গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-০৯
লিখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি
অতলের মনের আকাশে মেঘ করেছে। পড়ার টেবিলের সামনে বসে আছে সে। তার সামনে একটা প্যাড। হাতে কলম। পড়ার টেবিলের পাশেই একটা ময়লার ঝুরি। ঝুরিটি প্রায় পরিপূর্ণ । দুমড়ে মুচড়ে ফেলা কাগজ গুলোর স্থান হয়েছে সেখানে। অতল চিঠি লেখার চেষ্টা করছে। দু লাইন লেখার পরেই মনে হচ্ছে মনমতো হচ্ছে না। কোনোটাতে বেশি নাটকীয়তা চলে আসছে মনে হচ্ছে, আবার কোনোটা খুব সাদামাটা হয়ে যাচ্ছে। এক কথায়, অতলের মনের মতো করে একটা চিঠি লেখা হচ্ছে না। যেটাই লিখছে সেটাই ভালো লাগছে না । মনমতো না হওয়ায় প্যাডের কাগজ ছিড়ে দুমড়ে মুচড়ে ঝুরিতে ফেলছে কিন্তু ঝুরি পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে কাগজগুলো ফ্লোর এর মেঝেতে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে। পুরো ফ্লোর জুড়ে সেই কাগজগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে এখনো অতলের মনমতো একটা চিঠি লেখা হয়নি ।
সমস্ত ব্যর্থ প্রচেষ্টা শেষে সে হাতের কনুই টেবিলের উপর রেখে হাতের তালু দিয়ে মুখটা ঢেকে ফেলল। এভাবেই কেটে গেল কিছুক্ষণ ।
নাহ্! অতলের দ্বারা চিঠি লেখা সম্ভব হচ্ছে না। হয়তো হবেও না। অতলকে কারো সাহায্য নিতে হবে। সে ভাবছে কার সাহায্য নেওয়া যায় । আপাতদৃষ্টিতে রাদিদ ভালো চিঠি লিখতে পারলেও তার কাছে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ রাদিদ যাদের সাথে প্রেম করে তাদের আর ছোঁয়ার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। ছোঁয়া খুব সাধারণ একটা মেয়ে । আবার সাধারণ মেয়েটাই অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাই তাকে কিছু একটা—যা খুব সাধারণ আবার একই সঙ্গে অসাধারণ হবে–তেমন কিছুই লিখতে হবে। যাতে তার মনে না হয় যে অতল তার সাথে অভিনয় করছে। এমনিতেই তার ফ্রেন্ড সার্কেলের কারণে ছোঁয়া তার কাছ ঘেঁষে না।
সেই ক্লাস সেভেন থেকে সে নানান ভঙ্গিতে ছোঁয়াকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিল অতল। কিন্তু ছোঁয়া কোনোভাবেই বুঝে না। না কি বুঝেও না বুঝার ভাণ করে! অতলের মনে সন্দেহ।
অতল জানে না এর কিছুই। সে খুব সহজ সরল প্রকৃতির। অত জটিল চিন্তা ভাবনা তার ধাতে নেই।
অবশেষে অতল ভাবলো শিহরণের কাছ থেকে হেল্প নেবে। আশা করা যায় সে অন্ততপক্ষে না করবে না। নয়তো বহ্নির সাথে কথা বলা যায় । ছোটো হলেও সে সত্যিই খুব শার্প । শিহরণ না করলেও বহ্নি না করবে না–এটা অতলের বিশ্বাস ।
যেই ভাবা সেই কাজ। অতল শিহরণকে কল করে বলল সে তাদের বাসায় আসছে। কল শেষেই সে বেরিয়ে পড়ল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
বিকালের দিকে প্রিয়, মোহানা, রাদিদ ঘুরতে বেরুলো । ওরা ছয় বন্ধু মিলে প্রায় বের হয়। আজো সবাই মিলে প্ল্যান করেছে ঘুরবে বলে। তাই মোহনা সবাইকে কল করে জানাল বিষয়টা । শিহরণ আসতে পরবে না বলল। আর অতল তো প্রায় সময় নানা অজুহাতে এড়িয়ে চলতে চায় । যাও একটু সঙ্গ দেয় তাও শিহরণের জন্য। তার আর শিহরণের বেশ ভালো বন্ধুত্ব। বলা যায় অতল তার পাঁচ বন্ধুর মধ্যে শিহরণকে একটু বেশিই পছন্দ করে। তাছাড়া তাদের বাসায় ও যাওয়া আসা করে অতল। তাই সেদিক দিয়ে তাদের বেশ ভালোই বন্ধুত্ব আছে। শিহরণের বাবা মাও অতলকে খুব পছন্দ করে। শান্ত শিষ্ট ছেলেটিকে আসলে কেউ ভালো না বেসে পারেই না।
ঘোরাঘুরি শেষে প্রিয় বলল সে ফুচকা খাবে। মোহনা তার কথায় সম্মতি জানাল। রাদিদ মুখ কুঁচকে বলল,’এসব ফুচকা খাস ক্যান তোরা? কী মজা পাস রে?’
প্রিয় রাদিদের মাথা চাপড় মেরে বলল,’এইসব তোর বুঝা লাগবো না। তুই তোর গার্লেফ্রন্ডদের উপরেই গবেষণা চালিয়ে যা।’
মোহনা প্রিয়’র সাথে তাল মিলিয়ে বলল,’সবাই তো ন্যাকা ন্যাকা গার্লেফ্রন্ড রে ওর। একজনকে পড়লেই সব পড়া হয়ে যায়।’
রাদিদ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে তিরিক্ষি মেজাজে বলল,’তোরা দুইজন কি কম ন্যাকা?’
মোহনা আর প্রিয় এবার খুব রেগে গেল। তাদের ন্যাকা বলে! এত্তবড় সাহস এই রাদিদের!
প্রিয় ফুচকার অর্ডার দিতে দিতে বলল,’তাইলে যা আমাদের মতো ন্যাকা বন্ধুর সাথে কি? যা তুই তোর নানান চ্যাপ্টারের প্রেমিকাদের কাছে।’
রাদিদ অবাক হয়ে বলল,’যাব কি যাব না সেটা আমার ইচ্ছা।আর এসব কী শুরু করেছিস? কিসের চ্যাপ্টার?’
মোহনা আর প্রিয় সমস্বরে বলল,’আহা রে! আমাদের রাদু ও দেখছি ন্যাকার খাতায় নাম লেখাল।’
তারপর দুজনেই হো হো করে হেসে উঠল। রাদিদকে বিভ্রান্ত দেখাল। যদিও সেটা ওর কপটতার একটা রূপ মাত্র।
রাদিদ পরাস্ত হবার ভঙ্গিতে বলল,’আচ্ছা ,মানলাম আমি ন্যাকা। আমার গার্লেফ্রন্ডরা ও ন্যাকা। আমার চোদ্দ গুষ্টি ন্যাকা।’ তারপর ভ্রু উঁচিয়ে মোহনা ও প্রিয়’র দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,’এবার খুশি?’
মোহনা, প্রিয় একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করল বার কয়েক। তারপর আবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। রাদিদও যোগ দিল তাদের হাসিতে।
তারপর প্রিয় হুট করে বলল,’আচ্ছা, শিহরণের কি হয়েছে রে, তোরা কি কিছু বুঝতে পেরেছিস ?’
রাদিদ তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,’ওই ওর নাম নিবি না। আমার জাস্ট ওরে সহ্য হইতেছে না। দেখলি না সেদিন আমার সাথে কেমন আচরণ করল!’
মোহনা প্রতিউত্তরে বলল,’হ্যাঁ, ব্যাপারটা আমারো ঠিক বুঝে আসছে না।’
প্রিয় বলল,’আচ্ছা শিহরণ কি কোনোভাবে সেই পাতলা ,রোগাটে মেয়েটার প্রেমে পড়ল নাকি?’
মোহনা অবিশ্বাসের সুরে বলল,’অসম্ভব, এটা হতেই পারে না। শিহরণ করুণা করতে পারে! বাট ভালোবাসতে কখনোই পারে না।
প্রিয় সম্মতি জানিয়ে বলল,’ঠিক বলেছিস,মোহনা। কোথায় আমাদের শিহরণ আর কোথায় ওই ছোঁয়া ।’
রাদিদ অমত প্রকাশ করে বলল,’আমার কেন জানি সন্দেহ হইতেছে।’
মোহনা আর প্রিয় সমস্বরে বলল,’ওরে আমাদের সন্দেহ রাদু রে! তুই তোর সন্দেহ তোর মগজের ভিতরেই রাখ। বাইরে বার করিস না!’
ফুচকা খেতে খেতে প্রিয় বলল,’ আঙ্কেল আন্টি তো সব সময় দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করে। আরে শিহরণের বোন বহ্নি ও তো ওরকম। মনে আছে তোদের–বহ্নির ক্লাসের কোন একটা মেয়ে এক্সামের ফি দিতে পারছিল না। তারপর সে নিজেরটাই দিয়ে দিয়েছিল মেয়েটাকে। পরে আন্টি এসে আবার বহ্নির ফি দিয়ে গেল। আর ওই মেয়েটার লেখাপড়ার দায়িত্ব ও নিজেরা নিয়ে নিল।’
মোহনা প্রিয়’র সাথে গলা মিলিয়ে বলল,’আসলে ওদের ফ্যামিলিটাই অন্যরকম। ওরা যা করে মন থেকে করে। কোনো প্রকার শো অফ করে না।’
রাদিদের অস্বস্তি লাগছে এসব শুনতে। সে তিরিক্ষি মেজাজে বলল,’তোরা কি শিহরণে আর ওর পরিবারের কথাই বলবি শুধু? তাইলে আমি গেলাম।’
মোহনা বলল,’ আরেহ ফুচকা শেষ করে যা।’
রাদিদ রাগান্বিত কণ্ঠে বলল,’খা তোরা। আমার পেট ভইরা গেছে তোদের কথা বার্তা শুনে।’
মোহনা আর প্রিয় একসাথে বলল,’এই যাহ্! আমরা আবার কী করলাম!’
চলবে…..ইন শা আল্লাহ্