খুশবু পর্ব-০৩

0
1639

#খুশবু
#তৃতীয়_পর্ব

একদিন হঠাৎ চেঁচামেচির শব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখে পরান বিয়ে করে নতুন একটা বউ নিয়ে এসেছে । খুশবু একরাশ হতাশা চাহনিতে তার ভালোবাসার মানুষটিকে দেখছে।
“কীভাবে এটা করতে পারলো সে? ভাবতেই নয়ন অশ্রু সিক্ত হচ্ছে বার বার।
__ এই হতচ্ছাড়ি সর সামনে থাইকা।
শাশুড়ির কড়া উক্তিতে খুশবুর ভগ্ন হৃদয় আরো কয়েক খন্ডে বিভক্ত হয়ে যায়।
কয়েক পা পিছিয়ে দাঁড়াতে হাসতে হাসতে নব বধুকে ঘরে তুলেন সুফিয়া বানু। পরান একটি বারের জন্য খুশবুর দিকে তাকালো না পর্যন্ত । যেকিনা সারা জিবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো কোনো একদিন।
খুশবু খুব ভালো মত বুঝে যায়, এই দুনিয়ায় নির্বাকের কোনো দাম নেই। আজ সে কথা বলতে পারে না বলে এই অন্যায় এর প্রতিবাদ করতে পারবে না।

___ কী গো সুন্দরী,,,, পরানে তো নতুন বিয়া কইরা ফেলছে । তোমার এই রূপ যৌবন ওর চোখে ভাসে নাই। তুমি একখান কাম করো ‌। ওরে ছাইড়া আমারে বিয়া কইরা ফালাও, অনেক সুখে রাখুম।

বলতে বলতে খুশবুর নরম হাত আলতো করে ছোয়া একে দেয় পলাশ। এতে খুশবু রেগে গিয়ে হাতটা হেঁচকা টানে ছাড়িয়ে নিজ গৃহের দিকে অগ্রসর হয়।
ঘরে ঢুকতে যাবে তখনই সুফিয়া বানু গর্জে উঠেন ।
__ঐ মুখ পুরি তুই আইজ থাইকা এই ঘরে থাকবি না। এইডায় পরান আর ওর নতুন বউ সিমলা থাকবে।

শাশুড়ির কথায় মাথা নেড়ে আবার বাইরের দিকে পা বাড়ায়। নতুন বউ মানে খুশবুর সতীনের নাম তাহলে সিমলা!
সুফিয়া বানু একটা অর্ধ ছেড়া নকশি কাঁথা ও বালিশ নিয়ে রান্না ঘরের এক কোনায় বিছানা করে খুশবু কে ওখানেই থাকতে বলে।
মেয়েটা সব কিছু চুপচাপই মেনে নিচ্ছে। কিছু বলার ইচ্ছে থাকলেও তার উপায় কোথায়? বোবা মেয়েটা চোখের জল ফেলে ফেলে না খেয়ে ঘুমিয়ে পরে। পরের দিন আবার শুরু হয় অত্যাচার । এতদিন শুধু এক সুফিয়া বানু ছিলেন। এখন তার সাথে যোগ হয়েছে সিমলা ,পরানের নতুন বউ।
শাশুড়ির সাথে একদম খাপ খেয়ে গেছে মেয়েটার চরিত্র। খুশবু মাঝে মাঝে হাসতো দুজনের কর্মকাণ্ড দেখে।
একদিন হইলো কী, পরান জমির কাজ থেকে এসে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি চাওয়াতে সুফিয়া ও সিমলা কাড়াকাড়ি শুরু করে। কে আগে পানি খাওয়াবে, পরানের মন জয় করবে।
দুজনে সমান তালে কাড়াকাড়ি করেই যাচ্ছে। কেউ কারো থেকে কম নয় , তারা নিজে‌ হার মানতে নারাজ। খুশবু দূরে থেকে সব দেখছিলো আর মিটিমিটি হাসছিলো।
কিন্তু পরানের দিকে তাকাতেই খুশবু্র মনটা খারাপ হয়ে যায়। বেচারা রোদে পুড়ে পানি খাইতে আইছে। অথচ এই অবস্থা শুরু করছে তারা। খুশবু তৎক্ষণাৎ দৌড়ে মাটির থালায় ভরে পানি এগিয়ে দেয় পরানের দিকে।
পরান এক নিঃশ্বাসে পুরো পানি শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। পাশেই ঠাই দাঁড়িয়ে খুশবু পরানের পানি খাওয়ার দৃশ্য দেখছিলো।

পরান খুশবুর দিকে ভুলেও একবার তাকালো না। দ্রুত সেখান থেকে উঠে গিয়ে মা ও ছোট বউ য়ের‌ ঝগড়া থামালো। খুশবু বিষন্ন মন নিয়ে আবারো ঢাল- খড়ি কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।

__ ” ঔ হারাম জা* দি তরকারি তে এত লবন দিছোহ ক্যান ।
একটুকরো টেংরা মাছের ঝোল মুখে নিতেই পরান গর্জে উঠে খুশবুর দিকে।
কিন্তু সেদিন খুশবু রান্না করেই নি। পরানরে খুশি করার জন্য সিমলা রান্না করেছিলো । এমন বিশ্রী খেতে হয়েছে যে কেউ রেগে যাবে।
নিরাপরাধ খুশবু ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে। হাতের ইশারায় সিমলা কে দেখিয়ে দিলে সিমলা অস্বীকার করে। সে নাকি এইসব কিছুই জানে না। রান্না ঘরে সে নাকি ঢুকেই নি।
,ঠাসস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো পরান। ফর্সা গালে রক্তিম হয়ে পাঁচটি আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
___ হারামজাদি দোষ করিস আবার মিথ্যা কথা কইস।
খুশবু চোখের জলে বুক ভাসিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে ঘরে চলে যায়।
ঘর বলতে সেই রান্না ঘরটাই এখন খুশবুর শোবার ঘর হয়েছে। খুশবু ছেড়া নকশি কাঁথায় মুখ চেপে অনেকক্ষন কান্না করে। খিদে থাকা সত্ত্বেও না খেয়েই ঘুমিয়ে পরে।
রাত তখন গভীর হয়েছে। এতটাই খিদে পেয়েছে যে আর ঘুম হচ্ছে না খুশবুর। পাতিল গুলো থেকে ভাত তরকারি বেড়ে শাশুড়ি নিজের রুমে নিয়ে যায় প্রতিদিন। তাই পাতিল গুলো দেখে লাভ নেই। শাশুড়িকে এতরাতে ডাকলে যদি রেগে যায়। কিন্তু এতটাই খিদে পেয়েছে যে আর সহ্য করার মতো নয়।
ঘর থেকে পা টিপে টিপে শাশুড়ির ঘরের সামনে আসে। দরজা টুকা দিতেও ভয় পাচ্ছে সে।
কিন্তু সব ভয় কে জয় করতেই হবে। দুটো টুকা দেবার সাথে সাথে দরজা খুলে ঘুম ঘুম চোখে বাইরে আসে সফিজ মিয়া।
ছেলের বউকে এতরাতে নিজের ঘরের দরজায় পেয়ে দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় আসে ভন্ড সফিজের।
সুফিয়া বানু নাক টেনে ঘুমাচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায় ভন্ড সফিজ।
হাতের ইশারায় বুঝায় তার খিদে লাগছে কিছু খেতে দিন।
খুশবুর ভাব ভঙ্গি দেখে কয়েকখানি রুটি ওর হাতে দেয় সফিজ।‌ তারপর খুশবুর পিছন পিছন রান্না ঘরে ঢুকে পরে।
দরজা আটকে খুশবুর সামনে লালসার ছাপ নিয়ে বসে পড়ে। খুশবু বাইরে চলে আসছিলো। কিন্তু হেচকা টানে বিছানায় ফেলে দেয় সফিজ।
নিজের বরের বাবার এমন আচরনে খুব্দ হয় সে। রান্না ঘরের বটি দা টা বেশি দূরেও ছিলো না।
বটি হাতে নিয়ে একপাশে সরে দাঁড়ায় খুশবু। সফিজ কাছে আসতেই বাতাসের গতিতে দা চালাচ্ছে সে। সফিজ ভয় পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। খুশবু ঘর বন্ধ করে ধপ করে বসে পরে বিছানায়।

চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে তার।
সকাল হতেই আবার ফরমান পালন করছে সে। দুপুর বেলায় পুকুরে গোসল দিতে গেছে। সাথে কয়েক জোড়া কাপড় চোপড়। বেশিরভাগই সিমলার। কাপড় ধুয়ে তারপর গোসল করতে হবে তার।

পুকুরে নামতেই হঠাৎ পরানের চাচাতো ভাই পলাশ খুশবুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পানিতে ডুব দেয় । নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করেও পারছে না। কান্না করছে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না।
হঠাৎ পরান পুকুর পাড়ে আসতেই দেখে পলাশ ও খুশবু খুবই আপত্তিকর অবস্থায় রয়েছে।
দৃশ্য দেখে পরানের শিরায় শিরায় রক্ত টগবগ করে উঠে। দৌড়ে গিয়ে খুশবুর মাথার চুল ধরে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে আসে।

গরুর গলা হতে রশি খুলে খুশবুকে বেঁধে ফেলে। নিষ্পাপ মেয়েটার আর্তনাদে পুরো বাড়িটা আহাকার নেমে এসেছে। পলাশ তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে পালিয়ে গেছে।
ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেতের লাঠি দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে নির্দয় পরান ।

এক সময় ক্ষ্যন্ত হলে খুশবু কে সেই অবস্থায় রেখে সিমলা কে নিয়ে ঘরে চলে আসে।
খুশবু সারা রাত বাঁধা অবস্থায় ছিলো। মশার একেকটা কামর নিয়ে পানি পিপাসু হয়ে ।‌ চোখের জল প্রায় ফুড়িয়ে এসেছে তার। হয়তো আর কিছুদিন কাদলেই পানির পরিবর্তে রক্ত বের হবে।

__ খুশবু আমি তোমায় নিকা করমু। তুমি যদি রাজি থাকো।
অচেনা কন্ঠে এমন কথা শুনে ঘুমন্ত খুশবু জেগে উঠে। সামনে তাকিয়ে দেখে ___

___

চলবে ____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে