গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব: ০৩
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি
স্কুলে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে শিহরণ তার মাম্মিকে বলে রেখেছিল যাতে তাকে ডেকে দেয়। শিহরণ মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রাখে। কিন্তু ঘুমের মধ্যেই অ্যালার্ম অফ করে দিয়ে আবার ঘুমোতে থাকে। তাই সে শেষমেশ তার মাম্মির দ্বারস্থ হলো। মাম্মি অবশ্য কারণ জানতে চেয়েছিল কিন্তু সে কোনোরকমে গ্রুপ স্টাডির কথা বলে বিষয়টা গোপন রেখেছে। অবশ্যটা কারণটা যে একেবারেই বলার মতো নয় তা কিন্তু নয়। কারণটা বলা’ই যায় । তবে শিহরণ বলতে চায় না। বিশেষ করে এটা যদি বহ্নির কানে যায় তবে তার বিরাট সমস্যা হবে। বহ্নি তাকে জ্বালাতন করতে করতে একেবারেই পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে। মাঝেমধ্যে শিহরণের খুব সন্দেহ হয় এই বহ্নি কি তার বোন নাকি শত্রু! তবে মাঝেমধ্যে খুব ভালো আচরণ ও যে করে না তা কিন্তু নয় । তবে বহ্নি শিহরণের জান। তার একমাত্র ছোটো বোন।
বোনের চিন্তাকে ছাপিয়ে তার ভাবনায় আবারো উঁকি দিলো ছোঁয়া । সে ভাবলো যে, সে কোনোভাবেই ছোঁয়ার কথায় ভয় পেতে পারে না! ওই ভীতুর ডিমের সেই যোগ্যতা আছে না কি? অবশ্যই নেই! শিহরণকে ভয় দেখাবে; এমন স্পর্ধা কারো নেই। তাই সে মনে মনে ঠিক করলো সে যাবে না। দেখা যাক এই ভিতুর ডিম কী করতে পারে!
পাশেই একটা ডেজার্টের দোকান দেখতে পেলো শিহরণ। সে ড্রাইভারকে বলল যাতে গাড়ি থামায়। সেই দোকানটাতে আয়েশ করে বসল। খাবার অর্ডার করার কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলো তার প্রিয় ডেজার্ট। সে আয়েশ করেই খাচ্ছে। আর মনে মনে ভাবছে কী বেহাল অবস্থাটাই না হবে ওই পাগলাটে মেয়েটার! শিহরণ হাসছে। আবার কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে দিচ্ছে। আবার হাসছে। এমনই এক দোটানার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেল সে নিজেকে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
একবার মন বলছে সে এভাবে অন্যের উপর বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে না । আবার ভাবছে কেন পারবে না ? সব তো ওই মেয়ের জন্যই ! কত বড় স্পর্ধা সেই মেয়ের ! শিহরণকে থ্রেট দেয়!
ছোঁয়া স্কুলে পৌঁছেই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো শিহরণের জন্য। তার আসতে দেরি দেখে নিজেই কাজ করতে শুরু করলো।
এবারো পূর্বের ন্যায় শোচনীয় অবস্থা । ঘর্মাক্ত শরীর আবসাদে ক্লিষ্ট হয়ে পড়ছে। যেনো আর পারছে না ছোঁয়া । কষ্ট হচ্ছে খুব। চোখগুলো কেমন যেনো ঘুমকাতুরে হয়ে পড়েছে। কিন্তু ছোঁয়া তো এখন ঘুমুতে পারবে না, না পারবে বিশ্রাম নিতে ।
ক্লাসের শিষ্ট ছেলেটি আজ একটু সময়ের আগেই চলে এলো। আর এসেই দেখতে পেলো ছোঁয়াকে। ঘামে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে সে। তারপরেও সেই শিষ্ট ছেলেটি সে ঘর্মাক্ত মুখে ভালোলাগা খুঁজে পায় । খুঁজে পায় শান্তির এক নীড়। খুব অদ্ভুত লাগে শান্তশিষ্ট ছেলেটির নিজের কাছেও। বন্ধুরা প্রায় বলে ,’কী রে অতল, কী আছে ওর মাঝে? দেখিসনা এই মেয়ে ঠিকমতো চুলটাও আঁচড়াতে পারে না? দেখিস, ওর সাথে প্রেম করলে; ওর চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে’ই তোর জীবন শেষ হয়ে যাবে!’
অতল প্রথম প্রথম নিশ্চুপ থাকত। কারণ তার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর ছিল না। কিন্তু এখন আছে! সে বন্ধুদের বলে, যে সে নীড় খুঁজে পায় ছোঁয়ার মধ্যে, তার ফ্যাকাশে মুখের মায়ায়, তার এলোমেলো চুলের ভাজে ভাজে, কপালের সামনে এলোপাথাড়ি ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট চুলের ওড়াউড়িতে।
যা সব সময় অদ্ভুত বন্ধনে নিজের কাছে টেনে নিয়ে যায়! নিজেকে শত বাধা, প্রবোধ দাও না কেন; কোনোকিছুতেই কাজ হয় না। একেবারেই অরণ্যে রোদন যাকে বলে।
অতলের উত্তর শুনে বন্ধু মহলে পড়ে যেত হাসির রোল। সবাই একে অপরের উপর গড়িয়ে পড়ত শুধুমাত্র শিহরণ ছাড়া । শিহরণের ভাবখানা এমন থাকত যে সে কিছুই শুনতে পায়নি, বা এমন যে তার এই বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই, নেই কোনো মন্তব্য । অতলের এই প্রেমঘটিত বিষয়ে সে কেমন যেন নির্বিকার আর উদাসীন থাকে সব সময়।
অতল ভাবছে তার ছোঁয়াকে সাহায্য করা উচিত । তাই সে ক্লাসরুমে নিজের ব্যাগ রেখে এসে দ্রুত হাত লাগালো ছোঁয়ার সাথে। ছোঁয়া অবাক হয়ে অতলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,’তুমি কেন করছ, অতল?’
ছোঁয়ার মুখে অতল নিজের নাম শুনতে পেয়ে যেনো তার সমস্ত চেতনাজুড়ে বিবশতার রাজত্ব শুরু হয়ে গেলো। ছোঁয়া উত্তর না পেয়ে আহত হলো। বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল,’করুণা করছ?’ এরপর গলা উঁচিয়ে বলল,’তুমি জানো না আমি করুণা পছন্দ করি না?’
অতল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ছোঁয়ার এহেন আচরণে। তার সাথে ছোঁয়ার খুব কমই কথা হয়েছে। সব সময় ফরমাল কথাবার্তা হয়েছে। তার বন্ধুদের কারণে সে একটু এগিয়ে গেলেও আবার পরক্ষণেই যেন দূরে সরে যায় । কিন্তু কখনোই অতলের মনে হয়নি যে, ছোঁয়াকে এভাবে তীক্ষ্ণ মেজাজে গলা উঁচিয়ে কথা বলতে পারে? জানত না অতল! কিন্তু তাতে কী? এতে কী ভালো লাগা কমে যায়? যায় না তো! ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই ভালো লাগে। সবকিছু!
ছোঁয়া আবারো বলল,’ কী কথা বলছ না কেন?’
অতল দ্রুতবেগে বলল,’এগুলো আমি ফেলেছি তাই আমিই পরিষ্কার করছি!’
ছোঁয়াকে অতলের কথায় সন্তুষ্ট মনে হলো না। সে অতলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো । আর বিড়বিড় করে বলল,’তার বন্ধুরা আমাকে দু পয়সার মূল্য দেয় না আর এই জনাব আসছেন আমাকে সাহায্য করতে। লাগবে না আমার কারো সাহায্য ।হুহ।’
অতলের মনে হলো সে মুষ্টিযুদ্ধে হেরে যাওয়া এক প্রতিদ্বন্দ্বী । তার চেহারায় শুধু কালসিটে রক্তাক্ত দাগের খামতি রয়েছে। অন্যথায় বিধ্বস্ত অতলকে চেনার উপায় থাকতো না।
শিহরণ সেই মুহূর্তে স্কুলে ঢুকছিল। অতলকে ছোঁয়ার পাশে দেখে তার মেজাজ বিগড়ে গেলো। সে নিজেও জানে না কেন এভাবে তার মুড সুয়িং হয়! মাঝেমধ্যে তার নিজেকে বড্ড অচেনা মনে হয়। ঠিক এখনো তাই মনে হচ্ছে।
সে হনহন করে হেঁটে নিজের ক্লাসরুমে চলে গেলো। আর এদিকে অতল গুটিগুটি পায়ে মাথায় রাজ্যের চিন্তা নিয়ে হাঁটছে । আর ভাবছে কীভাবে ছোঁয়াকে সাহায্য করা যায় !
চলবে….ইন শা আল্লাহ