#খুশনূর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
০২
বসে থাকতে থাকতে কোমর ধরে গেছে খুশনূরের। আজ যেন রোগীর আসা থামছেই না। লাষ্ট রোগীকে ডাক্তারের কেবিনের ভিতরে ডুকিয়ে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো খুশনূর। আজ ১০ দিন যাবত ডাক্তার নিবেদিতা রায়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত হয়েছে সে।
—” আজ মনে হচ্ছে অনেক ক্লান্ত? ”
পাশের কেবিনের ডাক্তার নিয়াজের অ্যাসিস্ট্যান্ট স্মৃতি হেসে বলল। মেয়েটি হাসি মুখো। সুন্দর ছিম ছাম। এ সেন্টারের প্রথম বন্ধুও খুশনূরের। খুশনূর একটু হেলে বসলো চেয়ারে।
—” হুম। আজ রোগী বেশি-ই ছিল। তোমারও তো কম না?”
—” আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। তুমি নতুন তাই কষ্ট হচ্ছে সয়ে যাবে জলদি। ”
খুশনূর মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। তাদের কথার মাঝেই ডাক্তার আমিরের কেবিন থেকে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট মেঘা জীর্ণশীর্ণ কাপড় ঠিক করতে করতে বের হয়ে আসে। চোরা চোখে এদিক সেদিক তাকায় সে। দেখতে স্মার্ট। মুখে ভারী মেকআপ পড়নের তার টপস আর জিন্স। টপসের উপরের তিনটা বোতাম খোলা। খুশনূর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মেঘার দিক। পাশ থেকে স্মৃতি আবার বলল,,
—” অবাক হবার কিছু নেই খুশনূর। ওর মতে ডাক্তারদের খুশি করলেই গাদ্দি গাদ্দি টাকা পায়ের কাছে!”
—” এসব কি বলো? ওকে দেখে এমনটা মনে হয় না!”
—” দুনিয়াতে সবাই যে ভাল হবে তাতো না? সব ভালোর মাঝে খারাপ থাকবেই!”
খুশনূর তাকিয়ে রইলো মেঘার দিক। তার গা গুলিয়ে এলো। ঘৃণায় শরীর কাঁটা দিচ্ছে তার।নিজের সম্মানের চেয়ে বড় কিছু নেই এ পৃথিবীতে। টাকাতো হাতে ময়লা আসবে আবার চলে যাবে তাই বলে নিজের সম্মানটা বিসর্জন দিবে?
______________
আজ বাসায় ফিরে খুশনূর নিজ ঘরে না গিয়ে তার পাশের রুমে ঢুকলো। ফারিয়া আর খুশনূর ছাড়া এ অট্টালিকায় আর কিছু ছোট ছোট বাচ্চারা থাকে। যাদের পড়াশোনার খরচ অঞ্জলি দেয়। খুশনূর আসার সময় আজ ডাক্তার নিবেদিতা তাকে ডেকে কত গুলো পেট, কলম আর টিস্যুর বক্স দিয়েছে। তাই দিতে রুমে ঢুকলো সে। বাচ্চা গুলো পড়চ্ছে। তারই গুন গুন শব্দ হচ্ছে। খুশনূরকে দেখে পড়া থামালো। খুশনূর সব কিছু ভাগ করে দিতে লাগলো। বাচ্চাদের দেখলে তার ছোট বেলার কথা মনে পড়ে খুব। এদের সাথে সময় কাঁটাতে খুব ভালোই লাগে তার।
—” তোমাদের পছন্দ হয়েছে?”
সবাই এক সাথে বলল,,
—” হে অনেক!”
তাদের মাঝেই নিলি খুশনূরকে জড়িয়ে ধরলো। বয়স তার ১১/১২ হবে। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,,
—” আজ খাতার প্রয়োজন ছিল আপু। স্কুলে খাতা শেষ হয়ে গেছিলো। মেম বকেছে অনেক! ”
খুশনূরের মায়া হলো খুব। নিলির সামনে হাটু গেরে বসে বলল,,
—“কাঁদিস না। পরে থেকে খাতা শেষ হলে আমায় বলবি কেমন?”
—“আচ্ছা!”
খুশনূর এবার রান্না ঘরে এলো। অঞ্জলি বাচ্চাদের জন্য দুধ গরম করছে।
—” কখন এলে?”
—” মাত্রই!”
—” হাতে কি? ”
,—” তোমার জন্য আম্মা?”
অঞ্জলিকে এখন খুশনূর আম্মা বলে। অঞ্জলিকে যখন কেউ আম্মা বলে ডাকে সে যেন সর্গের সুখ পায়। খুশনূর অঞ্জলিকে একটি মিক্সার হাত তুলে দিলো।
—” এখন আর তোমার হাত দিয়ে মশলা বাটতে হবে না।”
অঞ্জলি চোখে জল ছলছল করে উঠলো।
—” এসবে টাকা কেন নষ্ট করলে?”
—” মেডাম দিয়েছে! কাঁদছো কেন আম্মা?”
—” তুই আমার জীবন আসছিস পর থেকে যেন আমার কষ্ট কমছে!”
খুশনূর হাসলো।
_______________
—” আপনি আমাকে কেন বিরক্ত করছেন?”
চেচিয়ে উঠলো খুশনূর। কেবিনের বাহিরে বসে রোগীর নামের লিষ্ট করছিলো খুশনূর।তখনি সায়েম ভিজিটরের জন্য আসে। ডাক্তারের সাথে দেখা করবে বলে। খুশনূর বসতে বলে। সায়েম খুশনূরের সোজা বসলো। এক ধেয়ানে খুশনূরের দিক তাকিয়ে রইলো। কি রূপ তার চোখ ফেরানো দায়। অস্বস্তি লাগছে খুশনূরের। মাঝে দুবার ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলতে আসে। খুশনূর বার কয়েক ইগনোর করে। কিন্তু যখনি ডাক্তার নিবেদিতা এক রোগীর রিপোর্টের কাজে তখনি পিছন থেকে সায়েম হাত ধরে টান দেয়। দাঁত কেলিয়ে বলে,,
—” আপনার নাম্বারটা দিন?”
ঠিক সেই মুহূর্তে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে তার।চেচিঁয়ে উঠাতে সকলেই জমা হয়ে যায়। সায়েম ভরকে যায়।
—” কাজটি ভাল হলো না।”
খুশনূর কাঁপতে লাগে। ভয়ংকর ভাবে। সায়েমের সেই নিকৃষ্ট চাহনিতে বুক পর্যন্ত কাঁপছে। কাজটি সত্যি খারাপ হলো?
চলবে,
(গল্পটি একটু ব্যতিক্রম আশা করি বুঝতে পেরেছেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)