গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব -১০
লিখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি
ছোঁয়ার খুব খারাপ লাগছে। মন খারাপের সময় খুব আপন কাউকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে তার কাছে মনের মধ্যে লুকানো গোপন খাতাটা সম্পূর্ণরূপে খুলে দিতে। ইচ্ছে করে সেই মানুষটা সমস্ত লেখা পড়ে নিক এক নিঃশ্বাসে । বুঝে নিক তার হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতি ।
ছোঁয়া ভাবছে। এমন কেউ কি সত্যিই আসবে তার জীবনে! সত্যিই কি এমন কাউকে সে পাবে যার সামনে দাঁড়িয়ে তার মুখের দিকে তাকালেই তার সমস্ত কষ্ট নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।
এমন একজন আছে। ছোঁয়ার মন চুপিসারে হৃদয়ের মণিকোঠায় শিহরণকে’ই সেই স্থান দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো–শিহরণ তো তাকে দেখেও দেখে না। আর তার পছন্দ আর যেই হোক না কেন—ছোঁয়া নিশ্চয়ই হবে না! ছোঁয়া এটা ভাবতেই বুক চিরে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার।
ছোঁয়া গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেল তার রুমের এক কোণায় রাখা ট্রাঙ্কের দিকে। ধুলোবালির স্তর জমে আছে ট্রাঙ্কটির উপর। অযত্নে পড়ে থাকা কোনো জিনিসের উপর যেমন করে ধুলোবালির এক পুরু প্রলেপ পড়ে যায় তেমনি। ছোঁয়া আলতো হাতে ঝেড়ে ফেলল সমস্ত ধুলোবালি । তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে ট্রাঙ্কটি খুলল।এই ট্রাঙ্কটির মধ্যে তার মায়ের কয়েকটি জিনিস আছে। মায়ের শেষ স্মৃতি হিসেবে যত্ন করে রেখেছে সে। তার মায়ের কয়েকটা শাড়ি, তিনটা রেসিপির ডায়েরি আছে। বাকি সব ছোঁয়ার ছোটোবেলার খেলনা। ছোঁয়ার মায়ের অনেক গহনা ছিল। কিন্তু ফাহমিদা বেগম সবগুলো গহনা আত্মসাৎ করেছেন। ছোঁয়া তার মায়ের শাড়িটা হাতে নিল। শাড়িটা পরম আবেশে বুকের সাথে এক গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিল। যেন এই শাড়িতে আছে তার মায়ের ভালোবাসা, আছে ভরসা, সান্ত্বনা আর নির্ভরতার এক অলঙ্ঘনীয় বাণী। মন খারাপের দিনে এই জিনিসগুলো দেখলে কেমন যেন প্রশান্তি আসে মনে। একটা লকেট ছিল তার কাছে। যেটা তার খুব পছন্দের ছিল। সব সময় পড়ে থাকত সেটা । কিন্তু সেটা সে হারিয়ে ফেলেছে। অনেক খুঁজেছিল । যেসব দোকানে সে কুকিজ আর ডেজার্ট সেল করে সব দোকানে গিয়ে খোঁজ নিয়েছিল। কিন্তু কোথাও পায়নি। সেদিন খুব কেঁদেছিল ছোঁয়া–খুব। কিন্তু যা হারিয়ে যায় তা বোধহয় আর কখনো ফিরে পাওয়া যায় না। তার মাও হারিয়ে গেছে । আর তার সাথেই হারিয়ে গেছে তার শৈশব, হারিয়ে গেছে মায়ের ভালোবাসা। অবশিষ্ট আছে শুধু তার ক্লিষ্ট সত্তা!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
ছোঁয়া হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। চোখ বেয়ে ঝরে পড়ছে অশ্রুধারা। মাঝেমধ্যে মানুষ কাঁদতে চেয়েও কাঁদতে পারে না। আবার কখনো শত বাধা প্রদান করা সত্ত্বেও বাঁধ মানে না চোখের এই অবাধ্য অশ্রু । চোখের দেয়াল ফেটে বের হয়ে নির্ধারণ করে নেয় নিজ গতিপথ। ছোঁয়া কাঁদতে চায়নি, তবুও অশ্রুরা বের হয়ে আসছে নিজ উদ্যোগে।
আলতো হাতে কান্নাভেজা মুখটা মুছে নিল ছোঁয়া । তারপর সমস্ত স্মৃতি বিজড়িত বস্তু ট্রাঙ্কের মধ্যে রেখে দিল। বন্ধ করে দিল তাদের ট্রাঙ্কটির বুকের গহীনে। আবারো হয়তো কোনো এক খারাপের দিনে দেখা মিলবে তাদের।
আর মাত্র একটা সপ্তাহ বাকি শিহরণ আর ছোঁয়ার ডিটেনশন শেষ হওয়ার । শিহরণ মনে মনে আহত হলো এটা ভেবে। সে ভাবল পরেরটা পরে দেখা যাবে। কিন্তু এই সাত দিন ছোঁয়াকে সে ভালো ভালো খাবার খাওয়াবে। কি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা দিন দিন! কথা না শুনলে শুনতে বাধ্য করবে সে। আগামীকাল থেকে তার নতুন মিশন শুরু। শিহরণ তার বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিল। মুখে এক দুর্বোধ্য হাসি ঝুলে আছে।
বহ্নি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,’হোয়াট হ্যাপেন্ড ব্রো? ইউ আর স্মাইলিং!’
শিহরণ বিছানা থেকে উঠে বসল। তারপর সহাস্যে বহ্নিকে বলল,’কাম হিয়ার মাই শার্প অ্যান্ড ব্রাইট সিস্টার।’
বহ্নি রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বলল,’ডোন্ট ট্রাই টু এভয়েড মাই কোয়েশ্চন! আমি জানি তুমি কিছু লুকাচ্ছ।’
তারপর বহ্নি দু চোখের ভ্রু উঁচিয়ে গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বলল,’মাই ব্রাদার ইজ দ্যা মোস্ট শার্প অ্যান্ড ব্রাইট স্টুডেন্ট । ‘
শিহরণ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে বহ্নির দিকে তাকিয়ে বলল,’সিরিয়সলি?’
বহ্নি উৎফুল্লতার সাথে বলল,’ইয়েস। ইভেন মোর দ্যান মি।’
শিহরণ এবার বহ্নিকে পরাস্ত করতে প্রশ্ন করল,’
তাহলে সেদিন মাম্মির সামনে বললি যে ,ওটা কি ছিল?’
‘ওহ্, দ্যাট ডে! আমি তোমাকে একটু ক্ষেপাতে চেয়েছিলাম ।’ বহ্নি দীর্ঘশ্বাস ফেলে হতাশার সুরে বলল,’মাম্মির জন্য পারলাম কই?’
শিহরণ এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,’আচ্ছা ঠিক আছে। বাদ দে ওসব। ‘
হঠাৎ কোনোকিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে বহ্নি বলল,’ভাইয়া, তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।’
‘জাস্ট স্পিক আউট।’ শিহরণ হাত নেড়ে বলল।
বহ্নি অভিযোগের সুরে বলল,’অনেকদিন হয়ে গেছে তোমার গান শুনিনা। গিটার বাজাও না।’ তারপর কোমড়ে দুহাত রেখে বলল,’ প্লিজ, ভাইয়া–এবার তো একটু নিরামিষভোজীর খোলস থেকে বের হও!
‘কী! নিরামিসভোজীর খোলস!’শিহরণ অবাক হয়ে জানতে চাইল,’এটা আবার কী?’
‘ওহ্, ভাইয়া । কবে করবে বলো? তোমার বন্ধুদের ইনভাইট করবে কিন্তু ।’
‘ওকে,করব। নেক্সট ফ্রাইডে?’
‘ডান।’ বহ্নি উঠে দরজার কাছে যেতেই আবার ফিরে এলো। বলল,’ রাদিদ ভাইয়া কি আসবে?’
শিহরণ একটু ভাবার ভাণ করলো। তারপর বলল,’সে কি আমার বন্ধু?’
‘ভাইয়া, ডোন্ট মেইক ফান।’
‘আসবে না কেন! সে তো এরকম ইনভাইটেশন পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে।’ শিহরণ সহাস্যে বলল।
তারপর বহ্নির দিকে জহুরি চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, ‘তোর বন্ধুদের ইনভাইট করবি না?’
‘অবশ্যই করব ভাইয়া ।’ বহ্নি দৃঢ়তার সাথে বলল ।
‘অহনা নামের মেয়েটাকে ইনভাইট করবি নাকি?’ শিহরণের কণ্ঠে সংশয় ।
‘তাকে তো অবশ্যই ইনভাইট করব ভাইয়া ।’
‘প্লিজ ,ওই সাইকোটাকে ইনভাইট করিস না!’ শিহরণ ভয় পাওয়ার ভঙ্গিতে বলল।
‘ভাইয়া! ও সাইকো হলেও কি আর না হলেও কি আমার সামনে ওর সাইকোগিরি চলবে না।’ বহ্নি দৃঢ়তার সাথে বলল।
‘হুম। তাহলে তো ভালোই।’ শিহরণ যেন স্বস্তি পেল।
দরজার কলিং বেলের ক্রিং ক্রিং আওয়াজ শুনতে পেয়ে বহ্নি দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে দরজা খুলল । দরজা খুলে সে যা দেখলো তাতে সে যারপরনাই অবাক ।
চলবে….ইন শা আল্লাহ্