#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
গন্তব্যহীন সূচনা পর্ব
সামিহা হোসেন শৈলী
…
১.
“দিনে রাইতে তোমায় আমি
খুঁইজে মরি রে
আমার সোনা বন্ধু রে
তুমি কোথায় রইলা রে
আমার…”
.
“এই যে ভাই, শুনছেন?”
হাইওয়ের পাশের ছোট্ট এই টং দোকানটার স্বত্ত্বাধিকারী কানু বকশী, সবেমাত্র চায়ের দোকানটা খুলে বসেছে সে। সচরাচর রাতেরবেলাই সে দোকান খোলে, কেননা এসময় দূর পাল্লার যাত্রীদের আনাগোনা বেশি থাকে। তাই রাত যত গভীর হয়, চায়ের দোকানে তত বেশি লোক সমাগম হয়। প্রতিদিনের মতো আজও দোকানের ঝাপি তুলে দিয়ে হারিকেনটা টং এর মাঁচায় ঝুলিয়ে রেখে, চায়ের সরঞ্জামাদি গোছগাছ করছিলো সে। দোকানে শুধু চা রাখলে তেমন চলে না, তাই সাথে তিন-চারপদের টোস্টবিস্কিট প্লাস্টিকের বয়ামে ভরে দোকানের সামনে সাজিয়ে রেখেছে, টং এর উপরের বাঁশের কঞ্চির সাথে ঝুলিয়ে রাখা একটা বড় পলিথিনের ভেতরে চার-পাঁচদিনের পুরোনো বেশ কয়েক পিস বনপাউরুটিও আছে। এই সময়টায় কলার দাম বেশি, তাই এই সপ্তাহে দোকানের জন্য কলা আনতে পারে নি হাট থেকে, কলা থাকলে বনপাউরুটিটা ভালো চলে। পানসুপারিরও ব্যবস্থা রেখেছে। এখান থেকে পাঁচ মাইলের পথে আর কোনো দোকানপাট নেই। দোকানপাট তো দূরে থাক, মানুষের ঘরবাড়িই নেই। কানু একাই এখানে টং এর পাশে একটা ছোট্ট খুপরি ঘরে থাকে আর তার পরিবার গ্রামের ভিটেবাড়িতে থাকে। বউ, বৃদ্ধ মা আর একমাত্র মেয়ে নিয়েই তার ছোট্ট পরিবার। দোকানের যা আয় তা দিয়ে কোনো রকমে চলে, তবে মাঝেমাঝে গাড়িওয়ালাদের পায়ের ধুলোও পড়ে তার এই খুপরি দোকানে।
দোকানে এখনো খদ্দের আসে নি, তাই সে দোকান ঝাড়মোছ করতে করতে গলা ছেড়ে গান ধরেছিলো। হঠাৎ টং এর বাইরে কারো গলা শোনা গেলো, গান থামিয়ে বাইরে উঁকি দিলো সে, হয়তো কোনো খদ্দের এসেছে।
একজন অল্পবয়স্ক যুবক টং এর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, আলো আঁধারির খেলায় মুখটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। কানু মাঁচা থেকে হারিকেনটা নিয়ে দোকানের বাইরে বের হলো। চোখেমুখে একরাশ বিরক্ত নিয়ে বললো,
“কী ভাই, কী কইবেন? কন। ছা দিমু? দুধ ছা না লাল ছা?”
“না ভাই, আসলে… আমি একটু বিপদে পড়েছি। ইয়ে মানে…”
হারিকেনের আলোয় কানু ক্ষুরধার দৃষ্টিতে ভদ্রলোককে পর্যবেক্ষণ করলো। বয়স চব্বিশ কি পঁচিশ, পড়নে শার্ট-প্যান্ট। ফর্সা মুখখানায় খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। পোশাক-আশাকে শহুরে ধাঁচ। চোখের চশমার ফ্রেমটায় সৌখিনতার ছাপ। আঁড়চোখে হাতের ঘড়িটাও এক পলক দেখে নিলো।
আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে পানের রসে মাখামাখি হয়ে থাকা ঠোঁট প্রশস্ত করে লাল-কালো মিশেলে দাঁতগুলো কেলিয়ে বিৎঘুটে একটা হাসি দিলো কানু, খুশিতে আটখানা হয়ে বললো,
“কী? পৎ হারাইছেন তো? আহেন, বসেন এইখানে, ছা দেই একখান। দুধ ছা না লাল ছা? দুধ ছা’ই দেই, খাইয়া দ্যাখেন।”
“না ভাই, আসলে আমি ঢাকা থেকে এসেছি। এদিকে নতুন, অফিসের কাজে এসেছিলাম। কিন্তু…”
“কোনখানে গেছিলেন?”
“জ্বী, কাদিতলী গ্রামের মেম্বারের কাছে একটা কাজে এসেছিলাম। যাওয়ার সময় দিনের আলো ছিলো, কাদিতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে ভ্যানে করে সরাসরি মেম্বারের বাড়িতেই গিয়েছিলাম। কিন্তু ফেরার পথেই বিপত্তি ঘটলো।”
“আরে মিঁয়া, আপনে তো দেখি পুরাই উল্ডা পথে চইলা আইছেন। বাস ইশ্ট্যান্ড তো এইখান থেইক্কা মাইল খানেক পৎ আছে।”
“বলেন কি? ভ্যানওয়ালা তো মাঝপথে নামিয়ে একটা রাস্তা দেখিয়ে দিয়ে বললো, মিনিট পনের হাঁটলে বাসস্ট্যান্ড পাবো, রাত হয়েছে দেখে সে আর যাবে না। এরপর প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে হাঁটার পরও বাসস্ট্যান্ড খুঁজে পেলাম না। একজন মানুষও পেলাম না, যাকে রাস্তা চিনিয়ে দিতে বলবো।”
“আরে মিঁয়াভাই, আপনে টেনশোন লইয়েন না, আমি তো আছি। এই কানুই আপনেরে জায়গা মতন পৌঁছাইয়া দিমু। অহন আপনেরে চা বিস্কুট দেই, চাইলে ভাতও দিতাম পারি। খাইয়া লইয়া প্যাড ঠান্ডা কইরা হেরপর বাড়ি যাওন যাইবো।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
২.
কানুকে খুব একটা সুবিধের মনে হলো না শুভ্রর, হাসিটাই সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিকর, কিন্তু সে নিরুপায়। দোকানদারের জোড়াজুড়িতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সে টং এর ভেতরে গিয়ে বসলো। মোবাইলের আলোয় এতোটা পথ এসেছে ও। যার ফলস্বরূপ চার্জ প্রায় শেষের দিকে। এই দোকানটাতেই কেবল আলো জ্বলছে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে আবৃত পরিবেশটা দেখে শুভ্রর মনে হচ্ছে, অন্ধকারটা যেন এই স্বল্প আলোর উৎস দোকানটাকে একেবারে গিলে খাচ্ছে। ঝিঁঝিঁ পোকার বিরতিহীন ডাকে চারদিকে নিস্তব্ধতা যেন ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে, একটু থেমে থেমে দূর থেকে শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে।
কাদিতলী গ্রামের মেম্বার রইসুল রমিজের কাছ থেকে খেলাপী ঋণের অর্থ আদায়ের জন্য অফিস থেকে তাকে পাঠানো হয়েছে। প্রায় আট মাস আগে এই লোক ঋণ নিয়েছিলো ওদের ব্যাংক থেকে, মেয়াদ অতিক্রান্ত হলেও পরিশোধ করে নি, বারবার নোটিশ দেয়ার পরও যখন কিছু হলো না, তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রোপার্টি ক্রোকের সিদ্ধান্ত নেয়। আশ্চর্য্যজনকভাবে আজকে যখন ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের কথা শুভ্র তাকে জানালো, তিনি কোনো প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু শুভ্র যতদূর শুনেছে, রমিজ আলী বেশ প্রভাবশালী লোক, সে যে এতো সহজে এতোগুলো টাকা ফেরত দিতে রাজি হয়ে যাবে, প্রথমটায় বিশ্বাস করতে পারে নি শুভ্র। টাকাটা হাতে পাওয়া মাত্রই স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো শুভ্র।
এই এক লোকের জন্য তার চাকরী নিয়ে পর্যন্ত টানাটানি শুরু হয়েছিলো। সামনে বিয়ে, খরচাপাতি। একার উপার্জনের সংসারে সবটাই তাকে বহন করতে হয়। বাবা মারার যাওয়ার পর থেকেই সংসারের সম্পূর্ণ ভার তার উপর। শিমুনের পড়ালেখা, মায়ের ঔষধ, সংসারের খরচ… এই সবকিছু তার একার পক্ষে সামলে ওঠা সম্ভব হতো না, যদি না ইলমা তার পাশে থাকতো। মেয়েটা তাকে বড্ড ভালোবাসে। ওর মুখখানা দেখলেই কোনো এক অজানা কারণে শুভ্রর মনটা অদ্ভুত প্রশান্তিতে ছেয়ে যায়, নিমেষেই মুছে যায় দুশ্চিন্তার কালো ছায়াগুলো। এটাই হয়ত প্রকৃত ভালোবাসা। চারবছর আগে এই মায়াময়ীর মায়ার জগতে প্রথম অভিষেক ঘটেছিলো শুভ্রর। আর সেই রাজ্যাধিকারের জোড়েই আজ তারা একে অপরের জীবনসঙ্গী হতে চলেছে। আকদ হয়ে গেছে গত সপ্তাহেই। অফিসের ঝামেলাটা ঠিকঠাকভাবে মিটে গেলেই ওয়ালিমার মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করবে তাদের এই সম্পর্ক।
চলবে…
.
.
.
দ্বিতীয় পর্ব:
https://mbasic.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=942897122807674&_rdr