গল্প-আত্মা_নাকি_সে ( পর্ব –০৫)

0
5119

গল্প-আত্মা_নাকি_সে ( পর্ব –০৫)
লেখক– (জ্বীনরাজা)
*************
সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদিন, ভোর সকাল বেলা একটা অবাস্তব ঘটনা ঘটে যায়। যে ঘটনা দেখে হোস্টেলের দারোয়ান থেকে প্রিন্সিপাল স্যার পর্যন্ত অবাক হয়ে যায়। সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। নিজের চোখ যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সবার মনে মনে একটাই কথা, ওরা কি আত্মা? নাকি সে..?
ভোর সকালে রিয়া, প্রিয়া, মায়া এবং সামিয়া কলেজের দরজা ঝাড়ু দিচ্ছে। যে মেয়েরা কখনো নিজের কলমটা পর্যন্ত নিজের হাতে নিত না, পাশে থাকা সিটের একটা মেয়েকে দিয়ে অথবা কোন ছেলেকে ডেকে কলমটা হাতে নিতো, কলেজের মধ্যে ওদের নেত্রীত্ব চলত সব সময়, প্রিন্সিপাল কিছু বলতে পারত না, বলতো বা কিভাবে, যদি তাদের কিছু বলতো তাহলে এর শাস্তি হয়তো উনিই পেতো।ওনার চাকরিটা হারাতো উনি।চাকরি হারানোর কারণ সবারই ব্যাকগ্রাউন্ড অনেক ভাল ছিল। যদি ওদের কিছু বলা হয় তাহলে ওরা ইচ্ছে করলেই, 2 মিনিটের মধ্যে প্রিন্সিপালের চাকরিটা খেয়ে নিতে পারে। মেয়ে মানুষের বিশ্বাস নেই।
যদি আমজনতার সামনে কোন মেয়ে একটা ছেলের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়, তখন সেই ছেলেটির উপর ক্ষেপে যায় পাবলিক, যে ছেলেটির বিরুদ্ধে কথা বলেছি মেয়েটি। যদিও সেখানে ছেলেটির কোন দোষ নেই, কিন্তু আমজনতা তো সেটা বুঝবেনা,বুঝবে সেই মেয়েটির কথা। পাবলিক তো বুঝেনা এসব।এই যুগে সবাই মেয়ে আর মেয়ে নিয়ে পড়ে আছে।বুঝিনা কি আছে এদের মধ্যে।রস কস ওটুকুই তো..? কেনো ভাই,বিয়ে করলে কি আপনার বউয়ের রস কম হবে? ১০ জনের মধ্যে আপনার বউয়ের মধ্যেও তা,তাহলে কেনো অন্য মেয়েদের প্রতি আপনার এমন কুরুচিপূর্ণ চোখ পড়ে।বিবাহিতদের বা কি বলবো,আজকাল ইভটিজারদের মধ্যে বিবাহিত লোক বেড়ে যাচ্ছে। কিছু মেয়েরা বা কেমন মেয়ে, ছেলে দেখলেই কোমরের ঢোলের আওয়াজ যেনো বেড়ে যায়।যে মেয়ের কোনোদিন কোমর নাড়া খায়নি,সেও কোমর এমন ভাবে নাচায়,যেনো কোনো প্রতিবন্ধী সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে। ( সবার ক্ষেত্রে নয়,যারা এসবে লিপ্ত,তাদেরকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে।)
কলেজে ওদের এমন কাজ দেখে বাকিদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। এতো এতো দেমাগি মেয়ে গুলো,হটাৎ করে এমন ধোয়া তুলসি পাতা হলো কিভাবে। কিছু ছেলে- মেয়ে ভেবেছে হয়তো ওদের বান্ধবীদের মরনে তারা ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু এই কারণ আর বেশিদিন টিকেনি। হুট করেই মায়া একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রিয়া,রিয়া আর সামিয়া মিলে মায়াকে প্রশ্ন করলো ডক্টর কেন দেখাচ্ছেনা। কিন্তু এতে কোনো জবাব দিলোনা মায়া। ওরা ভেবেছে হয়তো মায়ার নিজেস্ব কোনো সমস্যা হয়েছে,তাই ওদের কাছে বলতে চাচ্ছেনা। কিন্তু গোপন কথা বেশিদিন টিকে রাখা যে অসম্ভব, বিশেষ করে মেয়েদের। ছেলে ছেলে মারামারি লাগলে, বের হয় রক্ত,আর মেয়ে মেয়ে মেয়ে ফাইট হলে,বের হয় তথ্য। তেমনি হয়েছে ওদের ব্যাপারে।
মায়ার থেকে প্রিয়া ৭০০০ ( সাত হাজার) টাকা পাওনা ছিলো। প্রিয়ার বাড়িতে নাকি তার আব্বু অসুস্থ, প্রিয়াকে খুব ইমারজেন্সি যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু মায়া যে টাকা না দিলে প্রিয়ার যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।প্রিয়া মায়ার কাছে টাকাটা চাইলো।এরপর যা হলো)
— মায়া, আব্বু খুব অসুস্থতার মধ্যে আছে।কাল বাসায় যাবো।তোর কাছে যে সাত হাজার টাকা পাই,সেগুলো দিস প্লিজ।
— আপাতত হাতে টাকা নেই। আর তুই তো জানিস আমি এই ১ মাসে কতো টাকা খরচ করেছি।বাসা থেকে টাকা চাইলে সমস্যা হবে।
— তোর দোষে আজ তোর এই অবস্তা। কি দরকার ছিলো? বাচ্চাটাকে নস্ট করার..?
— প্রিয়া স্টপ দিজ,এসব কথা বলছিস কেন!
— তো কি করবো,তুই আমার টাকা আজকের মধ্যেই দিবি।নয়তো আমি সবাই বলে দিবো আসল সত্য।
— দেখ প্রিয়া,এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে
— বেশি বেশি হলে কি করবি তুই?
— প্রিয়া লিমিট ক্রস করিস না,আমার রাগ তুলছিস তুই
— ১০০ বার করবো,পারলে আমার বা**ল ছিড়ে দেখা
— এবার আর সহ্য হবেনা আমার বলে দিলাম
— যাহহ, তোর মতো একটা লম্পট মেয়ের আবার কেমন সহ্য আছে,তা আমার জানা আছে
( প্রিয়া কথাটা শেষ করতে না করতে মায়া প্রিয়ার গালে একটা লাল তারা একে দিলো {ঠাসসসসসসসসসসসস}
প্রিয়াও রেগে গিয়ে মায়ার চুল ধরে টানতে লাগলো। লাথি,ঘুষা,উস্টা,মাইরের উপর মাইর শুরু হয়ে গেছে। ওদের এমন মারামারি দেখে ছুটে আসে রিয়া আর সামিয়া। মারামারি আটকাতে গিয়ে ওরাও দু চারটা লাথি উস্টা খেয়েছে বটে.. রিয়া বলল)
— আরে এইইই, কি করছিস তোরা,এভাবে মারামারি লাগাইলি কেন।
( এরমধ্যেই প্রিয়া বলে উঠলো)
— এই মায়ার জন্য আমাদের বন্ধবীরা মরেছে,এখন আমাদের জীবনও বিপদে আছে।সব দোষ এই মায়ার
( সামিয়া বলল)
— কি..? মায়া কি করেছে?
( মায়া বলল)
— দেখ প্রিয়া,আর একটা কথা বললে তোর জ্বীব্বা আমি কেটে ফেলবো
( প্রিয়া)
— আমার লগে এসব চাপা চু**য়া লাভ নাই,পারলে করে দেখা কিছু
( সামিয়া)
— আচ্ছা চুপ হইবি তোরা( একটা রেগে)
এই প্রিয়া, মায়া কি করছে বল তুই
( মায়া)
— প্রিয়া তুই কিছুই বলবিনা একদম
( প্রিয়া)
— তুই আর আমাকে আটকাতে পারবিনা।শুন সামিয়া, ওইদিন রিয়াজের হরমোন মায়ার যোনিতে পড়ে গিয়েছিলো। যার জন্য মায়ার পেটে রিয়াজের বাচ্চা জন্ম নিয়েছিলো।কিন্তু মায়া কথাটা আমাদের সবাইকেই এড়িয়ে যায়।ঈদের সময় মায়া বাড়িতে যায়নি কারণ সে বাচ্চা নস্ট করার জন্য মায়া যে অপারেশন করেছে,সে অপারেশনে মায়ার ভগাঙ্কুরে সমস্যা হয়েছিলো।ভগাঙ্কুরের সমস্যা ঠিক করার জন্য মায়া অনেক টাকা খরচ করেছে।কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলোনা।এক সময় ওর টাকা শেষ হয়ে যায়। বাড়ি থেকে এতো পরিমান টাকা এনেছে যে আর চাইতে পারেনি।পরে আমার থেকে ৭হাজার টাকা নিয়ে নিজের চিকিৎসা করেছে।পরে যখন জানতে পারলাম সবার মরার পিছনে একটা বাচ্চাও আছে।তখন আমি ঠিক ধরে নিয়েছি যে সে আর কেও নয়,ও হচ্ছে রিয়াজের বাচ্চা।
(রিয়া)
— ছি.. মায়া ছি…. এতো বড় একটা কথা তুই আমাদের থেকে লুকিয়েছিস? তোর লজ্জা হওয়া উচিৎ
( মায়া)
— কিসের লজ্জারে? রিয়াজকে তোরাও তো করেছিস,তোদের কি এখন কি এমন দেমাগ, যে আমার উপরেই আঙুল তুলছিস?
( সামিয়া)
— স্টপ.. ??? ব্যস অনেক হয়েছে,আর না।আমি আজকেই বাড়ি চলে যাবো। এখন আমি বুঝতে পেরেছি,তাবিজ কেনো কাজ করছিলোনা। বাচ্চাটিই ভূলিয়ে ভালিয়ে ওদের থেকে তাবিজ আলাদা করেছে,তারপর রিয়াজ এসে এক এক করে সবাইকে সেইভাবেই মেরেছে,যেভাবে ওকে মারা হয়েছে।
( সামিয়ার কথা শেষ হতে না হতেই প্রিন্সিপাল স্যার হটাৎ দরজা থেকে আওয়াজ করে উঠলো)
— ছি..ছি..ছি… এই আমি কাদের পড়ালেখা করাচ্ছি। যারা শুধু বেহায়া,লম্পট, বেশ্যা নয়, খুনিও।আর কোনো ছেলেকে তোমারা খুজে পাওনি? সহজ সরল একটা সাধাসিধে ছেলের উপর তোমারা এভাবে করতে পারলে? তোমরা কি মানুষ? নাকি পশু…
( মায়া)
— প্লিজ স্যার,আমাদের ভূল হয়ে গেছে, আপনি আমাদের বাচান প্লিজ। ( স্যারের সামনে গিয়ে হাত জোড় করে অনুরোধ করতে লাগলো মায়া)
— তোমাদের আমি এতোদিন কিছু বলিনি আমার চাকরি যাবে বলে।কিন্তু আজ আর সে ভূল হবেনা।চাকরি গেলে যাক,তবুও তোমাদের শাস্তি পাওয়া উচিৎ। আমি এক্ষুনি পুলিশকে খবর দিচ্ছি।
( প্রিন্সিপাল কথাটা বলে যেই দরজা খুলে বের হতে যাবে,তখনি রিয়া ফুলদানি দিয়ে স্যারের মাথায় আঘাত করে বসে। ততক্ষনাৎ প্রিন্সিপাল সেখানেই জ্ঞ্যান হারায়।ওরা প্রিন্সিপালকে রুমের ভিতর আটকিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেলে, এরপর প্লেন করে বসে,
” উনাকে বেচে রাখলে আমাদের জীবন বিপদে পড়তে পারে।শেষ করে গুম করে ফেলি ”
ওদের কথা অনুযায়ী ওরা তাদের মিশন শুরু করতে লাগলো। মায়া রান্নাঘর থেকে বটি নিয়ে এসে প্রিন্সিপাল এর গলায় ধরে। এমন সময় প্রিয়া বলল)
— আচ্ছা,উনাকে খুন করলে লাশ গুম করবি কিভাবে। সাজেদা বেগম( ক্লিনার) তো বাহিরে ঝাড়ু দিচ্ছে।তাছাড়া উনি প্রিন্সিপাল এর লাশ দেখলে হয়তো উল্টোপাল্টা কিছু করে বসবে।উনার জ্ঞ্যান পিরার আগেই প্লেন কর যে লাশ কোথায় লুকাবি।
(রিয়া)
— হোস্টেলের পিছনে একটা ময়লার ড্রেন আছে। লাশ টুকরো টুকরো করে সেই ড্রেনের মধ্যে ফেলে দিলেই হবে। কেও কিছু বুঝতে পারবেনা।
(মায়া)
— হুম,সেটাই করা হবে।দাড়া আমি গলাটা কেটে আগে মেরে ফেলি।
(মায়া বটি হাতে নিয়ে প্রিন্সিপাল এর গলায় চালাতে যাবে,তখনি চলে ইলেকট্রনিক। অন্ধকার হয়ে যায় পুরো রুম।মায়া রিয়াকে বলল যে)
–জানালাটা খোলে দে।রুমে কিছু দেখা যায়না।
— বাহিরেও তো অন্ধকার হয়ে গেছে। সন্ধ্যা নেমে এসেছে দেখ।
–তো হা করে তাকিয়ে আছিস কেন,ফোনের ফ্লাস লাইট অন কর।
— ঠীক আছে দাড়া।এক্ষুনি করছি।
( এই বলে রিয়া নিজের ফোন বের করে ফ্ল্যাশ লাইট অন করে। এরপর লাইটের আলোয় ওরা যা দেখলো,তা কখনো মেনে নেওয়া তো দূরের কথা,কখনো ভাবতেও পারেনি। ওরা দেখে প্রিন্সিপাল স্যার হাতে একটা সামান্য ছোট ছুরি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।মায়া ভয় পেয়ে বটি টা শক্ত করে ধরে প্রিন্সিপাল এর গলায়..
চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে