#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৬
ইলহাম অফিসে কাজে ব্যস্ত নিউ প্রজেক্টের কারণে তার উপর কাজের চাপটা একটু বেশি।ইলহাম মনোযোগ সহকারে কাজ করছে তখনই তার ফোনটা বেজে উঠলো। ইলহাম হাতের কাজটা রেখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ফোনের স্ক্রিনে হেমন্তির নামটা জ্বলজ্বল করছে। ইলহাম ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে ফাইলের দিকে নজর দিলো অপরপাশ থেকে হেমন্তি বলে উঠলো,
~আপনি কী বেশি ব্যস্ত?আসলে জরুরি কথা আছে না হলে ফোন করতাম না।
ইলহাম চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে ফোনটা ভালোমতো কানের সাথে লাগিয়ে বললো,
~হেমন্তি,কীসের জন্য ফোন করেছো বলো?আমার হাতে ততোটা কাজ নেই।
ইলহামের কথা শুনে হেমন্তি স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
~বাবা ফোন করেছিল কেয়া বিয়েতে নিজের মত দিয়েছে। তাই বাবা চাইছে আপনি একটু তানভীরের অফিসে গিয়ে খোজখবর নিয়ে আসতে পারলে ভালো হতো।
ইলহাম চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে পরলো অন্য একটা ফাইল খুজতে খুজতে হেমন্তিকে বললো,
~আমি ব্যাপারটা দেখছি তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।
হেমন্তি মুচকি হেসে বললো,
~ঠিক আছে এখন আমি ফোন রাখছি।
বলেই সে ফোন রেখে দিলো ইলহাম ফোন কান থেকে নামিয়ে টেবিলের উপর রেখে ফাইল খুজতে মনোযোগ দিলো।
তখনই অফিসের পিয়ন আশরাফ কেবিনের দরজায় টোকা দিয়ে ভিতরে আসার অনুমতি চাইলো।ইলহাম অনুমতি দিতেই সে দ্রুত পায়ে কেবিনে ডুকে বললো,
~বস আপনাকে ডাকছে।
ইলহাম তার কথা শুনে ফাইল খোজা বন্ধ করে বললো,
~কোনো জরুরি কাজ আছে আমার দ্বারা তার?
আশরাফ কোনো ভাবান্তর না দেখিয়ে বললো,
~আমি এসব জানিনা আপনাকে ডেকেছে।
ইলহাম বললো,
~আমি আসছি তুমি যাও।
আশরাফ চলে গেলো ইলহাম ফাইল গুলো টেবিলে সাজিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে আসলো।বসের কেবিনের সামনে এসে নক করতেই ভিতর থেকে অনুমতি পেলো সে তারপর ইলহাম দরজা ঠেলে ভিতরে চলে আসলো।ইলহামকে দেখে তার বস অমিত হাওলাদার বললেন,
~বসো তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।
ইলহাম তার অনুমতি পেয়ে চেয়ারে বসে পরলো অমিত হাওলাদার ইলহামের বাবার বয়সী তাই ইলহাম তাকে শ্রদ্ধা করে।
অমিত হাওলাদার বললেন,
~ইলহাম,তুমি যে প্রজেক্টটায় কাজ করছো সেই প্রজেক্টের জন্য তোমাকে থাইল্যান্ড যেতে হবে।তাও ২মাসের জন্য কারণ সেখানে কোম্পানির মেইন পয়েন্ট রয়েছে আর তোমাকে সেখান থেকেই রির্পোট করতে হবে।
ইলহাম অমিত হাওলাদারের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো সে কী বলবে বুঝতে পারছেনা এই মুহূর্তে।
ইলহাম নিজেকে সামলে বললো,
~স্যার,আমাকে কিছুদিনের সময় দেওয়া যাবে?
ইলহামের প্রশ্ন শুনে অমিত হাওলাদার হেসে বললেন,
~১মাসের সময় আছে তোমার বউকেও এ বিষয়ে জানিয়ে দিয়ো আর খেয়াল রেখো এটা তোমার ক্যারিয়ারের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
ইলহাম একটু হাসার চেষ্টা করলো সে চেয়ার ছেড়ে উঠে কেবিম থেকে বের হয়ে নিজ কেবিনে চলে আসলো।চেয়ারে বসে নিজের দুহাত মাথায় চেপে ধরে বললো,
~হেমন্তির সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আমার তার সাথে থাকা প্রয়োজন যদি এখন আমিই দূরে চলে যাই তাহলে হেমন্তি আবার নিজেকে গুটিয়ে নিবে।
ইলহাম আর কিছু ভাবতে পারছেনা মাথাটা ঘুরছে তাই সে চুপ করে বসে রইলো চেয়ারে এই শীতের দিনেও সে ঘেমে একাকার হচ্ছে।
____♥_____
হেমন্তি আজ ইলহামের সব পছন্দের খাবার রান্না করেছে তার মনটা আজ ভীষণ ভালো।ফিরোজা তাকে সাহায্য করেছে সব কাজ সম্পন্ন করতে সব খাবার তৈরি করার পর হেমন্তি ফিরোজাকে টাকা দিয়ে বললো,
~আপু,আমাকে একটা বেলীফুলের মালা এনে দিবেন?
ফিরোজা হেমন্তির কথা শুনে উপলব্ধি করতে পারলো এই প্রশ্নে কতোটা জড়তা আর লজ্জা কাজ করছে।ফিরোজা মুচকি হেসে বললো,
~আইনা দিমু ভাবীজান আফনে একটু অপেক্ষা করেন।
হেমন্তি বললো,
~বাকি টাকা আপনি রেখে দিয়েন আমাকে আজ অনেক সাহায্য করেছেন।
ফিরোজা টাকা নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে আসলো হেমন্তি ইলহামের পছন্দের রঙের শাড়ি পরলো।কিছুক্ষণ পর ফিরোজা তাকে বেলীফুলের মালা দিয়ে চলে গেলো যাওয়ার আগে বললো,
~আফনাগো যেনো আল্লাহ সব সময় খুশী রাহে।
হেমন্তি ফিরোজার কথা শুনে খুশি হলো সে দরজা লাগিয়ে দিয়ে রুমে চলে আসলো খোঁপা বেলীফুলের মালাটা গুজে দিলো।তারপর বারান্দার দোলনায় বসে পরলো আশেপাশের মনোরম দৃশ্য সে দেখতে লাগলো।
হেমন্তি ভাবতে লাগলো আগে তো প্রকৃতি এতো সুন্দর লাগেনি এখন কেন এতো সুন্দর লাগছে?এই ভালোলাগার বিষয়টা কী ইলহামের সাথে জড়িত।ইলহামের কথা মনে হতেই হেমন্তি লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ডেকে ফেললো হাতের আঙ্গুলে দেওয়া মেহেদীর রঙ্গটা একদম লাল হয়ে আছে।ফিরোজা নিজ গাছের মেহেদী এনে বেঁটে দিয়ে হেমন্তির হাতে পড়িয়ে দিয়েছে।
হেমন্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
~এতো সুন্দর এই ধরনী কারণ আপনি আমার সাথে আছেন।আপনার থেকে দূরে আমিও থাকতে পারিনা কারণ বুকটা ফাঁকা লাগে এই অনুভূতির নামটা অজানা কিন্তু আমি জানি আপনি এই অনুভূতির নাম ঠিক বের করে দিবেন।
ইলহাম অফিসে শেষ করে রিক্সায় বসে আছে তার মাথায় নানান ধরনের চিন্তা কাজ করছে।বাসার সামনে এসে সে রিক্সা থেকে নেমে পরলো ভাড়া মিটিয়ে সে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো সিড়ি বেয়ে নিজ ফ্যাল্টের সামনে এসে কলিংবেল বাজালো।
হেমন্তি কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পেয়ে দরজা খুলে দিলো আর দেখলো ইলহামের বিধ্বস্ত অবস্থা শার্টের অবস্থা বেশ ভালো না চুলগুলো উশখুশ হয়ে আছে।মুখটা একদম কালো হয়ে আছে ইলহামের এমন রুপ দেখে হেমন্তির মনটা বিষাদময় হয়ে উঠলো।
ইলহাম মুখ তুলে হেমন্তির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো হেমন্তির সুন্দর রুপ।এক পলকেই ইলহামের মনটা ভালো হয়ে গেলো সব টেনশন তার মাথা থেকে দূর হয়ে গেলো।ইলহাম বাসায় প্রবেশ করে সোফায় বসে পরলো হেমন্তি তার জন্য পানি এনে টি টেবিলে রেখে দিলে।ইলহাম জুতা খুলে বললো,
~আজকের এই সাজটা কী আমার জন্য?
হেমন্তির একটু রাগ হলো এ কথাটি শুনে সে আর কার জন্য সাজবে? ইলহাম ছাড়া।হেমন্তি গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~নিজের জন্য সেজেছি আপনার জন্য কেন সাজবো?
ইলহাম হেসে বললো,
~তবুও বলবো অনেক সুন্দর লাগছে তোমায় হেমন্তি।
হেমন্তি জেনো এটাই শুনতে চেয়েছিল তাই সে লজ্জা পেয়ে বললো,
~আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি।
ইলহাম আলতো হেসে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো তারপর হেমন্তির খোপার বেলীফুলটা ঠিক করে দিয়ে বললো,
~আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
____♥_____
হেমন্তি টেবিলে সব খাবার গুছিয়ে রুমে চলে আসলো ইলহাম ওয়াশরুমে আছে দেখে সে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।ইলহাম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিজের কিছু কাজ শেষ করতে বসে গেলো।
কিছুক্ষণ পর তার মনে হলো হেমন্তির কথা তাই ইলহাম কাজ সাইডে রেখে বারান্দায় চলে গেলো সেখানে গিয়ে দেখলো হেমন্তি দোলনায় ঘুমিয়ে পরেছে তা দেখে ইলহাম মুখ টিপে হেসে হেমন্তির কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো।
হেমন্তির ঘুমটা তাতে ছুটে গেলো হেমন্তি চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলো সে ইলহামের কোলে। তা দেখে হেমন্তি অবাক হয়ে বললো,
~আমাকে কোলে কেন নিয়েছেন?
ইলহাম হেমন্তিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললো,
~কারণ আপনি দোলনায় ঘুমিয়ে পরেছিলেন তাই।
হেমন্তি বসে পরলো আর বললো,
~চোখ লেগে গিয়েছিল তাই।
ইলহাম বললো,
~খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরো।
হেমন্তি আর ইলহাম খাবার খেয়ে নিলো হেমন্তি সব গুছিয়ে রুমে এসে দেখলো ইলহাম শুয়ে পরেছে।
হেমন্তিও আর কিছু না বলে বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পরলো তখনই হেমন্তিকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইলহাম।হেমন্তি ইলহামের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলো হেমন্তি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~আপনি ঘুমাননি?
ইলহাম বললো,
~নাহ ঘুম আসছে না।
ইলহামের হাতের বাঁধন একটু হালকা হতেই হেমন্তি ইলহামের দিকে ফিরে বললো,
~আপনার কী শরীর খারাপ লাগছে?আপনার মুখটা কেমন যেনো লাগছে।
ইলহাম হেমন্তির কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
~এভাবেই কাজের অনেক চাপ তো তাই।
ইলহাম হেমন্তির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি যদি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাই তাহলে তুমি কী আমায় ভুলে যাবে?
ইলহামের এমন প্রশ্ন শুনে হেমন্তি অনেকটাই অবাক হয়ে বললো,
~এসব কেমন কথা?আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?
ইলহাম কিছু না বলে হেমন্তিকে ছেড়ে দিয়ে বালিশে মাথা রেখে বললো,
~এভাবেই বললাম আর কী তুমি ঘুমিয়ে পরো?
ইলহাম হেমন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো হেমন্তির মনটা কেমন যেনো খচখচ করছে কিছুই ভালো লাগছেনা।
____♥_____
কিছুদিন যাবত ফারুক খেয়াল করছে হিয়ার শরীরটা বেশি একটা ভালো না আজ সকালে তো হিয়া অনেকবার বমিও করেছে।ফারুকের মাও বাসায় নেই বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছে হিয়া বিছানায় শুয়ে আছে ফারুক অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।ফারুক হিয়ার পাশে বসে বললো,
~তোমার শরীরটা অনেক খারাপ মনে হচ্ছে চলো আজই ডক্টরের কাছে যাই।
হিয়া বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসে বললো,
~আপনাকে একটা অদ্ভুত কথা বলি?
ফারুক বললো,
~কীসের অদ্ভুত কথা?
হিয়া বললো,
~আমাদের সংসারে নতুন মেহমানের আগমন হচ্ছে।
ফারুক কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলো হিয়া বললো,
~আপনি আমার কথা শুনে খুশী হননি?
ফারুক হালকা হেসে বললো,
~বাবা হওয়ার কথা শুনে কোন পুরুষ অখুশী হতে পারে বলো।
হিয়া বললো,
~আজ ডক্টরের কাছে গিয়ে আমরা সিউর হয়ে সবাইকে জানিয়ে দিবো।
ফারুক বললো,
~সবাই কতো খুশি হবে এটা শুনে।
হিয়া ফারুকের বুকে মাথা রেখে বললো,
~আমি কোনোদিন ভাবিনি আমার মতো এতিমের জীবনেও এতোটা সুখ আসতে পারে।
ফারুক বললো,
~উহু এসব কথা বলবেনা তুমি এসেছো বলেই তো আমার জীবনটা কতো সুন্দর হয়েছে।
ইমরান খান নাস্তার টেবিলে বসে ইরিনা বেগমকে বললেন,
~ইলহাম আজ তানভীরের অফিসে গিয়ে সব জেনে আসবে। আমার মতে সব জেনে শুনেই আগে বাড়া উচিত তুমি কী বলো?
ইরিনা বেগম বললেন,
~অবশ্যই মেয়ের জীবন বলে কথা একটা ভুল সিদ্ধান্ত সব নষ্ট করে দিবে।
ইমরান খান বললেন,
~আমার মনে হচ্ছে তানভীর ভালো ছেলে একদম ইলহামের মতো।
ইরিনা বেগম বললেন,
~আমার একটাই দোয়া হেমন্তি যেমন সুখে আছে তেমনি কেয়াও সুখে থাকুক।
তাদের কথোপকথন সবই কেয়া শুনতে পেরেছে কেয়া শুধু বিড়বিড় করে এতটুকু বললো,
~মানুষটা অনেক সরল তার জন্য মনে এক আলাদা জায়গা তৈরি হয়ে গেছে।
ইলহাম তানভীরের অফিসে গিয়ে সব খোজখবর নিয়ে দেখলো তানভীর অনেক ভালো ছেলে তাই দেরি না করে ইমরান খানকে ফোন করে সব জানালো।ইমরান খান বললেন,
~তাহলে দেরি করে লাভ নেই কথা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাক।
ইলহাম বললো,
~অবশ্যই ভালো কাজে দেরি করতে নেই।
ইমরান খান তানভীরের পরিবারদের জানিয়ে দিলো মতামত তারা বললেন আগামীকাল বিয়ের তারিখ ঠিক করতে আসবেন।ইমরান খান সবাইকে কথাটা জানিয়ে দিলেন হেমন্তিও অনেক খুশী বোনের বিয়ের কথা শুনে।কেয়ার মনটাও ভালো হয়ে গেলো সবার সিদ্ধান্ত জেনে
হিয়া আর ফারুক ডক্টর নাসরিনের সামনে বসে আছে ডক্টর নাসরিন সব রির্পোট চেক করে বললেন,
~হিয়া,তুমি প্রেগন্যান্ট কিন্তু তুমি অনেকটাই দূর্বল এমন তা অবস্থায় মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।তাই তোমার প্রোপার রেস্ট নিতে হবে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
ডক্টরের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো হিয়া সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)