গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব: ০৫
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি
মোহনা, প্রিয় , রাদিদ ,ফাহমি স্কুলের এক কোণায় দাঁড়িয়ে নানান গল্প করছিল। শিহরণ আর অতল এসে যোগ দিলো তাদের সাথে।
অতলকে উদ্দেশ্য করে হাতের ইশারায় ছোঁয়াকে দেখিয়ে মোহনা বলল,’ইওর লাভ ইন্টারেস্ট ইজ গেটিং টু উয়িক টু ওয়াক।’
মোহনার কথা শুনে প্রিয়, রাদিদ, ফাহমি হু হু করে হেসে উঠল। অতল আর শিহরণের খুব বিরক্ত লাগল তাদের কথা শুনে। অতল ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ছোঁয়া কেমন যেন টলতে টলতে হাঁটছে । মনে হচ্ছে তার খুব কষ্ট হচ্ছে । তবে চেহারা দেখে তা বুঝবার জো নেই। শিহরণ ও বিষয়টা খেয়াল করলো। অবশ্য সে তো অনেক আগেই খেয়াল করেছে। সে আরো আবিষ্কার করলো মেয়েটা দিন দিন কেমন যেন রোগাটে হয়ে যাচ্ছে। কেমন পাতলা হয়ে যাচ্ছে। শিহরণ মনে মনে ভাবলো এই মেয়েটা কি খাবার দাবার খায় না! তার খুব খারপও লাগছে। তবে তা বন্ধুদের সামনে কনফেস করা তার ধাতে নেই। সে কখনোই তা তাদের সামনে প্রকাশ করবে না। প্রকাশ করলেই তো তার ব্যান্ড বাজিয়ে ছাড়বে! বিশেষ করে রাদিদ। সো ড্যাঞ্জারাস পাবলিক হি ইজ! সবার একটা অন্যতম আগ্রহ কাজ করে শিহরণের প্রতি। কারণ শিহরণকে অনেকেই পছন্দ করে–এটা সবার জানা। তবে শিহরণ এখনো পর্যন্ত কাউকে পাত্তা দেয়নি। কোনো মেয়েকেই সে এখনো প্রায়োরিটি দেয়নি।
তাছাড়া তাদের বন্ধুদের মধ্যে রাদিদ প্লেবয় হিসেবে সুপরিচিত। পাশাপাশি সে কটূক্তি করতেও করিতকর্মা । রাদিদ হামি তুলতে তুলতে বলল,’দোস্ত, ওরে দেখলে আমার অসম্ভব রকমের ঘুম পায় । মনে হয় আমি হাজার বছর ঘুমাইনি।’
প্রিয় রাদিদের কথায় তাল মিলাতে বলল,’দোস্ত, তুই আমার মনের কথাটাই কাইড়া নিলি।’
‘হ, তোদের ঘুম পায় আর আমার মনে হয় ওরে একটা ফুঁ দিলেই উইড়া যাইব।’ ফাহমি মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলল ।
প্রিয়, রাদিদ আর মোহনা সমস্বরে বলল,’তা যা বললি ফাহমি। এক্কেবারে খাঁটি কথাখান।’
রাদিদ আবার উৎফুল্লতার সাথে বলল,’কি রে দিবি না কি ফুঁ, ফাহমি? একবার ট্রাই করলে কিন্তু মন্দ হয় না। কি বলিস তোরা?’
ফাহমি উৎসাহ নিয়ে যেই হা করে ফুঁ দেবার জন্য উদ্যত হলো অমনি শুনতে পেল শিহরণের অগ্নিঝরা কণ্ঠ ।
‘জাস্ট স্টম দিজ ফাকিং গেম অব ইওরস।’ শিহরণ রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে উত্তেজিত কণ্ঠে বলল। সে এসব আর নিতে পারলো না। ওরা লিমিট ক্রস করে ফেলেছে।
সবাই থেমে গেল । থমকে গেল সবাই । রাদিদকে ভূতগ্রস্তের মতো দেখাল। ফাহমি ফুঁ দেবার জন্য সেই যে হা করেছিল সেটা এখনো অব্যাহত আছে। প্রিয় আর মোহনা স্ট্যচু অব লিবার্টি হয়ে গেল যেন। সবথেকে বেশি অবাক হয়েছে অতল। সে প্রতিবাদ করতেই যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই শিহরণ বলে উঠল। অতল বিশ্বাস করতে পারছে না–শিহরণ এই মাত্র ছোঁয়াকে ডিফেন্ড করতে চাইল। তার মেজাজ বিগড়ে গেল ছোঁয়ার বিরূদ্ধে কথা বলাতে। অথচ এর আগে তারা অনেক কথাই বলেছে। বিশেষ করে ছোঁয়ার ব্যাপারে সে বরাবরই নিশ্চুপ ছিল। অতলের শতভাগ সন্দেহ যে, শিহরণ কখনো ছোঁয়াকে কাছ থেকে কখনো দেখেছে!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
শিহরণকে আউটবার্স্ট হতে দেখে রাদিদ, মোহনা , প্রিয় আর ফাহমি এবার অবাক বিস্ময়ে তাকাল শিহরণের দিকে। তারপর মোহনা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,’হোয়াট হ্যাপেন্ড শিহরণ? তুই এভাবে রেগে যাচ্ছিস কেন?’
শিহরণের প্রচণ্ড রাগ লাগছে মোহনার প্রশ্নে। তার কপালের শিরাগুলো রাগে ফুলে উঠছে। গায়ের রং ফর্সা হওয়ার কারণে তার নাকের ডগা লাল হয়ে যাচ্ছে। সে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,’ডোন্ট ইউ গাইজ হ্যাভ এনি আদার টপিক? তোরা সব সময় ওর পিছনে পড়িস কেন? তোদের আর কোনো কাজ নেই?’
রাদিদ মাঝখানে বাগড়া দিয়ে বলল,’ওয়েট, শিহরণ তুই এই মেয়ের পক্ষে কথা বলছিস? আর ইউ ওকে?’
শিহরণের মেজাজ এবার তুঙ্গে । সে অগ্নিঝড়া দৃষ্টিতে তাকাল রাদিদের দিকে। তিরিক্ষি মেজাজে বলল,’দ্যাটস নান অব ইওর বিজনেস।’
শিহরণ সেখান থেকে গটগট করে হেঁটে চলে গেল। আর সবিস্ময়ে তাকিয়ে আছে তার পাঁচ বন্ধুর পাঁচ জোড়া চোখ। তারা বুঝতে পারলো না এমন কি করলো তারা। আজকের কথা বলার টপিক তো এমন নতুন কিছু নয় তাদের জন্য। তারা প্রায় এই বিষয়ে কথা বলে। ছোঁয়াকে নিয়ে প্রায়ই এটা সেটা কথা হয়। কিন্তু আজ শিহরণের কী হলো? শিহরণ তো বরাবরের মতোই চুপ থাকত। তবে কেন সে এত রিয়েক্ট করল? মোহনা, প্রিয়, রাদিদ আর ফাহমি সবার মনের মধ্যেই একই প্রশ্নের আনাগোনা । তাদের মধ্যে একটাই আক্ষেপ যে , এই একই কাজটা যদি অতল করতো তবে তারা মেনে নিতে পারত। কিন্তু এখন কী হলো তারা বুঝতেই পারছে না। অতল নিজেও অবাক শিহরণের এমন রূপ দেখে। সে মনে মনে ভাবছে এমন আনপ্রেডিক্টেবল কেন এই শিহরণ। একটু সহজ হলে এমন কী ক্ষতি হয়!
শিহরণ বাসায় গিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। ইতিমধ্যেই প্রচণ্ড গরম পড়তে শুরু করেছে। গরম একদম সহ্য হয় না শিহরণের। তার উপর বন্ধুদের সাথে একটা ছোটোখাটো গন্ডগোল হয়ে গেলো। সব মিলিয়ে তার অবস্থা শোচনীয় । স্কুলের শার্ট খুলে সোফার উপর ফেলল। ক্যাডস একটা ঘরের এক কোণায় তো আর একটা অন্য কোণায় ছুড়ে মারল। মোজার অবস্থা ও শোচনীয় । জোড়ায় থাকতে পারল না। তারপর আর দেরি না করে গোসল করার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল।
গোসল শেষে সে গরমের দিনে কমফোর্ট ফিল করে এমন একটা টি শার্ট পরল। তার প্রিয় হোয়াইট টি শার্ট । হোয়াইট তার প্রিয় রং। তার পর পরই সে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। চোখ বুজে আছে সে। আর বন্ধ চোখের দৃশ্যপটে ভেসে উঠল রুগ্ন, পাতলা গড়নের ছোঁয়ার অবয়ব। চকিতে সে চোখ খুলে ফেলল। তারপর মনে মনেই একটা প্ল্যান করে বসল। তার এখনো মনে আছে সে যখন ছোট ছিল তখন প্রায় দেখত তার মাম্মি ড্যাডি ছোট ছোট বাচ্চাদের খাবার দিতো, বিভিন্নভাবে সাহায্য করত। এখন নিজেরা সময়ের অভাবে সব সময় এসব কাজে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারে না। তবুও মাসে এক বার হলেও নিজেদের অরফানেজে থাকা ছেলে মেয়েদের খোঁজ খবর নেন। আবার বছর শেষে বেশ বড় করে প্রোগ্রাম ও করে। শিহরণের চোখে এখনো স্পষ্ট ভাসছে সেই দৃশ্য । বছরের ওই দিনটাতে বাচ্চাদের চোখে মুখে যে আনন্দের ঝিলিক থাকে তা প্রাইসলেস। তার মাম্মি ড্যাডি সেই বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে।
চলবে…ইন শা আল্লাহ্