খোলা জানালার দক্ষিণে পর্ব-১০+১১+১২

0
450

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_১০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

প্রাকৃতিক শীতল বাতাস এসে মেহেভীনের শরীর স্পর্শ করে যাচ্ছে। মেহেভীন এক কাপ কফি নিয়ে বেলকনিতে আসলো। কিরণ ছড়িয়ে দেওয়া চাঁদটাকে গ্রাস করে নিয়েছে, এক টুকরো কালো মেঘের দল। মেহেভীন আঁখিযুগল বন্ধ করে বাসতের আলিঙ্গন অনুভব করছে। তখনই দক্ষিণ পাশে থেকে ডাক দেয়।

–একা একা কপি খাচ্ছেন ম্যাডাম।

–আমার মতো কফি খেতে চান।

–জি।

–তাহলে নিজের বাসায় বানিয়ে খান। কথা গুলো বলেই হাসোজ্জল মুখশ্রী খানা আড়াল করে নিল। মুনতাসিম হতভম্ব হয়ে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। আর মনে মনে বলছে আচ্ছা বজ্জাত মেয়ে তো। কোথায় সে ভাবল মেহেভীন তাকে কফির নিমন্ত্রণ করবে। তা-না করে উল্টো অপমান করে দিল। মুহুর্তের মধ্যে মুনতাসিমের মুখটা থমথমে হয়ে গেল। যেন রজনীর সব আঁধার তার মুখশ্রীতে ঘনিয়ে আসছে। মুনতাসিমকে নিরব হয়ে যেতে দেখে, মেহেভীন উৎসুক দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে আঁড়চোখে তাকাল। মুনতাসিমকে মুখটা গম্ভীর করে রাখতে দেখে, মেহেভীন বলল,

–আপনি রাগ করলেন?

–আমার আবার রাগ আছে।

–তাহলে চুপ হয়ে গেলেন যে!

–আপনাকে বলব কেন?

–সেটাই তো আমাকে বলবেন কেন। কথা গুলো বলেই মেহেভীন কক্ষের মধ্যে চলে আসলো। হঠাৎ মেহেভীনের মনটা খারাপ হয়ে গেল। বিষাদ এসে ক্ষণে ক্ষণে রাজত্ব চালাতে লাগলো। একটু পরেই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো। রুপা টিভি দেখছিল তার কাজে ব্যাঘাত ঘটায় বিরক্ততে মুখশ্রী কুঁচকে গেল। দরজা খুলে মুনতাসিমকে দেখে মুখটা গম্ভীর করে ফেলল। কিছুটা থমথমে কণ্ঠে জবাব দিল,

–এত রাতে আপনার কি চাই? আজকে আবার আপনার কি ফুরিয়ে গিয়েছে। রুপার কথায় মুনতাসিমের চোয়াল শক্ত হয়ে এল। মেয়েটার বেশি কথা বলাই মুনতাসিম সহ্য করতে পারে না। তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টায় মেতে উঠেছে। বুকে ভরা হাহাকার আর অস্থিরতা নিয়ে বলল,

–তোমার আপাকে ডেকে নিয়ে আসো।

–এতরাতে আপাকে ডাকা যাবে না। আপা আমাকে বিরক্ত করতে নিষেধ করেছে।

–শুনো মেয়ে যা বলছি তাই কর। আমার কথা না শুনলে ফলাফল ভালো হবে না বলে দিলাম।

–আপনার কথা না শুনলে কি করবেন আপনি! রুপার এক একটা কথা মুনতাসিমের হৃদয়ে কাঁটার মতো বিঁধছে। প্রেয়সীর রাগ ভেতরটা ছারখার করে দিচ্ছে। প্রেয়সীর মলিন মুখ খানা মৃ’ত্যু যন্ত্রনার থেকে-ও বেশি যন্ত্রনা দেয়। মুনতাসিম নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে, নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে নিজের হাত দেওয়ালে সাথে বাড়ি মা’র’ল। মুনতাসিমের ফর্সা মুখশ্রী রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। মুনতাসিমের ভয়ংকর রুপের সাথে পরিচিত হয়ে, রুপার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। থরথর করে কাঁপছে রুপা। শান্ত কণ্ঠে কথা বলা মানুষটার হঠাৎ করে কি হলো। মুনতাসিম পর পর আরো চারটে বা’ড়ি মা’র’ল। তা দেখে রুপা দৌড়ে মেহেভীনের কক্ষে গেল। মেহেভীনকে সবকিছু খুলে বললে, মেহেভীন রাগান্বিত হয়ে ছুটে এল। ড্রয়িং রুমে এসে স্তব্ধ হয়ে গেল। মুনতাসিম শান্ত নদীর ন্যায় সোফায় বসে আছে। মেহেভীন রুপার দিকে দৃষ্টিপাত করল। রুপার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ এখনো স্পষ্ট। রুপার ভয়ার্ত চেহারা বলে দিচ্ছে রুপা মিথ্যা কথা বলেনি। কিন্তু মনুতাসিমের এমন শান্ত হয়ে থাকাটা অন্য কথা বলছে।

–আপনি নাকি নিজের হাতে প্রহার করছেন? মেহেভীনের কথায় বুকটা শীতল হলো। মস্তিষ্ক সজাগ হলো। মনের গহীনে থেকে কিছু শব্দ ভেসে এল। ভুল জায়গায় এসে ভুল কাজ করে ফেলছিস মুনতাসিম। একদিন তোর এই বিশ্রী রাগ আর রাগের মাথায় করা জঘন্য ব্যবহার কারনে তুই তোর সবকিছু হারিয়ে ফেলবি। কি এমন ক্ষতি হতো যদি নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করা শিখে নিতি। মুনতাসিম সত্য আড়াল করে গেল না। সহজ-সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বলল,

–জি আমি নিজেকে প্রহার করেছি।

–কেন করেছেন?

–আপনার বোনকে আমি বললাম আপনাকে ডেকে দিতে, কিন্তু সে আমার মুখে মুখে তর্ক করছিল। সেটা আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। কেউ আমাকে রাগিয়ে দিলে, আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। অন্যের ক্ষতি কখনোই আমার দ্বারা সম্ভব নয়। সেজন্য নিজের ক্ষতি করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করি। মেহেভীন বিস্ময় নয়নে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মানুষটা কিন্তু অসাধারণ ব্যক্তিত্বের মানুষ। কি সুন্দর রুপাকে তার বোন বলে সম্মোধন করল! তার জায়গায় হলে অন্য কেউ ঠিক কাজের মেয়ে উল্লেখ করত। আমরা রাগে বশিভূত হয়ে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করি আর মুনতাসিম অন্যের ক্ষতি করবে না বলে, সে নিজের ক্ষতি নিজে করে। মানুষটাকে বাহবা না দিয়ে পারছে না মেহেভীন। সে মানুষটা রাগের মাথায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে৷ তার মতো অসাধারণ ব্যক্তিত্বের মানুষ দু’টো নেই। মুনতাসিমের ব্যবহারে মেহেভীন মুগ্ধ হয়ে গেল। কিন্তু তা বাহিরে প্রকাশ করল না। সে গম্ভীর মুখশ্রী করে জবাব দিল,

–এত রাতে আমাকে আপনার কিসের জন্য প্রয়োজন?

–আপনি কি আমার ওপরে রাগ করছেন?

–আপনি কি আমার ভালোবাসার মানুষ!

–মানে?

–মানুষ যাকে ভালোবাসে তার ওপরে রাগ করে। আপনি কি আমার ভালোবাসার মানুষ যে, আমি আপনার ওপরে রাগ করতে যাব৷ এভাবে যখন তখন আমাদের বাসায় আসবেন না। আমরা দু’জন মেয়ে একসাথে বাসায় থাকি। রাতের বেলায় একটা পুরুষ মানুষ আসাটা সবাই সহজ ভাবে নিবে না। আপনার কোনো প্রয়োজন থাকলে সকালে আসবেন।

–এভাবে কথা বলছেন কেন আমার সাথে? আপনি সত্যি আমার ওপরে রাগ করেছেন। আপনি অনুগ্রহ করে আমার ওপর রাগ করে থাকবেন না। আপনি রাগ করে থাকলে আমি ভেতর থেকে জ্বলে পুড়ে দগ্ধ হয়ে যাব। এভাবে অপরাধের আগুনের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মা’র’বে’ন না। আপনার রাগ আমাকে ভিষণ ভাবে পোড়ায়। আমার বুকের কাছে এসে কান পেতে দেখুন। আপনার রাগ দেখে বুকটা কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে। ভিষণ যন্ত্রনা করছে। বুকের বা পাশে চিনচিন করে ব্যথা করছে। অদ্ভুত ভাবে মুনতাসিমের প্রতি মেহেভীনের মনের গহীনে মায়া কাজ করতে লাগলো। মানুষটার কথার মধ্যে জাদু আছে। প্রতিটি কথায় কেমন আসক্ত হয়ে পড়ছে মেহেভীন। নেশার থেকে-ও বেশি ভয়ংকর মানুষটার কথা। পাথরের ন্যায় কঠিন হৃদয়টা কোমল হতে শুরু করছে। মানুষটার কথা গুলো তাকে খুব করে টানছে। এই প্রথম কেউ মেহেভীন মেহেভীনের রাগকে এতটা প্রাধান্য দিল। সে তো সাধারণ একটা মানুষ। তার রাগকে এত অসাধারণ ভেবে কঠিন ভাবে নেওয়ার কি আছে।

–আশ্চর্য! আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন? আমার রাগ আপনাকে কেন পোড়াতে যাবে। আমি আপনার জীবনের তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নই। মেহেভীনের কথায় হালকা হাসলো মুনতাসিম। মেহেভীন আরেক দফা মুগ্ধ হলো। পুরুষ মানুষের হাসি বুঝি এত সুন্দর হয়! কই আগে কখনো কাউকে গভীর ভাবে এতটা পর্যবেক্ষণ করেনি। তবে আজ তাহলে এই মানুষটাকে এতটা মুগ্ধ হয়ে কেন দেখছে সে। মানুষ টা হাসলে ভিষণ সুন্দর লাগে। মানুষটা হাসলে তার সাথে পুরো ধরনী হাসে। মানুষকে আগে কখনো হাসতে দেখেনি সে। অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে মেহেভীনের সমস্ত শরীরে। আনন্দ লাগছে ভিষণ মানুষটার বিরক্ত করা। সারাক্ষণ জ্বালানো তার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেহেভীনের এক টুকরো সুখের মাঝে মুহূর্তের মধ্যে বিষাদ নেমে এল।

–আসলে কেউ আমার ওপরে রাগ করে থাকলে, আমার ভেতরে খুব লাগা কাজ করে। আমি সেটা সহ্য করতে পারি না। আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে, আমি এই একই কাজ করতাম। তখন আমি মজা করেছি। আমার কথায় দুঃখ পেয়ে থাকলে, আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। মেহেভীনের মুখশ্রীতে দেখা গেল হতাশার ছায়া। সে কি ভেবেছিল আর কি হলো। মনটা মুহুর্তের মধ্যে খারাপ হয়ে গেল। এতক্ষণ সামান্য অভিমান হয়েছিল। এখন সত্যি সত্যি রাগ হয়ে গিয়েছে। মেহেভীন রাগ করিনি বলেই নিজের কক্ষ চলে গেল। মুনতাসিম আচমকা একা একা হাসতে হাসতে চলে গেল। রুপা বোকার মতো দু’জনের কান্ড দেখে ভাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে বারোটা ছুঁই ছুঁই। আয়মান আর প্রাপ্তি ড্রয়িং রুমে বসে আছে। হয়তো নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না। প্রাপ্তি কেমন ছটফট করছে। আয়মানও অস্থির হয়ে উঠেছে। দু’জন এখনো পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠেনি। সবকিছুর জন্য প্রাপ্তি মুনতাসিমকে দায়ী করেছে। কিন্তু আয়মান সহ পরিবারের সকলে মানতে নারাজ যে, মুনতাসিম এমন জঘন্যতম কাজ করতেই পারে না। বাড়ির ছেলে হয়ে নিজের বাড়ির ছেলে আর বউকে আহত করবে। এমন মন মানসিকতা মুনতাসিমের নেই। কিন্তু প্রাপ্তি কেন জানি মনে হয়। এই যে তারা ব্যথা পেয়েছে। সেটা মুনতাসিমই করিয়েছে। এই এলাকায় কার এত বড় সাহস যে, চৌধুরী বাড়ির ছেলের গায়ে হাত দিবে। সবকিছু মিলিয়ে এক করতে পারলেও প্রমাণের অভাবে মুনতাসিমকে দোষী প্রমাণ করতে পারছে না। রাতের শেষ প্রহর চলে এসেছে। তখনই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো। প্রাপ্তি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। আয়মান ও সজাগ হলো। প্রাপ্তি গিয়ে দরজা খুলে নির্দিষ্ট মানুষকে চক্ষের সামনে দেখতে পেয়ে মানুষটাকে আলিঙ্গন করল। দু’জনের চোখেই অশ্রুকণা এ যেন শত বছরের ভালোবাসা জমে আছে। মানুষটাকে পেয়ে প্রাপ্তি খুশির শেষ নেই। আহ্লাদে আটখানা হয়ে গিয়েছে প্রাপ্তি। ভাই বোনের মিলন দৃশ্য দেখে আয়মানের বুকটাও প্রশান্তিতে ভরে উঠলো। মেয়েটা যতই খারাপ হোক এ বাড়িতে আসার পর থেকে, মানুষের অবহেলা আর লাঞ্ছনা পেতে পেতেই দিন গিয়েছে বেশি। কথার আঘাতে হয়েছে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন। নিজের প্রিয়তমার মুখশ্রীতে এক টুকরো হাসি তুলে দিতে পেরে, নিজেকে ধন্য মনে করছে আয়মান।

–তোমাকে কতদিন পর দেখলাম ভাইয়া। আমি তোমাকে আর বিদেশে যেতে দিব না৷ বাবা-মায়ের কাছে তোমাকে যেতে হবে না৷ তুমি সব সময় আমার কাছে থাকবে। তোমাকে আমি আমার চক্ষের সাথে সব সময় দেখতে চাই। তোমার মতো করে আমাকে কেউ বুঝে না ভাইয়া। আমাকে আর একা করে দিয়ে চলে যেও না। তুমি আমার শক্তি ভাইয়া। আমার একমাত্র ভরসা তুমি।

–কাঁদছিস কেন বোন। তোর ভাই তোর কাছে চলে আসছে। আমার এই দেহে রক্ত থাকা অবস্থায় তোকে আর কষ্ট পেতে দিব না। আমি জানি আব্বু আম্মু আমার ওপরে কি কারনে রাগ করে আছে। আমি মেহেভীনের সাথে যে কাজটা করেছি। তা সত্যি অত্যন্ত জঘন্যতম কাজ। জানিনা কোন মুখ নিয়ে মেহেভীনের সামনে যাব। তবুও মেহেভীনের থেকে আমার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। চাচা চাঁচি আমাকে হয়তো আর আগের মতো ভালো চোখে দেখে না। কিন্তু এবার আমি যোগ্য হয়ে এসেছি। আমি যে অন্যায় করেছি মেহেভীনকে বিয়ে করে, সেই অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করব। ভাইয়ের কথায় জ্বলে উঠলো প্রাপ্তি। বিস্ময় নয়নে ভাইয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। বিদেশ থেকে এসে তার ভাইয়ার মাথা টা খারাপ হয়ে গিয়েছে। নাকি চাচা চাঁচি ফোন দিয়ে তার ভাইয়ের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলছে। তার ভাই দেশে আসার পরেও ঠিক ছিল। হঠাৎ করে তার কি এমন হয়ে গেল৷ যে সে মেহেভীনের মতো মেয়েকে বিয়ে করবে। সে থাকতে এটা কখনোই হতে দিবে না। প্রাপ্তির সমস্ত মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এল। আয়মান ও মুখটা গম্ভীর করে ফেলল। মুহুর্তের মধ্যে পরিবেশটা শীতল হয়ে উঠলো। নিস্তব্ধতার রেশ চারিদিকে ঘিরে ধরেছে। পিনপতন নিরবতা চলছিল। এমন সময় খট করে আওয়াজ হলো।

চলবে…..

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_১১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

কোলাহলে পরিপূর্ণ পরিবেশ। সরকারি হাসপাতালে শতশত রোগীদের আনাগোনা। প্রতিটি মানুষই সুস্থভাবে শান্তিতে বাঁচতে চায়। অসুস্থ জীবন কাটাতে কে-ই বা পছন্দ করে। অসুস্থতা মানুষের মনকে করে বিষাদগ্রস্ত। বিষন্নতা নিয়ে পড়ে থাকতে হয় হাসপাতালের বেডে। আত্নীয় স্বজদের মাঝে বিষাদের আহাজারি। সব ভালোর মধ্যেই খারাপ লুকিয়ে থাকে। মানুষ অভাবের তাগিদেই সরকারি হাসপাতালে আসে।

–আমার মাকে কাল রাতে স্যালাইন করার কথা ছিল। আপনারা এখনো স্যালাইন করেন নাই কেন?

–আপনাকে কাল রাতেই বলেছি। আমাদের এখানে স্যালাইন শেষ হয়ে গিয়েছে। আপনি বাজার থেকে স্যালাইন কিনে নিয়ে আসুন।

–আপনি মিথ্যা কথা বলছেন কেন? সরকার তো ঠিকি ঔষধ, রোগীদের বেড, যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠিয়ে দেয়। কালকেই গাড়ি এসে স্যালাইন দিয়ে গেল। এক রাতের মধ্যেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল। মানুষের জীবন নিয়েও আপনাদের দুর্নীতি করতে হয়। আমি কিন্তু আপনাদের আপনাদের নামে বিচার দিব। তখন বুঝতে পারবেন। মাসে কয়দিন যায় আর দিনে কয়দিন যায়। টাকা দিয়ে স্যালাইন কেনার জন্য তো সরকারি হাসপাতালে আসি নাই।

–কাল রাত থেকে বেশি কথা বলছেন। আপনার গলায় এত জোড় আছে। আপনি আপনার মাকে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালেই পারেন। স্যালাইন নাই মানে স্যালাইন নাই। বেশি সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে, আপনার মুখ বন্ধ করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। কথা গুলো বলেই নার্স চলে গেল। আরিফ তার অসুস্থ মাকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে সরকারি হাসপাতালে এসেছিল। কালকে সে নিজের চক্ষে দেখেছে। ঔষধের গাড়ি এসে সবকিছু দিয়ে গিয়েছে। রোগীদের জন্য কতগুলো নতুন বেডও নিয়ে এসেছিল। এরা এক রাতের মধ্যে সবকিছু কোথায় গায়েব করে দিল! সরকার তো ঠিকি তার দায়িত্ব পালন করছে। রোগীদের জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছু পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর এরা সরকারের দেওয়া জিনিস রোগীদের না দিয়ে নিজেরা আত্মসাত করে খাচ্ছে। নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না আরিফ। সে জীবনের মায়া করে না। আজ গরীব ঘরে জন্ম নিয়েছে বলেই, সরকার হাসপাতালে এসেছিল। বড়লোক হলে নিশ্চই মাকে বড় কোনো প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাত।

দু’দিন পরে ঝড়ের গতিতে মেহেভীন আসলো হাসপাতালের সামনে। সে বিলম্ব করল না দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে, হাসপাতালের সামনের বড় দোকানটায় চলে গেল। ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখেই ভেতরটা শুকিয়ে কাট হয়ে যায় ইবরাহীমের। ভয়ে পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে পড়েছে। বুদ্ধিরা জোট বেঁধে পালিয়েছে। শরীর রীতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে। মেহেভীন গাড়ি থেকে নেমে দোকানদার ইবরাহীমকে ঔষধ দেখাতে বলল। মেহেভীন ও তার সহযোগীকে একটা একটা করে ঔষধ বের করে দেখাতে লাগলো। আশেপাশে বাজারের মধ্যে কানাকানি হয়ে গেল। বাজারের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট প্রবেশ করছে। দুই একজন বাদে সবাই দোকান বন্ধ করে পালিয়ে চলে গেল।

–আমরা খবর পেয়েছি আপনারা বেআইনি ভাবে ঔষধ বিক্রি করেন। আপনার দোকানের সব ঔষধ আমাদের দেখাবেন। কোনো রকম চালাকি করার চেষ্টা করলে, ফলাফল ভালো হবে না। যদি কোনো অন্যায় করে থাকেন। তাহলে আগেই স্বীকার করে নিন। আমরা আপনার বিষয়টা ভেবে দেখব। মেহেভীনের কথায় ভেতরটা ভয়ে কাবু হয়ে আসলো ইবরাহীমের। তবুও সে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে গা-ছাড়া জবাব দিল,

–আপনি আমার পুরো দোকান চেক করে দেখতে পারেন ম্যাডাম। আমি আপনাকে একশো পারসেন্ট নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি। আপনি আমার দোকানে ভেজাল মেশানো কোনো কিছুই পাবেন না।

–সেটা আপনি বললেও আপনার দোকান আমরা তল্লাসি নিব। না বললেও নিব। আপনি দোকানের প্রবেশ দরজা খুলে দিন। আমার লোক গিয়ে তল্লাসি করবে। মেহেভীনের কথা শেষ হবার সাথে সাথে অস্থির হয়ে উঠলো ইবরাহীম। ফ্যানের নিচে থেকে-ও তরতর করে ঘামছে। ইবরাহীমকে বিলম্ব করতে দেখে, মেহেভীন কঠিন কণ্ঠে দরজা খুলতে বলল। ইবরাহীম দ্রুত দরজা খুলে দিল। ভেতরে তল্লাসি চলছে। ইবরাহীম মেহেভীনকে ঔষধ দেখাচ্ছে। মেহেভীন কয়টা ঔষধের মধ্যে ভেজাল দেখতে পেল। বেশিরভাগ ঔষধের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। সেগুলো তারা নিজেদের মতো সিল বসিয়ে নতুন বলে বিক্রি করছে। তখনই মেহেভীনের সহযোগী বলল,

–ম্যাডাম ঔষধের দোকানের পেছনে গুপ্ত দরজার সন্ধান পেয়েছি। তালা লাগানো আছে। কথাটা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই ইবরাহীমের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পর্শ হয়ে উঠল। সে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করতে চাইছে। কিন্তু তার পথ সবদিকে বন্ধ। মেহেভীন তাকে নিয়েই গুপ্ত দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল। সেখানে বিভিন্ন রকমের ঔষধ দেখতে পেল। সেগুলো মূলত সরকারি হাসপাতালের। রোগীদের তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তারা বেআইনি ভাবে রোগীদের হোক বিক্রি করে খাচ্ছে। মেহেভীন হাতের কাছে কিছু পাতা দেখতে পেল। সেখানে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য দেখতে পেল। মেহেভীন গম্ভীর মুখশ্রী করে বলল,

–গাঁ’জা কে খায়?

–ম্যাডাম আমি জানিনা। হাসপাতাল থেকে তিনদিন আগে আমাকে যেসব ঔষধ দিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো এখানে রেখেছি। এসব মাদকদ্রব্য কোথায় থেকে আসলো জানিনা।

–আমাকে আপনার ছোট বাচ্চা মনে হয়। আপনারা রীতিমতো রোগীদের জীবন নিয়ে খেলা করছেন। সরকারেন নাম খারাপ করছেন। এভাবে জনগনকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ার কোনো অধিকার আপনাদের নেই। আপনারা মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ কেন বিক্রি করছেন। আপনারা জানেন এসব ঔষধ সেবনের ফলে, রোগী মৃ’ত্যু ঘটতে পারে। আপনাদের কোনো ধারনা আছে। সামান্য কয়টা টাকার জন্য আপনার কতটা নিকৃষ্টতম কাজ করছেন। সত্যি করে বলুন এসব মাদক কে সেবন করে। সরকারি ঔষধ গুলো কে দিয়ে গিয়েছে আপনাকে। মুখ খুলুন বলছি। আমি রেগে গেলে আপনার এমন অবস্থা করব। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারবেন না। মেহেভীনের কথায় কেঁপে উঠলো চারপাশ। শীতল হয়ে গেল পরিবেশ। আশেপাশে মানুষ জড় হয়ে গিয়েছে। দুই ঘন্টা ধরে তল্লাসি নিয়েছে তারা। ইবরাহীন আর বাকরুদ্ধ থাকতে পারল না। সবকিছু বলতে শুরু করল,

–আমার ভুল হয়ে গিয়েছে ম্যাডাম। আমাকে মাফ করে দিন। আমাকে একটা সুযোগ দিন। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি। আমি আর কখনো বেআইনি ভাবে ঔষধ বিক্রি করব না। সব সময় সৎ পথে চলব। শেষ বারের মতো একটা সুযোগ দিন ম্যাডাম। মাদকদ্রব্য আমি সেবন করি। আমি নে’শা’য় আসক্ত ম্যাডাম। মেহেভীনের মুখশ্রীতে বিরক্তি ফুটে উঠেছে। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে। আমরা মানুষই মানুষের শত্রু। মেহেভীন বের হয়ে আসতে চাইলে, ইবরাহীম মেহেভীনের পায়ের কাছে বসে যায়। সবাই তাকিয়ে দেখছে আর হাসছে। মেহেভীন বাহিরে বের হয়ে সহযোগীকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–তার দুই লক্ষ টাকা জরিমানা ধরুন আর ছয় মাসের জন্য দোকানটাকে সিল করে দিন। ছয় মাসের মধ্যে দোকানের আশেপাশে কেউ যেন না আসে। কথা গুলো শেষ হবার সাথে সাথে গাড়িতে গিয়ে বসল। ভেজাল মেশানো ঔষধ গুলো বাহিরে নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশ এসে ইবরাহীমকে ধরে নিয়ে চলে গেল। যে নার্সটা আরিফের সাথে বাজে ব্যবহার করেছিল। তাকেও মহিলা পুলিশের সাথে দেখা গেল। মেহেভীন অপেক্ষা না করে বাজারের মধ্যে দিয়ে চলে গেল।

মেহেভীনের রণচন্ডী মুখশ্রী কারো হৃদয়ে ঝড় তুলে দিয়েছে। এত ভিরের মাঝে আঁখিযুগল মেহেভীনেতে আঁটকে গিয়েছে। সে মেহেভীনকে চিনেনা। তার হৃদয় বলছে এই রমনীকে তার চাই। তার হৃদয়ের রাণী হিসেবে মেহেভীনকে চাই। সে মেহেভীনকে অনুসরণ করতে লাগল। খাঁ খাঁ রৌদ্রের মধ্যে মেহেভীন বেড়িয়েছিল। বাসার বাজার নেই বললেই চলে। বাজার করার জন্য নেমেছিল। ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে। ফর্সা মুখশ্রী লাল হয়ে গিয়েছে। মেজাজ বিগড়ে আছে তার। তখনই মেহেভীনের পাশে এসে দাঁড়াল মুনতাসিম। মুনতাসিনকে দেখেই অদ্ভুত ভাবে মেহেভীনের উত্তপ্ত হৃদয়টা শীতল হয়ে গেল। সমস্ত বিরক্তি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। মানুষটাকে বোধহয় আল্লাহ তায়ালা মুগ্ধতা দিয়ে তৈরি করেছে। মানুষটা তার কাছে আসলেই চারিদকে মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। অনুভূতিরা আনন্দে মেতে উঠেছে। বিষাদগ্রস্ত মনটা মুহুর্তের মধ্যে ফুরফুরে হয়ে গেল। মেহেভীনকে বাজারের ব্যাগ হাতে নিতে দেখে বলল,

–আমি থাকতে আপনি এত কষ্ট করছেন কেন ম্যাডাম? এই কথাটার মধ্যে একটা অন্যরকম জাদু ছিল। কথাটা কর্ণকুহরে আসতেই হৃদয়ের গহীনে প্রশান্তি দোল খেলে গেল। কত সুন্দর বাক্য আমি থাকতে কষ্ট করছেন কেন ম্যাডাম! যত দিন যাচ্ছে মানুষটার প্রতি ততই মুগ্ধ হচ্ছে মেহেভীন। চাইলেও এই মানুষটার সামনে সে রাগ করতে পারে না। রাগ গুলো যেন আপস মেনে নিয়েছে। তারা কিছুতেই এই মানুষটাকে কষ্ট দিবে না। ললাট বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। মেহেভীন নিজের ওড়না দিয়ে মুখশ্রী মুছে হেসে জবাব দিল,

–সমস্যা নেই আমার লোক আছে।

–আপনি চাইলে আপনার সহযোগী হিসেবে, আমাকেও রাখতে পারেন। ছায়ার মতো আপনার সাথে থাকব।

–ফ্লার্ট করছেন।

–এটা যদি আপনার ফ্লার্ট মনে হয় তাহলে তাই। আপনি যা বলবেন তাই মঞ্জুর মহারাণী। মেহেভীন এবার শব্দ করে হেসে উঠলো। মেহেভীনের হাসির প্রতিধ্বনিতে চারপাশে মুখরিত হয়ে গেল। মেহেভীনের হাসির সাথে মুগ্ধতা ঝরে ঝরে পড়ছে। মুনতাসিম বুকে হাত রেখে মনে মনে বলল, এই মেয়েটা আমাকে আজকে একদম খু’ন করে ফেলবে। এভাবে কেউ হাসে! ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে গিয়েছে আমার। ভেতরটা ছটফট করছে। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি আমি। এভাবে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিলে, নিজেকে আমি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করব। এত সহজে ধরা পড়তে চাই না আমি। মেয়েটা আমাকে একদম শেষ করে দিল। আজকে আমি শেষ।

–এভাবে হাসবেন না ম্যাডাম প্রেমে পড়ে যাব। আমি নিতান্তই ভালো ছেলে। এসব প্রেম পড়ার লোভ আমার নেই। এভাবে হেসে লাভ নেই। আমি আপনার প্রেমে পড়ব না।

–আমার প্রেমে পড়ার মানুষের কি অভাব আছে।

–প্রেমে পড়ার মানুষের অভাব নেই। কিন্তু ভালোবাসার মানুষের অভাব আছে। দু’দিনের জন্য প্রেমে সবাই পড়তে জানে। কিন্তু ভালোবেসে আগলে রেখে, সারাজীবনের দায়িত্ব সবাই নিতে পারে না মেহেভীন। প্রেমে ফেলে প্রেমিকা বানানোর যোগ্যতা প্রতিটি পুরুষই রাখে। কিন্তু নারীকে ভালোবেসে নিজের প্রেমিকাকে বউ বানানোর যোগ্যতা সব পুরুষ রাখে না। এক দুই বছরের জন্য প্রেম করে দুই বছর পর তাকে ছেড়ে দিব। এমন প্রেম আমি করি না। ভালোবাসলে তাকে এমন ভাবে ভালোবাসবো। যেন সারাজীবন আমার কাছে আগলে রাখতে পারি। তার সাথে বসে তার কাঁধে মাথা রেখে শত-শত প্রহর জেগে, নির্ঘুম রজনী পার করে দিতে পারি। তার বুকে মাথা রেখে গভীর আলিঙ্গন করে নিশ্চিন্তে নিদ্রা যেতে পারি। সে আর আমি যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ হতে পারি। বৃদ্ধ বয়সে একে অন্যের লা’ঠি হতে চাই। একে অন্যকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই। তার সাথে অনন্ত কাল কাটাতে চাই। তার প্রতি আমার মুগ্ধতা কখনো হারাবে না। তাকে দেখার তৃষ্ণা আমাকে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াবে। বিয়ের ষাট বছর পরে-ও যেন তাকে বলতে পারি। এভাবে কেউ হাসে ম্যাডাম আপনি হাসলে আমি পাগল হয়ে যাই। মুনতাসিনের কথায় স্তব্ধ হয়ে গেল মেহেভীন। মুনতাসিমের মুখে প্রথম নিজের নাম শুনে হৃদয় কেঁপে উঠল। শান্ত হৃদয়টা হয়ে উঠলো অশান্ত। হৃদয়ের গহীনে উথাল-পাতাল ঢেউ খেলতে শুরু করে দিয়েছে। মানুষটার প্রতিটি দিন দিন সন্মান আর শ্রদ্ধা বেড়েই চলেছে। মানুষটার চিন্তা ধারা কতটা সুন্দর। সেজন্য বোধহয় মেহেভীন তাকে অসাধারণ ব্যক্তিত্বের মানুষ বলে উপাধি দিয়েছে। মানুষটা তার কথার মধ্যে দিয়ে মেহেভীনের সব শক্তি শুষে নেয়। নিস্তেজ করে দেয় তেজী শরীর খানা। নিষ্পলক চাহনিতে মুনতাসিমের দিকে তাকিয়ে আছে। মুনতাসিম মেহেভীনের হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে বলল,

–এভাবে তাকাবেন না ম্যাডাম প্রেমে পড়ে যাবেন। এভাবে একা একটা পুরুষকে পেয়ে আঁখিযুগল দিয়ে, গিলে খাচ্ছেন। আমার বুঝি সন্মান নেই। আমার কথাটা একটু ভাবুন ম্যাডাম। আমার বিয়ে-শাদি করতে হবে। এভাবে চোখ দিয়ে আমার সর্বনাশ করবেন না। আমি সমাজ মুখ দেখাতে পারব না। বলেই লজ্জা রাখা মুখশ্রী করে দুষ্টু হেসে সামনের দিকে অগ্রসর হলো৷ মেহেভীন হতভম্ব হয়ে গেল। মনে মনে বলল, কি পা’জি ছেলে রে বাবা। কিন্তু সুন্দর করে তাকে নির্লজ্জ বানিয়ে দিয়ে চলে গেল।

চলবে…..

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_১২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

গোধুলী আলো মনোমুগ্ধকর পরিবেশ গড়ে তুলছে। চারদিকে শীতের আভাস জানান দিচ্ছে। আজ শুক্রবার মেহেভীন প্রতি শুক্রবারে নিজের বাসার পাশে, খোলা মাঠে গাছের নিচে থাকা বেঞ্চটায় বসে থাকে। মাঠের সাথেই আঁকাবাকা নদী। বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে স্রোত ভেসে যায়। সে কি অপরূপ নদীর সেই দৃশ্য। গোধুলি আলো মেহেভীনের মুখশ্রীতে আঁচড়ে পড়ছে। মেহেভীন বসে বাচ্চাদের ফুটবল খেলা দেখছে। এই মাঠে রোজ বাচ্চারা খেলতে আসে। মেহেভীন গভীর ভাবে খেলা দেখছিল। তখনই নিজের পাশে কারো উপস্থিত অনুভব করে। পাশে তাকিয়ে দেখল মুনতাসিম। তার থেকে বেশ দুরত্ব বজায় রেখে বসেছে। মেহেভীন বাহিরে আসলে মানুষটা টের পায় কিভাবে? সেটাই মেহেভীনের মাথায় আসে না।

–আপনাকে আজকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে ম্যাডাম।

–কেন আমার রুপ কি আগের থেকে বেশি হয়ে গিয়েছে। যার কারনে আজকে আমাকে একটু বেশি সুন্দর লাগছে।

–আপনার রুপ বেশি হয়নি। এটা আমার দৃষ্টির দোষ আমার দৃষ্টি রোজ আপনাকে নতুন ভাবে দেখে, নতুন ভাবে জানে, নতুন করে বোঝার চেষ্টা করে। আপনিতে পুরাতন বলতে কিছুই নেই। মুগ্ধতার আরেক নাম আপনি। আপনি রোজ দেখি আর রোজ নতুন করে তৈরি করি। আমার দৃষ্টি যে আপনিতেই সীমাবদ্ধ। তাই আপনিতেই নতুনত্ব খোঁজার প্রচেষ্টায় থাকি সারাক্ষণ।

–একটা মানুষের পেছনে সারাক্ষণ আঠার মতো লেগে থাকেন। বিরক্ত হন না!

–বিরক্ত হব না। তবে হঠাৎ করে না জানিয়ে একদিন থেমে যাব। সেদিন চাইলেও আর বিরক্ত করা মানুষ টাকে খুঁজে পাবেন না। সে চলে যাবে আপনার ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। মেহেভীনের বুকটা হঠাৎ করে মোচড় দিয়ে উঠল। ভেতরে অদ্ভুত এক শূন্যতা অনুভব করল। মস্তিষ্ক থম মে’রে গিয়েছে। কাজ না করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে সে। মেহেভীনকে স্থীর হয়ে যেতে দেখে মুনতাসিম শীতল কণ্ঠে বলল,

–চুপ করে গেলেন যে ম্যাডাম!

–আজকে আমাকে সত্যি করে একটা কথা বলবেন? আপনি সামনে থেকে যা দেখান, সেটাই আপনি নাকি আপনার ভেতরে অন্য কোনো রহস্যময় চরিত্র বসবাস করছে। আমি একটা জিনিস প্রায় খেয়াল করি। আপনার আশেপাশে কিছু লোক সব সময় আপনাকে ঘিরে রাখে। তারা যেন আপনাকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করছে। কে আপনি? তারা কেন আপনাকে ঘিরে রাখে?

–আমার প্রেমে পাগল হয়ে যাননি তো ম্যাডাম। ভর সন্ধ্যা বেলায় কি সব ভুলভাল বকছেন! আশেপাশে নানা রঙবেরঙের মানুষ চলাচল করে। কে আমার আশেপাশে আছে। সেটা তো আমি জানিনা। আপনি কাকে নাতে কাকে দেখে, আমাকে দোষারোপ করছেন। আমি নিত্যান্তই একজন সাধারণ মানুষ। আমাকে রক্ষা করার জন্য আমার আল্লাহ আছেন।

–আমাকে আপনি বোকা পেয়েছেন! তাই বলে একই মানুষ সারাক্ষণ আপনার আশেপাশে ঘুরঘুর করবে। নাকি আপনার মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা কথা বলছি। আপনাকে আমার প্রচুর সন্দেহ হয়। পৃথিবীতে এত এত মানুষ থাকতে, আপনি কেন শুধু আমার পেছনেই পড়ে থাকেন বলেন তো। আশা করছি আজকের পর থেকে আপনার সাথে আমার আর কোনো কথা হবে না। মেহেভীনের কথায় বুকটা ব্যথায় চিনচিন করে উঠল। মনের অন্তরালে হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে। মনের শহরের অলিতে-গলিতে বিষাদের মিছিল শুরু হয়ে গিয়েছে। মেহেভীন বিলম্ব করল না। মুহূর্তটাকে বিষাদে পরিপূর্ণ করে দিয়ে স্থান ত্যাগ করল। সে দোষও দিল আবার দুঃখও দিল! মুনতাসিমের কেন জানি ছুটতে ইচ্ছে করল না। তার পেছনে ছুটতে ছুটতে জীবন ফুরিয়ে যাবে। তবুও মেহেভীনের মনের গহীনে নিজের নামে এতটুকু স্থান দখল করতে পারবে না। নিস্তব্ধতায় ছেয়ে যাচ্ছে পরিবেশ। বাচ্চারা মাঠ থেকে চলে গিয়েছে। সূর্যকে বিদায় জানিয়ে চারদিকে আঁধার ঘনিয়ে আসছে। মশার জ্বালায় বসে থাকা দুষ্কর হয়ে গিয়েছে।

মেহেভীনের বাবা-মায়ের সামনে বসে আছে আরিয়ান। দৃষ্টি তার নত। মুখশ্রীতে অপরাধবোধের ছাপ স্পষ্ট। সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছে। কথা বলার শক্তি হারাচ্ছে সে। ভেতরটা ভয়ে কাবু হয়ে আছে। কণ্ঠনালি দিয়ে শব্দ উচ্চারিত হবার আগেই, কণ্ঠনালি কেঁপে কেঁপে উঠছে। এত বড় জঘন্যতম কাজ করার পরে-ও সে নিজের মনের ভাব কিভাবে প্রকাশ করবে? মস্তিস্ক নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে। সে আজ আরিয়ানের সঙ্গ দিতে চাইছে না। তবে সে যে ভুল করেছে। সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত নিশ্চই করবে। সে বিলম্ব করল না। মেহেভীনের বাবা-মায়ের চরণের কাছে বসে, কান্নায় ভেঙে পড়ল। অনবরত ক্ষমা চেয়েই যাচ্ছে সে। ক্ষমা না করা পর্যন্ত চরণ জড়িয়ে রাখার পণ করেছে সে। পানি দুইভাগ করলে যেমন আলাদা হয় না। ঠিক তেমনই রক্তের সম্পর্কের মানুষকে কখনো আলাদা করা যায় না। এতদিনের জমানো সমস্ত রাগ, ক্ষোভ, অভিমান নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেল। বরফের ন্যায় গলতে শুরু করল দু’জন মানুষের মন। তারা কি এটা জানে না। জীবনে খুব সহজে সহজ-সরল হতে নেই। কারন এই পৃথিবীতে সহজ-সরল মানুষ গুলো ভিষণ বাজে ভাবে ঠকে যায়।

–চাচা আমি জানি আমি জঘন্যতম অপরাধ করেছি। তার ক্ষমা হয়তো কখনো হবে না। তবে একটা কথা কি চাচা জানেন? ক্ষমা মানুষের মহৎ গুন। ক্ষমাশীল ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তায়ালা ভিষণ ভালোবাসেন। আপনারা চাইলে আমাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। আবার ক্ষমা করতে না চাইলে, আমাকে আমার উপযুক্ত শাস্তি দিন চাচা। আমি এই অপরাধের বোঝা বয়ে বেড়াতে পারছি না। রজনীর শেষ প্রহরে আমার নিদ্রা ভেঙে যায়। হৃদয়টা বড্ড ছটফট করে অতীতের অপরাধের কথা স্মরন করে, আমার ভেতরটা হাহাকারে কাঁদে। আমাকে শেষ একটা সুযোগ দিন চাচা। আপনারা চাইলে আমি মেহেভীনকে বিয়ে করতে রাজি আছি। তার জন্য আমাকে যা বলবেন আমি তাই করব। ফরিদ রহমান কিছুটা গম্ভীর গলায় বলল,

–তুমি আমাদের বংশের ছেলে। তাই হয়তো এ যাত্রায় ক্ষমা পেয়ে যাবে। তা না হলে তুমি এত জঘন্যতম অপরাধ করার পরে-ও কখনো ক্ষমা পেতে না। তোমার ভাগ্য হলো আমাদের মতো একটা পরিবার পেয়েছ। তোমার লজ্জা করল না মেহেভীনকে বিয়ে করার কথা বলতে! কোন মুখে বিয়ের কথা বললে তুমি? তোমার মতো ছেলেকে পায়ের তলায় ফেলে পিষে মা’রা উচিৎ। অপমানে আরিয়ানের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল। দু-হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন বি’ষ খেয়েও সহ্য করে নিতে হবে। আরিয়ান খুব সহজে দমে যাবে না। সে শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।

মুনতাসিম নিজের কক্ষে বসে কিছু একটা পকেটে তুলে নিল। তখন ক্ষনিকের জন্য প্রেয়সীর উপর অভিমান হয়েছিল। সেজন্য প্রেয়সীর রাগ ভাঙানোর জন্য ছুটেনি। বাসায় আসার পর থেকে ভিষণ অস্থিরতা কাজ করছে। যন্ত্রনায় ভেতরটা ছটফট করছে। আজকাল নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়। মেয়েটা তার ভালো থাকার কারন হয়ে গিয়েছে। মেয়েটাকে ছাড়া তার দম বন্ধ হয়ে আসে। সমস্ত শরীর মন জুড়ে শুধু মেয়েটারই বিচরণ। মেয়েটা নিশ্চয়ই কোনো জাদুকরী। তা না হলে তার মতো পাষাণ মানুষের হৃদয়ে দুঃখ পুরে দিতে পারে! কি মায়ায় জড়াল মেয়েটা। মনটা নিজের হয়েও ভালো থাকটা তার ওপরে নির্ভর করে। তার সমস্ত আবেগ মেহেভীনের সামনে এসে কার্যক্রম শুরু করে দেয়। মাঝে মাঝে সে ভিষণ অবাক হয়। সে আগে কি ছিল আর এখন কি হয়ে গেল! মুনতাসিমের ভাবনার মাঝেই মুঠোফোনটা বেজে উঠল। নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের নামটা ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে। মুনতাসিম মুঠোফোনটা কর্ণে ধরতেই মিরাজুল বলল,

–মুনতাসিম জানিস কি হয়েছে? তোর বন্ধু প্রেমে পড়েছে! একজন রাজকুমারী তোর বন্ধুর হৃদয়হরন করে নিয়ে গিয়েছে। তাকে দেখার পর থেকে আমি খেতে পারছি না। রাতে ঠিকমতো ঘুমোতে পারছি না। আমার মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু সেই রমনীর ভাবনা। সুন্দরী রমনী আমাকে গ্রাস করে ফেলছে। আমি তার মুগ্ধতা থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না। তুমি মেয়েটাকে আমার কাছে এনে সে। তা না হলে আমি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পরকালে গমন করব। মেয়েটার সাথে কথা বলে না পারার যন্ত্রনায় বাকরুদ্ধ হয়ে যাব। মেয়েটাকে না পাবার শূন্যতায় পাগল হয়ে শহরের অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়াব। আমার জীবনের কোনো ইচ্ছে তুই অপূর্ণ রাখিসনি। অপূর্ণতার জীবনে আমার সবকিছু পরিপূর্ণ করে দিয়েছিস তুই। শেষ বারের মতো তুমি আমাকে আমার মুগ্ধতাকে আমার কাছে এনে দে। মিরাজুলের কথায় দু-হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল মুনতাসিম। সে মনে মনে যা আশঙ্কা করেছিল। সেটাই হলো। সেদিন মিরাজুলই মেহেভীনকে পিছু করতে করতে এসেছিল। মুনতাসিম নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করল। চোয়াল শক্ত করে বলল,

–তুই যেটা চাইছিস। সেটা আমার পক্ষে দেওয়া কখনোই সম্ভব না। তুই তার থেকে ভালো মেয়ে পাবি। চেনা নেই জানা নেই। হঠাৎ করে একটা মেয়েকে দেখলি আর প্রেমে পড়ে গেলি। মেয়েটার সম্পর্ক খোঁজ খবর নিবি না। মেয়েটা বিবাহিত নাকি অবিবাহিত। মেয়েটা ভালো নাকি খারাপ। কোনো কিছুই তুমি জানিস না। তুই সেই মেয়ের আশা বাদ দে। আর নিজের আশেপাশে দেখে ভালো মেয়ে খুঁজে নে।

–তুই বুঝতে পারছিস না। আমার ঐ মেয়েকেই চাই। ও মেয়ে যদি আমার না হয়। তাহলে আমি কারো হতে দিব না। আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তাকে ভালোবেসে যাব। তার মুগ্ধতা আমার হৃদয়ের গহীনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। আমি সেই মুগ্ধতা কিভাবে কাটিয়ে উঠব ভাবছিস। আমি থাকতে ও মেয়ে অন্য কারো হতে পারবে না মিলিয়ে নিস।

–তাহলে তোকেই সরিয়ে দেই। কি দরকার শুধু শুধু ঝামেলা রেখে। মুনতাসিনেম কথায় ক্ষোভ দেখাল। নিজের প্রেয়সীর প্রতি অন্য কারো অধিকারবোধ সহ্য হচ্ছে না তার। হারিয়ে ফেলার ভয় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে। না পেয়ে হারানোর যন্ত্রনা সহ্য করা যায়। কিন্তু পেয়ে হারানোর যন্ত্রনা সহ্য করার চেয়ে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করা ঢের ভালো। মুনতাসিম কল কেটে দিয়ে দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

মেহেভীন বেলকনিতে বসে কিছু কাগজপত্র দেখছিল। তখনই পেছনে আরো উপস্থিতি টের পায়। আজকাল মানুষটাকে চিনতে তার বেশি সময় লাগে না। মানুষটা তার আশেপাশে থাকলে অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করে। মুনতাসিম কিছুটা নম্র কণ্ঠে বলল,

–আমি আপনার পাশে বসতে পারি ম্যাডাম?

–বিকেলে আপনাকে কি বলেছিলাম। আমার কথা আপনি বুঝেননি নাকি বুঝেও না বোঝার ভান ধরছেন।

–আপনি বললেই আপনার পিছু নেওয়া ছেড়ে দিব। এত ভালো ছেলে আমি না বুঝছেন।

–কেন এসেছেন এখানে?

“যদি পারতাম আপনাকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখতাম। যেন অন্য কারো দৃষ্টি আপনার উপরে না পরে। আপনাকে হারানোর ভয়ে হতাম পাষাণ। বেঁধে রাখতাম আমার ভালোবাসার শিকলে। যেন অভিমান হলে-ও আপনি আমায় ছেড়ে যেতে না পারেন।” হতভম্ব হয়ে গেল মেহেভীন। তবে একটু সুখানুভূতি হচ্ছে হৃদয়ের গহীনে। এই যে সে রাগ করে আর মানুষটা তার রাগ ভাঙাতে চলে আসে। এই জিনিসটা মেহেভীনের ভেতরটা বেশি করে কাবু করছে। মানুষটা সব সময় এমন থাকবে তো। পরে পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে দূরে সরে যাবে না তো আবার। আমার ভিষণ ভয় হারিয়ে ফেলার ভয়। আমি মানুষকে ভিষণ ভাবে ভয় করি। তারা নির্মম ভাবে আঘাত দিয়েও অপরাধ বোধে ভুগে না।

–ছন্দটা সুন্দর ছিল না ম্যাডাম। আমার একটা বান্ধবী আমাকে পাঠিয়েছে। আমার ভালো লেগেছে। তাই আমি আপনাকে শোনালাম। মুহুর্তের মাঝে মেহেভীনের মুখশ্রী গম্ভীর রুপ ধারন করল। সে উৎসুক দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–আপনার আবার বান্ধবীও আছে। ছেলে মানুষ মানেই তো চরিত্রহীন। এজন্য ছেলে মানুষকে আমার একদম বিশ্বাস হয় না। কতগুলো মানুষের সাথে এভাবে ফ্লাট করে বেড়ান। চরিত্রহীন কথাটা কর্ণকুহরে আসতেই ক্রোধে সমস্ত শরীর হুংকার দিয়ে উঠল। একজন চরিত্রবান মানুষ সব সহ্য করতে পারে। কিন্তু তার চরিত্র নিয়ে কথা বললে, কলিজায় আঘাত লাগে। মুনতাসিমের হুংকারের মেহেভীনের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল। মুহুর্তের মাঝে অন্য এক মুনতাসিমকে আবিষ্কার করল মেহেভীন। এই মুনতাসিমের সাথে সে পরিচিত না। মুনতাসিম মেহেভীনের কিছুটা কাছে এগিয়ে গেল। মুনতাসিমের উত্তপ্ত গাঢ় নিঃশ্বাস সে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারছে। মুনতাসিম কিছুটা শাসানোর ভঙ্গিতে বলল,

–আমাকে মেরে রক্তাক্ত করে দিন। তবুও কণ্ঠনালি দিয়ে একটা বাক্য বের হবে না। যদি কেউ আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে, তাহলে আমার সমস্ত শরীর দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে। সেই আগুনে সানের মানুষটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে ইচ্ছে করে। আপনি এমন কিছু করবেন না মেয়ে। আপনার জ্বালিয়ে দেওয়া আগুনে, আপনাকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দগ্ধ করে দিব। আজ প্রথম বলেছেন। তাই ক্ষমার যোগ্য মনে করে ক্ষমা করে দিলাম। দ্বিতীয় দিন এমন ভুল করলে আপনাকে ধংস করে দিব। সাথে নিজেও ধংস হয়ে যাব। আপনার দু’টি পা এগিয়ে দিন মেয়ে। মেহেভীন বাকরূদ্ধ হয়ে গেল। ক্ষণে ক্ষণে কথা বলার শক্তি হারাচ্ছে সে। মুনতাসিম আবার হুংকার ছাড়লে কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে পা দু’টি এগিয়ে দিল। মুনতাসিম মেহেভীনের দিকে না তাকিয়ে মেহেভীনের পায়ে নুপুর পড়িয়ে দিয়ে চলে গেল। যাবার আগে বলে গেল। এসেছিলাম ভালোবাসা নিয়ে, বিষাদ সাথে দিয়ে ফেরত পাঠালেন কাজটা আপনি ঠিক করলেন না ম্যাডাম।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে