গল্প:-নব_দম্পতি পর্ব:-(০১)

0
1602

গল্প:-নব_দম্পতি পর্ব:-(০১)
লেখা:- AL Mohammad Sourav
!!
অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছি তখনি আব্বা বলে,, সৌরভ তোর সাথে গতকাল বাইকের পেছনে যেই মেয়েটা দেখছি সেই মেয়েটা কে? (আব্বাকে বলা যাবেনা আমার গ্রালফ্রেন্ড রিপা! বলে দেয় আমার অফিস কলিক গাড়ি পায়নি তাই বাড়িতে পৌঁছায় দিয়েছি। যেই কথা সেই কাজ আব্বাকে বলেছি)

আমি:- আব্বা ওনার নাম রিপা ওনি আমার অফিস কলিক বাস পায়নি তাই বাইকে করে বাসায় দিয়ে এসেছি।

আব্বা:- ও তাই বল আমি ভাবছি তোর গ্রালফ্রেন্ড। আচ্ছা তাহলে তোর কোনো গ্রালফ্রেন্ড নেই?

আমি:- মাথাটা নাড়িয়ে বলেছি নাহ আমার গ্রালফ্রেন্ড নেই।

আব্বা:- যাক তাহলে আমাকে আর কোনো জামেলা পড়তে হলোনা।

আমি:- কিসের জামেলা?

আব্বা:- আমার বস্ জাবেদ সাহেবের মেয়ের সাথে তোর বিয়ে কথা ফাইনাল করেছি গতকাল। আর গতকাল দেখছি তোর বাইকের পেছনে একটা মেয়ে আমি তো রাতে অনেক চিন্তা করেছি এখন চিন্তা মুক্ত হলাম।

আমি:- আব্বা আপনি আমাকে না জানিয়ে বিয়ের পাকা কথা দিয়েছেন কেনো?

আব্বা:- কেনো সমস্যা কি তুই বড় হয়েছিস তকে বিয়ে করানো আমার কর্তব্য। আমি এই বছর হজ্জ করতে যাবো তাই তোর বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই।

আমি:- আব্বা আপনাকে আমি মিথ্যা বলছি রিপা আমার গ্রালফ্রেন্ড ওকে আমি অনেক ভালোবাসি।

আব্বা:- চাপা মারার যায়গা পাওনা আমি তোমার বাপ আমার সাথে চিটিং গিরি চলবে না। তোমার বড় ভাই রাজু আমার সাথে এমন করছে কিন্তু চান্স পায়নি। আমার বস্ এর মেয়েকে তোমার বিয়ে করতে হবে যদি না করো তাহলে বাড়ি থেকে বের করবো সাথে চাকরি চুতু করে ফেলবো।

আমি:- আব্বা আপনি এমন কথা বলতে পারলেন?

আব্বা:- হ্যা পারছি এবার বল কি করবি?

আমি:- বাড়ি গাড়ি চাকরি সব হারাতে রাজি আছি কিন্তু রিপাকে হারাতে পারবোনা। দরকার হলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো তাও এই বিয়ে করতে পারবোনা।

আব্বা:- ঠিক আছে! তাহলে বাবা তুমি চলে যাও আর দয়া করে অফিসে যেয়োনা কারন তোমার চাকরিটার আমি বারোটা বাজিয়ে দিতেছি।

আম্মা:- আপনি এসব কি বলছেন নিজের ছেলের চাকরির বারোটা বাজিয়ে দিবেন মানে?

আব্বা:- তুমি চুপ থাকো! তুমি যখন ছেলের বউকে কিছু বলো তখন আমি কিছু বলি? এখন আমি আমার ছেলেকে বলছি তুমি চুপ থাকো। সৌরভ তুই সিদ্যান্ত নিবি এখন কি করবি?

আমি:- আমি বাড়ি থেকে চলে যাবো চাকরি ছেরে দিবো তাও আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে ছাড়তে পারবোনা।

আব্বা:- তাহলে তুমি বাবা যাও আর আমার বাইকের চাবিটা দাও। আব্বা নিজে এসে আমার হাত থেকে বাইকের চাবিটা নিয়ে গেছে।

আমি:- ঠিক আছে গেলাম! বাসা থেকে একটু বাহিরে বের হয়ে এসে রিপাকে ফোন করেছি। রিং হয়ে যাচ্ছে রিসিব করার কোনো নাম নেই তিনবার ফোন করার পর রিসিব হয়েছে।

রিপা:- এত ফোন করছো কেনো?

আমি:- দরকার আছে তোমার সাথে জুরুরী কথা আছে। তুমি আমাকে বিয়ে করবে?

রিপা:- হ্যা করবো! কিন্তু এখন হঠাত বিয়ের কথা কেনো বলছো?

আমি:- আমরা আজকে বিয়ে করবো তোমাকে কাজি অফিসের ঠিকানা মেসেজ করে দিতেছি তুমি ঐ খানে চলে এসো!

রিপা:- কি আজকে বিয়ে করতে পারবোনা আমি! তোমার মাথা ঠিক আছে তো নাকী? তিন মাস পরে আমার ফাইনাল পরীক্ষা এখন এসেছো বিয়ে করতে। সামনে পরীক্ষা এখন এত প্যারা দিওনা জানু প্লিজ।

আমি:- কি বলছো তুমি?

রিপা:- ঠিকই বলছি! ফোন রাখো আব্বা বাসায় আছে যদি জানতে পারে আমি প্রেম করি তাহলে কালকে আমার বিয়ে দিয়ে দিবে। আর তোমাকে না বলছি আমি বাসায় থাকলে ফোন করবেনা তাও কেনো ফোন করছো? (রিপা কথা গুলি বলে ফোনটা কেটে দিয়েছে)

আমি:- এখন কি করবো দূরর মাথায় কোনো কাজ করছেনা যাই গিয়ে জুয়েলের সাথে কথা বলে দেখি কি করা যায়। জুয়েলের কাছে যেতেছি তখনি ভাবি ফোন করেছে। ভাবি কখনো আমাকে ভালো কোনো বুদ্ধি দেয়নি বরং খারাপ বুদ্ধি দেওয়ার জন্য উৎপেতে থাকে। আবার ফোন করেছে রিসিব করতেই বলে,,,

ভাবি:- সৌরভ তুমি কোথায় আছো?

আমি:- কেনো কি দরকার?

ভাবি:- তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো!

আমি:- যা বলার ফোনে বলো!

ভাবি:- সৌরভ তুমি তোমার বাবার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে নাও। বিয়ের পর ওর সাথে ঠিক করে কথা বলবেনা! ভালো কথায় ঝগড়া করবে উঠতে বসতে কাজে অকাজে দমক দিয়ে কথা বলবে। রাতে ফ্লোরে ঘুমাতে দিবে আর সব সময় খারাপ ব্যবহার করবে তাহলে সেই মেয়ে নিজে থেকে তোমাকে ডির্ভোস দিয়ে চলে যাবে। তখন তোমার বাবা তোমাকে কিছু বলবেনা।

আমি:- বিয়ে করবো মানে রিপার কি হবে?

ভাবি:- রিপাকে কিছুই বলার দরকার নেই। তুমি রিপার সাথে আগের মত প্রেম করে যাবে আর এদিকে তোমার বউকে দিন রাত টর্চার করতে থাকবে। দেখবে দুই মাসে তোমার আমার আর শ্বাশুড়ি মায়ের টর্চার সহ্য করতে না পেরে তোমাকে ডির্ভোসের কাগজ হাতে ধরিয়ে চলে যাবে।

আমি:- আইডিয়াটা মন্দ না! কিন্তু মেয়েটা যদি আব্বাকে বলে দেয় তাহলে তো আব্বা আমাকে বারোটা বাজাবে।

ভাবি:- তুমি তোমার আব্বার সামনে অনেক সুন্দর ব্যবহার করবে। আমি তোমার সাথে মিলে কাজ করবো যাতে করে বিয়ের দুই মাসের মাথায় পালিয়ে যাই কেমন।

আমি:- উম্মা ভাবি তুমি জিবনের এই প্রথম আমাকে একটা ভালো বুদ্ধি দিয়েছো! ঠিক আছে আমি বাসায় আসতেছি আব্বাকে বলে দিবো বিয়ে করতে রাজি আছি। মনের সূখে বাড়িতে ঢুকেছি আমাকে দেখে আব্বা বলে।

আব্বা:- আবার এসেছিস কেনো?

আমি:- আব্বা আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি আপনার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি আছি।

আব্বা:- সত্যি বিয়ে করবি আয় আমার বুকে আয়।
আব্বা আমাকে জড়িয়ে ধরেছে! সৌরভ মেয়েটা অনেক সুন্দর আর ভদ্র খুব ভালো মেয়ে! তোর কপালটা অনেক ভালো তাই এমন মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হচ্ছে। সবাই আজকে আমার সাথে যাবে ওরা আজকে রাতে বিয়েটা পড়িয়ে দিতে চাই।

ভাবি:- ঠিক আছে! তাহলে তো কিছু কেনা কাটা করতে হবে।

আম্মা:- আমার ছেলের বিয়ে অথচ কোনো অনুষ্টান করবে না এইটা কি হবে?

আব্বা:- অনুষ্টান পরে করা হবে এখন তাড়াতাড়ি বিয়েটা পড়িয়ে দিতে চাই। (আব্বা অনেক খুশি হয়েছে আব্বা তার বসকে ফোন করেছে বলছে আজ বিয়ে করিয়ে দিতে চাই।)

আম্মা:- সৌরভ শুন।

আমি:- হ্যা আম্মা বলেন?

আম্মা:- তুই বিয়েটা করিস না! মেয়েটা সুবিধার নয় আমি দেখছি মেয়েটা অনেকটা রাগি টাইপের।

আমি:- কিন্তু বিয়ে যদি না করি তাহলে আব্বা তো বাড়ি থেকে বের করে দিবে? ( এই তুমি সৌরভকে কি বলতেছো)

আম্মা:- কিছুনা বলতেছি তুই বিয়েটা কর মেয়েটা অনেক ভালো তুই অনেক সূখে থাকবি। এসব কিছুই বলতেছি।

আব্বা:- বড় বউ সব কিছু রেডি করেছো?

ভাবি:- হ্যা সব রেডি! সৌরভ যাও গিয়ে রেডি হয়ে নাও।

আমি:- হ্যা যাচ্ছি! রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে গেলাম। নিচে এসেছি আব্বা ভাবি ভাইয়া সহ এক গাড়িতে করে গেলাম কনের বাড়িতে।

আব্বা:- সৌরভ সবার সাথে সুন্দর করে ব্যবহার করবি। আর ওনি হচ্ছে তোর শ্বশুড় মসায় সালাম কর।

আমি:- আস্সালামু আলাইকুম।

শ্বশুড়:- উলাইকুম আস্সালাম। এসো বাবা ভিতরে এসো। (বাড়ির ভিতরে ঢুকছি বাড়িটা অনেক সুন্দর আর অনেক বড়। আমি সুফায় বসেছি কিছুক্ষনের মধ্যে আমাদের খাওয়া দাওয়ার কাজ শেষ করেছি)

আব্বা:- স্যার এবার বিয়েটা শুরু করা যাক।

শ্বশুড়:- স্যার নয় বলো বেয়াই সাহেব। কাজি আর মৌলভী সাহেব আসেন বিয়েটা আরম্ভ করেন।(কাজি তার কাজ আরম্ভ করেছে আর ঐদিকে হুজুর তার কাজ আরম্ভ করেছে! কিছুক্ষনের মধ্যে ইসলামিক সকল নিয়ম মেনে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো। কিছু আনুষ্টিক নিয়ম শেষে বউকে আনার জন্য শ্বশুড় মসায় বলছে! কিছু মেয়ে একটা মেয়েকে ধরে নিয়ে আসতেছে ঘোমটা লম্বা আছে কিন্তু কান্নার কোনো শব্দ পাচ্ছিনা)

আমি:- ভাবি তুমি তো বিয়ের দিন অনেক কান্না করেছো কিন্তু এই মেয়ে তো কোনো কান্না করছেনা। বোবা নাকী মেয়ে?

ভাবি:- হতেও পারে তাই তো তোমার আব্বা এত তাড়াতাড়ি বিয়েটা পড়িয়ে দিয়েছে। যদি বোবা হয় তাহলে তো তোমার জন্য আরো ভালো হবে। খুব সহজে বাড়ি থেকে বিদায় করতে পারবে।

শ্বশুড়:- বাবা সৌরভ আমার মেয়ে তসিবা ইসলামকে আজকে তোমার হাতে তুলে দিলাম(তাহলে মেয়েটার নাম তসিবা ইসলাম তখনি তসিবার হাতটা আমার হাতের উপর রাখছে) আজ থেকে তুমি ওর সব কিছু খেয়াল রাখবে। তসিবা যদি কোনো ভুল করে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখো কেমন।

আমি:- আপনি চিন্তা মুক্ত থাকেন তসিবা অনেক সূখে থাকবে।

আব্বা:- বেয়াই সাহেব আমরা আছি তো তসিবাকে দেখে শুনে রাখবো। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। এখন মেয়েকে বিদায় দেন! (তসিবার বাবা মা আমাকে অনেক বুঝিয়ে দিয়েছে! সবাই কান্না করছে কিন্তু তসিবা একটু আঁ করেনি। আমার তো ঐ দিকে বারোটা বাজতেছে যদিও তসিবাকে এখনো ভালো করে দেখিনি। এক এক করে সবাই গাড়িতে উঠেছি! তসিবা আমার পাশে বসেছে বাবা সামনে ভাইয়া গাড়ি চালাচ্ছে ভাবি একটু পেছনে বসেছে। ঘন্টা খানেকের মধ্যে আমরা বাড়িতে চলে এসেছি সাধারন ভাবে বরণ করে নিয়েছি আম্মা আমাদের।

ভাবি:- তসিবা তুমি আমার সাথে আসো আমি সৌরভের রুমে তোমাকে নিয়ে যাই। (তসিবা হা না কিছুই বলেনি ভাবির সাথে হেটে রুমে গেছে)

ভাইয়া:- সৌরভ তোর বউ তো কোনো কথায় বলেনা এমন কি কান্না করেনি বোবা নাকি?

আমি:- ভাই বোবা হলেও কি আর বোবা না হলেও কি এই বাড়িতে মেয়াদ মাত্র দুই মাস।

ভাইয়া:- মানে কি বলছিস?

আমি:- হ্যা ঠিকই বলছি! আচ্ছা আমি একটু ছাদের উপরে যাই তখনি ভাবি এসে বলে।

ভাবি:- এমনিতেই রাত ১টা বেজে গেছে এখন রুমে যাবে চলো। ভাবি আমাকে রুমে নিয়ে এসেছে। যাও ভিতরে ঢুকে দেখো তোমার বউ বোবা নাকী কথা বলতে পারে।

আমি:- যাই হোক মেয়াদ তো মাত্র দুই মাস বলে ভিতরে ঢুকেছি! আমি কিছু বলতে যাবো তখনি আমার হাতে একটা চিঠির মত কাগজ ধরিয়ে দিয়েছে! কাগজটা খুলে তো আমার মাথায় হাত দেওয়ার অবস্থা! To be continue,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে