#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
গন্তব্যহীন তৃতীয় পর্ব
সামিহা হোসেন শৈলী
…
৫.
“ক্র্যা এ এ এ এ! ক্র্যা এ এ এ!”
কলিংবেলের তীক্ষ্ম শব্দে বুকটা ধ্বক করে উঠলো লুবানার। কিচেন টাওয়ালে হাত মুছে চুলার আঁচ কমিয়ে দ্রুতপায়ে দরজার দিকে এগুলেন। শিমুন তখন ড্রইংরুমেই ছিলো, তাই কলিংবেলের শব্দ পাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খোলে সে।
ইলমা এসেছে, চোখমুখ কেমন ফোলা ফোলা। নাকের মাথায় রক্তিম আভার ছোঁয়াটুকুই বুঝিয়ে দিচ্ছে কিছু হয়েছে। ঘড়ির দিকে তাকালেন লুবানা। রাত নয়টা বেজে ছত্রিশ মিনিট, ছেলেটা এখনো বাড়ি ফিরলো না। সারাদিন কয়েকবার ট্রাই করেও যখন ফোনে পেলেন না, তখন সন্ধ্যের দিকে অফিসে ফোন দিয়ে জানতে পারলেন অফিসের কাজে আঁটকে গেছে শুভ্র। ফিরতে দেরি হবে। অফিসের গাড়িতেই তাকে পৌঁছে দেয়া হবে।
সকালে বের হওয়ার সময় ছেলেটা আবদার করেছে, রাতে এসে যেনো লাউ-চিংড়ি আর গরম গরম ডালের বড়ি ডাইনিং এ পায়। ছেলেটা সারাদিন বাইরে থাকে, তাই তো ছেলের আবদারটুকু রাখতে এই রাতের বেলা কিচেনে ঢুকেছেন। দিনের বেলাতেই সব রান্না শেষ করেছেন তিনি। রাত নয়টার সময় ডাল সিদ্ধ করে বড়ি বানাতে বসেছেন। চুলায় অল্প আঁচে দিয়েও এসেছেন। এরই মধ্যে ইলমা এলো।
শিমুন ইলমাকে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে এসে বসালো। ইলমা এখনো কিছু বলছে না, তবে নিচের ঠোঁটটা কেঁপে উঠছে থেমে থেমে। যেকোনো মুহূর্তেই কেঁদে ফেলবে।
লুবানার একটু কেমন যেন লাগলো, কিন্তু তিনি কিছু বললেন না। চুপচাপ ইলমার পাশে গিয়ে বসে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলেন। ইলমাও যেন এরই অপেক্ষায় ছিলো। মায়ের স্পর্শ পেতেই জাপটে ধরে কেঁদে ফেললো, তবে সেই শব্দ বাইরে আসতে দিলো না। মায়ের বুকে মুখ গুঁজেই কাঁদতে লাগলো নিঃশব্দে। লুবানা ভাবলেন, বাড়িতে হয়তো রাগারাগি করে এসেছে। থাক্, কাঁদুক কিছুক্ষণ।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
৬.
ইলমার মা নেই। ওর জন্মের সময়ই মারা যান তিনি। তাই মায়ের ভালোবাসা, আদর, স্নেহ খুব কমই পেয়েছে সে। বাবাও আর বিয়ে করেননি, জীবনের প্রতি বড্ড উদাসীন ছিলেন তিনি। আর এই উদাসীনতার বদৌলতেই একদিন তার মনে হলো, দেশে থাকলে তিনি হয়তো কখনোই মৃত স্ত্রীর স্মৃতি ভুলতে পারবেন না। আর তাই তো ইলমার পাঁচ বছর বয়সে বিদেশে পাড়ি জমান। একটাবারও নিজের মা-হারা ছোট্ট মেয়েটার কথা ভাবলেন না। হয়তো তার উদাসীনতাই তাকে ছোট্ট ইলমার ভবিষ্যতের কথা ভাবার ফুসরত দেয়নি।
এরপর বড় চাচার কাছেই মানুষ হওয়া, বেড়ে ওঠা। প্রথম প্রথম বড় চাচি খুব ভালোবাসতেন, আদর করতেন, খাইয়ে দিতেন, গান শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। স্কুলে ভর্তির পর হাতে ধরে ধরে প্রতিটি বর্ণমালা শেখানো, স্কুলে নিয়ে যাওয়া, ছুটির আগ মুহূর্তে গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা, ছুটির পর হাত ধরে বাড়ি ফেরা, কখনো বা আইস্ক্রিম পেয়ে খুশিতে আত্মহারা ছোট্ট ইলমার ছোট ছোট ঝুটি দুটো নাচিয়ে নাচিয়ে বাড়ি ফেরা— সবকিছুতেই বড়চাচির মাঝে মায়ের গন্ধ পেতো ইলমা। বড়চাচির এই ভালোবেসে আগলে রাখা ছোট্ট ইলমার স্মৃতি থেকে বাবা নামক ব্যক্তিটির নাম প্রায় মুছেই দিয়েছিলো। নিঃসন্তান রুবিনা ইসলামও তখন ছোট্ট ইলমার মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন, জীবনের প্রথম সন্তানসুখ তো এই ইলমার কাছেই প্রাপ্তি। নিজের সন্তানের মতো মানুষ করছিলেন ইলমাকে। হয়তো ইলমার মা-বাবার অনুপস্থিতি তার মনে তখন দাগ কেটেছিলো। তবে সময়ের সাথে সাথে সেই দাগ মুছে যেতেও বিলম্ব হয়নি।
ইলমার তখন এগারো বছর বয়স, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দেখলো বাড়ি ভর্তি মানুষ…
চলবে…
.
.
.
দ্বিতীয় পর্ব:
https://mbasic.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=942897122807674&_rdr
চতুর্থ পর্ব:
https://mbasic.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=944281226002597&_rdr