গল্প-আত্মা_নাকি_সে..?( পর্ব -০৪)

0
5522

গল্প-আত্মা_নাকি_সে..?( পর্ব -০৪)

লেখক– #Riaz_hossain_imran ( জ্বীনরাজা)
*******************
কিন্তু পিংকির অনুরোধটা যেন,
তার মুখের ভিতরেই রয়ে যায়।
কারো কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি।
এদিকে পিংকির গেঞ্জিটা অবশেষে চিড়তে চিড়তে পুরো খুলে যায়।
পিংকির পুরো নগ্ন দেহ
বেডে পড়ে আছে।
অনুভব করলো,
ওর স্তনে কেও কামড় বসাতে লাগল। রক্তে ভিজে যাচ্ছে পিংকির স্তন। পিংকি চিৎকার করার শক্তি একেবারের জন্যই যেন ফিরে আনতে পারছে না। পিংকি আবার খেয়াল করল, তার গোপনাঙ্গ ধীরে ধীরে গরম হয়ে যাচ্ছে। পিংকি এবার আরো ভাল করে বুঝেছে, রিয়াজ তার আসল কাজটা শুরু করতে যাচ্ছে…

পিংকি অনুভব করলো, একটা গরম নিঃশ্বাসের বাতাস তার পুরো শরীর বেয়ে যাচ্ছে। পিংকি আরো বুঝতে পারে, তার শরীরটা আগের থেকে অনেকটাই ওজন হয়ে গেছে। প্রায় 50 থেকে 60 কেজি কোন বস্তু তার উপরে পড়ে আছে। পিংকি নড়াচড়া তো করতে পারছি না, তার ওপর ওর শরীরের উপর এভাবে হামলা চলছে। সমস্ত শরীর রক্তে ভিজে গেছে। স্তনদুটি যেন রক্তে লাল হয়ে গেছে। ওর পেট বেয়ে নাভির মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধছে। এতক্ষণ পরে পিংকি মৃত্যুর নিঃশ্বাস ফেলা শুরু করে দেয়। পিংকির চোখ দুটো ঠিক সেইভাবে বড় বড় হয়ে গেছে, যেভাবে রিয়াজের উপর হামলা করার সময় রিয়াজের চোখ বড় হয়ে গিয়েছিল। পিংকি অনুভব করতে লাগলো রিয়াজকে দেওয়া সে কষ্টগুলো।
রিয়াজ কতটা আঘাত পেয়েছে, সব গুলো ধীরে ধীরে অনুভব করত পারছে পিংকি।

” আজ রাত আটটার দিকে এক যুবতী মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে। যাকে তারা মেরেছে, আমরা তার বিচার চাই । তাকে কঠিন ও কঠিনতম শাস্তি দেওয়া হোক । ”

স্ট্যাটাস শুরু হয়ে গেছে ফেসবুকে। আবার গরম হয়ে গেছে সেই ভাবেই ফেসবুকের নিয়ম কানুন গুলো, যেভাবে করে এসেছিল। কি লাভ হচ্ছে সবার এসব স্ট্যাটাস দিয়ে? তারা কি পেরেছে পিংকি কে বাঁচাতে? তারা পেরেছে? রিয়াজকে বাচাতে?
কেন শুধু শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সে মৃত ব্যক্তিদের অসম্মান করে সবাই? কেন বারবার একটা অবিচার অন্যায় কাজ কে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলি আমরা? কেন? কেন করি আমরা এরকম? এর জবাব কি আমাদের কারো কাছে আছে?

এখানে পিংকিকে যদি কেউ সত্যি সত্যি ধর্ষণ করে মেরে ফেলত, তাহলে স্ট্যাটাস টার সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যেত। কিন্তু পিংকিকে তো তারা করেননি, ধর্ষণকারী হচ্ছে রিয়াজের আত্মা। তবে কেন তারা স্ট্যাটাস দিল যে কোন ধর্ষণকারী তাকে মেরেছে, সে ধর্ষণকারীকে কোন একটা মানুষকে উদ্দেশ্য করেছিল ওরা।

এভাবে তাদের সন্দেহকে দাম দিয়ে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় ওই এলাকার যুবক যুবক ছেলেদের। সন্দেহ পড়ে সেই সব ছেলেদের উপর, যেসব ছেলেরা এলাকার মধ্যে হয়তো সবার কাছে খারাপ হিসেবে পরিচিত । আবার হয়তো সেই মেয়ের পিছনে কিছু ছেলেরা ঘুরঘুর করত, অথচ তাকে কখনো স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। সন্দেহটা পড়েছে তাদের উপরেই।
তাহলে আমাদের স্ট্যাটাস, আমাদের ভাইরাল পৃথিবী করতে পেরেছে কি পেরেছে? এসবের বিচার?

মৃত্যুর খবরটা গিয়ে পৌঁছায় বাকি 5 জনের কাছে। সামিয়া এবার বেশ অবাক হয়ে যায়। তার মানে কি তাবিজ কাজ করেনি? সামিয়া ব্যাপারটার যুক্তি দাঁড় করাতে চেষ্টা করে, এরপর সে নিজেই পিংকির লাশের ছবি গুলো ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে দেখে। দেখল যে পিংকির হাতের মধ্যে কোন তাবিজ নেই। তার মানে পিংকি কি নিজে থেকেই তাবিজটা খুলেছিল? নাকি খোলা হয়েছিল। পিংকির মৃত্যুর পরে বাকি 5 জন আতঙ্ক খেয়ে যায়। তিনদিন পর তাদের কলেজে আসার কথা। সবাই মিলে যেহেতু প্লেন করেছিল, তো এটা আর মিস্টেক করা যাচ্ছে না। ওদের সবার বাড়ি যে এক জায়গায়, আসলে কিন্তু তা নয়। একজনের বাড়ি এক অঞ্চলে। কিন্তু তাদের থেকে একজনের মৃত্যুতে বাকিদের রিএকশনটা আরো শক্ত হয়। তারা আরো ভয় পেয়ে যায়।
এভাবে কেটে যায় দুই দিন। তিন দিনের মাথায় বাকি চারজন এসে ঢাকায় পৌছায়। মায়া আগে থেকেই ঢাকা তার এক বান্ধবীর বাসায় ছিলো। গ্রামের বাড়িতে যায়নি মায়া, ওর নাকি ইচ্ছে হচ্ছিল না, সেজন্য গ্রামের বাড়িতে যায়নি।

রিয়া, প্রিয়া, সুমাইয়া, সামিয়া সবাই আবার একত্রিত হয় হোস্টেল এর মধ্যে।
5 জন খুবই আতঙ্ক, খুব ভয় পেয়ে আছে। কি থেকে কি হচ্ছে ওইটা ওদের কল্পনার বাহিরে। তাবিজ গুলো সবাই সবার হাতে শক্ত করে বেঁধে রেখেছে, যেন কোন সমস্যা না হয়। কিন্তু কি লাভ, কখন কোথা থেকে এসে কিভাবে এইটা করে, সেটা তো বলা যায় না। এভাবে কেটে যায় আরও এক সাপ্তাহ।ব্যাপারটা ছড়িয়ে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। সবার মুখে মুখে পিংকি আর পিংকি।পিংকির নগ্ন ছবি ও ভাইরাল।ওর নামে যেমন বদনাম এবং তেমন সুনাম। অনেক লোক শোকাহত জানায়,আবার অনেকে দোষ চাপাচ্ছে। কেউ বলছে হত্যাকারীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য,আবার কেও বলছে সে নিজেই নিজের মরণের সাথে এক ছিল। এভাবে একটার পর একটা গুজব ছড়াচ্ছে তো ছড়াচ্ছেই। হোস্টেলে আসার বরাবর ১৮ দিন পর সুমাইয়ার জন্মদিন। সুমাইয়ার জন্মদিনের পার্টিতে বাকি চারজন এসেছে। গ্রামের বাড়িতে জন্মদিন পালন করতে পারেনি, কারণ কিছুদিন আগেই গ্রাম থেকে এসেছিল। সেজন্য ওরা জন্মদিন সেলিব্রেট করার জন্য হোস্টেলের মধ্যে একটা রুম নিয়ে নিয়েছিল। 5 জন ছিল ওখানকার এক শক্তিশালী গ্রুপ। তিনজন মারা গেছে, কোথায় তাদের ব্যবহার ধীরে ধীরে ভালো হবে, তা কিন্তু না। মারা যাবার এক বা দুই সপ্তা পর পরই তারা যেন সবই ভুলে যায়। এর পিছনের কারণটা খুবই সহজ, কারণ যে তিনজন মরেছে, সে তিনজন তো তাদেরই মত। তাদের থেকে তো একটুও ভালো না। যে তাদের মতো, তাকে মনে রেখে লাভ কি। মনে রাখবে তাদের,যে তাদের চেয়ে উঁচু লেভেলের। উদাহরন দিয়ে বলতে গেলে রিয়াজের কথা বলতে হয়। কারণ রিয়াজের ব্যবহারের দিক দিয়ে রিয়াজ ছিল সবার থেকে উপরে। আজ সবার মৃত্যুর পিছনে তারা দায়ী রিয়াজ কেই করছে। প্রকাশিত হচ্ছে এটাই, রিয়াজের কথা এখনো তারা বলতে বাধ্য।

যাই হোক, জন্মদিনের সময় সবাই এসেছে হাতের মধ্যে একটা ইয়া বড় গিফট নিয়ে। সুমাইয়া অবাক হয় খুব। এত টাকা দিয়ে এরকম জিনিস গিফট দেওয়ার মতো এরা না। অবশ্য এখানে সুমাইয়ার লাভ নেই, ফায়দা হচ্ছে ওই চারজনের। টাকাটা তাদের নিজের না, সুমাইয়ার জন্মদিনের কথা বলে বয়ফ্রেন্ড এর থেকে গিফটটা কিনে নিয়েছিল। ব্যাপারটা যেন জানতে না পারে, সেজন্য তারা আগে থেকেই প্ল্যান করেছে। যে কোনটা কত করে ক্রয় করেছে, ওটা সুমাইয়াকে বলবেনা।

রাত 12 টায় কেক কাটার সময় যাবে। এর আগে সুমাইয়া ফ্রেশ হতে বাথরুমে যায়। সবাইকে রুমের হোস্টেলের রেখে সুমাইয়া চলে যায় বাথরুমে। একটু ফ্রেশ হয়ে এসে নতুন জামা কাপড় পড়বে সে উদ্দেশ্যে। সামিয়া ব্যাপারটা লক্ষ্য করার সাথে সাথে মাথার মধ্যে একটা কল্পনা শক্তি জেগে উঠলো,
একি! একটু পরে যে কেক কাটতে যাবে, সে এখন বাথরুমে যাচ্ছে কেন।পাশে তো ফ্রেশ হওয়ার রুম ছিল। সেখানে নিজেকে ফ্রেশ করে নিয়ে আসতে পারতো। এতদূর বাথরুমে যাওয়ার কারন কি। এইটা কি সে নিজেই গেছে, নাকি তাকে নেওয়া হয়েছে।

সামিয়ার চিন্তার মধ্যেই হঠাৎ এক চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায় সবাই। এতই জোরে আওয়াজটা ছিল, যে সবার কানের পর্দাটা যেন প্রায় ফেটেই গেছে। ভয় পেয়ে সবাই ভয়ে রুম থেকে দৌড়ে বাহিরে এসে দাঁড়ায়। গিয়ে দেখে বাথরুমের নিচ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক মনে হলেও, কারোই বিশ্বাস হচ্ছে না যে ভিতরের কিছু হয়েছে। তাদের চোখের সামনে থেকে একটু আগে ভালো একজন মানুষ হিসেবে সুমাইয়া বাথরুমে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে তার সাথে আবার কি হয়ে গেল।
সবাই হতাশ হয়ে বাথরুমের সামনে যায়।দরজা ভিতর থেকেই লক করা। বাধ্য হয়ে দরজার লক লাথি মেরেই খুলতে হয়েছে।
বাথরুমের দরজাটা খুলেই তারা দেখল সুমাইয়ার নগ্ন দেহ বাথরুমে পড়ে আছে। বাকিদের মতো সুমাইয়ার মৃত্যু টাও তেমন ভাবেই হয়েছে, যেভাবে আরো তিনজনের হয়েছিল। সুমাইয়ার স্তন রক্তে রক্তাক্ত হয়ে,পুরো লাল হয়ে আছে। স্তনের রক্ত গুলো ছড়িয়ে যেন, তার বাকি অংশ ভিজে একাকার। চোখ দিয়ে অঝোর-ধারায় রক্ত বের হচ্ছিল সুমাইয়ার।
সামিয়া এবং প্রিয়া দৌড়ে এসে সুমাইয়াকে ধরাধরি করে বাথরুম থেকে বের করে। বাহিরে আনবার সাথে সাথেই ছবি তুলা প্লাস ভাইরাল হওয়া শুরু হয়ে গেছে।
বাকি ৪ জনেই সব কিছু মন দিয়ে লক্ষ করে।হিসাব তো কিছুতেই মিলছেনা কারো।
হিসাব মেলানোর জন্য তারা ভেবে দেখল, সুমাইয়া তো সেভাবেই মরেছে, যেভাবে আরও তিনজনের মরণ হয়ে ছিল। ফ্লোর, রক্ত, ধর্ষণ, বাথরুম। সবকিছু মিলে যাচ্ছে। সবাই বুঝতে পেরেছে, রিয়াজ এখানে এসেছিল, সাথে রহস্যময় এক বাচ্চা।তখনি প্রিয়ার মাথায় একটা ব্যাপার কড়া নাড়লো। সুমাইয়ার হাতে তো তাবিজ ছিলো।তাহলে মরলো কিভাবে। প্রিয়া ব্যপারটা সামিয়াকে জানায়। সামিয়া প্রিয়ার কথা শুনে জলদি করে,সুমাইয়ার উপর থেকে সাদা কাপড়টা সরায়।সারনোর সাথে সাথেই তারা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সুমাইয়ার হাতের মধ্যে তাবিজ নেই। এবার তারা সন্দেহ করছে, হয়তো রিয়াজ মারার আগে কোন না কোন কৌশলে, আগে তাবিজটা খুলে নেয়। কিন্তু সেখানে কিছু বলেনি তারা। কারণ অনেকে হয়তো সন্দেহ করবে, যে ওর মৃত্যুর ব্যাপারে এরা এত ভালো করে জানে কেন। তারমানে ওর সাথে জড়িত সবাই।
ওরা আর কাওকে কিছু বলেনি। কিন্তু তারা কিছু না বললেও, বন্ধ থাকেনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া। সেই গুজব আবার শুরু হয় অনেক রুপে।এভাবে আরো কিছুদিন গরম হয়েছে ফেসবুক। নতুন টপিক খুঁজে পেয়ে কেউই আর চুপ রইলোনা। এবার ওরা চারজন খুব বেশি সতর্ক হয়ে যায়। তাবিজটা খুলছে কিভাবে, এইটা যদি তারা জানতে পারত তাহলে হয়তো সেটুকুর সাবধানতাও মেনে চলত।

কিন্তু আপনাদের মনে তো খটকা লেগেই আছে যে সুমাইয়ার তাবিজ কিভাবে খুলছে।ওর মরণ হলো কেমনে।হুম তাহলে শুনুন।
সুমাইয়ার হাত থেকে তাবিজ খোলার কারন অবশ্যই আছে। এর পিছনের কারন,ও নিজে ওর বাড়িতে সব সময় গোসল করার টাইমেও তাবিজ এর দিকে তাকিয়ে থাকতো। আর মনে মনে ভাবে” আমার এত সুন্দর চেহারা এত সুন্দর চামড়ার উপর, এরকম একটা তাবিজ পড়ে আছে। এইটা ওর অসহ্য মনে হতো।কিন্তু তাবিজ বাধার স্থানে ফ্রেশ করতে পারতোনা বলে তাবিজ ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আসে সে অনেকবার।
তবে রিয়াজের ভয়ে তা আর করা হচ্ছেনা ওর।কিন্তু কি করবে, জীবন বাঁচানোর জন্য তাবিজ রাখতে বাধ্যতামূলক। এইটা সে আর বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারেনি।ওর জন্মদিনের সময় ও ভাবল, আজকে না হয় গোসল করার সময় তাবিজটা খুলবে। ইচ্ছে আছে খুব ভালোভাবেই ও স্নান করে, জন্মদিনে কেক কাটবে। কিন্তু কেক কাটা হলো না, কাটা হল ওর দেহটা। ধীরে ধীরে মুছে যায় সুমাইয়ার নাম। সুমাইয়াও হয়ে যায়, এক হারিয়ে যাওয়া বস্তুর মতো।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদিন, ভোর সকাল বেলা একটা অবাস্তব ঘটনা ঘটে যায়। যে ঘটনা দেখে হোস্টেলের দারোয়ান থেকে প্রিন্সিপাল স্যার পর্যন্ত অবাক হয়ে যায়। সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। নিজের চোখ যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সবার মনে মনে একটাই কথা, ওরা কি আত্মা? নাকি সে..?

চলবে………..

[ আরো এক নতুন রহস্য কি প্রকাশ হতে যাচ্ছে?
আমি কি জানি, আমি তো নেক্সট পর্বতে বলবো।এর আগে আপনাদের মতামত জানান।কেমন হলো? বা কি হবে?]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে