গল্প:- দুই_বধূ_এক_স্বামী পর্ব:- (০৩)
লেখা:-AL Mohammad sourav
!!
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার প্রথম স্ত্রী মীম দরজা দিয়ে ঢুকতেছে আর দ্বীতীয় স্ত্রী তসিবা বাপের বাড়ী যাওয়ার জন্য ব্যাগ হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতেছে। আমি একবার মীমের দিকে আরেকবার তসিবার দিকে তাকাচ্ছি। তসিবা দ্রুত হেটে চলে যাচ্ছে তখনি আমি গিয়ে ওর হাত ধরেছি।
তসিবা:- আপনার প্রথম স্ত্রী চলে এসেছে তাই আমার কোনো প্রয়োজন নেয় আপনার কাছে। আর আপনার সাথে মাত্র একদিনের সংসার আমার! এই একদিন আপনি খুব সহজে ভুলে যেতে পারবেন তাই আমি চলে যাচ্ছি আমার বাপের বাড়ী।
আমি:- মানে তুমি কোথায় যাচ্ছো বলে তসিবাকে টান মেরে আরো কাছে নিয়ে এসেছি! মীম তাকিয়ে আছে আমার দিকে?
ভাবি:- মীম তুমি এখানে কেনো এসেছো?
মীম:- আমার স্বামীর বাড়ীতে আসবোনা তো কোথায় আসবো তাহলে?
আমি:- কোনটা তোমার স্বামীর বাড়ী?
মীম:- সৌরভ তুমি আমার স্বামী আর এইটা আমার স্বামীর বাড়ী। আর তাছাড়া আমি নিজে থেকে আসিনি আমাকে এখানে আসতে বলা হয়ছে।
আব্বু:- কে বলছে তোমাকে আসতে এখানে?
মীম:- রাতে সৌরভের নাম্বারে ফোন করে ছিলাম তখন একটি মেয়ে ফোন রিসিব করেছে। সে মেয়েটি আমাকে এই বাড়ীর ঠিকানা দিয়েছে।
আমি:- আমার নাম্বার তুমি পেলে কোথায়?
মীম:- নাম্বার না পাওয়ার কি আছে? আমার স্বামীর নাম্বার আমার কাছে থাকবেনা তো থাকবে কার কাছে? আমি জানি সৌরভ তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসো সে আমাকে বলছে?
আমি:- কে বলছে তোমাকে ভালোবাসি? তখনি তসিবা বলে!
তসিবা:- আমি বলছি আপনি আপনার প্রথম স্ত্রীকে এখনো অনেক ভালোবাসেন। আর আমি বলছি ওনাকে এই বাড়ীতে আসতে।
আমি:- তসিবা তুমি বলেছো কিন্তু কেনো?
তসিবা:- আপনার মোবাইলে গত কাল রাতে ফোন করেছে ওনি তখনি বলেছি আমি আসতে। আর তাছাড়া রাতে আমি আপনার বুকের উপর শুয়ে ছিলাম কিন্তু আপনি বার বার ঘুমের মাঝে মীমের নাম নিয়েছেন। তখনি আমি বুঝতে পারি আপনি মীমকে এখনো ভালবাসেন।
আম্মু:- তার জন্য তুমি এই মেয়েটাকে আসতে বলবে?
মীম:- সৌরভ আমার ভুল হয়ে গেছে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
আমি:- মানে কিসের ভুল? কিসের ক্ষমা? তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই আর কোথাও কোনো সময় দেখা হয়ছে নাকী? আমার সঠিক মনে পড়ছে না। তসবি তুমি চলো রুমে যাবে আমার আর দেখি ব্যাগটা দাও আমার কাছে।
মীম:- এর পরিনাম কিন্তু ভালো হবে না! আর তোমার সাথে কিন্তু আমার এখনো ডির্ভোস হয়নি তাহলে তুমি আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করছো কি করে? ইচ্ছে করলে তোমাকে আমি এখনো জেলে পাঠাতে পারি।
আমি:- কে বলছে ডির্ভোস হয়নি তুমি নিজে ডির্ভোস দিয়েছো আর এখন এসেছো আবার আমার জীবনটা নরক করতে?
মীম:- আমি নরক করবো কেনো?
আমি:- তুমি নিজেই সেইটা ভালো করে জানো। আচ্ছা তুমি এখন যাও তানা হলে গার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব। আর তুমি পারলে আমাকে জেলে পাঠাও দেখি।
মীম:- কি এত বড় সাহোস তোমার দেখাচ্ছি তখনি চেয়ে দেখি একজন পুলিশ আর মীমের মা দুজনে ভীতরে এসেছে,,
পুলিশ:- দেখুন মিস্টার সৌরভ মীম আপনার আইন মতে এখনো স্ত্রী! আর ওনাকে না জানিয়ে আপনি ২য় বিয়ে করেছেন এখন আবার ওনাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবেন মানে?
আমি:- দেখুন ওর সাথে আমার ছয় মাস আগে ডির্ভোস হয়ে গেছে। এখন আবার এসেছে কোন মতলব নিয়ে।
পুলিশ:- এই সেই ডির্ভোস কাগজ এখানে তো আপনার কোনো সাইন নাই! আর যেহেতু সাইন করেননি সেহেতু ডির্ভোস হয়নি। সুতুরাং মীম এখনো আপনার স্ত্রী যদি আপনারা ওনার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেন তাহলে আপনাকে আমি থানায় নিতে বাধ্য হবো। কারন এখনো আপনাদের সেই পরুনো মামলা শেষ হয়নি।
আম্মু:- তসিবা তুমি দেখছো তো মীম কেমন? তুমি সব কিছু যেনে কেনো এই মেয়েকে এখানে আসতে বলছো?
তসিবা:-শ্বাশুমা আজ নয় তো কাল মীম কারো না কারো কাছ থেকে যেনে যেতো। তবে আপনাদের কোনো সমস্যা নেয় আমি নিজেই আজকে বাড়ী ছেরে চলে যাবো। মীম আপনি আপনার স্বামীর সাথে সংসার করতে পারবেন।
আমি:- তসিবা তোমার কি হয়ছে রাতে তুমি কি বলছো আর এখন কি বলতেছো?
তসিবা:- আমি ঠিকই বলছি আর আমি আপনাকে ভালবাসতে পারবোনা প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি একটা ছেলেকে ভালবাসি ওকে বিয়ে করতে চাইছি কিন্তু আব্বুর জন্য আপনাকে বিয়ে করতে হয়ছে।
আমি:- তুমি মিথ্যা বলছো!
তসিবা:- সত্যি মিথ্যা যেনে আপনার কোনো লাভ নেই এখন আপনার প্রথম ভালোবাসা আর প্রথম স্ত্রী সব আছে। আমি চলে গেলে আপনার জন্য আরো ভালো হবে। আমাকে যেতে দিনন প্লিজ।
আমি:- তুমি চাইলে এখন যেতে পারবেনা তুমি বিয়ের আগে বলতে আমি নিজে থেকে বিয়েটা ভেংগে দিতাম। তবে এখন তুমি আমার স্ত্রী আমি তোমাকে এত সহজে মুক্তি দিতে ছিনা। আমার জীবন নিয়ে খেলার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?
মীম:- তোমাদের ড্রামাটা বন্ধ করো আমার মাথা ব্যথা করছে আমি এখন একটু একা থাকতে চাই। এই তোমার রুম কোনটা আমি রুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হবো।
তসিবা:- ঐ তো উপরে ডান দিকের রুমটা তখনি আমি তসিবার মুখ চেপে ধরেছি।
আমি:- তসিবা তুমি বোকা নাকী নিজের সংসার নিজে এমন ভাবে ভাঙ্গে নাকী?
তসিবা:- ছারুন আমি যাবো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ:- আপনাদের পরিবারের ঝগড়া পরে করবেন! এখন বলেন আপনারা মীমকে এই বাড়ীতে থাকতে দিবেন তো?
আমি:- নাহ ওকে এই বাড়ীতে থাকতে দিবোনা। আপনারা যা করার করেন আমি ওকে জীবনেও মেনে নিবোনা।
পুলিশ:- তাহলে আপনি আর আপনার বাবা দুজনে এখুনি আমার সাথে থানায় চলেন।
তসিবা:- দেখুন স্যার মীমকে এই বাড়ীর ছেলের বউ হিসাবে মেনে নিবে। আব্বাজান কি হলো চুপ করে আছেন কেনো?
আব্বা:- ঠিক আছে সৌরভ মীমকে বউ হিসাবে মেনে নে। মীম তুমি যাও উপরে সৌরভের রুম আছে।
তসিবা:- তাহলে আমি চলে যাই আপনি ভালো থাকবেন কেমন?
আমি:- বললে হলো, দেখুন অফিসার আমি মীমকে মেনে নিয়েছি, এবার আপনারা আসুন তখনি তসিবা আমার হাতটা এক জাটকায় ছারিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। আমিও গিয়ে তসিবাকে কুলে তোলে নিয়েছি সবার সামনে! মীম আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তসিবা:- কি হচ্ছে এটা সবাই দেখছে তো?
আমি:- দেখুক তাতে আমার কি বলে তসিবাকে নিয়ে উপরে হেটে চলে আসতেছি। মীম পিছু পিছু আসতেছে মীমকে দেখিয়ে তসিবাকে নিয়ে সোজা রুমে নিয়ে আসলাম।
তসিবা:- আপনি যাকে এত বেশি ভালোবাসেন সে তো এসেছে এবার তাকে নিয়ে সংসার করেন। আর হ্যা আমাকে স্পর্শ করতে না করেছি তাও কেনো করেছেন?
আমি:- করেছি তার কারন তুমি আমার বিবাহিত বউ দেখি তোমার গালে কালি লাগছে।
তসিবা:- কোথায় কালি লাগছে মিথ্যা কথা কেনো বলেন আমাকে? তখনি মীম ভীতরে ঢুকে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।
আমি:- এই আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন কেনো ছারেন বলছি বলে নিজেকে ছারিয়ে নিয়েছি।
মীম:- কেনো এর আগে তো কত বার এমন করে ধরেছি তখন তো কিছু বলোতে না। আর আমাকে তো ধরতে বলতে তুমি তাহলে আজ তাহলে কেনো এমন করছো?
আমি:- প্লিজ মীম তোমার নাটকটা বন্ধ করো আমার আর ভালো লাগছেনা।
মীম:- তাহলে আজ থেকে আমি এই রুমে ঘুমাবো আর হ্যা এই রুমটায় আমি আর তুমি থাকবো কেমন।
তসিবা:- হ্যা আপনারা এই রুমে থাকবেন তাহলে আমি যায়। আর হ্যা আমি যাকে ভালোবাসি তার জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু যাকে ভালবাসিনা তাকে ছেরে গেলে আমার একটুও কষ্ট হবেনা।
আমি:- তার মানে তুমি আমাকে ছেরে যেতে চাও?
তসিবা:- হ্যা কারন আমি আপনাকে ভালবাসিনা আর পছন্দও করিনা। তবে আজকে বাড়ী ছেরে যাবোনা কিছু দিন আপনাদের বাড়ীতে গেস্ট হয়ে থাকি কি বলেন?
আমি:- যা মন চাই করো তবে মীম তুমি যেই কাজে এসেছো সেইটা সহজে কোনো দিন সফল হবেনা। দেখি সরো তসিবা আর মীমকে রেখে আমি বেরিয়ে এসেছি।
আব্বু:- কিরে তসিবা কোথায়?
আমি:- উপরে আছে বলে সোজা বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে গেছি। বাহিরে এসে বন্ধুদের সাথে কিছুটা আড্ডা দিলাম। তবে ওদের কাওকে বলিনি মীম ফিরে এসেছে। দুপুর গরিয়ে বিকালে বাড়ীতে গেছি। ভীতরে ঢুকতেই দেখি মীম নিছে বসে আছে আমি উপরে উঠে যেতেছি তখনি,,,,
মীম:- সৌরভ একটু দেখোনা চোখে কি যেনো পড়ছে প্লিজ দেখে দাওনা অনেক জ্বালা করছে।
আমি:- তাতে আমার কি আমি জানি তুমি এইটা নাটক করতেছো? তখনি দেখি মীমের চোখ ডলতেছে আর কান্না করতেছে। আমার নিজের কাছে খারাপ লাগছে! যাই দেখি চোখে কি পড়ছে কাছে গিয়ে হাতটা সরিয়ে জিগেস করেছি কোন চোখে?
মীম:- ডান চোখে, আমি চোখটা খুলে ফু দিতেছি তখনি তসিবা এসে হাজির হয়েছে! আমি তসিবাকে দেখে মীমকে ফু দেওয়া ছেরে দাঁড়িয়ে গেছি!
তসিবা:- বাহা ভালো তো আবার নতুন করে পূরুনো প্রেম জেগে উঠেছে। কিছু দিন গেলে সব ভুলে নতুন করে আবার ভালোবাসা শুরু হয়ে যাবে।
মীম:- হ্যা তা একদম সত্য।
আমি:- মীম তুমি কি ভাবছো আমি তোমার প্রেমে পড়বো? তসিবা তুমি আমার সাথে এসো বলে তসিবাকে টেনে নিয়ে আসছি।
তসিবা:- গরুর মত টেনে খেচড়ে আনছেন কেনো?
আমি:- তুমি কেনো এমন করতেছো?
তসিবা:- আমার ইচ্ছে হয়ছে তাই! আপনাকে আমার বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হবে। সারাক্ষন সন্দেহ করবো কারন আমি পারবোনা আপনাকে অন্য মেয়ের সাথে থাকতে দিতে।
আমি:- তোমাকে তো কথা দিয়েছি আমি তোমাকে অনেক সূখে রাখবো। আর অনেক ভালোবাসবো তোমার খুব খেয়াল রাখবো।
তসিবা:- এক সাথে দুই নৌকার মাঝি হবার খুব ইচ্ছে আপনার তাইনা?
আমি:- এমন করে কথা বলছো কেনো?
তসিবা:- আমি এমনি! শুনেন আজ রাতে আমার সাথে এক যায়গায় যেতে হবে কেমন?
আমি:- কোথায় যাবে?
তসিবা:- আপনাকে নিয়ে আমি পালিয়ে যাবো যাবেন আমার সাথে?
আমি:- কি?
তসিবা:- দেখছেন আমি জানতাম আপনি আমাকে নয় মীমকে ভালোবাসেন। বাদ দেন এসব ফালতু কথা তার চাইতে ভালো আমি আমার বাপের বাড়ীতে চলে যাবো।
আমি:- তোমাকে কোথাও যেতে দিলে তো যাবে।
তসিবা:- সময় বলে দিবে যেতে দিবেন কি দিবেন না। এখন আমি যাই আমার ভালো লাগছেনা।
তসিবা চলে গেছে আমি একটু নিচে গেছি সবাই বসে আছে মীম সবার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে কিন্তু কেও কথা বলছে না। আমি সুফায় বসে টিভি দেখছি।
আমি:- ভাবি একটু পানি দিয়েন তো!
ভাবি:- দিতেছি। তখনি চেয়ে দেখি দুই দিক দিয়ে দুজন পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকিয়ে দেখি তসিবা আর মীম আমার সামনে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!!To be continue,,,,