গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-২৫
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি
মোবাইলের তারস্বরে বেজে ওঠার কারণে শিহরণ পকেট থেকে মোবাইল বের করে গল্পের আসর থেকে দূরে গিয়ে কলটা রিসিভ করল। ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসা শব্দের সমাহার শুনে শিহরণের মুখের অভিব্যক্তি পুরোই চেইঞ্জ হয়ে গেল। তাতে ভর করল এক রাশ ঘৃণা আর প্রচণ্ড ক্রোধ । সে তৎক্ষনাৎ তার রুমের দিকে ছুটে গেল। এসেই অতল আর বহ্নিকে একসাথে দেখল। তার মেজাজ বিগড়ে গেলো তৎক্ষনাৎ । সে সেই মুহূর্তেই বহ্নিকে সরিয়ে দিয়ে অতলকে তার শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে আঘাত করল। আচমকা আঘাত করাতে অতল হতভম্ব হয়ে গেলো। শিহরণ বার বার আঘাত করছে। ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ক্রমাগত ঘুসি মারছে অতলের মুখে, বুকে, এমনকি এলোপাথাড়ি। অতল ব্যথায় কুঁকড়ে গেল। আহ্ বলে একটা শব্দ বের হলো তার মুখ দিয়ে ।
সে কিছু বঝে উঠার আগেই যেহেতু তার উপর অ্যাটাক হয়েছে। তাই সে সেই মুহূর্তে নিজেকে প্রটেক্ট করতে পারেনি। শিহরণ বার বার আঘাত করেই যাচ্ছে। অতলের নাকের পাশ থেকে রক্ত ধারা গড়িয়ে পড়ছে ।
শিহরণের এমন আচরণে বহ্নি হতভম্ব হয়ে গেলো। কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেই সে
চিৎকার করে বলছে ক্রমাগত,’ভাইয়া, প্লিজ স্টপ। তুমি যা ভাবছ তা নয়।’
শিহরণ বহ্নির দিকে আঙ্গুল তাক করে অগ্নিঝড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে খ্যাপাটে গলায় বলল,’একদম কথা বলবি না। আদর দিয়ে দিয়ে তোকে মাথায় তুলে ফেলেছে সবাই। একটা শব্দ ও উচ্চারণ করবি না। আমি যা চোখে দেখলাম তা কি ভুল বলতে চাইছিস?’
বহ্নি নিস্তেজ গলায় বলল,’চোখের দেখা সব সময় ঠিক হয় না। এই সত্যটা কি তোমার অজানা?’
‘আমি তোর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয়। আগে এই বন্ধু নামের শত্রুটাকে আমাদের ঘর থেকে বিদেয় করতে হবে। তারপর তোর সাথে কথা বলব । তার আগে নয়।’ শিহরণ বহ্নির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে অতলের দিকে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে বলল।
অতল এবার মুখ খুলল। সে বলল,’তুই আমাকে ভুল বুঝছিস, শিহরণ । বহ্নি আমার বোনের মতো। ওকে আর আমাকে নিয়ে তুই এত নীচু চিন্তা করতে পারিস না।’
শিহরণ অতলের কথা শুনে যেন আরো দ্বিগুণ পরিমাণ তেঁতে উঠল। সে অতলের দিকে অন্তর্ভেদী অথচ ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,’আমি নীচু চিন্তা করছি? তুই যে নীচু মনের পরিচয় দিলি সেটা কী? বল, সেটা কী? বহ্নি আমার ছোট বোন। তুই সেটা ভুলে গেলি কী করে?’
‘বহ্নি আমারো বোনের মতো। তুই জানিস এটা শিহরণ।’ অতল নিস্তেজ স্বরে বলল।
এই কথা শুনে শিহরণ চেঁচিয়ে উঠল। বজ্রকঠিন কণ্ঠে বলল,’হ্যাঁ, এখন আমি খুব ভালো করে জানতে পেরেছি যে, বহ্নি তোর বোনের মতো কিন্তু বোন তো নয়। আর তাই তোকে বিশ্বাস করে আমি ভুল করেছি। অনেক বড় ভুল।’
শিহরণের চোখ থেকে যেন জ্বলন্ত কোনো আগ্নেয়গিরির লাভা ঝরে পড়ছিল। সে আবারো দ্বিগুণ শক্তি দিয়ে অতলকে আঘাত করতে গেল। অতল সরে গেলো। তাই তার গায়ে পড়েনি। সে নির্বিকারভাবে বলল,’ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড, শিহরণ । ইউ মিসআন্ডারস্টুড মি। লেট মি ক্লিয়ার এভরিথিং।’
শিহরণ আরো একটা ঘুসি দিলো অতলের নাক বরাবর। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,’দেয়ার্স নাথিং টু ক্লিয়ার। আই আন্ডারস্ট্যান্ড এভরিথিং নাউ । বাট লেটলি! বাট নো ম্যাটার, ব্যাটার দ্যান নেভার।’
বহ্নি আবারো বলল,’ভাইয়া, তুমি ভুল ভাবছ। তুমি একটু শান্ত হলেই বিষয়টা আমি তোমাকে খুলে বলব। কিন্তু এখন তোমাকে বললেও তুমি বুঝবে না।’
‘আমি কারো কোনো কথা শুনতে চাই না। আমার যা বুঝার আমি বুঝে ফেলেছি ।’ শিহরণ ক্রোধে ফেটে পড়ল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
শিহরণ ক্রমাগত অতলকে আঘাত করেই যাচ্ছে। তার ঠোঁটের কোণা থেকেও রক্ত গড়িয়ে পড়ছে । শিহরণ এবার তার হকি স্টিকটা হাতে নিলো। ওটা দিয়ে মারতে যেতেই বহ্নি অতলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল । অতল সযত্নে বহ্নিকে সরিয়ে দিল। তারপর সে বলল,’তুই আমাকে ভাই মনে করিস! তাই না? এই তাহলে ভাই হবার নমুনা। ঠিক আছে, মারতে পারিস হাতে যেটা আছে সেটা দিয়ে । এতক্ষণ শুধু তুই বলে আমি তোর গায়ে হাত তুলিনি। শুধু নিজেকে ডিফেন্স করেছি। নয়তো আমারো হাত আছে।’ অতলের কণ্ঠে তাচ্ছিল্যের সাথে সাথে ছিল চিত্তক্ষোভ।
এটা বলেই অতল হন হন করে বেরিয়ে পড়ল শিহরণের রুম থেকে। পিছন থেকে বহ্নি ডেকেছে । অতল সেই ডাক শুনেও ফিরেনি। একবারের জন্যও না।
সাবিহা সাবরিন আর সাব্বির আহমেদ অতলকে উদভ্রান্তের মতো করে বের হয়ে যেতে দেখে ছুটে আসলেন কি হয়েছে দেখার জন্য । এসেই দেখতে পেলেন শিহরণ তার বিছানায় মাথা নিচু করে বসে আছে। বিছানার ডান পাশে পরে আছে একটা হকি স্টিক। শিহরণের ঘরের সমস্ত জিনিস এলোমেলো। ফ্লোর খানিকটা ভেজা। রুমের মধ্যে একা একা ভূতগ্রস্তের মতো বসে আছে শিহরণ। চোখ লাল হয়ে গেছে। ফর্সা গালটা কেমন যেন রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। শরীরটা ঘামে একাকার হয়ে আছে। রাগে ফুঁসছে সে!
সাবিহা সাবরিন চিন্তিত স্বরে প্রশ্ন করলেন,’কী হয়েছে, শিহরণ? অতল ওভাবে চলে গেলো কেন?’
শিহরণ কোনো উত্তর দিচ্ছে না। সাব্বির আহমেদ ছেলের পাশে বসে তার কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বললেন,’কী হয়েছে? এই অবস্থা কেন তোমার?’
শিহরণ মুখ তুলে তাকাল। ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,’ড্যাডি, হি ইজ অ্যা ট্রেইটর। হি হ্যাজ বিট্রেইড আস।’
সাবিহা সাবরিন চড়া গলায় বললেন,’কী হয়েছে খুলে বলো শিহরণ! আমি সব জানতে চাই।’
________________
অতল চলে যাবার সাথে সাথেই বহ্নি নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে ছেড়ে দিল তার চোখে জমানো অশ্রুধারা। সাবিহা সাবরিন শিহরণের কাছ থেকে সব শুনে এসেই বহ্নির দরজা ধাক্কাতে শুরু করলেন। কয়েকবার উচ্চস্বরে ডাকলেন । বহ্নি সেই আওয়াজ উপেক্ষা করতে চাইল। সাবিহা সাবরিন আবারো বললেন,’দরজা খুলো বহ্নি । তোমার সাথে কথা আছে আমার।’
বহ্নি চাপা স্বরে বলল,’এখন আমি কোনো কথা বলতে চাইছি না। পরে কথা বলব। আর এমনিতেই তুমি তো আমার কথা বিশ্বাস করবে না। ভাইয়া যা বলেছে তাই বিশ্বাস করবে! তাই আমি কারো সাথে কথা বলব না। কারো সাথেই না।’
সাবিহা সাবরিন চোখ রাঙিয়ে তাকালেন সাব্বির আহমেদের দিকে। রাগত স্বরে বললেন,’ আরো বেশি আদর দাও এই মেয়েকে। তোমার আদর পেতে পেতে একেবারে বিগড়ে গেছে মেয়েটা ।’
সাব্বির আহমেদ অসহায় চোখে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। সাবিহা সাবরিন সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে চলে গেলেন।
এবার সাব্বির আহমেদ মিষ্টি সুরে বহ্নিকে ডেকে বললেন,’হানি, প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর। আই বিলিভ ইউ, হানি । ইউ নো ইওর ড্যাড, রাইট?’
বহ্নি সাব্বির আহমেদের কণ্ঠ শুনে গুটিগুটি পায়ে এসে দরজা খুলল। সাব্বির আহমেদ দেখলেন বহ্নি কেঁদে কেঁদে একদম একাকার হয়ে গেছে । তার বুকটা কেঁপে উঠল ক্ষণিকের জন্য। তিনি জানেন তার মেয়েটা সহজে কাঁদে না। এখন কেঁদেছে তাই কাঁদার কারণটার গভীরতাও তার নিকট সহজে অনুমেয়।
সাব্বির আহমেদ মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,’ইজ দিস মাই ডটার? নো, ইউ আর নট! মাই ডটার ইজ অ্যা ব্রেভ গার্ল। শি ক্যান হ্যান্ডেল এনিথিং। অ্যাম আই রাইট?’
বহ্নি বিবশ চোখে তাকাল বাবার দিকে। তারপর বলল,’ড্যাডি, আই হ্যাভন্ট ডান এনিথিং রং!’ এটুকু বলেই বহ্নি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। সাব্বির আহমেদ মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন । মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,’আই নো মাই ডটার।’
বহ্নি বাবার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলল,’ডু ইউ বিলিভ মি, ড্যাডি?’
‘ইয়েস, মাই ডটার। আই ডু।’ সাব্বির আহমেদ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন।
চলবে …….ইন শা আল্লাহ্