#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
গন্তব্যহীন দ্বিতীয় পর্ব
সামিহা হোসেন শৈলী
…
৩.
“ধ্যাৎ! নেটওয়ার্কও নেই, নেটওয়ার্কের এত্তো বাজে অবস্থা এই এরিয়ায়। আপনারা যোগাযোগ করেন কীভাবে?”
“আর যোগাযোগ, আমগো ওতোকিসু লাগে না মিঁয়া ভাই। মাসে একবার বাড়িত যাই, টাকা দিয়া আসি। আর সাপ্তায় পেত্তেক বিস্যুতবার হাডে যাইয়া দোয়ানের লাই মাল কিইন্না অানি।”
.
বেলা এগারোটার পর থেকেই সবার সাথে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন শুভ্র। মা নিশ্চয়ই টেনশন করছে, ইলমাকেও বলে আসে নি সে। শুধু বলেছিলো অফিসের কাজে ঢাকার বাহিরে যেতে হবে, কিন্তু কোথায় যেতে হবে, তা আর বলা হয় নি।
গতকাল সন্ধ্যায় দুজনে পদ্মার পাড়ে দেখা করেছিলো, জায়গাটা ইলমার খুব প্রিয়। আকদের পর গতকালই ওরা প্রথম দেখা করেছিলো, অফিসের ঝামেলার জন্য এতোদিন সুযোগ হয় নি। মেয়েটা খুব বোঝে ওকে। কখনো উল্টপাল্টা আবদারও করে না। শুভ্র মুখে কিছু না বললেও কি করে যেন ওর না বলা সবটা বুঝে যায় ইলমা। এজন্যই হয়তো এই নবদম্পত্তির বোঝাপড়াটা একটু অন্যরকম।
সত্যিই ‘বিয়ে’ নামক শব্দটার মধ্য দিয়ে যে অদৃশ্য এক অনুভবক্ষমতা, অধিকারবোধ আর বন্ধনের জন্ম হয়, তা শুভ্রর অজানা ছিলো। এর আগেও এরা বহুবার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়েছে, এমন পরিতৃপ্তির সময় খুব কমই কেটেছে ওদের।
সন্ধ্যেটা যেন স্বপ্নের মতো ছিলো। অদ্ভুত মুগ্ধতাঘেরা, কেমন এক স্নিগ্ধতা আর মৃদু-মধুর সুবাসে মৌ মৌ করছিলো ওদের ঘিরে। ইলমার পরনে ছিলো আসমানি জমিনে সাদা সুতোর কাজ করা একটা সুতি শাড়ি, রঙটা শুভ্রর প্রিয়। শুভ্র সবসময় বলতো—
.
“হিমুর রূপার পরিচয়
নীল শাড়িতে লুকায়ে রয়,
আমার তো রূপা নেই,
আছে এক অপ্সরী,
তার রূপ নীলে নয়,
আসমানীতেই স্ফুটিত হয়…”
বরাবরের মতো শুভ্র এতোটুকু বলেই থেমে যেতো। পরের চরণমালা থাকতো তার অপ্সরী আর অপ্সরীর মেঘালয়ের অধিকারে—
.
“দিন যায়, রাত আসে,
বাতাসে বেলীর সুবাস ভাসে,
জ্যোৎস্নার আলোকে,
নিশি সাজে অপলকে…”
.
“হিমুহীনা রূপা অপূর্ণ,
রূপাহীনা হিমু শূন্য,
কাঠগোলাপে রঙে
সাজাবো তোমায় সান্ধ্য ঢঙে…”
.
“রূপার আছে হিমালয়,
আমার আছে মেঘালয়,
মেঘালয়ের অপ্সরী,
নীলে হয় নীলাম্বরী…”
.
“শুভ্রতার দেশে
এলে তুমি কেমন বেশে
অপ্সরীর মেঘালয়,
শুভ্র হয় অপ্সরীময়…”
…
শেষের চরণগুলোয় ইতি টানে দুজনে মিলে। ওদের সম্পর্কটায় তেমন দেখা হতো না, দেখা হলেও তেমন কথা হতো না। আর পাঁচটা গতানুগতিক প্রেমের সম্পর্কের মতো ছিলো না, ওদের সম্পূর্ণ অনুভূতিটাই যেন ছিলো অনুভূতিময়, স্বপ্নগুলো হতো স্বপ্নময়, আর একেকটি দিবস অতিক্রান্ত হতো ছন্দময়, কাব্যময় আর সংগীতময়। ঠিক তেমনি কিছু মধুমাখা মুহুর্ত এসে জড়ো হয়েছিলে সেদিনের সন্ধ্যায়…
৪.
“ও মিঁয়া ভাই, কী ভাবতাছেন এতো? ভিতরে বইয়া হেই কখন থেইক্কা ডাকতাছি…”
আপন মনে ভাবতে ভাবতে কখন যে অতীতের পাতায় হারিয়ে গিয়েছিলো, শুভ্র নিজেও জানে না। কানু নামের এই লোকটা যে নিঃশব্দে এসে তার পাশে দাঁড়িয়েছে, খেয়াল করে নি সে। আচমকা কানের কাছে এসে ডাক দেয়ায় বেশ বিব্রতবোধ করে শুভ্র। “এ কেমন ধরণের অভদ্রতামি”, মনে মনে শুভ্র লোকটার উপর বেশ বিরক্ত হলো। এমনিতেও তার মতিগতি শুভ্রর কাছে খুব একটা ভালো ঠেকছে না। নেহাৎ বিপদে পড়ে একপ্রকার বাধ্য হয়েই এখানে বসে আছে। এতো রাতে ঢাকা ফেরার জন্য কোনো গাড়ি যে পাওয়া যাবে না, তা সে জানে। আর অপরিচিত জায়গায় একা একা কতক্ষণই বা থাকা যায়, তাই মনের বিরক্তিটা চেপে গেলো শুভ্র। হাতের মোবাইলটা পকেটে পুরে দোকানের সামনের টুলটায় গিয়ে বসলো। শুভ্রর তরফ থেকে কোনো সাড়া না পেলেও দমে যায় নি কানু বকশী। পানের রসে বিশ্রীভাবে মাখামাখি হয়ে থাকা নিচের ঠোঁটটা শব্দ করে জীভ্ দিয়ে চেটে নিলো, কালো কালো দাঁতগুলো বের করে নবোচ্ছাসে খ্যাঁক খ্যাঁক জাতীয় শব্দ করে হেসে উঠলো সে।
“কী মিঁয়া ভাই, বউ’র কথা মনে পড়তাছে নি? হের লাইগাই এতো গভীর ভাবনা ভাবতাছেন…” কথাটা বলেই আরেকদফা হেসে উঠলো কানু।
শুভ্র এবারেও কিছু বললো না। কিন্তু কানুর হাসি থামার নাম নেই, হাসতে হাসতে দোকানের ভিতরে গিয়ে বসে একা একা গান ধরলো—
…
“পিরিতের কি জ্বালা গো
যার জ্বালা সে জানে
লাগাইয়া পিরিতের ডুরি
দূরে বইয়া টানে গো
যার জ্বালা সে জানে
সাধ করে প্রেম করেছিলাম
নিঠুর বন্ধুর সনে
মিটিল না অভাগার সাধ
মরিব পরাণে গো
যার জ্বালা সে জানে
প্রেমের আগুন যার অন্তরে
জ্বলছে রাত্র দিনে
প্রেমিকের কি বাঁচে জীবন
সুজন বন্ধু বিনে
যার জ্বালা সে জানে…”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
এবার শুভ্রর চরম বিরক্ত লাগছে। সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিকর ব্যাপার হলো লোকটার বিৎঘুটে হাসি। কালো-ধলা ব্যাপার না, লোকটার চাহনীটাও অসহ্যকর। নিশ্চয়ই নেশাটেশা করে, চোখগুলো কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে আছে। এর আগে শুভ্র কখনো এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পড়ে নি। যেমন জায়গা, তেমন তার মানুষজন। একজন একজন থেকে অদ্ভুত, গোটা গ্রামটাই যেন অদ্ভুতের কারখানা।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে দোকানের বেঞ্চি ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো শুভ্র, আজ এ টঙে কানু ছাড়া দ্বিতীয় কারো দেখা পাবে বলে মনে হয় না। রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলো সে, মৃদু-মন্দ বাতাস বইছে। গ্রামের পরিবেশে এই এক শান্তি, দিনের বেলা যতই গরম পড়ুক না কেন, রাতের পরিবেশ তুলনামূলক ঠান্ডা হবেই।
প্রথমটায় সে নিজেকে একা ভাবলেও এখন আর একা মনে হচ্ছে না। তার সঙ্গী হয়েছে আবছা আলো ছড়ানো চাঁদটা আর এক ঝাঁক জোনাকি পোকা। থেমেথেমে জ্বলছে তারা, ঢাকা শহরে জোনাকির দেখা পাওয়াই তো বিরল ঘটনা। খুব ছোটবেলায় একবার দাদাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো সে, সেখানে ঝোপঝাড়ে ছোট ছোট অনেকগুলো বিন্দু মতন কি যেন জ্বল জ্বল করতে দেখে দাদুভাইকে কৌতুহল হয়ে প্রশ্ন করেছিলো ছোট শুভ্র। সেই তার প্রথম পরিচয় জোনাকি পোকার সঙ্গে।
এমন স্নিগ্ধতাময় পরিবেশে রাতের খোলা আকাশের নিচে হাঁটতে খুব একটা খারাপ লাগছে না শুভ্রর, বরং ভালোই লাগছে। ইলমাটা থাকলে বেশ হতো, এমন সাধারণ সব মুহূর্তকে মেয়েটা নিমেষেই অসাধারণ করে তুলতে পারে। পারবে না’ইবা কেনো? সে নিজেই তো অনন্য অসাধারণ অদ্ভুত মুগ্ধতাময় এক বিস্ময়কর অপ্সরী…
চলবে…
.
.
.
প্রথম পর্ব:
https://mbasic.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=942797709484282&_rdr
তৃতীয় পর্ব:
https://mbasic.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=943575442739842&_rdr