#খুশনূর
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
০৪
আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠে বসলো শুদ্ধ ।গায়ের চাদর সরিয়ে ডান পাশে তাকাতেই চোখ মুখ কুচকে ফেললো। চেচিয়ে ডাকলো,,
—-” রিয়াজ এই রিয়াজ?”
দরজা ঠেলে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে নতজানু হয়ে বলল রিয়াজ,,
—“জি স্যার?”
—” এ মেয়েটি এখানে কি করছে?”
কাচুমাচু হয়ে বলল রিয়াজ,,
—” স্যার আমি তাকে চলে যেতে বলেছি কিন্তু সে যায়নি।”
শুদ্ধ ভ্রু কুচকে ফেললো। এত চিল্লা, পাল্লার মাঝে বেহায়া মেয়ে কিভাবে ঘুমিয়ে আছে? নাকি অভিনয় করছে ঘুমের?
শুদ্ধ উঠে দাঁড়ালো। ডিভানের পাশে গিয়ে এক ধাক্কা দিয়ে মেয়েটিকে ফেলে দিল। মেয়েটি ব্যথায় ” আহ্” করে উঠতেই বাঁকা হাসে শুদ্ধ।
মেয়েটি অবাক হয়ে বলে,,
—” আর ইউ মেড শুদ্ধ? তুমি আমাকে ফেললে কেন?”
—” তুমি তারই যোগ্য আফরোজা। ”
—” শুদ্ধ?” চেঁচিয়ে উঠে আফরোজা। ”
অপমানে ধপ ধপ করে জ্বলছে সে। শুদ্ধ ভাবলেশহীন। আফরোজা বলল,,
—” কাল থেকে তুমি আমাকে ইগনোর করছে? কেনো?”
শুদ্ধ কাঠ কাঠ জবাব,,
—“সেকেন্ড হ্যান্ড যে কোনো জিনিসের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
চলে গেল ওয়াশরুমে। আফরোজা বিস্ময়ে আকাশ ছুঁয়ে গেছে। লজ্জায়, অপমানে দাঁড়িয়ে থাকতে পাড়লো না।বেড়িয়ে গেলো আফরোজা।
______
আজ খুশনূরের ভার্সিটির প্রথম দিন। অঞ্জলি নিজ দায়িত্বে তাকে এখানে ভর্তি করিয়েছেন। সেদিন অঞ্জলির রুমে যেতেই তার থমথমে মুখ দেখে ভয় পায় খুশনূর। অঞ্জলি কি তার দিকে কোনো বিষয়ে রেগে আছে? ভেবেই শুখনো ঢুক গিললো।
—” দাঁড়িয়ে কেন বসো!”
খুশনূর বসল। মুখ নত করে আছে। অঞ্জলি তার থুতনিতে ধরে উপরে তুলে বলল,,
—” এক মাত্র আল্লাহ ছাড়া, কখনও করো সামনে মাথা নত করবে না।”
খুশনূর মাথা হ্যা সুচক নাড়ালো। অঞ্জলি হেসে ফেললো।
—” ভয় পেয়েছো?”
খুশনূর কিছু বলল না। চেয়ে রইলো অঞ্জলির দিক।অঞ্জলি কোনো ভনিতা ছাড়া বলল,,
—” আমি তোমাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিয়েছি। পরশু থেকে ক্লাস। চলে যাবে।”
অঞ্জলি উঠে যেতে চাইলো। খুশনূর মিনমিন করে বলল,,
—” আমি আর পড়তে চাইনা!”
অঞ্জলি আগের জায়গায় এসে বসলো। খুশনূরের মুখটি পর্যবেক্ষন করলো। মেয়েটি কালো হয়ে গেছে আগে থেকে। শুকনোও হয়েছে অনেক। বড় চুল গুলোতে তেল-পানি দিতে ভুলে গেছে যেন। তিনি খুশনূরের কঁপালে পরে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো আদুরে হাতে পিছনে গুঁজে দিলো। বলল,,
—” প্রতিটি মেয়ের জীবন পড়াশোনা অমূল্য রত্নের মত। মেয়েদের ভাগ্য হয় বাপের বাড়ি, নয়তো স্বামীর বাড়ির দোরগোড়ায় ঠেকে। ভাত কাপড়ের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় তাদের মুখে। কারণ আমাদের খুঁটি দূর্বল। খুঁটি মজবুত করতে পড়াশোনা অনেক প্রয়োজন। ”
খুশনূর চুপ করে শুনলো। তারপর বলল,,
—” আমি পড়ব৷ ”
অঞ্জলি খুশি হয়ে চুমু এঁকে দিলেন খুশনূরের কঁপালে। ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে খুশনূর। ভার্সিটিতে ঢুকে প্রিন্সিপালের রুমের কাছে আসতেই খুশনূরের পা থমকে যায়। খুশনূরের দিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে সেই রাতে ছেলেটি। খুশনূর অস্বস্তিতে পড়ে গেল। সেদিন তাকে বাঁচিয়ে ছিল ছেলেটি অথচ সে তাকে থাপড় মেরে দিয়েছিলো। যদিও পরে রিয়েলাইজ করেছে সে ভুল ছিল। সে তাকাতে পাড়লো না আর অফিসে ঢুকে গেলো।
——–
ক্লাসে ঢুকতেই এক চিরচেনা মুখ দেখে কান্না পেল খুশনূরের। দৌড়ে এসে ঝুমা ঝাপটে ধরে খুশনূরকে।
—” কোথায় হারিয়ে গেছিলি?”
—” নিজেরের অস্তিত্ব খুঁজতে বের হয়ে ছিলাম!”
ঝুমা অদ্ভুত ভাবে তাকালো। গলা খাদে নামিয়ে বলল,,
—” তোর বাবার খবর জানিস?”
খুশনূর চকিতে তাকালো।
—” না কিছু হয়েছে?”
ঝুমা খুশনূরকে ধরে ব্রাঞ্চে বসালো। তার সামনে হাটু গেরে বললো,,
—” উনি আর নেই!”
খুশনূর আকাশ থেকে পড়লো। তার বাবা নেই ভেবেই মনের অজান্তে চোখের জল গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু তাকে শান্ত দেখালো। ঝুমা অবাক হলো খুশনূরের ভাবমূর্তি দেখে। একটি মেয়ে তার বাবার এমন খবর শোনার পর এতো শক্ত কিভাবে? ঝুমার ভাবার মাঝেই উঠে দাঁড়ালো খুশনূর। বলল,,
—-” আমার অফিস আছে। কাল থেকে ক্লাস করবো। আসি!”
চলে গেলো সে। ঝুমা পিছন থেকে চেয়ে দেখতে লাগলো খুশনূরকে। যে মেয়েটির কোমল হৃদয়ের ছিল, সে যেন পাথর হয়ে গেছে।
———
খুশনূর তার রুমে বসে আছে। হাতে তার ছোট একটি অ্যালবাম। সেখানে কত শত স্মৃতি তার বাবা-মায়ের। খুশনূর বাহিরে তাকিয়ে আছে। গাছের উপর একটি পাখির বাসা। কি সুন্দর করে বেঁধেছে পাখিটি। তার ঘরে ছোট ছোট কিন, চারটে ডিম। সেই ঘরের উপর দিয়েই উড়াউড়ি করছে দুটো পাখি। হয়তো বাবা-মা তারা৷ সন্তানের আগমনের জন্য তার মন আকুলতায় ভরপুর।
ডিম ফেটে বাচ্চা বের হলো। তাদের চি চি করে শব্দ কানে আসচ্ছে। পাখি দুটি এবার শান্ত। সন্তানদের আঁকড়ে বসে আছে।
খুশনূর হাসলো। বিদ্রুপের হাসি। তারোও কত সুন্দর পরিবার ছিল। আর সে এখন কই!
—” কি ভাবো এতো?”
খুশনূর তাকালো। তাদের সাথে একটি নতুন মেয়ে থাকতে এসেছে। যাকে একটুও পছন্দ না খুশনূরের। মেয়েটি আবার বলল,,
—” বাবা-মা কারো চিরদিন বেঁচে থাকে না। আর থাকলেই কি? তারা প্যাড়া দায়ক। তাদের জন্য স্বাধীন ভাবে বাঁচাই যায় না।”
—-” তোমার ধারণা ভুল। বাবা-মা ছাড়া আমরা অসহায়। ”
খুশনূরের কথা অগ্রাহ্য করে তুলি বলল,,
—” তারা কেবল মাথা ব্যথা।”
খুশনূরের রাগ উঠলো। মেয়েটি ভারি বেয়াদব এরে কেন অঞ্জলি এখানে থাকতে দিচ্ছে বুঝতে পারে না।
—-” ওর সাথে কথা বলো না খুশনূর। গলা ছিলা মুরগী একটা।”
ফারিয়ার কথায় হেসে দিলো খুশনূর। ফারিয়াও হাসলো। তাদের দেখে মুখ বাকালো তুলি। হালকা ঝুঁকি ফোন নিতেই দুজনের চোখে পড়লো তুলির দেহে অসংখ্য কামড়ের দাগ। যাকে বলে লাভ বাইট। খুশনূর ফারিয়া দুজনেই শিউরে উঠলো। তুলি বুঝতে পেরে জলধি গায়ে ওড়না টেনে অন্যপাশে চলে গেল রুমের। খুশনূরের মনে প্রশ্ন জাগে সেই মুহূর্তে,,
—” এইটা কেমন স্বাধীনতা? যেখানে নিজের সত্তাকে বিলীন করতে হয়? আদো কি এটি স্বাধীনতা নাকি কোনো রোগ?”
চলবে,