেও তার সাথে আব্বুর যোগাযোগ হয় সবসময় । সেই সুবাদে ফুফুর সাথে আমারও খুব ভালো সম্পর্ক । কিছুদিন আগে আব্বু ফুফুকে ফোন করেছিল আমার ভার্সিটিতে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য। তাছাড়া গতকাল দুপুরে অমি নিজেই ফোন দিলাম ফুফুকে। আমি ফুফুকে বললাম যে কোনো ভাবে একটা ব্যবস্থা করার জন্য । ফুফুকে এটাও বললাম যে দরকার হলে আমি হোস্টেলে থেকে কোচিং করব। ফুফু তো আমার এ কথা শুনে রেগেমেগে আগুন। তারপর উঁচু কণ্ঠে বললেন, ‘ ঢাকা শহরে তোর নিজের ফুফুর এত বড় বাসা থাকতে তুই হোস্টেলে থাকবি কেন?’
আমি ফুফুর কথায় চুপ হয়ে গেলাম । নিশ্চুপ হয়ে আছি দেখে ফুফু আবারো ধমক দিয়ে বললেন,’কি রে, এখন কি চুপ করে থাকবি? কথা না থাকলে আমি রাখছি। আমার অত সময় নাই।’
আমি মিনমিনিয়ে বললাম,’ফুফু তাহলে আব্বুকে রাজী করাও তুমি।’
ফুফু বললেন,’এত চিন্তা করতে হবে না তোর। আমি আগামীকাল আসছি।’
‘ইয়েস! সত্যি বলছ তুমি?’ আমি অতি আনন্দিত হয়ে বললাম।
‘তোর সাথে কি আমার ইয়ার্কির সম্পর্ক?’ ফুফু কপট রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন।
‘না..মানে ফুফু। তাহলে আগামীকাল দেখা হবে।’
‘হুম।’ এই বলে ফুফু ফোন রেখে দিলেন।
এবার আমার খুশি দেখে কে। এক দৌড়ে আব্বুর রুমে গিয়ে আব্বুর গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,’আব্বু, ফুফু আসবেন আগামীকাল ।’
আমার কথার প্রত্যুত্তরে আব্বু কিছু বললেন না। নীরব ছিলেন। তবে একটু মুচকি হাসলেন। চোখে ছিল কষ্টের ছাপ! হয়তো আমি আব্বুর কাছ থেকে দূরে চলে যাব তাই কষ্ট পাচ্ছেন। আমিও তো কষ্ট পাচ্ছি। তাছাড়া আমাকে ভার্সিটিতে পড়ানোর প্রবল ইচ্ছা আব্বুরই ছিল। রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছি । তবে এর পরের পড়াশুনা এই কলেজে চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। আব্বুরও আমাকে ভার্সিটিতে পড়ানোর ইচ্ছা। আর বাপির এই ইচ্ছের কথা শুনতে শুনতে কবে যে এই ইচ্ছেটা আমার নিজের ইচ্ছেতে পরিণত হলো টেরই পেলাম না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
পরদিন খুব ভোরেই ফুফু আমাদের বাসায় পৌঁছলেন। ফুফু একা এসেছেন। ফুফুকে দেখে আমি আনন্দে আত্মহারা । তড়িঘড়ি করে ফুফুকে বললাম ফ্রেশ হয়ে নিতে। বাসার কাজের মেয়েটা আর আমি মিলে চটজলদি কিছু নাশতা রেডি করলাম। নাশতা শেষেই ফুফু আব্বুর রুমে গেলেন। তারপর অনেক্ষণ তাদের মধ্যে কথা হলো। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু ভিতরের কোনো কথাই শুনছিলাম না। তবে এতটুকু বুঝতে পারছিলাম যে রেজাল্ট পজিটিভ হবে।
ফুফু শেষমেশ বাবাকে রাজী করালেন। ঠিক হলো আমি ফুফুর বাসায় উঠব। ফুফুকে বাবা খুব বিশ্বাস করেন আর ভালোবাসেন। তাই বাবা আর আপত্তি করলেন না। তাই ফুফু দুদিন পরেই আমাদের যাওয়ার ডেট ঠিক করলেন।
ফুফু বললেন যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে করে যাবেন। বাসের এত লম্বা জার্নি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এবার তাড়াহুড়ো করে রাঙ্গামাটি আসতে গিয়ে ফুফুকে নাকি অনেক ধকল পোহাতে হয়েছে।
চার পাঁচ ঘন্টার ট্রেন জার্নির কথা শুনে তো আমার প্রাণ বের হওয়ার জোগাড় । কখনো এত পথ জার্নি করা হয়নি। এটাই হবে জীবনের প্রথম দীর্ঘ জার্নি। ঠিক হলো বিকালের দিকে বাসে করে চট্টগ্রাম যাব। তারপর রাতের ট্রেনেই আমরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিব।
বাবার মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে। আমিই তো বাবার একমাত্র অবলম্বন । বাবা চোখের চশমাটা খুলে টেবিলে রাখছেন। আর ডানহাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে চোখ দুটো মুছলেন। আমি বাবার পাশে গিয়ে বাবার কাঁধে হাত রাখলাম। তৎক্ষনাত বাবা সচকিত হয়ে বললেন,’ কি রে ! তুই কখন এলি?’
‘এই তো বাবা । একটু আগে। তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কাঁদলে কিন্তু আমি কোথাও যাব না।’
‘না রে মা। এই দেখ আমি চোখের পানি মুছে ফেলেছি।’ বাবার চোখ অশ্রুতে টলমল করছে।
‘বাবা! তুমি কিন্তু আবারো কাঁদছ!’ আমি গাল ফুলিয়ে বললাম।
আমার কথা শুনার পর বাবা অঝোরে কাঁদলেন। আমি কোনো বাধা দিলাম না। আমিও বাবার সাথে কাঁদতে লাগলাম। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় কান্নাটা সংক্রামক ব্যাধির মতো। কাউকে কাঁদতে দেখলে নিজেরও কান্না চলে আসে।
কিছুক্ষণ পর ফুফু হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে আমাকে আর বাবাকে কাঁদতে দেখে বললেন,’কী রে ভাইয়া, মেয়েটাকে কি শ্বশুর বাড়ি পাঠাচ্ছিস যে এমন মরা কান্না জুড়ে দিলি বাপ মেয়ে মিলে?’
আমি বাবার কাঁধ থেকে মাথাটা তুলে ফুফুর দিকে তাকালাম। বাবা নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠলেন।তারপর ধীর পায়ে ফুফুর কাছে গিয়ে বললেন,’দেখ নীলা। আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবি তুই । তুই তো জানিস ও আমার জান।ও শুধু আমার কলিজার টুকরা না ও আমার পুরো কলিজা।’ বাবা চোখের জল মুছতে শুরু করলেন।
‘হইছে আর কিছু বলতে হবে না। আমার এসব জানার কোনো কিছু বাকি নেই ।’ ফুফু একটু চেঁচানোর ভঙ্গিতে বললেন।
আমাকে কাঁদতে দেখে ফুফু আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর বললেন,’আমার কাছেই তো থাকবি। তুই কি অন্য কোনো মানুষের কাছে থাকবি যে এত চিন্তা করতে হচ্ছে । ভাইয়া তো এসে তোকে দেখে যাবে ।’
আমি মাথা নেড়ে ফুফুর কথায় সায় দিলাম। পরদিন বিকালেই বাবা,ফুফু আর আমি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। বাস যাত্রা শেষেই জীবনে প্রথম বারের মতো ট্রেনে চড়ব। এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল আমার। বাসে বসেই কল্পনায় মশগুল আমি ট্রেন ভ্রমণ নিয়ে ।
রাতে ঢাকার ট্রেনে উঠলাম। তার আগে অবশ্য আমরা রাতের খাবার খেয়েছি। জানালার পাশে বসেছি। জানালা খোলা রেখেছি। এদিকে ফুফু আর বাবা বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন জানালা বন্ধ কর ,বন্ধ কর বলে। কিন্তু কে শুনে কার কথা? জানালা বন্ধ করে দিলে তো আমি বাইরের প্রকৃতি দেখা থেকে বঞ্চিত হব। রাতের আবছা প্রকৃতি দেখার মজাই আলাদা। তার উপর আমার দমবন্ধ হয়ে যাবে যদি আমি জানালা বন্ধ করে দিই।
প্রথমে ভেবেছিলাম খুব বিরক্ত লাগবে ট্রেন জার্নিটা । কিন্তু ট্রেন চলার সাথে সাথে বাইরের প্রকৃতি দেখার মধ্যে এক আলাদা অনুভূতি আছে যা আমাকে দিব্যি ভুলিয়ে দিল যে একটানা বসে থাকতে আমার অসম্ভব রকমের বিরক্তি লাগে।
বাতাস এসে বারবার আমার কপালের সামনের চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছিল। আমি একহাতে চুল ঠিক করছি । কিছুক্ষণ পর চুল ঠিক করাই বাদ দিলাম। হোক এলোমেলো কোনো সমস্যা নেই। একটু পর খেয়াল করলাম বাবা আর ফুফু দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। ওদের ঘুমন্ত দেখে আমার কেন যেন খুব ভালো লাগলো। আমি সাথে করে আনা চায়ের ফ্লাস্কটা খুললাম। তারপর চা টা গরম করে আয়েশ করে খেতে শুরু করলাম।
খুব ভোরে আমরা ঢাকায় পৌঁছে গেলাম। আমরা সবাই ট্রেন থেকে নামলাম। ফুফু এদিক ওদিক দেখতে লাগলেন। আর কী যেন বিড়বিড় করে বলছেন! আমি জানতে চাইলে বললেন,’নিশানকে বলেছিলাম গাড়ি নিয়ে আসতে এখন তার তো কোনো হদিস দেখতে পাচ্ছি না।’
চলবে…ইন শা আল্লাহ্
বি.দ্র. আমাকে কি চিনতে পারছেন? আমি কিন্তু নতুন কেউ না! Moon Snigdha র কথা মনে আছে? আমি সেই । একদম ভিন্ন প্রেক্ষাপটের নতুন গল্প নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের সামনে।