#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৩
কেয়ার গায়ে হলুদ সব ঠিকঠাক সম্পন্ন হলো সবাই যে যার রুমে চলে গেছে হেমন্তি রুমে এসে চারপাশ চোখ বুলিয়ে দেখলো ইলহাম কোথাও নেই।হেমন্তি ভাবলো হয়তো ফারুকের সাথে রয়েছে আয়নার সামনে দাড়িয়ে হেমন্তি চুলের মাঝে থাকা টিকলিটা খুলে ফেললো।হাতের চুড়ি গুলো এক এক করে খুলে ড্রেসিংটেবিলল রেখে দিলো গলায় থাকা চেইনটা খুলে লাগেজ থেকে থ্রিপিস বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।হেমন্তি ওয়াশরুম যাওয়ার পর পরই ইলহাম ঘরে প্রবেশ করলো এতোক্ষন বিয়ের ব্যাপারেই কথা বলছিল ইমরান খান আর ফারুকের সাথে।রুমে প্রবেশ করেই সে গায়ে থাকা পাঞ্জাবিটা খুলে ফেললো ওয়াশরুমে পানি পরার আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারলো হেমন্তি ওয়াশরুমে।পানির জগ থেকে গ্লাসে পানি নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানি শেষ করে ইলহাম বিছানায় গা এলিয়েদিলো তার অনেক ক্লান্ত লাগছে শরীরটা।
চোখ বুজে আসতেই তার নজর পরলো ড্রেসিংটেবিলে রাখা হেমন্তির চুড়ির ওপর।সে বিছানা থেকে উঠে চুড়ি গুলো নিজ হাতে নিলো সেখান থেকে কয়েকটা চুড়ি অগোচরেই পাঞ্জাবির পকেটে রেখে দিলো।সে যখন বহু দূরে চলে যাবে তখন হেমন্তির চুড়ি গুলো ছুয়ে সে হেমন্তির কমতি পূর্ণ করবে।ইলহাম বাকি চুড়ি গুলো যথাস্থানে রেখে পা টিপে টিপে আবার বিছানায় শুয়ে পরলো চোখ বন্ধ করে।হেমন্তি ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হতেই তার নজর পরলো শুয়ে থাকা ইলহামের ওপর এভাবে খালি শরীরে শুয়ে থাকতে দেখে হেমন্তির চিন্তা হলো ইলহামকে নিয়ে।
সে টাওয়ালটা রেখে ধীর পায়ে ইলহামের দিকে এগিয়ে গিয়ে যেই না ইলহামের মাথায় হাত রাখতে যাবে ইলহাম ফট করে চোখ খুলে তার হাত টান দিয়ে ইলহামের কাছে নিয়ে আসলো।হেমন্তি ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুই বুঝতে পারলোনা সে চোখ খিচে বন্ধ করে রাখলো। ইলহাম তা দেখে হেমন্তির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
~এতো ভয় পাওয়ার কী আছে?চোখ খুলো।
ইলহামের কথা শুনে হেমন্তি শুকনো ঢোক গিলে চোখ পিটপিট করে খুলে বললো,
~ভয়ই তো পাওয়ার কথা ঘুমন্ত মানুষ যে এভাবে আক্রমণ করবে তা কী আমি জানবো?
ইলহাম বললো,
~তুমি তে আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমাকে আদর করতে আসছিলে।
হেমন্তি বললো,
~কী বলেন এসব তো আমি মনে করেছি আপনার শরীর অসুস্থ তাই এভাবে শুয়ে আছেন।সেটাই চেক করতে আসছিলাম।
ইলহাম বললো,
~তাহলে চেক করো।
বলেই নিজ গালটা এগিয়ে দেয় হেমন্তি বললো,
~আমি বুঝতে পেরেছি আপনার শরীর একদম ঠিক আছে এখন কিছু চেক করতে হবে না।
ইলহাম হেমন্তিকে নিজের আরো কাছে টেনে নিয়ে বললো,
~আমি তো তোমাকে যেতে দিবো না যে পর্যন্ত চেক না করবে।
হেমন্তি বোকার মতো ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমার হাত আপনি আটকিয়ে রেখেছেন কীভাবে চেক করবো?
ইলহাম নিজ গালের সাথে হেমন্তির গাল ঘষলো এতে ইলহামের ছোটছোট দাড়ি গুলো হেমন্তির গালে লাগলো।ইলহাম মুচকি হেসে বললো,
~তোমার ঠোঁট দিয়ে আমার গালে চুমো খেয়ে।
হেমন্তি লজ্জায় লাল হয়ে বললো,
~আপনি অসভ্য হয়ে গেছেন।
ইলহাম বললো,
~বউয়ের কাছেই তো অসভ্য হবো এখন বলো কী করবে?
হেমন্তি বললো,
~আমি কিছুই করতে পারবোনা।
ইলহাম বললো,
~তাই কিছুই করতে পারবেনা
বলেই সে হেমন্তি গলায় মুখ গুজলো আর হেমন্তি অবাক হয়ে ইলহামের কাজকর্ম দেখতে লাগলো।
কেয়া ফোনে কথায় ব্যস্ত সে তানভীরের সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছে।তানভীর বললো,
~কালকে এই সময় আমার কাছে থাকবে তুমি।
কেয়া বললো,
~যদি আমি না আসি?
তানভীর বললো,
~আলবাত আসবে নাহলে একদম উঠিয়ে নিয়ে আসবো।
কেয়া বললো,
~ওরে বাবা এতো সাহস হয়ে গেছে আপনার বাহ।
তানভীর বললো,
~তুমি এখন পর্যন্ত আমার রাগ দেখোনি।
কেয়া বললো,
~আমিও দেখতে চাইনা আপনি যেমন ঠান্ডা আছেন তেমনি ঠান্ডাই থাকেন।
তানভীর হাসলো তারা দুজন কথায় ব্যস্ত হয়ে পরলো নতুন জীবনকে আগমন করার জন্য তারা প্রস্তুত।
____♥_____
সকাল থেকেই পুরো বাড়িতে হৈ চৈ চলছে বিয়ে বাড়ির আমেজ সারা বাড়িতে ছড়িয়ে রয়েছে।হিয়া সোফায় বসে কমলা খেতে ব্যস্ত একটু আগে ইরিনা বেগম তাকে এক প্লেট কমলা দিয়ে গেছে আর শাসিয়েও গেছে যাতে সবটি সে শেষ করে।হিয়া কমলা খাচ্ছে আর আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। তখনই হিয়ার পাশে এসে বসলো হেমন্তির মামী হিয়া তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
~কী খবর মামী?
হেমন্তির মামী বললো,
~এই তো কাজের ফাঁকে তোমার কাছে এসে বসলাম।
হিয়া বললো,
~মামী আপনি দেখতে অনেক সুন্দর।
হেমন্তির মামী লজ্জা পেয়ে বললো,
~কী যে বলো তুমি বুড়ো বয়সে আর সুন্দর।
হিয়া বললো,
~সত্যি বলছি আপনি যুবতী বয়সে কতো সুন্দর ছিলেন এইটা তো এখন বুঝতেই পারছি।
হেমন্তির মামী বললো,
~জানো হিয়া আমার জীবনে সবই আছে কিন্তু একটা মেয়ে নেই।
হিয়া বললো,
~আপনার মেয়ের অনেক শখ।
হেমন্তির মামী বললো,
~হ্যা কিন্তু দেখো না আমার কিসমত তৈয়বের পর কত চেষ্টা করলাম কিন্তু সব চেষ্টা বিফলে গেলো।
হিয়া বললো,
~হয়তো এটাতেই আপনাদের সুখ লেখা আছে।
হেমন্তির মামী বললো,
~হ্যা হয়তো।
হেমন্তি আর ইলহাম ছাদে স্টেজের কাজ করছে ইলহাম বললো,
~তুমি নিচে চলে যাও এখানে রোদ লাগছে তোমার শরীরে।
হেমন্তি বললো,
~কিছুই হবে না একটু রোদ লাগলে।
ইলহাম বললো,
~শরীর অসুস্থতা হয়ে যাবে তোমার।
হেমন্তি বললো,
~বিরক্ত করবেন না কাজ করতে দেন।
ইলহাম আর কিছু না বলে হেমন্তির সাথে কাজ করতে লাগলো।
রাতে সবাই রেডি হয়ে ছাদে চলে আসলো কেয়াকে বউ সাজে অনেক সুন্দর লাগছে লাল রঙ্গের বেনারসিতে কেয়াকে একদম নববধূ লাগছে।হেমন্তি কেয়াকে দেখে নিজের বিয়ের কথা মনে পরে গেলো সেই দিনতো এভাবেই সে সেজে ছিল।কিন্তু কেয়ার মতো হাসিটা ছিল না হেমন্তির মনে সেদিন ভয় ছিল নতুন জীবনের জন্য তার মনে অনেক চিন্তা ছিল।
ইলহাম হেমন্তির পাশে এসে দাড়াতেই হেমন্তির ধ্যান ভাঙ্গলো সে পাশে তাকিয়ে ইলহামকে দেখতে লাগলো।সাদা রঙ্গের পাঞ্জাবিতে অনেক সুন্দর লাগছে একদম চোখে-মুখে শুভ্রতা বজায় আছে।ইলহাম হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~এভাবে কী দেখছো?
হেমন্তি বললো,
~কিছুই দেখছিনা।
ইলহাম বললো,
~আমি জানি তো আমাকে দেখছিলে।
হেমন্তি বললো,
~হ্যা আপনাকে দেখছিলাম আমার স্বামী আপনি দেখবোই তো দুদিন পর চলে যাবেন তাই দেখছি কোনো সমস্যা আছে আপনার?
একনাগাড়ে কথা গুলো বলে হেমন্তি সেখান থেকে চলে গেলো ইলহাম হেমন্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~তোমার যতোটা না কষ্ট হচ্ছে তার থেকে বেশী আমার কষ্ট হচ্ছে।
____♥_____
কিছুক্ষণ পর তানভীররা চলে আসলো তাদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য সবাই নিচে চলে আসলো।সবাই তানভীরের পরিবারদের সাথে কুশলাদি করে তারা এক এক করপ বাসার ছাদে চলে যায়। তাদের খাওয়া-দাওয়ার দেখশোন সবই ইলহাম,ফারুক আর আরফানই করে থাকলো।তানভীরকে স্টেজে বসিয়ে দেওয়া হলো কেয়াকে তার রুমে নেওয়া হয়েছে।খাওয়া-দাওয়া শেষে কবুল পড়াতে শুরু করলো কাজী সাহেব প্রথমে কেয়ার কাছে গিয়ে তাকে কবুল বলতে বলা হলো।কেয়া কিছুক্ষন সময় নিয়ে কবুল বলে দেয় এরপর তানভীরের কাছে চলে আসলো তাকে কবুল বলতে বলা হলে সে একনাগাড়ে কবুল বলে দেয়।
সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে তাদের বিয়ের কার্যক্রম শেষ হতেই কেয়াকে তানভীরের কাছে নিয়ে আসা হয় আর তার পাশেই বসিয়ে দিলো হেমন্তি।দুজনকে একসাথে অনেক সুন্দর লাগছে ক্যামেরাম্যান তাদের ছবি তুলতে ব্যস্ত হেমন্তি মেহমানদের সাথে কথা বলছে। হিয়াও হেমন্তির সাথে সাথে রয়েছে ফারুকই হেমন্তিকে বলেছে হিয়াকে আশেপাশে রাখতে।দেখতে দেখতে বিদায়ের সময় এসে পরলো ইমরান খান মেয়ের হাত তানভীরের হাতে দিয়ে বললো,
~আমার মেয়েটাকে দেখো রেখে।
একথা বলতেই কেয়া বাবার বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো কেয়া এক এক করে সবার থেকে বিদায় নিলো ইরিনা বেগম আর হেমন্তিকে জড়িয়ে অনেক্ষন কাঁদলো ইলহাম কেয়াকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে তানভীরের সাথে কোলাকুলি করে বললো,
~নতুন জীবনের শুভেচ্ছা।
তানভীর বললো,
~ধন্যবাদ।
তানভীর গাড়িতে বসে পরলো গাড়ি চলতে শুরু করলো হেমন্তি কান্নারত চোখ নিয়ে গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইলো।
সবাই বাসার ভিতরে চলে আসলো হেমন্তি হিয়াকে রুমে দিয়ে আসলো রান্নাঘরে গিয়ে দুধ গরম করে হিয়াকে দিয়ে আসলো আর বললো,
~পুরো দুধ শেষ করবে কোনো কথা শুনছিনা।
হিয়া বললো,
~দুধ খেতে ইচ্ছে করছেনা।
হেমন্তি বললো,
~আপু খেয়ে নেও তুমি কিছুই খাওনি ভালো মতো।
হিয়া বাধ্য মেয়ের মতো সবটুকু দুধ শেষ করলো হেমন্তি গ্লাস নিয়ে রুম থেকে চলে আসলো।নিজ রুমে গিয়ে দেখলো ইলহাম শুয়ে আছে হেমন্তি ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানার এক পাশে শুয়ে পরলো ইলহাম হেমন্তির উপস্থিতি টের পেয়ে হেমন্তির দিকে ফিরে তার কাছে চলে গেলো পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো।
দেখতে দেখতে দুদদিন কেটে গেলো আজ রাতে ইলহামের ফ্লাইট হেমন্তি সকাল থেকেই ইলহামের সাথে কম কথা বলছে কারণ সে যখনই ইলহামের দিকে তাকাচ্ছে তখনই তার কান্না পাচ্ছে।
অপরদিকে হেমন্তির অবহেলা ইলহাম মেনে নিতে পারছেনা সে চাইছে হেমন্তি তার পাশে থাকবে।মনের ভিতর ক্ষোভ নিয়ে ইলহাম চলে গেলো হেমন্তির কাছে রান্নাঘরে গিয়ে শুনতে পেলো হেমন্তির ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ।তা শুনে ইলহামের মনটা নরম হয়ে গেলো সে বুঝতে পারলো হেমন্তির মনেও তো কতো কষ্ট।ইলহাম ধীর পায়ে হেমন্তিকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো এতে হেমন্তির কান্না আরো বেরে গেলো।ইলহাম বললো,
~কান্না করো না প্রিয় আমি তো তোমার মনের ভিতর তো আমি সবসময় থাকবো।
হেমন্তি বললো,
~আপনাকে আমি চাই এখানে আমার কাছে।
ইলহাম হেমন্তিকে নিজের দিকে গুড়িয়ে বললো,
~আর কান্না করো না শুধুমাত্র ২মাসের জন্য যাচ্ছি।
হেমন্তি বললো,
~আমার কেন মনে হচ্ছে আপনি আমাকে ভুলে যাবেন?
ইলহাম হেমন্তির মুখ চেপে ধরে বললো,
~আর কোনো কথা বলবেনা একদম চুপ থাকবে।
হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো ইলহাম তাকে শান্ত করাটা এখন ইলহামের মুখ্য বিষয়।
চলবে
#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৪
ইলহামের যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে ইলহাম হাতে কালো ঘড়িটা পরে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।হলরুমে সবাই চাতক পাখির মতো তার অপেক্ষা করছে ইলহাম ধীর পায়ে হেঁটে হলরুমে চলে আসলো সেখানে উপস্থিত হতেই দেখতে পেলো হিয়া হাসিমাখা মুখে তার পাণে তাকিয়ে আছে।ইলহাম আলতো হেসে হিয়ার সামনে গিয়ে বসে পরলো হিয়া ইলহামকে বললো,
~নিজের খেয়াল রাখবি খাওয়ার প্রতি হেয়ালি করবিনা আর এখানের কোনো চিন্তা তুই করবিনা।
ইলহাম বললো,
~তুইও নিজের খেয়াল রাখবি আর বাবুরও খেয়াল রাখবি।
হিয়া ইলহামের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো ইলহাম ফারুকের সাথে কোলাকুলি করে বললো,
~আসি ভাইয়া খেয়াল রাখবেন।
ফারুক বললো,
~নিজের খেয়াল রেখো।
একএক করে ইলহাম সবার সাথে দেখা করলো কেয়া আর তানভীরও এসেছে।সবাই উপস্থিত থাকলেও হেমন্তিকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ইলহাম হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~হেমন্তি কোথায়?
হিয়া বললো,
~হেমন্তি আসতে পারবেনা তুই রওনা দে।
ইলহাম রেগে বললো,
~এটা কেমন কথা আমি চলে যাচ্ছি ও আসবেনা?
হিয়া বললো,
~ওর কষ্ট হবে তুই যা।
ইলহাম বললো,
~কোথায় হেমন্তি?
হিয়া বললো,
~অন্য রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।
ইলহাম হিয়ার কথা শুনে ধুপধাপ পা ফেলে সেই রুমের সামনে চলে গেলো ইলহাম দরজায় টোকা দিয়ে বললো,
~যদি দরজা না খুলো ওয়াদা করছি আর ফিরবোনা কখনো এ মুখ দেখবেনা।
ইলহামের এমন কথা শুনে হেমন্তির বুকটা ধ্বক করে উঠলো তার বুকে চিনচিন ব্যাথা করতে লাগলো।সে দুহাত দিয়ে চোখ মুছে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলে দিলো ইলহাম রুমের ভিতরে প্রবেশ করে ধিম করে দরজা বন্ধ করে দিলো।
ইলহাম বললো,
~আমার সাথে দেখা কেন করবেনা?
হেমন্তি ছলছল নয়নে ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
ইলহাম হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আমি ফিরে এসে সব কষ্ট নিঃশেষ করে দিবো।
হেমন্তি হু হু করে কেঁদে উঠলো ইলহামের শার্ট আকড়ে ধরে সে কাঁদছে। ইলহাম হেমন্তিকে বললো,
~তুমি অনেক স্ট্রং তা আমি জানি পড়াশোনায় মনোযোগ দিবে আমি নেই বলে কোনো গাফলতি করবেনা বুঝতে পেরেছো?
হেমন্তি মাথাদুলালো ইলহাম তার হাত ধরে বললো,
~আসো বাহিরে।
ইলহাম হেমন্তির হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসে এরপর ইমরান খানের কাছে দিয়ে বলে,
~আমার আমানত কিছু দিনের জন্য আপনি সামলিয়ে রাখেন বাবা।
ইমরান খান বললেন,
~তুমি নিশ্চিন্তে থাকো বাবা।
ইলহাম আর এক মিনিটো সেখানে দাড়ালো না গটগট করে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো হেমন্তি দরজা ধরে দাড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর সে দৌড়ে রুমের বারান্দায় চলে গেলো সেখানে গিয়ে দেখলো ইলহাম গাড়ির দরজা খুলেছে মাত্র ইলহাম বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখলো হেমন্তি দাড়িয়ে আছে।হেমন্তি হাত দিয়ে তাকে বিদায় জানালো ইলহাম চোখের কোণের পানি মুছে মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে বসলো।
তানভীর আর ফারুক তার সাথে বসে আছে গাড়ি স্টার্ট দেওয়া হলো ইলহাম শুধু হেমন্তিকে দেখছে।হেমন্তির মন চাইছে দৌড়ে ইলহামের কাছে চলে যেতে হেমন্তির ভাবনার মাঝে গাড়ি খুব দ্রুত ভাবে ধুলো উড়িয়ে চলে গেলো।
___♥____
হেমন্তি মুখে হাত দিয়ে বারান্দার ফ্লোরে বসে পরলো তার লম্বা ঘন কালো চুল খুলে ফ্লোরে ছড়িয়ে পরলো।হেমন্তি কাঁদতে কাঁদতে হিচকে তুলে ফেলেছে তখনই তার হাতে থাকা ফোনটা ভো ভো করতে লাগলো হেমন্তি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ইলহামের ম্যাসেজ।সে তড়িঘড়ি করে সেটা খুলতেই দেখতে পেলো ইলহাম লেখা কিছু লাইন সেখানে লেখা আছে,
প্রিয়তমা,
তোমার কান্না আমার ভিতরটাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিচ্ছে একটু শান্ত হও আমার মনোভাবটাকে বুঝতে চেষ্টা করো।তোমার ইলহাম তোমার পাশেই আছে এক অদৃশ্য বন্ধন আমাদের বেঁধে রেখেছে।আমাদের যতো সুন্দর মুর্হুত আছে তা মনে করো দেখবে তোমার মনটা ভালো হয়ে গেছে।
পুরো ম্যাসেজটা পরে হেমন্তি কান্না বন্ধ করে দেওয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে সেইসব মুর্হুত গুলো মনে করতে লাগলো তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানি পরছে তবুও যতই চেষ্টা করুক হেমন্তির কান্না কেউ বন্ধ করাতে পারবেনা।
ইলহাম গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে তানভীর আর ফারুক চুপচাপ বসে আছে।ইলহাম বাহিরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফারুকের হাত ধরে বললো,
~হিয়ার খেয়াল রাখবেন ভাইয়া এখন আপনার প্রয়োজন ওর।
ফারুক বললো,
~তুমিও নিজের খেয়াল রাখবে বুঝতে পেরেছো কোনো চিন্তা করবেনা।
হেমন্তি লাগেজে সব গুছিয়ে নিলো ফিরোজার টাকা সব বুঝিয়ে দিয়ে বললো,
~আপা ২মাস পর আপনার সাথে যোগাযোগ করবো ইনশাআল্লাহ আর আমি এসে ঘর পরিষ্কার করে যাবো।
ফিরোজা বললো,
~ভাবিজান ভালো থাইকেন আমি দোয়া করতাসি ভাইজান তাড়াতাড়ি এসে পরবে।
হেমন্তি কিছু বললো না শুধু মলিন হাসলো কিছুক্ষণ পর হেমন্তি বের হয়ে যাবে তার বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
ইলহাম এয়ারপোর্টে পৌছে গেছে মনটা বরাবর হেমন্তির কাছেই পরে আছে ফারুক আর তানভীর সব লাগেজ বের করে দিলো ইলহাম তানভীরকে বললো,
~ভালো থেকো সবার খোজখবর নিও।
তানভীর বললো,
~অবশ্যই ভাইয়া।
শেষ বিদায় নিয়ে ইলহাম এয়ারপোর্টের ভিতরে চলে গেলো তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো ফারুক আর তানভীর।ফারুক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো,
~এখন সব আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিতে হবে।
ইলহাম বিমানে বসেন পরেছে মানিব্যাগ থেকে হেমন্তির ছবি বের করে সেটাতে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
~কষ্ট পেয়ো না হেমন্তি রাণী আমি চলে আসবো।
ফারুক আর তানভীর আসার পর পরই সবাই রওনা দিলো যার যার বাসার উদ্দেশ্যে। হেমন্তি পুরো বাসা টাকে একবার দেখেনিলো চোখের পানি মুছে বাসার দরজায় তালা দিয়ে দিলো।
হিয়া হেমন্তির মাথায় হাত রেখে বললো,
~দেরি হয়ে যাচ্ছে হেমন্তি চলো।
হিয়ার কথায় হেমন্তি সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলো বার বার শুধু বাসার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে।যতোই হোক এটা হেমন্তির সংসার সে এই সংসার রেখে কিছুদিনের জন্য দূরে চলে যাচ্ছে।এখানে থাকলেও তো ইলহামের কথা মনে পরবে যা তার মনকে কুড়ে কুড়ে খাবে।
হেমন্তি তার বাবা আর মায়ের সাথে রওনা দিলো হিয়া হেমন্তিকে বার বার বলে দিয়েছে যাতে সে কান্না না করে।
____♥_____
ভোরের আলোয় চারদিক জ্বলজ্বল করছে হেমন্তি বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।মনটা বিষন্নতায় ভরা হেমন্তি বুঝতে পারছেনা মন ভালো করার জন্য কী করবে?এখন পর্যন্ত ইলহামের কোনো ফোন আসেনি মাত্র নামাজ পরে বারান্দায় এসে দাড়িয়ে আছে।নামাজে শুধু ইলহামের চেহারাটা ভেসে আসছিলো হেমন্তি বারান্দা থেকে বের হয়ে রুমের বাহিরে চলে আসলো রান্নাঘরে গিয়ে চা করার জন্য পানি বসালো।ইরিনা বেগম রান্নাঘরে প্রবেশ করতেই দেখতো পেলো হেমন্তি দাড়িয়ে আছে ইরিনা বেগম মেয়ের পাশে দাড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~তুই ঘরে যা আমি চা করে নিয়ে আসছি।
হেমন্তি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি বারান্দায় আছি সেখানে নিয়ে এসো।
বলেই হেমন্তি নিজ ঘরের দিকে চলে গেলো মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইরিনা বেগম।মেয়ের মনের অবস্থা সে ঠিক জানে তার মেয়েটা যে একটুতেই কতো কষ্ট পেয়ে যায় সেটা সে ভালো মতো জানে।
ইলহাম থাইল্যান্ডের রাজধানী Bangkoko শহরে এসে পরেছে সে এখন কোম্পানির গাড়িতে করে হেড কোর্য়াটারে যাচ্ছে সেখানেই তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।এতো সুন্দর শহর দেখেও ইলহামের মন ভালো হচ্ছেনা পরিবারের সদস্যদের কথা তার বার বার মনে পরছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল ৯টা এর মানে বাংলাদেশে এখন ৮টা বাজে।ইলহাম তার পাশে বসা কোম্পানির ম্যানেজার হাসেমকে বললো,
~একটা সিমের ব্যবস্থা করতে পারবেন?
হাসেম বললো,
~অবশ্যই স্যার আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে।
হেড কোয়ার্টারে পৌছে ইলহামকে রুম দেখিয়ে দিলো হাসেম ইলহান মনে মনে খুশী হলো যে একজন বাঙালিকে সে পেয়েছে।হাসেম চলে যেতে ইলহাম রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো লাগেজ গুলো একপাশে রাখলে একটা লাগেজ খুলে হেমন্তির পরা একটা সাদা শাড়ি বের করে তার নাকের সাথে লাগিয়ে তার ঘ্রাণ নিতে থাকলো।
তারপর সেটা বুকে জড়িয়ে বললো,
~তোমার এই বিশেষ জিনিসগুলো দিয়েই তোমাকে অনুভব করবো।
দুপুরের দিকে হাসেম এসে সিম দিয়ে গেলো ইলহাম ফ্রেশ হয়ে মোবাইলে সিম ভরে নিলো।
হেমন্তি রান্নাঘরে মায়ের কাজে সাহায্য করছে আজ সে তার বাবার পছন্দ পাবদা মাছের ঝোল করছে।ইরিনা বেগম বললেন,
~হেমন্তি,ইলহামের কোনো ফোন এসেছিল?
হেমন্তি বললো,
~না মা কিন্তু ফারুক ভাই অফিসে ফোন দিয়ে খবর নিয়েছে সে পৌছে গেছে।
ইরিনা বেগম স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বললেন,
~এটার জন্যই চিন্তিত ছিলাম।
ইরিনা বেগমের কথা শেষ হতেই হেমন্তির ফোন বেজে উঠলো ফোনের আওয়াজ শুনে হেমন্তি এক প্রকার দৌড়ে ঘরে চলে গেলো ফোন হাতে নিয়ে দেখলো একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে হেমন্তি কাঁপা কাঁপা হাতে তা রিসিভ করে কানে দিতেই
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)