গল্পের নাম: ফিরে আসার প্রতীক্ষায় লেখিকা: সুমাইয়া আফরীন

0
1138

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_এপ্রিল_২০২১
গল্পের নাম: ফিরে আসার প্রতীক্ষায়
লেখিকা: সুমাইয়া আফরীন

বাহিরে আজ মুশল ধারে বৃষ্টির ধারা বইছে । তাই সুভার কেমন যেন গা ছমছম অবস্থা । সে অনুভব করতে পারছে একটু পরপর শরীরের অবাধ্য লোমকূপগুলোও তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে । এ যেন এক ভিন্ন রকম খেলায় তারা নিজে থেকেই মেতে উঠেছে ।
কিছুক্ষণ আগেও সুভার ভীষণ ইচ্ছে করেছিল অনেকটা সময় নিয়ে ভারী বর্ষণে ভিজতে । কিন্তু না সে ভিজতে গেলো না বরং সে তার ইচ্ছেটা যেন মনের ভিতরেই পুষে রাখলো । কারণ সে জানে একটু পরে নিহান ভাইয়া এসে তাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখলে খুব বেশি রাগ করবে । কিন্তু সুভা বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যখন জানালার ওপাশ থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই দেখছিল । ঠিক তখনই বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁয়ে দেখার লোভ জন্ম নিতে থাকে তার সেই কিশোরী মনে । না! এ লোভ যে খুব ভয়ংকর লোভ যা অন্য সব সাধারণ লোভ কেও অনায়াসে হার মানিয়ে দেয় ।
অতঃপর সুভা কি একটা ভাবতে ভাবতেই বাসার ভিতরে চলে গেলো । আবার খুব শীঘ্রই ফিরে আসলো হাত ভর্তি চুড়ি পরে । আর বলে উঠলো,

‘ইশ! কতদিন পর বৃষ্টিমুখর দিনে চুড়ি পরেছি হাতে,
আজকের প্রকৃতিও যেন অপরূপ রূপে সেজে উঠেছে আমার-ই সাথে ।’

অতঃপর সুভা মনের আনন্দে সু-বিশাল আকাশে মুক্ত পাখির ডানা মেলে উড়ে চলার সুখকর অনুভূতির মতো আপন মনে বৃষ্টির সাথে অদ্ভূত খেলায় মেতে উঠলো । এ যেন সুভার ছোঁয়া পেতেই বৃষ্টির সৌন্দর্য আরও বহুগুন বেড়ে গেলো । কোনো কবি যদি উক্ত দৃশ্য নিজ চোখে অবলোকন করত । তবে নির্দ্বিধায় বলতে পারি সে এতক্ষণে কবিতা না লিখে থাকতেই পারতো না ।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে গেলো । সুভার মনে এখন যেন উপচে পরছে খুশির ঢেউ ।
হঠাৎ করেই সে ভাবলো না এখন আর ভিজলে চলবে না বাসার ভিতরে চলে যেতে হবে । আর তা না হলে আজকে আর রক্ষা নেই নির্ঘাত ঠাণ্ডা লেগে যাবে । এছাড়া নিহান ভাইয়া এসে এইসব দেখলে নির্ঘাত আমায় বকা খেতে হবে । আর তখন তার ওই ভীষণ সুন্দর চোখ দুটো লাল রক্ত বর্ণ ধারণ করবে । সুভা এইসব ভাবতে ভাবতেই তড়িঘড়ি করে ছাদ থেকে নামতে যাচ্ছিল । আর তখনই কারো সাথে ধাক্কা লেগে ছিটকে পরে যাচ্ছিল সুভা । কিন্তু না সুভাকে কেউ একজন নিজের সাথে আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে এ যাত্রায় পা ভাঙ্গার হাত থেকে আবারো রক্ষা করেছে । হ্যাঁ সেই চেনা স্পর্শ, সেই নিরাপদ বুক যেখানে বেশ কয়েকবার এর আগেও জায়গা হয়েছিল তার । তাই সেই মানুষটিকে চোখ বন্ধ করেও বুঝতে অসুবিধা হয়নি সুভার । ওইদিকে ভয় পেয়ে ও ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়ে নিহানের শার্ট এখনো যে সুভা খাঁমচে ধরে আছে সেই দিকে যেন কারো হুশ-ই নেই । কারণ শুধু সুভাই নয় নিহানও যে তার বৃষ্টি বিলাসীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে সেই কখন থেকেই তাকিয়ে আছে । যার দিকে সে সচরাচর তাকায় না । কারণ নিহান এই এক বছরে এইটুকু বুঝতে পেরেছে যে,
‘এই মেয়ে যেই সেই মেয়ে না এর মাঝে অদ্ভূত এক নেশা আছে যার কারণে সে বারবার তাতে আকৃষ্ট হয়ে যায় ।’

নিহান নিজেকে সামলে নিয়ে সুভাকে ছেড়ে দিলো আর একটু রাগী রাগী ভাব নিয়ে বললো,
এই সুভা তুমি এই সময়ে ছাদে কেন? আর বৃষ্টিতে ভিজে নিজের এ কি অবস্থা করলে? এখন যদি জ্বর বাঁধে তবে তো পড়াশুনার পাট চুঁকিয়ে মহা আনন্দে থাকবে আমি বুঝি কিছু বুঝিনা ভাবছো ।
এখুনি নিচে যাও আর তাড়াতাড়ি ভিজে কাপড় পাল্টে বই নিয়ে বস । আমি তোমার পিছু পিছুই আসছি । অতঃপর সুভা যেতে নিলো কিন্তু পায়ে ব্যথায় ওখানেই বসে পরে । আর নিহান উপায় না দেখে তাই সুভাকে কোলে তুলে নিলো । নিহান শাসনের সুরে কত কি বলতে বলতে সুভাকে নিয়ে রুমে গেলো ঠিকই কিন্তু সুভা সেদিকে কর্ণপাত করলো না । সুভাকে ওয়াশ রুমের সামনে নামিয়ে দিয়ে বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকলো নিহান । সুভাও অর্ধেক ভেজা জামা কাপড়গুলো পাল্টে বাহিরে আসলো । এরপরে নিহান সুভাকে কোলে করে খাট পর্যন্ত নিয়ে গেলো ।

মুন আন্টি এসে সুভাকে এভাবে দেখে প্রথমে একটু বকা দিলেও আবার পর মুহূর্তেই আদর করে বুকে টেনে নিলেন । এরপরে সুভার পায়ে বরফ লাগাতে লাগাতেই আমার সাথে তিনি টুকটাক কথা বললেন ।কিছুক্ষণ পর সুভার পায়ের ব্যথা একটু কমে আসলে আমাকে পড়াতে বলে চলে গেলেন ।
-‘আচ্ছা আন্টিকে দেখছি না যে, সে কি বাসায় নেই?’ -‘আসলে নিহান ভাইয়া আম্মু আজকে সকালেই কি একটা প্রয়োজনে গ্রামের বাড়িতে গেছে । আমাকে সাথে নিয়ে যায়নি আমি মুন খালামুনির সাথেই বাসায় থেকে গেছি ।’
-‘ওহ আচ্ছা । যাই হোক এখন তবে পড়তে বস এমনিতেই অনেকটা সময় চলে গেলো ।’
-‘ মন থেকে ইচ্ছে না করলেও মুখে ঠিক আছে বলে পড়া শুরু করলো সুভা । কারণ সে জানে সামনে বসে থাকা লোকটা একটা নিম পাতা । যেমন উপকারী তেমনি তিতা ।’
পড়ানো শেষ করে নিহান চলে যেতেই সুভা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো ।

আর নিহান বাসায় ফিরেই বসে পড়ে কাগজ কলম নিয়ে তার বৃষ্টি বিলাসীকে নিয়ে কিছু লিখতে । লিখলেই যেন ফিরে পাবে অদ্ভূত এক প্রশান্তি ।
তাই আর দেরি না করে শুরু করলো…

ওহে বৃষ্টি বিলাসী! দেখতে দেখতে ঠিকই একটা বছর গেলো কেটে,
মন আঙিনায় তোমায় নিয়ে লুকিয়ে রাখা অনুভূতিটুকুর খোঁজ তুমি নাই বা পেলে ।
কিন্তু যদি কখনো জানতে-
কেউ একজন তোমায় ভালোবাসে থেকে অন্তরালে,
তবে কি তুমি তাকে গ্রহণ করতে?
নাকি ফেলতে জীবন থেকেই ছেঁটে?
ভয় হয় তাই আজও পারিনি হয়তো বলতে;
‘ভালোবাসি ঠিক কতটা ।’
তাই বলে ভেবো না কিন্তু;
দেই নি তোমায় ‘আমার এই মনটা ।’
বলিনি হয়তো তাতে কি?
প্রতিটা মুহূর্ত আমি তোমায় নিয়ে ভেবেছি,
আজকের বৃষ্টি মুখরদিনে তোমায় ক্ষণিকের জন্য হলেও পেয়েছি ।
হয়তো আজ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকোনি আমার বুকে,
আচ্ছা, এ বুক ছাড়া অন্য কারো বুকে থাকবে কি তুমি সুখে?

নিহান এমনি কত শত প্রশ্ন ছুড়ে রাখে বৃষ্টি বিলাসীর পানে । কিন্তু উত্তর কোনোদিন মিলবে কিনা তা জানেনা নিহান ।

সুভা বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসে । হয়তো তার বাবা- মায়ের থেকেই বই পড়ার নেশাটা তার মাঝে জায়গা পেয়েছে । কারণ ছোটো থেকে আমরা আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখে বড় হতে থাকি সেইসব আমাদের জীবনে খানিকটা হলেও জায়গা পায় । সুভার ক্ষেত্রেও হয়তো এমনটাই ঘটেছে । মা বাবা বই প্রেমি হওয়াতে সুভার মনেও বই পড়ার প্রতি তীব্র নেশা তৈরি হয়েছিল সেই ছোটো থেকেই । যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে এখন ক্রমশই বাড়ছে বলেই মনে হয় পরিচিত সবার ।

বিকালের পর সুভার শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে যায় । আর বৃষ্টিতে ভেজার কারণে ঠাণ্ডা সে তো বিনা নিমন্ত্রণেই সুভার কাছে চলে এসেছে । জ্বর জ্বর ভাব আর ঠাণ্ডা লাগার কারণে কিছুই যেন ভালো লাগছিল না সুভার । তাই সুভা মনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে তার সংগ্রহে থাকা বইগুলো একের পর এক উল্টে পাল্টে ছুঁয়ে দেখে । অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও সুভা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এতগুলো বইয়ের ভিতর থেকে ঠিক কোন বইটা সে এখন পড়বে I আর ঠিক তখনই হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় নিহানের কথা । হ্যাঁ নিহান ভাইয়া সেই উপকারী নিম পাতা যার ভিতর আবার একটা সাহিত্যিক ভাব ও আছে । তবে তাকে দেখে কেউ তা মনে করবে কিনা সেটা নিয়ে অবশ্য বেশ সন্দেহ আছে সুভার মনে ।
সুভা সাত পাঁচ না ভেবে চলে গেলো নিহানের থেকে কোনো একটা ভালো বই আনতে । ভাগ্যিস নিহান সুভাদের বাসার উপর তলায় থাকে । তা না হলে বাহিরে যা আবহাওয়া আজকে শত ইচ্ছে করলেও মুন আন্টি সুভাকে যেতে দিত না ।

সুভা গিয়ে কয়েকবার কলিং বেল বাজালে দরজা খুলে দেয় নিহান । তবে দরজা খুলে সুভাকে দেখে কিছুটা হতবাক হয় সে । কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করলো না বরং একটা মুচকি হাসি দিয়ে ভিতরে আসতে বললো । অতঃপর নিহানের এই হাসি দেওয়ার সময়ে গালে যে টোল পরে তা যে সুভার বহু দিনের গোপন দুর্বলতা তা আবারো অনুভব করলো ।

হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো । বর্ষাকালে এই এক সমস্যা যখন তখন কারেন্ট চলে যায় । সুভা অন্ধকারে ছোটো থেকেই ভয় পেতো তাই অন্ধকারে ভয় পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিহানের বুকে । নিহানও গত এক বছরে সুভার এইসব খুঁটিনাটি বিষয় খুব ভালো করেই খেয়াল করেছে । তাই তার বাহু বন্ধনে জড়িয়ে নিলো সুভাকে আর ভাবলো, ‘ইশ! পৃথিবীটা যদি হঠাৎ করেই অন্ধকারে ঢেকে যেতো তবে কি এই বুকে এমন করেই সারাজীবন লেপ্টে থাকতো এই মেয়েটা ।’

পিনপতন নীরবতা থেকে বেরিয়ে এসে নিহান মোম জ্বালিয়ে সুভাকে চোখ মেলে তাকাতে বলে । মোমের আলোয় চারিদিক কেমন যেন একটা রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে এমনি মনে হচ্ছিল সুভার । তা দেখে সুভা নিহানকে ছেড়ে দেয় আর লজ্জা পায় এইভেবে এতক্ষণ সে কিভাবে নিহানের বুকে লেপ্টে ছিল ।
নিহান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সুভার থেকে জানতে চাইল সে এই সময়ে কেন বাসায় আসলো । সুভা কারণটা বললো যে একটা ভালো বই নিতেই সে এসেছিল যেন তা পড়লে মনটা এক নিমেষে ভালো হয়ে যাবে ।

নিহান জানে সুভা কোন ধরণের বই পড়তে বেশি পছন্দ করে তাই তেমন একটা বই বুক সেল্ফ থেকে আনতে বুক সেল্ফের দিকে এগিয়ে গেলো । ওই দিকে সুভার চোখ আটকে গেলো পাশের টেবিলের উপর পরে থাকা একটা সুন্দর নীল ডায়েরির উপর । সে নীল ডায়েরিটা গিয়ে হাতে নিলো আর বলে উঠলো,
-‘ইশ! কি সুন্দর এই ডায়েরিটা ।’
কিন্তু আগে তো কখনো চোখে পরে নি । তবে কি এটা নতুন কিনেছে? নাকি আমি আগে খেয়াল করি নি? কিছু একটা এমনি হতে পারে । পরের জিনিস যেহেতু না বলে দেখতে নেই তাই সুভা যেখানে ছিল সেখানেই ডায়েরিটা রেখে দিতে নেয় । কিন্তু এরই মাঝে নিহানের চলে আসায় ডায়েরিটা হাত থেকে নিচে পড়ে যায় । সুভা দ্রুত নিচু হয়ে ডায়েরিটা তুলতে গেলো । আর তখনই ডায়েরির ভিতর থেকে পড়া নিজের বেশ কিছু ছবি দেখতে পায় । ছবিগুলো দেখে কিছুটা বিস্মিত হয় সুভা । কারণ এইগুলো সে নিজে কখনো তুলেনি । তার মানে কি নিহান লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখে আর তখনই এই ছবিগুলো তুলেছিল সেটাই ভাবতে ছিল সুভা । সুভার হাত থেকে নিহান ডায়েরিটা নিতে গেলে সুভা বাঁধা দেয় । এরপরে ডায়েরিটা নিয়ে নিহানকে কিছু না বলেই সুভা বেরিয়ে গেলো । সুভা বুঝতে পেরেছিল ওর মনে যে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে তা কেবল এই ডায়েরিটা পড়ে দেখার পরেই শেষ হবে । তাই দেরি না করে ডায়েরিটা অধীর আগ্রহ নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতেই খুলল । ডায়েরিটা খুলতেই সুভার চোখদুটো আটকে গেলো দুটি নামের উপর । কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো নিহান রাজ ও সুভাসিনী রায় নামের সেই লেখার উপর ।
লেখাটা দেখেই মুহূর্তের মধ্যে সুভার হৃদয় কোণে টনক নড়ে উঠলো । মস্তিস্কের স্নায়ুকোষগুলো তখন তাকে জানান দিলো কতটা গভীরভাবে কাউকে ভালোবেসে থাকলে এমন করে লেখায় ফুটে উঠে তার প্রকৃত ছাপ । এরপরেই সুভা ছুঁয়ে দেখে নিচের লাইনগুলো;

যদি হুট করে কোনো একদিন পেয়ে যাও তোমাকে ঘিরে লেখা অনুভূতিতে পূর্ণ এই নীল ডায়েরিটা । সেদিন তুমি এই লেখাগুলো ঠিক কি হিসেবে নিবে? তোমায় ঘিরে আমার লেখা অনুভূতিগুলো পড়ার পরে সম্বোধন করবে কি কবি বলে? নাকি বুঝবে…

‘সুভাপ্রেমী এই নিহানেরও একটা মন আছে,
আছে সেই মনে তোমায় নিয়ে ঘিরে থাকা
কিছু একান্ত অনুভূতি ।
যা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি নিজস্ব শব্দ চয়ণে,
কিংবা তোমায় নিয়ে লেখা প্রতিটা কবিতার চরণে চরণে ।’

এদিকে সুভা একের পর এক ডায়েরির পৃষ্ঠা উল্টে খুঁজে পেতে থাকে নিহান কতটা ভালোবাসে সেই সব অনুভূতির প্রকাশ । যা দেখে সুভার চোখের জল যেনো কিছুতেই মানছে না বাঁধ । তবে এ কান্না সুখের, এ কান্না নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখা উল্লাসের । তাই সুভা আটকাচ্ছে না বরং আপন গতিতে বয়ে যেতে দিচ্ছে । আর ওদিকে নিহান টেনশন করে যাচ্ছে সুভা সবটা দেখার পর কি না কি করবে এইসব ভেবেই । যদিও নিহান নিজেও অনুভব করে যে সুভাও তাকে ভীষণ ভালোবাসে । কিন্তু সুভার যে সামনের মাসেই বিয়ে সেটা তো অস্বীকার করতে পারব না । এইসব ভেবে মন ভালো নেই নিহানের আর তাই লিখতে বসেছিল । কিন্তু কিছুতেই যেন লিখতে পারছিল না। অবশেষে…

সুভা! তুমি না রাতের আকাশে ওঠা চাঁদ কিংবা তারা নয়,
তুমি তো কারো পৃথিবীর বুকে থাকা ওই রহস্যময়ী সূর্য ।
যাকে দূর থেকে শুধু দেখা যায়,
যার উত্তাপে হওয়া যায় উত্তপ্ত ।
যাকে কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন বুনতেই স্বপ্নগুলোও-
এক নিমেষেই কেমন যেন পুড়ে হয়ে যায় নিঃশেষ ।
যার সাথে ঘর বাঁধতে গেলেই- তাসের ঘরের মত হয়ে যায় মুহূর্তেই বিলীন ।

আবার তুমি সেই রহস্যময়ী সূর্য!
যে কিনা একদিন না উঠলে- পৃথিবীর বুকে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার,
হারিয়ে যায় সবটুকু সজীবতা,
বুকের ভিতর উত্থাল পাতাল ঢেউ বয়ে যায়,
অথচ বাহিরটা কেমন মরুভূমি হয়ে রয় ।

তুমি সেই রহস্যময়ী সূর্য!
যে কিনা পৃথিবীর থেকে অনেকটা দূরে থেকেও –
তার দিকে ছুঁড়ে দিতে পারো শুধু তাপ আর তাপ ।
কিন্তু তোমার থেকেও একদা বৃষ্টি পাব,
তোমায় নিয়ে ডুব সাঁতারে সেদিন আমি মগ্ন হব,
মগ্ন হয়ে তোমার ওই নগ্ন পায়ে আমি বুঝি পা মেলাবো;
সেদিন কিন্তু আমি কোনো মানব না কো বারণ!

করলেও বারণ! তাতে কি?
আমি কিন্তু ঠিকই সেদিন –
নগ্ন গায়ে গা মেলাবো,
ঠোঁটের কোণে চুঁয়ে পরা জলরাশির বিন্দুগুলো আমি ঠিকই শুষে নিব ।
এই স্বপ্ন বুকের ভিতর বুনতে বুনতে-
তোমার কাছে বারবার ছুটে গিয়ে বুঝলাম শেষে;
মরুভূমির বুকে মিথ্যা মরিচিকাকে পানি ভেবে তার পিছু ধরে,
অবশেষে দৃষ্টিভ্রম ভেবেই সবাই যেমন শূন্য হাতে ফেরে
আমিও হব তাদেরই দলে ।

সুভা সেদিন ডায়েরিটা পড়া শেষ করে নিজের কাছেই খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছিল । এরপরে অনেকদিন নিহানের সাথে সামনাসামনি দেখা করেনি সুভা । নিহানও আর সেদিনের পর পড়াতে আসেনি । এভাবেই একটা মাস কেটে গেলো ।

আজ সুভার বিয়ে । সুভার বান্ধবীরা যখন হাসি ঠাট্টায় ব্যস্ত তখনও সুভা ভাবতে থাকে কত কষ্ট করে আজকের এই দিনটি সুভা পেতে চলেছে সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো । একটু পরেই বর চলে আসবে । হ্যাঁ তার সেই উপকারী নিমপাতাকে তখন মন ভরে বরের বেশে দেখবে সেই প্রতীক্ষায় সুভা বসে আছে কনের সাজে সেজে ।

বিয়ে বাড়ির খুশির আমেজ একটু পরেই কেমন শোকের চাদরে মুড়ি দিলো । এখন সানাই এর স্থলে ভেসে আসছে কান্নার আর্তনাদ । আর এই নিম পাতা উঠোনা আজকে না আমাদের বিয়ে এটাই যেনো সেদিন থেকে সুভার আশেপাশের বাতাসে মিশ্রিত হয়ে ভাসতে থাকে ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে