Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"heart touch love 3গল্পঃ "heart touch love 3" পর্ব :-১০ শেষ/অন্তিম-পর্ব

গল্পঃ “heart touch love 3” পর্ব :-১০ শেষ/অন্তিম-পর্ব

গল্পঃ “heart touch love 3”

পর্ব :-১০ শেষ/অন্তিম-পর্ব

গল্পটা_পড়ে 99% মানুষের চোখে পানি চলে আসতে বাধ্য….

০২ জুন ২০১৭,
আজকে পিয়ালের জন্মদিন। পিয়াল আজকের দিনটা একটু অন্যরকমভাবেই পালন করতে চায়।গতকাল রাত বারটার সময় হঠাতই পিয়ালের ফোনে মিলার কল এসেছিলো।
মিলা – ওগো!
পিয়াল – হ্যা গো বলো! (ঘুমচোখে)
– হ্যাপি বার্থডে।
– কার বার্থডে?
– হুহ! আজকে দুই জুন। তোমার জন্মদিন আজকে।
– ওহহো! ভূলেই গিয়েছিলাম। ধন্যবাদ ম্যাডাম।
– হ্যা তা তো ভূলবেনই। সেই ২০১৫ এর আগষ্টের ৪ তারিখের পর থেকে রীতিমতো এটা আমার চাকরী হয়ে উঠেছে।
– আহহা! রাগ করছো কেনো?
– ওলে বাবা! আপনার সাথে রাগ করতে পারি? আপনি তো এখনো পিচ্চি বাবুটা।
আগের রাত্রের কথা ভেবেই হেসে ওঠে পিয়াল। লাল পাঞ্জাবীটা পরে নিলো সে।আজকের সারাদিনটাই মিলার সাথে কাটাতে ইচ্ছে করছিলো পিয়ালের। কিন্তু নিজের চাকরী বাঁচাতে সকালটা ব্যস্ততার মধ্যেই কাটাতে হলো তার। তারপরেও ছুটি নিয়ে চলে এসেছে।ঘড়িটা দেখে নিলো পিয়াল, ৫টা বাজে। মিলাকে ওর বাসা থেকে নিয়ে যেতে হবে।বাসা থেকে বেড়িয়ে পরলো পিয়াল।
এই দুইবছরে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। সব থেকে বড় পরিবর্তনটা পিয়াল আর মিলার সম্পর্ক। সেদিন জেরিনের সাথে দেখা হয়েছিলো পিয়ালের। জেরিন সুখেই আছে , সে বিয়ে করে ফেলেছে। সেইদিন ঝগড়ার পরে ওদের সম্পর্কটা ওখানেই শেষ হয়েছিলো।যদিও এর পিছনে দুজনেরই দোষ ছিলো। ঝগড়া করার পরে কেউ কাউকে আর ফোনই দিলো না। এভাবেই কেটে গিয়েছিলো তাদের সম্পর্কটা। তবে কথায় আছে যা হয় ভালোর জন্যই। যার ফলাফল নতুন একটা পিয়ালের জন্ম।ভালো একটা চাকরী করছে,আজেবাজে অভ্যাস বাদ দিয়েছে, আরো অনেক কিছুই। বলা যায় মিলার সাথে থেকে থেকে পিয়ালও কিছুটা ক্লাসিক হয়ে উঠেছে। তাদের ভালোবাসা আর খুনসুটিতে চলছে তাদের ভালোবাসার গাড়ি। এই দুইবছরে পিয়াল আগের সব ঘটনা থেকে পুরোপুরি ভাবেই মুক্তি পেয়েছে। এখন আর রুমি-তামান্নার কথা মনে পরে না। এইতো বেশ আছে রুমি। চলুন! এখন দৃশ্যপটের দিকে নজর দেয়া যাক!
পিয়াল মিলার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে।
পিয়াল – হ্যালো মিলা!
মিলা – হ্যা বলো।
– কোথায় তুমি? আমি তোমার বাসার সামনে।
– এইতো আর একটু!
– কি করছো? তাড়াতাড়ি বের হও।
– একটু দাড়াও না! বের হচ্ছি।
ফোনটা কেটে দেয় পিয়াল। মিলার এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। মেয়েটা একবার সাজতে বসলে ঘন্টা-খানেক সময় কাটিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরেই বাসা থেকে বের হলো মিলা।পিয়ালের পাঞ্জাবীর সাথে মিল রেখে আজকেও লাল শাড়ী পরেছে মিলা। পিয়াল একটা রিক্সা দাড় করিয়েই রেখেছিলো। মিলা কোনো কথা না বলেই রিক্সায় উঠে পরলো। পিয়াল মিলার পাশে উঠে বসলো।দুজনই নিশ্চুপ। আজকে পিয়াল মিলার সাথে কোনো খোলা ময়দানে সময়টা পাড় করতে চায়। যেখানে থাকবে না কোনো মানুষ থাকবে না কোনো কোলাহল। পিয়ালের অতি পরিচিত একটা মাঠে নিয়ে যায় মিলাকে। এখানে নেই কোনো সাজানো কেক, নেই কোনো মোমবাতি,বসার জন্য একটা বেঞ্চিও নেই। কিন্তু গতবছর থেকেই এমন অদ্ভুত ভাবে জন্মদিনটা পালন করে আসছে পিয়াল।প্রায় দু -একঘন্টাই কাটিয়ে দিবে এখানে। তার আগে এখান থেকে একচুলও নড়বে না দুজনে। পিয়াল,মিলা ঘাস জড়ানো মাটিতেই বসে পরলো।
রাত ৭ টা পিয়াল, মিলা একটা ফাকা মাঠে বসে আছে। হিঠাতই মিলা অসুস্থ হয়ে পরলো। কি কয়েছে? বা কিভাবে হলো? তার উত্তর মিলার কাছ থেকে পেলো না পিয়াল। মিলাকে নিয়ে কাছের একটা হাসপাতালে চলে যায় পিয়াল।মিলা জ্ঞান হারিয়েছে, এতোটা রাস্তা মিলাকে কোলে তুলেই নিয়ে এসেছে পিয়াল। হঠাত, কোনো কারন ছাড়াই মিলার জ্ঞান হারানোটা পিয়ালের ভিতর কিছুটা হলেও ভয় ঢুকিয়ে দেয়।

৩ই জুন ২০১৭ দুপুরে,
মিলার হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে, তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে মিলার বাবা-মা। ওনারা মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনেই ইতালি থেকে এসে পরেছেন একটু পরেই মিলার রিপোর্ট দিবে। রিপোর্টটা হাতে তুলে দেয়ার জন্য মিলার বাবা-মাকে ডাক্তার তার রুমে ডেকে পাঠালেন। পিয়াল মিলার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে, মিলা ঘুমাচ্ছে। মিলার বাবা-মা ডাক্তারের চেম্বারে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পরেই এক নার্স পিয়ালকে ডাকতে আসলো।
নার্স- স্যার!
পিয়াল- হ্যা বলুন!
– আপনাকে স্যার(ডক্টর) একটু ডেকে পাঠিয়েছেন।
– আচ্ছা আপনি যান আমি আসতেছি।
নার্স চলে গেলো, পিয়াল,মিলার রিপোর্ট নিয়ে একটু চিন্তিত হয়ে পরলো। সে মনে মনে আল্লাহ্কে সরণ করলো। নিজের উপর আত্নবিশ্বাস রেখে ডক্টরের চেম্বারের দিকে পা বাড়ালো পিয়াল।
ডক্টরের রুমে টোকা দিতেই ভিতর থেকে ডক্টর নিজেই দরজাটা খুললেন। মিলার মা চোখ মুছছেন। ডক্টর তার চেয়ার রেখে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছে? আর মিলার মা কান্না লুকাচ্ছেন কেনো? পিয়ালবেল এইসব ভাবতে ভাবতে রুমের মধ্যে ঢুকে পরলো। মিলার বাবা উঠে আসলো। পিয়ালের কাঁধে হাত রেখে চেয়ারে বসালো। এবার ডক্টর একটা ফাইল পিয়ালের হাতে দিলেন। পিয়াল দুরুদুরু বুকে ফাইলটা খুললো। তার সব কিছু অবাস্তব মনে হচ্ছে। সে ফাইলটার উপরে লেখা নামটা ভালো করে আরেকবার দেখে নিলো। না! এখানে তো মিলা আহসানই লেখা। তবে কি আমি স্বপ্নে দেখছি? পিয়ালের সামনে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো ডক্টর, পিয়াল কাঁপা কাঁপা হাতে গ্লাসটা ধরে। এক গ্লাসের অর্ধেকটাই এক নিশ্বাসে খেয়ে নিলো, একটু ঠান্ডাই ছিলো পানিটা। ঠান্ডার অনুভূতিটা পেয়ে পিয়াল বুঝতে পারলো এটা স্বপ্ন নয়। এটা সত্যি!!!!!!!!!!
রাত ১১টা,
পিয়াল একলা রাস্তায় হাটছে। খুব কম মানুষজন আসা-যাওয়া করছে রাস্তা দিয়ে। হাল্কা বাতাসের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছিলো। তবুও ঘামছে পিয়াল। পিছন থেকে মিলার বাবার আওয়াজ পাওয়া গেলো। পিয়াল পিছনে তাকালো। হ্যা! ওটা মিলার বাবাই।পিয়াল দাঁড়ালো, মিলার বাবা পিয়ালের সামনে এসে দাঁড়ালেন।
পিয়াল – আংকেল আপনি এখানে?
মিলার বাবা – হ্যা,আমিও আর কি! ওখান থেকে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম তুমি যাচ্ছো তাই ডাক দিলাম।
– ওহ!
– পিয়াল! আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতাকে মেনে নিতেই হবে। আমি মিলার বাবা হয়ে এই কথা বলছি।
– সম্ভব নয় আংকেল।
– জানি সম্ভব নয়, তুমি মিলাকে শেষ সুখ দিতে চাও?
– মানে? শেষ সুখ? কি বলছেন আপনি? (কেঁদে)
– হ্যা আমি এতোটুকই বলতে চাই যে, তোমাকে ঘিরে ওর যতো আশা ছিলো বা আছে সেইগুলো পূরণ করো। হয়তো তাহলে একটু শান্তি পাবে মেয়েটা।
– আপনি ঠিক বলেছেন, এটাই করা দরকার।আপনি বিয়ের ব্যবস্থা করুন।
– তুমি বিয়ে করবে মিলাকে?
– হ্যা করবো! ওর স্বপ্নগুলো ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে হবে।
– আচ্ছা বাবা! আমি সব কিছুর ব্যবস্থা করতেছি। কিন্তু মনে রেখো, হাতে সময় কিন্তু মাত্র আটাত্তর ঘন্টা।পারবা কি ওরে সুখিভাবে বিদায় দিতে?
– আমি পারবো! আমাকে পারতেই হবে। ও আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।
পিয়াল দৌড়ে চলে গেলো। মিলার বাবা পিয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে।
০৫ই জুন ২০১৭,
আজ পিয়ালের বিয়ে, সবাই খুশী হলেও পিয়াল হতে পারে নি। তবুও মুখে মিথ্যা হাসি নিয়ে তিনবার কবুল বলেছে।অনেক বন্ধুরাই উপস্থিত সেখানে, তাদের জন্য আলাদা বাজেট রাখার কথা ছিলো পিয়ালের,যেমনটা চেয়েছিলো মিলা। কিন্তু বাজেট রাখা সত্যেও তার বন্ধুরা উপভোগ করতে পারে নি ব্যাপারটা।পিয়ালের পরিবারের কেউ কেউ মিলাকে নিয়ে ব্যস্ত, আবার কেউ অন্যান্য কাজে মন দিয়েছে। মিলা,মিলা পিয়ালের কিছুক্ষন আগে বিবাহ করা স্ত্রী।চারদিকে একটা বিয়ে বিয়ে ভাব।আসলেই কি পিয়াল বিয়ে করেছে? সবার মুখেই হাসি,কিন্তু তা কি আদৌ সুখের হাসি? পিয়াল একটা ঘোরের মধ্যে আছে,কিছুটা নেশা করার পরে যা হয়।সবার কথা-বার্তা শুনছে, দেখছে কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। পিয়ালের বন্ধু রাসেদ এসে ওর কানে কানে বলে গেলো – দোস্ত, মন খারাপ করে থাকিস না, মিলাকে কিছু বুঝতে দিস না।
কথাটা শুনে পিয়াল রাসেদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। রাসেদ মুচকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। হঠাতই মিলার কন্ঠে পিয়াল নিজেকে নিজের মধ্যে আবিস্কার করলো। মিলা সবার সাথে কতো হাসি খুশী কথা বলছে। হয়তো আর কিছুক্ষন পরে এই হাসিটাকেই সবাই সব থেকে বেশি মিস করবে।পিয়ালের কিচ্ছুই ভালো লাগছে না। বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছে। হয়তো কান্না করলেই মনটা হাল্কা হবে। এক ছুটে বাথরুমে চলে গেলো পিয়াল। বাহিরে গান-বাজনা বাজছে,কতোই না সোরগোল। পিয়াল চেঁচিয়ে কান্না করছে, হয়তো এই বিয়ের শোরগোলের মধ্যে পিয়ালের কান্নার আওয়াজটা কারোর কান পর্যন্ত পৌঁছায়ই নি। হঠাৎ করেই সব শোরগোল থেমে গেলো। এক নিমিষেই সবাই-ই নিশ্চুপ হওয়ার কারনটা দেখার জন্য পিয়াল বাথরুম থেকে বের হলো। সামনের রুমে সবাই মিলাকে নিয়ে বসে ছিলো। পিয়াল একটু ভিতরেই ছিলো। কিন্তু সামনের রুমের কিছু কিছু কথা পিয়ালের কানে আসলো। কেউ একজন বলছে শুইয়ে দেন,আবার কেউ বলছেন এম্বুলেন্স কল দেন। পিয়াল কিছুই বুঝতে পারলো না। দ্রুত হেটে সামনের রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো। মিলা তার মার কোলে চোখ বন্ধ শুয়ে আছে। সবাই তাকে জাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু….,কিন্তু মিলা কোনো সাড়াই দিচ্ছে না।পিয়াল রুমটাতে ঢুকলো, সবার দৃষ্টি পিয়ালের দিকে। পিয়াল একটা পিছুটানে সামনে এগুতে পারছে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে বাড়ির আনন্দটা কান্নায় পরিণত হলো।
পিয়ালের মনে পরছে গত তিন তারিখে হাসপাতালে বসে মিলার সাথে বলা সেই মিথ্যা কথাটা।
মিলা – আচ্ছা বলো তো আমার কি হয়েছিলো? আমাকে হাসপাতালে আনা হলো কেনো?
পিয়াল – তুমি জানো না?
– না তো! কি হইছিলো? (পিয়াল বুঝতে পারলো, মিলার বাবা-মা এই বিষয়ে তাকে কিছুই বলে নি।)
– কই কিছু না তো!
– তাহলে বাবা-মা হঠাতই আমাকে দেখার জন্য দেশে আসলো কেনো?
– তুমি জানো না?
– আচ্ছা আমাকে না বললে জানবো কিভাবে? বলো!
– আর দুইদিন পরেই আমাদের বিয়ে!
– কি? আমাদের বিয়ে?
– হ্যা! কেনো তুমি রাজি না?
– কি বলো? আমি এইদিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম সারাবছর। কিন্তু তুমি যে বলছিলা বিয়েটা আরো একবছর পরে করবা।
– কি করবো বলো? মা তোমাকে তার পুত্রবধূ হিসেবে এখনই দেখতে চাচ্ছেন তাই আর কি!
– সত্যি?
– হ্যা!
– তুমি এভাবে ঘামছো কেনো? বেশি গরম লাগছে?
– তেমনি! ও কিছু না! বাদ দাও!
– আচ্ছা আমরা শপিং করবো কবে?
– এইতো কালকেই!
– জানো? আমাদের বিয়েটা নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখেছি! তা এখন সব সত্যি হতে যাচ্ছে।
– হুম্ম!
– সবাইকে ইনভাইট করেছো তো?
– হ্যা সবাইকেই করা শেষ। আচ্ছা তুমি এখন একটু বিশ্রাম নাও। কেমন? কালকে অনেক কাজ আছে।
– এখন বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করছে না। আমাকে এরা ছুটি দিবে কবে? আর আমার কি হয়েছিলো এখনো বললে না কিন্তু।
– কালকেই দিয়ে দিবে।
– আমার কি হয়েছিলো সেইটা তো বলো!
– তেমন কিছুই না। সারাদিন ঘোরাঘুরির জন্য একটু বেশিই ক্লান্ত হয়েগিয়েছিলে। তাই আর কি!
– এর জন্য হাসপাতালে কেনো আনছো? বাসায় গিয়ে একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যেতো।
– এই! চুপ করে বিশ্রাম নাও তো। আর কোনো প্রশ্ন নয়। বিয়ের জন্য আরো কয়েকজনকে বলতে ভূলেই গেছি। ওদের কে জানিয়ে আসি। কেমন?
– আচ্ছা ঠিক আছে। যাও!
পিয়াল মিলাকে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। মিলার আম্মুকে ডাক দেয় পিয়াল। মিলার আম্মু মিলার পাশে এসে বসে। পিয়াল মিলার রুম থেকে বের হয়ে রাশেদকে কল দেয়।
পিয়াল – হ্যালো রাসেদ।
রাসেদ – হ্যা বল বন্ধু।
– সব কিছু গুছিয়েছিস তো? সবাইকে উপস্থিত থাকতে হবে কিন্তু।
– হ্যা সবাই-ই উপস্থিত থাকবে।তুই শুধু একটু শক্ত থাকিস কিন্তু। সব কিছুই মিলার মনের মতই হবে।
– সবাইকে ভালো করে বুঝিয়ে রাখিস মিলা যেনো ওর ব্রেইন ক্যান্সারের ব্যাপারে কিছুই না জানতে পারে। (কান্না-কন্ঠে)
– দোস্ত তুই শক্ত থাক একটু, তুই-ই যদি এভাবে ভেঙ্গে পরিস তাহলে আমরা কিভাবে শক্ত থাকবো?
– আমি ঠিক আছি।
– ভালো কথা! মিলার চুল তো কেটে ফেলা হয়েছিলো, তাই না?
– হ্যা! কেনো বল তো!
– ও বুঝতে পারে নি তো?
– না, ওর মাথায় নকল চুল দেয়া হয়েছে।
– খুলে না পরলেই হলো।
– ওটা আঠা-জাতীয় কিছু দিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
– গুড! যাই হোক! সব কিছুই ঠিক আছে তুই ওইদিক সামলা।আমি এইদিকে আছি।
– আচ্ছা রাখলাম।
– আচ্ছা দোস্ত, নিজের খেয়াল রাখিস।
– হুম।
.
পিয়াল আস্তে আস্তে হেটে মিলার কাছে গেলো। বুক ফেটে কান্না আসছে,কিন্তু একফোঁটা পানিও চোখ থেকে বের হচ্ছে না। হয়তো একেই বলে শোকে পাথর হয়ে যাওয়া। মিলাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। পিয়াল যেনো দাঁড়াতেই পারছে না। সবাই তাকে ধরে নিয়ে আসছে। মিলাকে আগেই হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পিয়ালকে নিয়ে ওর বন্ধুরা কিছুক্ষণ পরে ঢুকলো। ওদের উদ্দেশ্য মিলার রুম। কিন্তু হঠাতই কেউ একজন এসে পিয়ালের বন্ধুদেরকে বললো –
– স্যার, আপনাদেরকে ভিতর থেকে আসতে বারণ করেছে।
– কেনো?
– পিয়াল স্যারকে ওখানে না নেয়াটাই ভালো হবে।
কথাটা বলেই চলে যায় লোকটি। পিয়ালের বন্ধুরা পিয়ালকে ধরাই ছিলো। ওরা পিয়ালকে নিয়ে পিছনের পা বাড়ায়। পিয়াল তার হাটার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে। পিয়ালের মিলার কাছে যেতে খুবই ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে ভালো করেই জানে এখন ওখানে মিলাকে না, লাশ নামক মিলাকে পাওয়া যাবে। কথাটা ভাবতেই আশেপাশের সব কিছু আবছা মনে হচ্ছে। হঠাতই পিয়ালের মুখ থেকে ফিসফিসানো একটা আওয়াজ বের হয়।
পিয়াল- মিলাকে আর দেখতে পাবো না।
কথাটা শেষ হবার সাথে সাথেই পিয়ালের দেহ মাটিতে লুটিয়ে পরার উপক্রম হয়। ভাগ্যিস! ওর বন্ধুরা পিয়ালকে ধরে ফেলেছিলো।
০৬ই জুন ২০১৭,
পিয়াল তার রুমে শুয়ে আছে, আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উপরে ঘুরন্ত সিলিং ফ্যানটার দিকে। কোনো এক খোলা ময়দানে চিৎকার দিয়ে খুব জোরে দৌড়াতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু ওঠার শক্তি পাচ্ছে না। সকালেই রাসেদ, আরেফিন, আরাফ ওরা দেখে গেছে পিয়ালকে। অনেক কিছুই জিজ্ঞাসা করলো কিন্তু কিছুর উত্তরই দিতে চাইলেও দিতে পারে নি পিয়াল। ভিতর থেকে কোনো শব্দই গলা চিড়ে বের হচ্ছে না। বুকের উপর একটা ভারী অদৃশ্য পাথর অনুভব করছে সে। ডাক্তার এসে মাঝে মাঝে একটা করে ইনজেকশন পুশ করে তার হাতে। এরপরেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিতে হয় তার। তেমনি এখন আবার সেই ডাক্তারের আগমন। আবার একই ইনজেকশন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কৃত্রিম ঘুমে হ্রাস করে নিলো পিয়ালকে।

একটা নদীর পারে দাঁড়িয়ে পিয়াল! একটু দূরেই এক নাড়ী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বাতাসে চুলগুলো উড়ে মুখের উপর পরছে, তাই চেনা যাচ্ছে না। কিন্তু পিয়ালকে চুম্বকের মতোই কাছে টানছে সেই নাড়ী। পিয়াল পা বাড়িয়ে মেয়েটার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। দেহের গঠনটা অতি পরিচিত, মেয়েটাকে দেখার জন্য তার কাঁধে হাত রাখে পিয়াল। হাতটা পিছনে টান দিয়ে মেয়েটিকে ঘুরিয়ে তার মুখোমুখি করে পিয়াল। অন্য হাত দিতে মেয়েটির মুখে পরা চুলগুলো সরিয়ে দেয় সে। এ যে মিলা! মাথা নিচু করে চোখের পানি ঝরাচ্ছে।
পিয়াল – মিলা কি হয়েছে তোমার?
মিলা – তুমি আমার কথা রাখো নি!
– মানে? কি বলছো এইসব?
– তুমি বলেছিলে তুমি আমাকে ভালোবাসো!
– হ্যা বলেছিলাম! আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।
– তুমি বলেছিলে তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবা না। আমার সাথেই থাকবা।
– হ্যা আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না, বিশ্বাস করো!
– তাহলে চলো!
– কোথায়?
– আমি যেখানে থাকি! তোমাকে ছেড়ে ওখানে থাকতে মোটেও ভালো লাগে না।
– তুমি কোথায় থাকো?
– ওই খানে ( আকাশের দিকে তার দিকে দেখায়)
– কিন্তু মিলা!
– কোনো কিন্তু নয় পিয়াল! তোমার আজকে আমার সাথে যেতেই হবে। ( মিলা তার হাত চেপে ধরে)
– না আমি যাবো না। প্লিজ মিলা বুঝার চেষ্টা করো। (হাত ছাড়ানোর প্রচেষ্টা)
– না তোমার যেতেই হবে (মিলার লাল চোখ জ্বলজ্বল করছে)
– মিলা আমার হাত ছাড়ো, ব্যথা লাগছে।
মিলা আর কোনো কথা না বলেই পিয়ালের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে।

পিয়াল বিদ্যুৎ গতিতে উঠে বসে।রুমের আলো জ্বলছে, আশে পাশে তাকায় সে।সে বুঝতে পারলো এটা তার দেখা স্বপ্ন। খুব পানির পিপাসা পেয়েছে তার, হাত বাড়ানোর চেষ্টা করে, খুব কষ্টে পাশের টেবিলে রাখা গ্লাসটা আঁকড়ে ধরে। একচুমুকে গ্লাসটার পানি খেয়ে সশব্দে গ্লাসটা টেবিলে রাখে। মাথাটা ঝিম ধরে আছে তার, শুয়ে পরে আবারো। বিছানার এদিক-ওদিক করতে থাকে, কিছুই ভালো লাগছে না। মিলার স্মৃতিগুলো শান্তি দিচ্ছে না পিয়ালকে।কষ্টটা এমন না পারছে কাঁদতে, না পারছে হাসতে। না পারছে কাউকে বলতে, না পারছে নিজের ভিতর রাখতে। নিরবতাই যার ফলাফল।
নয়ই জুন ২০১৭,
সকাল ৮টা পিয়াল বারান্দায় বসে আছে, হঠাতই রুমি-তামান্নার কথা মনে পরলো তার। ডায়রীটা! কোথায় ওটা? নিজেকেই প্রশ্ন করে বসে পিয়াল। সেই প্রায় দুই বছর আগের কথা! কোথায় রেখেছিলাম? পিয়াল একা একাই কথা বলতেছিলো। বারান্দা থেকে দৌড়ে রুমে চলে আসলো। রুমের সব জায়গায়ই ডায়রীটা খুজলো। কিন্তু কোথাও পাওয়া গেলো না। সে অতীতের কথা মনে করতে চাইলো। কিন্তু যতই অতীতে যেতে চাচ্ছে ততই কষ্টটা বাড়ছে। মনে হচ্ছে রুমের ভিতরকার অক্সিজেন ভারী হয়ে আসছে। শ্বাস করাটা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, নিচে বসে পরলো পিয়াল। কেউ একজন একটু পানি দিলে হয়তো ভালো লাগতো। ফ্লোরে শুয়ে পরলো পিয়াল,ঝাপসা হয়ে আসছে সব। চোখের সামনেই একটা ড্রেসিংটেবিল। তার দৃষ্টি টেবিলটার নিচে। একটু দূরেই টেবিলটার নিচে বইয়ের মতো কিছু একটা পরে আছে। পিয়াল হাতটা টেবিলের নিচে ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য অগ্রসর হতে চাইলো। কিন্তু কিছু করার আগেই সব কিছুই অন্ধকারময় হয়ে গেলো।
দুপুর দুইটা
পিয়াল চোখ খুললো। মাথায় ঠান্ডা কিছুর অনুভূতি পেলো। পাশে বসেই পিয়ালের মা পিয়ালের মা মাথায় পানি দিচ্ছে। তার পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে পিয়ালের বাবা। একমাত্র ছেলের অসুস্থতার কথা শুনে তিনি দেশে ফিরেছেন। পিয়াল তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। পিয়ালকে চোখ খুলতে দেখে তিনি হাসি দিলেন।
পিয়ালের বাবা -এখন বিশ্রাম নে,আমার সাথে পরে কথা বলিস!
পিয়াল কিছু বলতে গিয়েও আবার চুপ হয়ে যায়। হয়তো বাবাকে জড়িয়ে কান্নাটাই করতে চেয়েছিলো। কিন্তু কথাটা বলেই ওর বাবা রুম থেকে বের হয়ে যান, কিছুক্ষণ পরে পিয়ালের মা-ও প্রস্থান করেন রুম থেকে। পিয়াল রুমে একা শুয়ে আছে। পাশের টেবিলের দিকে তাকাতেই কয়েকটা বই আর খাতা দেখতে পেলো। যা তাকে তামান্নার ডায়রীর কথা মনে করিয়ে দিলো। পিয়াল নিজের সর্বশক্তি দিয়ে উঠে বসলো। শরীর কাঁপছে। বিছানা থেকে নেমে ড্রেসিংটেবিলটার কাছে গেলো। অজ্ঞান হবার আগে ডায়রীর মতো কিছু একটা এখানেই দেখতে পেয়েছিলো সে। ফ্লোরে শুয়ে পরে পিয়াল। টেবিলের নিচের ফাকা জায়গাটা থেকে উঁকি দিলো। ভিতরে কিছুটা অন্ধকার, কিন্তু কিছু একটা আছে সেখানে। পিয়াল উঠে দাঁড়ালো। ড্রেসিংটেবিলটায় সজোরে ধাক্কা প্রয়োগ করে পিছুনে নেয়ার চেষ্টা চালালো। কিন্তু শরীর অনেক দুর্বল লাগছে।তার শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তির জোগান দিতে পারছে না। কিছুক্ষন ধাক্কাধাক্কির পরে টেবিল কিছুটা পিছনে সরে যেতে বাধ্য হয়। আবারো ফ্লোরে শুয়ে পরে।একই জায়গা থেকে আবারো উঁকি দেয়। এবার ভিতরকার জিনিসটা হাত দিয়েই আনা সম্ভব। পিয়াল হাত ঢুকিয়ে দেয় সেখানে। একটানে বের করে আনে সেই ডায়রীটা। ময়লা জমে আছে। হাত দিয়েই ডায়রীটা পরিষ্কার করে। লালচে ডায়রীটা সাদাটে হয়ে গেছে। বিছানায় গিয়ে বসে, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ডায়রীটার দিকে। মনে পরে যায় সেইদিনের কথা। যেদিন পিয়াল, মিলার সাথে বিছানায় শুয়ে ফোনে কথা বলছিলো। তখন ডায়রীটা বিছানার উপরেই রাখা ছিলো। দেখতে খারাপ লাগছিলো বলে পিয়াল ওটাকে ড্রেসিংটেবিলের উপর ছুড়ে মারে। তার উদ্দেশ্য ছিলো ডায়রীটাকে ড্রেসিংটেবিলের উপরে রাখবে। কিন্তু নিশানা ভূল হয়ে যায়। টেবিলের উপরে না পরে তা টেবিলের নিচে ঢুকে যায়। আলসেমির কারনে আর তোলা হয় নি ডায়রীটা। এরপর ভূলেই গিয়েছিলো ডায়রীর কথা।কিন্তু আজ! সেই পুরোনো ডায়রীটা হাতে বসে আছে পিয়াল।
রাত তখন বারোটা,
বাসার সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। সব কিছুই চুপচাপ। তোষকের নিচ থেকে পিয়াল ডায়রীটা বের করলো। সাহস নিয়ে ডায়রীটা খুললো। প্রথম কয়েকটা পাতা আগেই পড়া হয়েছিলো, যেখানে ভালোবাসা নামক মরীচিকার অনুভূতিগুলো লিখেছিলো তামান্না। পিয়াল দ্রুত পাতাগুলো উল্টালো। কয়েক পৃষ্টা পরেই, ভালোবাসার বিপরীতে কিছু কথা লেখা আছে। প্রথম পৃষ্টাগুলোর লেখাটা অনেক সুন্দর ভাবে লেখা ছিলো। কিন্তু এইগুলো কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা। দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো, ডায়রীর লেখিকা তামান্না অনেক কষ্টের সাথে লিখেছে। পিয়াল ডায়রীতে চোখ রাখলো।
ডায়রী-
আস্তে আস্তে যখন ভালোবাসার মানুষটা কষ্ট দিতে শুরু করে তখন কিছুই ভালো লাগে না। সব কিছুই এলোমেলো হয়ে যেতে শুরু করে তখন। কান্না না আসলেও মন খারাপ থাকে সারাক্ষণ। মানুষটা যখন একটু ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেয় তখন নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় ব্যক্তি মনে হয়।

পিয়াল একে একে সব পৃষ্টাগুলো পড়া শুরু করলো।

ডায়রী-
যখন ভালোবাসার মানুষটা একে একে সব সংযোগই কেটে দিয়ে মুক্তি হতে চায় তখন নিজেকে সব থেকে বেশী দোষী মনে হয়।
সারাদিনে একটু কথা না হওয়ার পরেও যদি শত কষ্টের পর একটুখানি তার গলার আওয়াজ শুনতে পারি তখন ওই সময়টুকু নিজের কাছে অনেক মূল্যবান মনে হয়। হোক সে তখন খারাপ ব্যবহার করেছে ।
কষ্ট এমন একটা জিনিস যা মানুষকে ধীরেধীরে দুর্বল করে ফেলে। কেড়ে নিয়ে যায় ঘুম। তখন উপরওয়ালার কাছে একটা জিনিসই চাওয়ার থাকে, আর সেটা হলো তার ফিরে আসাটা।
দূরে সরে যাওয়াটা এমন একটা জিনিস, যেখানে আমার চোখের পানির কোনোই মূল্যই নেই। সেখানে কান্নার নাম পালটে যায়,তখন তার নাম হয়ে যায় ন্যাকামো।
যদি অতীত বলতে কোনো জিনিসই না থাকতো তাহলে মানুষের জীবনে কষ্ট বলতে কিছুই থাকতো না।
একপর্যায়ে কষ্টটা শুধু বাড়তেই থাকে। তাকে ঘিরে যতো স্মৃতি আছে, যতো অতীতের সুখের ছোঁয়া আছে সব কিছুই একে একে দুঃখে পরিণত হবে।
পিয়াল ডায়েরীর প্রায় সবগুলো পৃষ্টাই পড়ে ফেলে। পিয়ালের কিচ্ছুই ভালো লাগছে না। ডায়রীটা পরে আরোও খারাপ লাগছে তার। মিলার কথা খুব বেশীই মনে পরছে তার। বুকের বাম পাশটায় খুব ব্যথ্যা করছে। ডায়রীটায় শেষ এক পৃষ্টাই বাকি আছে।হঠাতই প্রায় দু-বছর আগের ডাক্তারের কথা তার মনে পরলো। সে বলেছিলো শেষের পৃষ্টাটা না পড়াই ভালো হবে তার। কি এমন লেখা? যা না পড়াটাই উত্তম তার জন্য। একদিকে পড়তে খুব ইচ্ছে করছে তার, আরেকদিকে বুক ফেটে কান্না আসছে তার। মনে হচ্ছে মস্তিস্কের ভিডিও ক্যামেরাটা অটোমেটিক চালু হয়ে গিয়েছে। আগের সব জমানো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ফুটে উঠছে। ডায়রীটা বন্ধ করে ফেলে সে। টেবিলের উপরে রাখা ঘুমের ঔষধটা হাতে নেয়। হয়তো ঘুমালেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বেশ কয়েকটা ট্যাবলেট এক গ্লাস পানি দিয়েই খেয়ে নিলো। এরপর ধপাস করে বিছানায় নিজেকে ছুড়ে মারলো।

পিয়াল শুয়ে আছে। রুমটা অন্ধকারে ঘেরা। হঠাৎ করেই রুমের আলোটা জ্বলে উঠলো। রুমি তার দুপাশে তাকালো। খুব ভয় করছে তার। চোখ- মুখ ফেটে ঘাম ঝড়ছে। সে নিজেকে একটা লাশবাহী খাটে আবিস্কার করলো।এখানে কিভাবে এলাম আমি? কোথায় আমি? নিজের কাছেই প্রশ্ন ছুড়তে লাগলো সে। তার দুপাশে দাঁড়ানো টিয়া, রুমি, তামান্না আর মিলা। পিয়াল চেঁচিয়ে বলতে চাইলো –
পিয়াল – আমি কোথায়? তোমরা এখানে কেনো?
কিন্তু কোনো শব্দই বের হলো না তার মুখ থেকে।পিয়ালের ডান পাশে রুমি ও তামান্না, রুমি সেই আগের মতোই আছে। ঠিক এক বছর আগে শেষ দেখা দেখেছিলো যেমন। মাথাটা থেঁতলানো, মগজ বের হয়ে এসেছে। মুখ-মন্ডল রক্তে মাখা। ঠিক তার পাশেই দাঁড়ানো তামান্না।এক হাতে সেই ধারালো রক্তমাখা চাকু আর অন্য হাত থেকে এখনো ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে।
পিয়ালের বাম পাশে টিয়া ও মিলা দাঁড়ানো। টিয়ার গলায় একটা দাগ দেখা যাচ্ছে। চোখ দুটো ভিতর থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। টিয়ার ঠিক পাশেই মিলা দাঁড়ানো। মিলার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে। মাথায় চুল নেই। চোখদুটো লাল হয়ে আছে। ওদের দেখে পিয়ালের শ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কেউ গলাটা চেপে ধরে আছে। খুব পানি খেতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ওঠবার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে। ইচ্ছে করছে দৌড়ে পালিয়ে যাই, কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তি তাকে খাটের উপর জোর দিয়ে শুয়িয়ে রেখেছে।
রুমি,টিয়া,মিলা,তামান্না সবাই মিলে পিয়ালকে শোয়ানো লাশবাহী খাটটা তুলছে। পিয়াল চেঁচিয়ে বলতে চাচ্ছে – আমি মৃত নয়, আমি জীবিত।আমি মরতে চাই না, আমি বাচতে চাই “। কিন্তু পিয়ালের মুখ থেকে একটা আওয়াজও বের হলো না।

পিয়াল ধড়ফড়িয়ে উঠে পরে। এদিকে ওদিকে তাকায়। সব কিছুই অন্ধকার। সে বুঝতে পারে এটা তার স্বপ্ন। সে রুমের আলো জ্বালায়। মনে হচ্ছে এখনো সে স্বপ্নের মধ্যেই আছে। আগের থেকে প্রচুর কষ্ট লাগছে তার। বারবার পানি খাওয়ার পরেও গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে।পিয়াল সাহস নিয়ে ডায়রীটার শেষ পাতাটায় আসে। তার শরীর ঘামে ভিজে একাকার। পিয়াল ঘড়ি দেখলো। রাত ৩টা বাজে।বাবা-মা ঘুমাচ্ছেন,তাদের রুমে গেলো পিয়াল।চোখ ফেটে কান্না আসছে। ডায়রীটা হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো পিয়াল। রাস্তায় কেউ নেই।এখনো অন্ধকার। দু একটা কুকুর দেখা যাচ্ছিলো। পিয়াল হাটতে হাটতে একটা রেলওয়ে লাইনের উপর গিয়ে বসলো। ডায়রীটা খুললো। পিয়াল আবারো শেষের পাতাটায় গেলো।
যেখানে লেখা ছিলো –
যেখানে কষ্টের শেষ নেই, সেখানে কান্নার শেষ নেই।
কিন্তু যেখানে কষ্টের শেষ আছে, সেখানে কান্নারও শেষ আছে। কষ্ট যদি নিজে থেকে শেষ না হয় তবে তাকে জোর করেই শেষ করে দেয়াই ভালো। তবে কষ্টটা শেষ করার পূর্বে যে কান্নাটা আসে তাকেই হয়তো বলা হয় “শেষ কান্না”।
পড়া শেষে পিয়াল সামনের একটা ঝোপের ভিতরে ডায়রীটা ছুড়ে মারে। খুব কান্না পাচ্ছে তার হয়তো এটাই তার জীবনের শেষ কান্না। যেমনটা হয়েছিলো রুমি,তামান্না আর টিয়ার বেলায়।
_
পরের দিন,
রাসেদ বাসায় বসে টিভি দেখছে। হঠাতই একটা খবরে চোখ আটকে যায় তার। যেখানে বলা হচ্ছিলো –
“গতকাল রাত্র চারটার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে লাইনের উপরে কাটা পরা একযুবকের লাশ পাওয়া গিয়েছে। যুবকের নাম পিয়াল, বয়স ২৩ বছর।

সমাপ্ত

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ