#খুশনূর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
০৩
আজ বড্ড দেড়ি হয়ে গেছে বের হতে হতে হসপিটাল থেকে খুশনূরের। চারপাশে গাড়ি-ঘোড়া দূর থাক, মানুষের ছিঠে ফোঁটাও নেই। নিজের কঁপালে নিজে চাপড়াতে মন চাইছে তার। তখন ডাক্তার নিবেদিতা বলেছিলো,,
—” রাত হয়েছে অনেক। আমি ছেড়ে দিবো নে তোমাকে?”
—” নানা মেডাম আমি যেতে পারবো। তার উপর আপনার উল্টো পথে যাওয়া হবে!”
নিবেদিতা হেসে বলেন,,
—” আমার সমস্যা নেই। তুমি চলো?” তোমাকে নামিয়ে দিবো নে!”
খুশনূর আমতা আমতা করতে লাগলো। এত বড় ডাক্তার তারউপর তার জন্য এত কিছু করেছেন। সেদিন সায়েমের কাজে তিনি নিজে কমপ্লেন করেছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। তাকে বরখাস্ত করে তারপর স্থীর হয়েছেন। তার পর থেকে তিনি প্রায়ই খুশনূরকে বাসায় ড্রপ করে যান। এত কিছুর পর খুশনূর তার কাছে বড্ড ঋনি। তাই আর সাহায্য নিতে চাইছে না । খুশনূর আশ্বস্ত করে বলল,,
—” মেডাম সমস্যা নেই যেতে পাড়বো। ”
মেডাম ছোট শ্বাস ফেলে বলে,,
—” ওকে তাহলে আমি বের হই। ”
—“আচ্ছা!”
ডাক্তার নিবেদিতা যাওয়ার পর সব গুছিয়ে বের হতে হতেই রাত বেশি হয়ে গেলো। খুশনূর এবার হাটা ধরলো। ঢাকা শহরের চারপাশের লাল নীল হলুদ সবুজ বাতি জ্বলছে আর নিভছে। খুশনূর তা দেখে দেখেই চলছে। তার কাছে মনে হচ্ছে রঙ্গিন শহর মানে ঢাকা শহর। ছোট বেলায় মা বলতেন,,
—” ঢাকায় টাকা উড়ে!”
ছোট খুশনূর তখন ফিক করে হেসে বলতো,,
—” আম্মু তাহলে ঢাকা থেকে বস্তা ভরে ভরে টাকা আনবো আমি। তারপর তুমি আর আমি চকলেট খাবো। হে হে হে।”
খুশনূরের বুলিতে হাসি পেয়েছিল, মুশকানের। তিনি মেয়ের গালে চুমু এঁকে আহ্লাদের সুরে বলেন,,
—” আচ্ছা আমার আম্মু টা!”
বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। আজ সে ঢাকায়। কিন্তু টাকা উড়তে দেখেনি। টাকা কামাতে হয়। কঠোর পরিশ্রম করে সে পায় ৭/৮ হাজারের মতোন। যা দিয়ে টেনেটুনে চলতে হয় পুরোটা মাস। ছোট বেলার বোকা বোকা কথা ভেবেই হাসতে লাগলো আনমনে।
—” ওই তোর কাছে যা যা আছে আমাগো দে? জলধি। নয়তো এইডা দিয়া ফাইড়া দিমু!”
খুশনূর ভয়ে তার ব্যাগ খামচে ধরলো।তার ভাবার মাঝেই কত গুলো ছেলে এসে চাকু, চাপাতি নিয়ে ঘিরে ধরলো খুশনূরকে। ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে এলো তার। জ্বিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দেখে নিলো তাদের। শুকনা, ছিম ছাম দেহের গঠনের তিন থেকে চারজন লোকেদের মুখ ঢাকা। খোলো চোখ গুলো টকটকে লাল। শুকনো ঢুক গিলল খুশনূর।
—-” আ…মার কাছে কিছু নেই?” কাঁপছে যেন কন্ঠ খুশনূরের।
—” ঢং বাদ। ব্যাগ দে, সোনা-দানা কি আছে দে?” ঝাঁঝালো কন্ঠ ব্যক্তিটির।
—” আমি সত্যি বলছি কিছু নেই আমার কাছে! যেতে দিন আমায়!” কান্না করছে খুশনূর।
—” ওই ওর ব্যাগ ছিন!” বলল আরেকজন।
—-” প্লীজ এমন করবেন না? ” আকুতি, মিনতি তার কন্ঠে।
লোক গুলোর কানে পৌঁছালো না। ছো মেরে ব্যাগ নিয়ে নিলো। একজন চেক করে বলল,,
—“ওস্তাদ! শালী ফকিন্নি! ফোন পর্যন্ত নাই!”নাক ছিটকে বলল।
লোকটি বলল,,
—” খুদাই টাইম নষ্ট করলাম। পুরাই লশ। ”
তখনি আরেকজন লোক তাদের ওস্তাদের কানে ফিসফিস করে বলল,,
—” বস লস না? মাইয়াটা খাসা মাল।”
লোকটি খুশনূরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতেই। খুশনূর ঘৃণায় গা ঘিন ঘিন করে উঠলো। মাটি থেকে কোনো রকম ব্যাগ উঠিয়ে এক দৌড় দিলো। মনে মনে আল্লাহর নাম জপতে লাগলো। পিছন থেকে একজন বলে উঠলো,,
—” ধর শালীরে!”
খুশনূর একবার পিছনে তাকলো। লোক গুলো তার খুব কাছে। সে রাস্তার মোড়ে আসতেই একজনের সাথে ধাক্কা খেলো। লোকটিকে দেখে হকচকিয়ে গেল। জনশূন্য মানুষহীন জায়গায় একজন মানুষ পেয়ে আল্লাহকে হাজার শুকরিয়া করলো।
—” আর ইউ ওকে? এভাবে দাঁড়াচ্ছেন কেন?”
খুশনূর হাঁপাচ্ছে। বলল,,
—” পি..ছ..নে ছিনতাইকারী! ”
সামনের ব্যক্তিটি ভ্রু কুচকালো। আলো আঁধারের মাঝে চোখে পড়লো না খুশনূরের। তখনি পিছন থেকে বলল,,
—” এখন কই পালবি?”
খুশনূর ভয়ে ভয়ে সামনে ব্যক্তিটিকে বলল,,
—” প্লীজ হেল্প!”
তখনি পিছন থেকে ওদের দলের ওস্তাদ বলল,,
—” কেডারে তুই! ওরে ছাড়। মালডা আমাগো।”
ব্যক্তিটি হেসে বলল,,
—” কি কও মামা? আমার বউ তোমার মাল কেমনে হয়? ”
খুশনূর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ছেলেটি বলে উঠে,,
—“কতবার বলেছি ঝগড়া করে বের হবা না বাসা থেকে! কিন্তু তুমি? জানো আমি পুলিশকেও খবর দিয়ে দিছি আসেছে এখন! আর কখনো এমন করবে না।”
জড়িয়ে ধরলো খুশনূরকে। খুশনূর থতমত খেয়ে গেল। অপরিচিত এক ছেলে এসে বলছে, খুশনূর তার বউ? হাউ ফানি!
পুলিশের কথায় ভড়কে যায় ছিনতাইকারীর দল।ওস্তাদ বলল,,
—” ঘরের বউ ঘরে লইয়া যাও। ওই চল। ”
এক প্রকার পালিয়ে গেল তারা। তা দেখে ছেলেটি হেসে দিলো। পুলিশের ভয় দেখানো কাজে দিলো। খুশনূরকে ছেড়ে দিতেই। এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেলো। খুশনূর ঠাস করে এক চড় মেরে বসলো। ছেলেটি চোখ-মুখ সাথে সাথে যেন রাগে লাল হয়ে গেল। আজ পর্যনরত তার গায়ে কেউ হাত তুলেনি। সেখানে অপরিচিত একটি মেয়ে মারলো। অথচ সে তাকে কিছুক্ষন আগে বাচাঁলো। রাগ তীর তীর করে মাথায় চড়ে গেল। রেগেই বলল,,
—“আপনি আমাকে মারলেন কেন?” কঠিন কন্ঠ তার।
খুশনূর চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,,
—” আপনারা সব ছেলেরা একই রকম! সুযোগ পেলেই ছুঁতে চান। ছিঃ!” ঘৃণা প্রকাশ পেল খুব।
ছেলেটি চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো। মেয়েটিকে বাচাঁনো উচিত হয়নি। এখনি ছুরে ফেলতে ইচ্ছে করছে সেই লোকেদের কাছে। চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দম করতে চাইলো।
_______________
—” তুমি কিভাবে পাড়লে তুমি? আমার তো “ছিনতাইকারীর” শব্দ শুনতেই ভয় লাগে। তোমার জায়গায় আমি থাকলে তখন মরেই যেতাম।”
খুশনূরকে এলোমেলো ভাবে রুমে ঢুকতে দেখেই ফারিয়া কৌতূহল নিয়ে জিগ্যেস করতেই সব বলে খুশনূর । ফারিয়া খুশনূরের সামনে গোল হয়ে বসে চিন্তিত সুরে বলল,,
—” কিন্তু যে তোমাকে বাঁচালো? তাকে মারলা কেন?”
খুশনূর বইয়ের পাতা উল্টোতে উল্টোতে বলল,,
—” আমাকে স্পর্শ করলো কেন?”
—” তোমাকে বাঁচানোর জন্যই করেছে?”
—” আরো ওয়ে ছিলো বাঁচানোর! তাই বলে জড়িয়ে ধরতে হবে? এসব অজুহাত! একলা মেয়ে পেয়ে ফায়দা উঠালো।”
—” তুমি যা ভাবছো তা নাও হতে পারে! সব সময় আমরা যা বুঝি, দেখি তা ঠিক নাও হতে পারে!”
খুশনূর চুপ রইলো। এ বিষয়ে কথা বলার আগ্রহ আর নেই বুঝতে পারলো ফারিয়া। এখন বোম পাটলেও সে বলবে না। এতদিনে খুশনূরকে চিনেছে এতটুকু। ফারিয়া উঠে চলে গেলো তার বিছানায়। তখনি রুমে ঢুকে অঞ্জলি। চোখ-মুখে গম্ভীরতায় ঢাকা। বলল,,
—” খুশনূর কথা আছে তোমার সাথে! রুমে এসো আমার।”
চলবে,,