গল্প:- বউ_পাঁখি পর্ব:-(০১)
নতুন বিয়ে করেছি বউয়ের সাথে বসে যে দুইটা মিনিট শান্তিতে কথা বলবো তার উপায় নেই। এইটা বউ না পাঁখি ফুড়ুৎ করে আসে ফুড়ুৎ করে যাই। যখনি আসে তখনি মন মেজাজ খারাপ করে দেয়। আমি না করেছি তসিবাকে বিয়ে করবো না তাও আব্বু এক প্রকার জোড় করে বিয়েটা করিয়ে দিয়েছে। বাবা হয়েছে বলে আজ আমাকে এমন একটা মেয়ের সাথে বিয়েটা দিয়েছে। বিয়ে করেছি আজ ২ মাস কিন্তু এখন অব্দি বউকে কারো সামনে নিয়ে যেতে পারিনি।
কেনো নিয়ে যেতে পারিনি তার কারনটা আস্তে আস্তে যেনে যাবেন। যাই এখন ফ্রেস হয়ে অফিসে যাই যখনি শাওয়ার নিতে যাবো তখনি,,, তসিবা দৌরে এসে উয়াশ রুমে ঢুকে গেছে,,, তসিবা তুমি এখন শাওয়ার নিতে গেছো কেনো?
তসিবা:- আব্বাজান বলছে আজ থেকে আপনার সাথে আমিও অফিসে যেতাম।
আমি:- মানে তুমি অফিসে যাবে কেনো?
তসিবা:- আমাকে নিয়ে তো কোথাও বেড়াতে যান নাই। তাই আমি আব্বাজানকে বলছি অফিসে আপনার সাথে যাবো আর রাতে আপনার সাথে বাড়ীতে আসবো।
আমি:- তোমাকে নিয়ে যাবো অফিসে তাহলে আমার মাথাটা আগে খারাপ হবে। (তখনি তসিবা উয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসেই বলে,,)
তসিবা:- দেখি কোন দিক দিয়ে আপনার মাথাটা আগে খারাপ করবো। হ্যা পেয়েছি সামনের দিক দিয়ে খারাপ করবো তাহলে যদি রাগটা একটু কমে।
আমি:- তসিবা কি হচ্ছে এটা? আমার কিন্তু এভার সত্যি সত্যি রাগ হচ্ছে।
তসিবা:- কোন দিক দিয়ে রাগ উঠছে দেখি? (তসিবার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছি। তসিবা আমার চোখের দিকে আঙ্গুল দিয়েছে গুতুর মত করে। ওর আঙ্গুল এসে আমার চোখে লেগে গেছে আমি চোখে হাত দিয়ে ধরে বসে পরেছি।) সরি সরি আমি বুঝতে পারিনি দেখি আমাকে দেখতে দেন।
আমি:- দেখি সরো বলে তসিবাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছি। (তসিবা তাও এসেছে আমার কাছে এসে চোখ গুলো খুলে ফু দিতেছে।)
তসিবা:- আমিও না কেমন মেয়ে আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ। তখনি আমি বসা থেকে উঠে এক থাপ্পড় দিয়েছি তসিবা গাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আপনি আমাকে থাপ্পড় দিতে পারলেন?
আমি:- হ্যা দিতে পারছি অনেক সহ্য করেছি আর নয়।
তসিবা:- আপনি আমাকে কি সহ্য করেছেন? আমাকে সাথে করে তো কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাননি। আমার বাবা মা আমাকে ১৮ বছর সহ্য করেছে। ওরা কোনো দিন আমাকে এত জুড়ে থাপ্পড় দেয়নি। আর আপনি দুই মাসে আমাকে তিনটা থাপ্পড় দিয়েছেন।
আমি:- তোমার বাবা মা সহ্য করছে বলে আমি সহ্য করবো নাকী? মা বাবারা তাদের ছেলে মেয়ের সব কিছু সহ্য করে কারন তারা বাবা মা তাদের ধর্য্য অশিম। আর তোমাকে নিয়ে যাবো ঘুরতে আমার মনে আছে তুমি কি কি করেছো আরো নিয়ে যাবো তোমাকে?
তসিবা:- ঠিক আছে এখন আমাকে সরি বলেন তাহলে আমি ক্ষমা করে দিবো আপনাকে?
আমি:- তোমাকে বলবো সরি। আরে তোমার মত মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি এইটা তোমার সাত জনমের ভাগ্য ভালো। তাও তুমি সারাক্ষন আমাকে বিরক্ত করতে থাকো। তোমাকে যেই কাজটা না করি সেই কাজটা তুমি একটু বেশি করে করো। তসিবাকে কতক্ষন বকা জকা করে আমি শাওয়ার নিতে চলে গেছি। শাওয়ার শেষ করে বের হবো কিন্তু দরজা বাহির দিয়ে বন্ধ করা। আরে দরজাটা বন্ধ করছে কে? (তখনি তসিবা বাহির থেকে আমাকে বলে,,,,)
তসিবা:- যতক্ষণ সরি না বলবেন কতক্ষন দরজা খুলে দিবো না। আমাকে বলেন সরি #বউ_পাখিঁ আমি তোমাকে থাপ্পড় দিয়ে অনেকটা অনুতপ্ত আমাকে ক্ষমা করে দাও #বউ_পাখিঁ।
আমি:- কি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে চাইবো না ক্ষমা দরকার হলে দরজা ভেঙ্গে ফেলবো।
তসিবা:- ঠিক আছে দরজা ভেঙ্গে বের হোন তাহলে। (তখনি আমি দরজাতে লাথি মারতে থাকলাম) সত্যি সত্যি ক্ষমা চাইবেন না নাকী?
আমি:- তোমার মত মেয়েকে বিয়ে করে আজকে আমার এত কষ্ট বলে দরজায় আরো লাথি দিতে লাগলাম।
তসিবা:- আরে কি করছেন সত্যি দরজা ভাঙ্গবেন নাকী?
আমি:- হ্যা ভাঙ্গবো।
তসিবা:- দরজা খুলে দিতেছি বলে তসিবা দরজাটা খুলে দিয়েছে। আমাকে সরি বললে কোন দিক দিয়ে আপনার আত্ব মর্যাদায় ভাটা পড়তো।
আমি:- তুমি এখন আমার সামনে থেকে যাও বলছি তানা হলে আবার একটা থাপ্পড় দিবো কিন্তু।
তসিবা:- হ্যা দেন (তসিবা ওর গালটা এগিয়ে দিয়েছে)
কি হলো দেন বা গালে দিবেন না কিন্তু কারন বা গালটা এখনো লাল হয়ে আছে।
আমি:- যাও মসা মেরে হাত ময়লা করে লাব নেই। যাও আজকে তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
তসিবা:- ঠিক আছে চলে যাচ্ছি আবার তো ডাকবেন তখন কিন্তু আমি আসবো না।
আমি:- ২ মাসে তোমাকে আমি ডাকছি তুমি নিজেই এসে আমাকে বিরক্ত করতে থাকো যাও তোমাকে ডাকবো না। (তসিবা চলে গেছে যাক একটু শান্তি পাওয়া যাবে। আমি রেডি হয়েছি আরে মোবাইলটা কোথায়? কিছুটা খুঁজা খুঁজি করেও পায়নি। নিশ্চয় তসিবা মোবাইলটা লুকিয়ে রাখছে। তসিবা তসিবা বলে দুইটা ডাক দিয়েছি তখনি দৌরে এসে হাঁজির,,,
তসিবা:- আমাকে তসিবা বলে না ডেকে #বউ_পাঁখি বলে ডাকবেন। আচ্ছা আপনি না আমাকে ডাকবেন না তাহলে এখন কেনো ডাকছেন?
আমি:- আমার মোবাইলটা দাও।
তসিবা:- আপনার মোবাইল কোথায়?
আমি:- বেশি কথা না বলে মোবাইলটা দাও তোমার জন্য আমার প্রতিদিন অফিসে যেতে দেড়ি হচ্ছে। আর আমি এখন অফিসে কাওকে কিছু বলতেও পারিনা।
তসিবা:- কেনো বলতে পারেন না আমি কি আপনার মুখে হাত দিয়ে ধরে রাখছি নাকী?
আমি:- মোবাইলটা দাও এমনিতেই আজকে অনেক দেড়ি হয়েছে।
তসিবা:- মোবাইল কোথায় আমি কি করে বলবো? (তখনি আমি তসিবার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর তসিবা পিছনে যাচ্ছে) আপনি এমন ভাবে আসছেন কেনো আপনার মতি গতি সুবিধার লাগছে না।
আমি:- তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে আদর করতে খুব ইচ্ছে করছে।
তসিবা:- মানে এখন আদর করবেন তাহলে অফিসে যাবেন কখন?
আমি:- আজকে যাবো না বলে তসিবার হাত ধরে টান মেরে কাছে নিয়ে এসেছি। তসিবা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
তসিবা:- হঠাত করে এত রোমান্টিক মুডে চলে আসলেন কেনো? দরজাটা বন্ধ করে দেন কেও এসে পরবে তো?
আমি:- কেও আসবে না বলে আরো কাছে নিয়ে এসেছি। তসিবা চোখ বন্ধ করে নিয়েছে তখনি আমি আমার মোবাইলটা ওর কোমড় থেকে নিয়ে নিয়েছি। সাথে তসিবাকে ছেড়ে দিয়েছি।
তসিবা:- কি হলো ছেড়ে দিলেন কেনো?
আমি:- তোমার মত মেয়েকে আদর করবো আমি? আমি দেখতে পারছি তুমি মোবাইলটা কোমড়ে গুজে রাখছো। আজকের পর যদি আমার মোবাইলে বা কোনো কিছুতে হাত দাও তাহলে বাড়ী থেকে বের করে দিবো বলে দিলাম।
তসিবা:- তাই বলি হঠাত করে এত ভালোবাসা কোথায় থেকে উদয় হলো? আমিও দেখবো আমাকে না ভালোবাসেন কি করে? মাত্র ৬ মাসে আমাকে আপনার #বউ_পাঁখি হিসাবে সবার সাথে আপনি নিজেই পরিচয় করিয়ে দিবেন।
আমি:- ৬ মাসে কেনো ৬ বছরে সেই অধিকার পাবে না।
তসিবা:- যদি পায় তাহলে আমাকে অনেক ভালোবাসবেন আর শুধু সরি আই লাভ ইউ বলবেন।
আমি:- ঠিক আছে। আমি রাজি আছি আর যদি তুমি হেরে যাও তাহলে বাড়ী থেকে নয়। আমার জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাবে রাজি থাকলে বলো। (তসিবা কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলে,,,)
তসিবা:- ঠিক আছে আমি আপনার কথায় রাজি আছি। রোজ রোজ অবহেলার চাইতে একে বারে চলে যাওয়াই ভালো হবে। তাহলে এখন দেন আমি আপনার ট্রাইটা বেধে দেয়।
আমি:- তোমাকে দিয়ে ট্রাই বাধাবো মনে নেই তোমার ট্রাই বানতে গিয়ে ফাস লাগিয়ে দিয়ে ছিলে। দেখি সরো তসিবাকে ধাক্কা মেরে চলে আসছি নিছে। খাবার টেবিলে খেতে বসেছি তখনি আম্মু বলে,,,
আম্মু:- সৌরভ বিয়ে হয়ছে ২ মাসের উপরে এখনো তুই তোর শ্বশুড় বাড়ীতে যাসনি। আমি বলিকি আগামী কাল রাতে তসিবাকে নিয়ে তসিবাদের বাড়ী থেকে ঘুরে আয়।
আমি:- এখন আমি কোথাও যেতে পারবো না। আমার অফিসে অনেক কাজ আছে। খাবার শেষ করে সোজা অফিসে জন্য বেড় হয়ে চলে এসেছি। অফিসে এসে কাজ গুলো করতেছি ও ভালো কথা আমি কাজ করার ফাকে আমার পরিচয়টা দিয়ে নেই। আমার নাম আল মোহাম্মদ সৌরভ আমরা বড় আপু আর আমি। আপুর বিয়ে হয়ছে অনেক আগেই ওর ছোট একটা মেয়ে আছে।
আমরা ঢাকা থাকি আর তসিবার সাথে আব্বু এক প্রকার জুড় করে আমার বিয়ে দিয়েছে। তসিবাদের বাড়ী কুমিল্লা ওর পরিবার সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি। ওরা দুই বোন বড় বোন ওদের বাড়ীতে থাকে স্বামী সহ। তসিবার আব্বু একজন কৃষক আর ওর মা গৃহিনী।
আব্বু অনেক কষ্ট করে এই ব্যবসাটা দ্বাড় করিয়েছে আর আমাদের অনেক ভালোবাসে। তাই আমরা আব্বুর কথা সহজে না করিনা। তবে চাচা চেয়েছিলো ওনার মেয়ে অর্থ্যাৎ লিজার সাথে আমার বিয়ে দিতে।
আমিও রাজি ছিলাম লিজাকে বিয়ে করতে কারন লিজা অনেক স্মার্ট ভাবে কথা বাত্রা বলে। আর আমার সাথে লিজাকে মানাতো খুব। আব্বু রাজি ছিলোনা তাই একদিন নানুর বাড়ীর নাম করে আমাদের সবাইকে কুমিল্লা নিয়ে গিয়ে তসিবার সাথে জুড় করে বিয়ে করিয়ে দেয়। কাজ গুলো শেষ করেছি তখনি আব্বু এসেছে,,,
আব্বু:- সৌরভ তুই নাকী তসিবাকে নিয়ে ওদের বাড়ীতে যেতে মানা করেছিস?
আমি:- হ্যা এখন যেতে পারবো না আর এদিকে আমার অনেক কাজ আছে। নতুন কিছু প্রডাক্ট মার্কেটে দিতে হবে।
আব্বু:- তাহলে দুইদিন পর বাড়ীতে আমি পার্টি দিতেছি তোদের বিয়ে উপলক্ষে। সবার সাথে তসিবাকে তোর বউ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিবো।
আমি:- মানে কে বলছে আপনাকে এই পার্টি দিতে। এখন পার্টি দিতে হবে না।
আব্বু:- তাহলে তসিবাকে নিয়ে কাল সকালে কুমিল্লা যাবি। কোনটা করবি আমাকে বলো পার্টি নাকী শ্বশুড় বাড়ী?
আমি:- কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলি,,, আব্বু কাল সকালে তসিবাকে নিয়ে ওদের বাড়ীতে যাবো। ( আব্বু মোবাইল কানে দিয়ে বলে,,,)
আব্বু:- বউ মা তুমি ব্যাগ রেডি করো কাল সকালে তোমাকে নিয়ে সৌরভ যাবে তোমাদের বাড়ী। আব্বু হাসতে হাসতে চলে গেছে আমি রেগে মেগে অফিসের কাজ গুলো শেষ করে সন্ধায় বাড়ীর দিকে রওনা দিয়েছি। বাড়ীতে ঢুকতেই আমাকে দেখে আপু আম্মু হাসতেছে,,,
আপু:- ভাই তাহলে শ্বশুড় বাড়ীতে যেতে রাজি হয়েছিস।
আমি:- আপু আপনিও শুরু করে দিয়েছেন। কারো সাথে আর কোনো কথা না বলে সোজা রুমে এসে থমকে গেছি। আরে মেয়েটা করছে কি আপু আম্মু বলে একটা জুড়ে চিৎকার দিয়েছি,,,, To be continue,,,,,
।।।
গল্প:- বউ_পাঁখি পর্ব:-(০১)
লেখা_AL_Mohammad_sourav