গল্প:-একটু অধিকার পর্ব:-(০৬)
লেখা:- AL Mohammad Sourav
!!
তসিবার পাশে বসে ওর রক্তমাখা হাতটা হাতে নিতেই ভাবি রুমে ঢুকছে! ভাবি তাকিয়ে দেখে তসিবার জ্ঞান নেই! ভাবি আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে! সৌরভ তসিবাকে কি করেছো তুমি? ওর হাতের চুড়ি গুলি ভাংগলো কি করে?
আমি:- ভাবি বলছি পড়ে তার আগে তসিবার রক্তটা বন্ধ করতে হবে।
ভাবি:- ডাক্তার আংকেলকে আমি ফোন করতেছি তুমি ওকে খাটের উপরে শুইয়ে দাও।
আমি:- ঠিক আছে! তসিবাকে কোলে তোলে নিয়ে খাটের উপর শুইয়ে দিয়েছি। আমি ওর হাত থেকে চুড়ির ভাংগা টুকরা বেড় করার সময় মনে হয়ছে ব্যথাটা আমার কলিজাতে লাগছে। তসিবার দিকে তাকিয়ে আছি মলিন মাখা মুখটা কতটা মায়াই বড়া। তসিবার হাতের রক্তটা পরিষ্কার করেছি। তখনি ভাবি আর ডাক্তার আংকেল এসেছে।
ভাবি:- আংকেল আসুন ভিতরে আসুন। ডাক্তার এসে তসিবার হাতটা ওয়াশ করে বেন্ডিজ করে দিয়েছে।
ডাক্তার:- হাত কাটছে কি করে?
ভাবি:- ঐ তরকারি তৈরি করার সময় চাকু লেগে গেছে।
আমি:- না আংকেল আমি ওর হাত ধরে ছিলাম! তখন ওর হাতে কাঁচের চুড়ি গুলি ভেংগে গেছে।
ডাক্তার:- সৌরভ মেয়েটির প্রতি একটু বেশি দূর্বল দেখাচ্ছে তোমাকে কি হয় মেয়েটি?
আমি:- আমার স্ত্রী! (তখন ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
ডাক্তার:- তুমি বিয়ে করে ফেলছো যাক ভালো কাজ করেছো! আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি তুমি এগুলো নিয়মিত ওকে খেতে দিবে। আর ওর দিকে একটু খেয়াল রাখবে মনে হচ্ছে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেনা। নতুন বউ হয়ে বাড়িতে এসেছে মনে হয় এখনো সবার সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি একটু খেয়াল রেখো কেমন।
আমি:- ঠিক আছে!
ডাক্তার:- সৌরভ তোমার বাবা মারা কোথায়?
ভাবি:- আংকেল ওনারা একটা অনুষ্টানে গেছে। চলুন আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। সৌরভ তুমি তসিবার পাশে বসো আমি আসছি।
আমি:- ঠিক আছে! ওনারা বাহিরে গেছে আমি তসিবার পাশে বসেছি! তসিবার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতেছি। বার বার মনে পড়ছে তসিবাকে কষ্ট দেওয়া কথা গুলি। ওর চুল গুলি কপালে পড়ে ছিলো আমি সরিয়ে দিতেছি তখনি ভাবি এসেছে! ভাবি তুমি যে বলছো আম্মা আব্বারা অনুষ্টানে গেছে কার অনুষ্টান।
ভাবি:- নান্নু আংকেলের মেয়ের আজকে গায়ের হলুদ। আমি তো এসেছিলাম তোমাদের নিয়ে যেতে আর এসে দেখি এই অবস্থা।
আমি:- ও মনে পড়ছে আজকে তো মিলির গায়ের হলুদ। কিন্তু আমি যাবোনা তুমি চলে যাও।
ভাবি:- আমি একা যাবো কি করে?
আমি:- কেনো? ভাইয়া কোথায়?
ভাবি:- তোমার ভাইয়া সহ সবাই চলে গেছে! আর আমি এখন যাবোনা তুমি গিয়ে তসিবার মেডিসিন গুলি নিয়ে এসো আমি তসিবার পাশে বসে আছি।
আমি:- ভাবি তুমি সত্যি অনেক ভালো! তুমি বসো আমি গিয়ে ওর মেডিসিন নিয়ে আসি।
ভাবি:- সৌরভ আমি তোমার বড় বোন হিসাবে ছোট ভাইয়ের কাছে কিছু চাইবো তুমি দিবে?
আমি:- হ্যা বলো তুমি চাও?
ভাবি:- তসিবাকে তুমি বউ হিসাবে মেনে নাও! একটা সামান্য ভুলের জন্য মেয়েটাকে আর কত কষ্ট দিবে? বিন্তি তোমাকে বিয়ে করতে চাইনি তাই তসিবা তোমাকে বিয়ে করেছে। আজকে তোমাকে একটা মেসেজ দেখাই তখনি ভাবি তসিবার মোবাইলটা হাতে নিয়েছে ওর মোবাইলের পাসওয়ার্ড দিয়ে লক খুলছে।
আমি:- তসিবার পাসওয়ার্ড তুমি জানো কি করে?
ভাবি:- তুমি যেমন আমাকে বড় বোন হিসাবে বিশ্বাস করো তেমনি তসিবা আমাকে বড় বোন মানে। এই যে দেখো মেসেজ যেইটা বিন্তি তসিবাকে দিয়েছে। মেসেজটাই লিখা আছে! আপু তোমাকে ধন্যবাদ আমার বাবা মাকে বুঝানোর জন্য। আমি সৌরভ ভাইয়াকে পছন্দ করিনা এইটা আমার পরিবারের সবাইকে বলছি কিন্তু ওনারা আমার কথা না শুনে বিয়ে ঠিক করছে। তবে সৌরভ ভাইয়া অনেক ভালো তুমি ওকে কষ্ট দিওনা সূখে সংসার করো আর আমার যখন বিয়ে হবে তখন সাথে একটা কিউট বেবি নিয়ে আসবা কেমন। তসিবা একটা মেসেজ করেছে। হ্যা সত্যি সৌরভ ছেলে হিসাবে অনেক ভালো আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি বাসর রাতটাই ঝগড়া করে। আমি ওর কাছে ক্ষমা চেয়েছি কিন্তু ক্ষমা করেনি বরং আমার সাথে রাগ করে আছে। তবে মনে হয়না রাগটা বেশি দিন থাকবে খুব তাড়াতাড়ি আমার অধিকার আমি বুঝে নিবো। মেসেজটা পরে তসিবার দিকে তাকিয়েছি।
আমি:- সত্যিই আমি ভুল করতেছি তসিবা অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে কিন্তু কি করবো বলেন।
ভাবি:- ক্ষমা মহৎ কাজ আর যে ক্ষমা করতে পারে সেই সবচেয়ে বড় মনের অধিকারী হয়। তুমি তসিবাকে ক্ষমা করে স্ত্রী হিসাবে মেনে নাও।
আমি:- কিন্তু আমি মেনে নিলে কি হবে দাদি আর মা।
ভাবি:- যদি তুমি ঠিক থাকো তাহলে তোমার মা আর দাদি কেউ কিছু করতে পারবেনা। এক তারা ঠিক তো হাজার তারা ঠিক। তুমি সাহায্য করো তাহলে তসিবা খুব সহজে ওদের পরীক্ষাই জয়ী হবে।
আমি:- ধন্যবাদ ভাবি! তবে তুমি তসিবাকে কিছু বলোনা আমি আস্তে আস্তে তসিবার মনটা জয় কনে নিবো আর মা দাদির সামনে অভিনয় করে যাবো।
ভাবি:- হ্যা তা একদম ঠিক বলছো। এখন তুমি মেডিসিন আনতে যাও।
আমি:- আচ্ছা তাই হবে বলে ভাবিকে রেখে আমি মেডিসিন নিতে ফার্মেসীতে এসেছি! মেডিসিন গুলি নিয়ে বাড়িতে এসেছি! মনটা আজ তসিবার কাছে পড়ে রয়েছে! রুমে ঢুকে দেখি ভাবি বসে আছে আর ফোনে কথা বলছে! আমি ভিতরে ঢুকেছি তখনি ভাবি বলে।
ভাবি:- ভাই তুমি থাকো আমি গেলাম আর তসিবার দিকে খেয়াল রেখো।
আমি:- ঠিক আছে! ভাবি চলে গেছে আমি তসিবার পাশে বসে আছি ওর মাথায় হাত ভুলাচ্ছি আর ঘুমে ঝাকনি খাচ্ছি। নাহ একটু খাটের উপর গিয়ে বসি যেই চিন্তা সেই কাজ খাটের উপর উঠে তসিবার পাশে শুয়েই পড়েছি আর কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বলতেও পারবোনা। ঘুম ভাংগছে কারো ঘন নিশ্বাসে তাকিয়ে দেখি তসিবা আমাকে জড়িয়ে ধরে এক পা আমার উপরে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি বাধা দিলাম না ইচ্ছে করে ওর কপালে আলতু করে চুমু একে দিলাম তখনি তসিবা চোখ মেলছে। আমি কিছুটা লজ্জাই পড়ে গেছি তখন তসিবা আমার দিকে ওর ঠোট গুলি এগিয়ে দিয়েছে।
তসিবা:- ভাম্পায়ার অফার কাজে লাড়িয়ে নেন! এমন সুযোগ আর নাও আসতে পারে।
আমি:- কি সুযোগ দেখি সরো।
তসিবা:- আমি কাওকে কিছু বলবোনা আপনি চালিয়ে যান! এই নেন চোখ বন্ধ করে নিচ্ছি।
আমি:- দেখো তোমার হাত কেটে গেছে সেই জন্য তোমাকে এখানে রাখছি। এখন মনে হয় তুমি সুস্থ হয়ে গেছো এবার উঠে তুমি দাদির রুমে যাও।
তসিবা:- যেহেতু একবার বুকে ঠাই পেয়ে গেছি সেহেতু আর যাচ্ছিনা! বলে আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে! তসিবার কেমন লাগছে জানিনা তবে আমার নিশ্বাস ঘন হয়ে যাচ্ছে নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছে। এর মাঝে তসিবা ছোট ছোট কিস করছে ঠিক তখনি দরজায় ঠক ঠক শব্দ আর বাহির থেকে দাদির ডাক।
দাদি:- সৌরভ দরজাটা খুল তাড়াতাড়ি করে। তমিবাকে কোথাও খোঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
তসিবা:- এই খরস দাদির জন্য সব গন্ডগোল হয়ে গেলো। আমি ওনার ভাড়া ভাতে ছাঁয় দিচ্ছিলাম মনে হয়।
আমি:- বির বির করে কি বলছো যাও গিয়ে দরজাটা খুলে দাও। দাদি তোমাকে কতক্ষণ ধরে দেখছেনা।
তসিবা:- যাবো?
আমি:- হ্যা যাও! তসিবা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমিও তাকিয়ে আছি তখনি আমার ঠোটে তসিবা কিস করে বসেছে। আমার এক মূহূর্তের জন্য সব কিছু থমকে গেছে। কি হলো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা সব কিছু এলো মেলো হয়ে গেছে। আমি শুয়ে আছি তসিবা গিয়ে দরজাটা খুলেছে।
দাদি:- তুমি এখানে সৌরভের রুমে কি করছো?
তসিবা:- স্বামী স্ত্রী যা যা করে তাই করছি বলে দাদির গাল টেনে হাসতে হাসতে চলে গেছে। আর দাদি কটমট করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
দাদি:- কিরে তসিবাকে তুই সহ্য করতে পারিসনা তাহলে রুমে দুজনে কি করছিলি?
আমি:- কিছুনা তসিবার হাত কেটে গেছে তাই রুমে নিয়ে এসেছি।
দাদি:- তাই বলে দরজা বন্ধ করে রাখতে হবে।
আমি:- রাত অনেক হয়ছে গিয়ে ঘুমান আমার ঘুম পাচ্ছে বলে শুয়ে পড়েছি! দাদি কিছু বলতে ছিলো কিন্তু বলেনি চলে গেছে! আমি তসিবার কথা মনে পড়ছে তসিবার স্পর্শটা বার বার মিস করতেছি। তসিবাকে মিস করতে করতে ঘুমিয়ে গেছি একদম সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেছি দেখি আম্মা আর দাদি মিলে তসিবাকে বকা বকি করছে।
আব্বা:- কি হলো মেয়েটার সাথে কেনো এমন করছো?
আম্মা:- মেয়েটি কি করছে সেইটা তো আগে জানুন।
আব্বা:- কি করেছে শুনি?
দাদি:- কি করেছে দেখাচ্ছি বলে দাদির নতুন দুইটা শাড়ি নিয়ে এসেছে আর আম্মার শাড়ি একটা। শাড়ি দুইটাকে ধূয়ে একদম বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে আবার আয়রন করার সময় তিনটা শাড়ি পুরে ফেলছে।
আব্বা:- তসিবা এই গুলি এমন হলো কি করে?
তসিবা:- আমি তো বলছি আয়রন করতে পারিনা তাও আমাকে দিয়ে দাদিমা করাতে চাচ্ছে তখন আম্মা আমাকে রান্না ঘরে ডাকছে আর শাড়ির উপরে রাখা ছিলো তাই এমন ভাবে পুরে গেছে।
আম্মা:- তাই বলে তিনটা পুরবে এক সাথে? আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে এমন কাজ করেছো! তুমি কি ভাবছো আমি কিছু জানিনা সৌরভ তোমাকে কালকে একটু যত্ন নিয়েছে তার জন্য এমনটা করেছো। শুধু সৌরভ তোমাকে স্ত্রী হিসাবে মানলে হবেনা আমি মা আর বাড়ির সবাই মানতে হবে।
আব্বা:- তসিবা বলছে তো ভুল হয়ে গেছে এখন ওকে বকা বকি করলে কি সব ফিরে আসবে?
আম্মা:- শুধু আপনার জন্য আজকে এই অবস্থা! আর সৌরভ কালকে অনুষ্টানে তোরা যাসনি কেনো? সামন্য একটু হাত কাটছে এই জন্য ডাক্তার ঔষধ সহ সব একা কার করে ফেলছিস। যা হবার হয়ে গেছে এর পর যত দিন তসিবাকে আমরা না মেনে নিচ্ছি ততদিন তুই তসিবার সামনে আসবিনা কথাটা মনে থাকে যেনো? তখনি দাদি বলে!
দাদি:- মনে হয়না সৌরভ পারবে তসিবার সামনে না এসে। দেখ কেমন করে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।
আম্মা:- সৌরভ কি বলছি শুনতে পাসনি?
আমি:- হ্যা শুনতে পায়ছি!
আম্মা:- কথাটা মনে থাকে যেনো। আয় এখন নাস্তা করবি। আমি গিয়ে নাস্তার টেবিলে বসেছি। এক এক করে সবাই এসেছে কিন্তু তসিবা রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে তখনি আমি বলি।
আমি:- তসিবা তুমি ঐ দিকে যাচ্ছো কেনো? নাস্তা করে করে মেডিসিন খেয়ে নাও। তখন দাদি আম্মা আমার দিকে তাকিয়েছে আর তসিবা বলে।
তসিবা:- কিসের মেডিসিন? আমাকে মেডিসিন এনে দিয়েছেন নাকী?
আমি:- হ্যা এনেছি আমার রুমে রাখা আছে! এসো নাস্তা করবে। তসিবা দাঁড়িয়ে আছে আবার বলি কি হলো শুনতে পাওনি এসো নাস্তা করবে। তখনি দাদি বলে।
দাদি:- সৌরভ কাজের মেয়েরা সব সময় নাস্তা পরে খায়। আমরা নাস্তা খেয়ে গেলে এরপর যা থাকবে তা খাবে।
আমি:- তসিবা আমি কি বলছি! তসিবা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বসা থেকে উঠে তসিবার দিকে গেছি! ওর হাত ধরে টেনে সোজা টেবিলে বসিয়ে দিয়েছি। তসিবা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
দাদি:- কাজের মেয়ের সাথে বসে এক টেবিলে খাবার খেতে হবে?
আম্মা:- সৌরভ তসিবাকে এখানে বসালি কেনো? এখনো তসিবাকে আমরা বউ হিসাবে মেনে নেয়নি। যতদিন মেনে না নিচ্ছি ততদিন তসিবা আমাদের পরে বসে খাবে। এই কয়দিন তুই আর তসিবার দ্বাড়ে কাছে আসবিনা।
আমি:- ঠিক আছে আসবোনা তবে তসিবা আমার কাছে আসলে আমি যাবো ওর কাছে। (কথাটা বলে মাথায় একটা হাত দিলাম এইটা আমি কি বলছি?) To be continue,,,,,,
( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/shohrab.ampp