ক্যাকটাস ?
পর্ব ১১
Writer Taniya Sheikh-Tanishq
মেহের বিছানায় উবু হয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। মনটা ভীষণ রকম খারাপ তার৷ কাজে মনোযোগ কিছুতেই বসছে না। তবুও জেদ করে লেগে আছে কাজটার পেছনে। এমনই সে৷ বড্ড জেদি আর একরোখা। এই জেদের কারনেই পরিবার থাকা স্বত্বেও আলাদা ভাড়া থাকে ফ্রেন্ডস শারমিনের সাথে। গত পাঁচ বছর ধরে এভাবেই আছে দুজন। এখন তো নীরাও এসে থাকছে। মেহের তখন অনার্স শেষ বর্ষে। তার পরিবারের প্রধান তার আব্বু মাসুদ আহমেদ। গুরুগম্ভীর এবং রাগী ধাঁচের লোক তার বাবা। তাদের বাসার সবাই তটস্থ থাকত বাবার রাগী মেজাজে কারনে। মেহের যতো বড় হয়েছে ততোই ভয়টা কমেছে। ভয় কমার পেছনে অবশ্য কিছু কারন ছিল। তার বাবার কিছু অনৈতিক ব্যাপার স্যাপার যা সে দেখেছিল, শুনেছিল। এই দেখা শোনাতেই ভয় কমে ঘৃণা জন্ম নেয়। ক্রমশ বাবার কথার বিপরীতে সে চলতে থাকে। তার বাবা যদি বলতো উত্তরে যাও মেহের বাবার কথা উপেক্ষা, অগ্রাহ্য করে দক্ষিণে চলে যেত। বাপ মেয়েতে ধীরে ধীরে মনোমালিন্য শুরু হলো। মাসুদ আহমেদ মেয়ের এমন ঔদ্ধত্যে লাগাম টানতে বিয়ে দিতে উদ্যত হলেন। মেহের সাফ মানা করে দিল। মাসুদ আহমেদ মেয়েকে রাজি করাতে না পেরে চড়ে গেলেন নীরিহ স্ত্রীর উপর। দিনরাত ঝামেলা শুরু করলেন স্ত্রীর সাথে। একবার তো হাতও তুললেন। মেহের কিছুতেই সহ্য করলো না মায়ের অপমান। তীব্র প্রতিবাদ করতে চাইল। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়াল তার মা। মেয়েকে যতোভাবে দূর্বল করার সাধ্য তার ছিল তিনি করলেন। মেহেরের সামনে তার মা দু’টো অপশন রাখলো। হয় সে বিয়েতে রাজি হোক নয়তো তার মা’কে বিষ এনে দিক। মেহের সেদিন সারারাত ঘুমাতে পারে নি। তার নিষ্ঠুর, স্বার্থপর বাবার জয় তাকে যন্ত্রণায় শেষ করে দিল। মায়ের কারনে মেহের অবশেষে হার মানল। রাজি হতে হলো বিয়েতে। তবে বিয়ে নয় আগে হলো এনগেজমেন্ট। ছেলে পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। দীর্ঘকায়, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের শোয়েব ইব্রাহীমের দিকে সেদিন ফিরেও না তাকায় নি মেহের। শোয়েব ইব্রাহীম কিন্তু প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যায় হবু স্ত্রীর। তাদের মধ্যেকার কথাবার্তার সম্পর্ক বেশিদূর যেতে পারে নি শোয়েব ব্যাপার মেহেরের তাচ্ছিল্যের কারনে। তাদের এনগেজমেন্টের একমাস না হতেই মেহের সেই সদ্য গড়ে ওঠা সম্পর্কটা ভেঙে দেয়। তখন শোয়েব না জানলেও মেহের জেনে যায় বিয়েতে যৌতুক আদান প্রদান হবে। তার বাবা মেয়ে বিদায় করতে লোন নেবে মোটা অংকের। মেহের আগাগোড়াই অন্যায়ের বিরুদ্ধে চলে। যেখানে অন্যায় দেখেছে প্রতিবাদ করেছে। বাবা,মায়ের সাথে তর্কাতর্কি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে সে। মাসুদ সাহেব মেয়ের সামনে শর্ত রাখে। হয় সে ফিরে এসে বিয়েতে রাজি হোক। নয়ত তাদের চিরতরে ত্যাগ করুক। আত্মসম্মান ও রাগের বশে সেদিন মেহের দ্বিতীয় অপশন চুজ করেছিল। সবাইকে ছেড়ে এসেছিল। শোয়েব সব শুনতে পেরে ছুটে এসেছিল মেহেরের কাছে, ক্ষমা চেয়েছিল। মেহের নিষ্ঠুরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল তাকে। অনামিকা থেকে আংটি খুলে ছুঁড়ে মেরেছিল শোয়েবের মুখের উপর। শোয়েব টু শব্দটিও করে নি সেদিন৷ মন থেকে যাকে চেনা সম্ভব, অনুভব করা সম্ভব করেছিল মেহেরকে সে। যতোটুকু বোঝার,চেনার চিনেছিল মেহেরকে। তাইতো সেদিন নিরব চলে গিয়েছিল। মেহের ভুলেই গিয়েছিল প্রায় শোয়েবকে। আজ হঠাৎ পাঁচ বছর বাদে কেন দেখা হলো মানুষটার সাথে? মেহেরের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। তার আজকের পরিনতির জন্য সে শোয়েবকেই দায়ী করে। সে জানে না শোয়েব তারই মতো ভুক্তভোগী। সে তো রাগ ঝেড়েছে,সব ছেড়েছে। শোয়েব যে সব বুকে চেপে আজও নিরব। কেন সে নিরব? মেহের নিজেকেই শুধায়।
বিকেলে একটা রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়েছিল উত্তরা। ফিরতি পথে দেখা স্কুল ফ্রেন্ড লামিসার সাথে। লামিসার যাচ্ছিল তার অন্য এক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে। এতোদিন পর মেহেরকে পেয়ে কিছুতেই ছাড়ল না সে৷ জোর করে সাথে নিয়ে এলো। সেখানেই হঠাৎ আবিষ্কার করলো শোয়েবকে মেহের। অদূরে দাঁড়িয়ে তাকেই দেখছিল স্থির দৃষ্টিতে। চেহারায় অনেক পরিবর্তন তার। মেহের শোয়েবকে না দেখার ভান করল। কিন্তু আড়চোখে দেখতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেল ঠিক সে। চোখে চোখ পড়তেই মেহের অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। সে খেয়াল করে তার অপ্রস্তুত হওয়া দেখে এক চিলতে ম্লান হাসি হেঁসে চলে যায় শোয়েব। এরপর সেখানে আর দেখেনি শোয়েবকে সে। খারাপ লেগেছিল। কেন লেগেছিল জানা নেই। সেই খারাপ লাগাটা এখনও রয়ে গেছে। এখনও ঐ চাহনির নানা অর্থ দাঁড় করাতে ব্যস্ত তার মন। দরজায় কলিং বেল বাজতেই উঠে বসল মেহের। বসার ঘরের সামনে দিয়ে হেঁটে দরজা খুলে দিল।
” এক কাপ কফি বানা না দোস্ত? বড্ড মাথাটা ধরেছে।” রুমে ঢুকেই ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে বললো শারমিন।
” ভাল্লাগছে না। নিজে বানিয়ে খা।” মেহের গম্ভীরমুখে চলে এলো রুমে। শারমিন ভ্রুকুটি করে দাঁড়িয়ে রইল সেখানে। মেহের আবার আগের মতো শুয়ে ল্যাপটপ টিপছে আনমনে। চোখে সেই স্থিরদৃষ্টির গম্ভীরমুখী পুরুষের ছবি। তার ঘোর পুনরায় ভাঙলো মোবাইল রিংটোনের আওয়াজে। মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নামটা তার বিষন্ন মনটাকে মুহূর্তে চাঙা করে তুললো। ক্ষণকাল সময় অপব্যয় না করেই চট করে রিসিভ করে কলটা
” হ্যাঁলো ব্যারিষ্টার। চাঁদ আজ কোনদিকে উঠেছে? ”
” মেহের!” মেহেরের বিদ্রুপ বুঝে ভরাট গলায় বললো রাফসান।
মেহের ব্যাগ্রভাবে বললো,
” মেহের কী হুমম? লাষ্ট কবে কল দিয়েছিলে মনে আছে তোমার? ”
” কেন কালই তো কথা হলো আমাদের। ” রাফসান বললো
” ওটা আমার কলে বলেছিলে ওকে? আমি কলের কথা বলেছি মি.কথা বলার কথা বলি নি।”
” ওহ! বোঝয় তো ব্যস্ত থাকি।” রাফসান হাসল
” ব্যস্ত না ছাই। তুমি আসলে আপনই ভাবো না আমাকে।” কপট রাগের আভাস মেহেরের কন্ঠে।রাফসান সেটা বুঝে রাগী ভাব নিয়ে বললো,
” আপন ভাবি না বললে তো? ঠিক আছে বাই। ভেবেছিলাম আগামীকাল তোমার সাথে দেখা করবো। বাট তোমাকে যখন আপনই ভাবি না,তবে দেখা করে কী লাভ তাই না?”
” তুমি ঢাকা আসছ? ও মাই গড! আগে বলো নি কেন?” উচ্ছ্বাস প্রকাশ পায় মেহেরের কন্ঠে।
” বলার চান্স দিলে কবে? তুমি কাওকে কথা বলতে দাও কখনো?”
” স্যরি!”
” রাখো তোমার স্যরি। বাই।”
” এই এই।”
” কী?”
” একদম কল কাট করবে না বলে দিলাম। স্যরি বললাম তো! আসলে মনটা ভালো ছিল না। তাই,,! মেহের থেমে গেল। রাফসান হাসি হাসি মুখে বললো,
” বুঝেছি। তা ম্যাডামের মন খারাপ হওয়ার কারনটা কী জানতে পারি? ছেলেঘটিত কিছু?”
” এই ব্যারিস্টার! বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। আচ্ছা ধরো হলোই ছেলেঘটিত। হিংসে হচ্ছে তাতে?”
” হিংসে! নো ওয়ে। আমি তো খুশিতে ড্যান্স করবো। আফটার অল আমার লেডি জেমস বন্ডের বিয়ে বলে কথা।”
” আমার বিয়ে হলে খুশি হও তুমি?” মেহের উঁচু গলায় বললো
” তো কী অখুশি হওয়ার কথা? ফ্রেন্ডের বিয়েতে খুশি হব না?”
রাফসানের হেঁসে হেঁসে বলা কথাটা মেহেরকে আঘাত করে। রাগে দাঁত চেঁপে চুপ হয়ে যায় মেহের। মোবাইলের ওপাশে মেহেরের সাড়াশব্দ না পেয়ে রাফসান হ্যাঁলো হ্যালো করে। অগত্যা কল কাট করে ফের কল করে রাফসান। মেহের রাগে, অভিমানে গাল ফুলিয়ে কল কাটের শেষ মুহূর্তে রিসিভ করে কালে তোলে মোবাইল। এবারও চুপ সে। রাফসান বেশ অবাক হয় ওর এমন আচরণে। কিছুটা বিব্রত স্বরেই বলে,
” মেহের তুমি বিরক্ত হলে বলো কল কাট করছি।”
” না তেমন কিছু না।”
” আমি কী এমন কিছু বলেছি যার কারনে কষ্ট পেলে তুমি?”
” আরে না!” মেহের অনিচ্ছা পূর্বক হাসল। রাফসান কথা বাড়াতে চাইল না আর। তার ধারণা মেহের আফসেট হয়েছে। কেন হঠাৎ আফসেট হলো কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে সে। মনের ভাবনা একপাশ করে রাফসান স্বাভাবিক গলায় বললো,
” কাল কী দেখা হচ্ছে আমাদের? ”
” অবশ্যই।” মেহের হাসল এবার।
আরো দু’এক কথা বলে কথা শেষ করে দু’জন। মেহেরের মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেল। দু’টো বছর কেটে গেছে তবুও কেন রাফসান তাকে বুঝল না? নাকি বুঝেও সে হেয়ালি করে। মেহেরের মনের অবস্থা কেন তাকে নাড়া দেয় না? কেন সে বন্ধুত্বের সীমার বাইরে তাকে ভাবতে পারল না আজও? মেহের বালিশে মুখ গুঁজে নিরবে অশ্রুবিসর্জন দেয়।
শারমিন অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার তৈরিতে লেগে গেছে। নীরা বাসায় থাকলে তাকে এই ঝামেলা পোহাতে হয় না। আজও নীরা অভার টাইম করছে। যেদিন ক্লাস করে সেদিন জবে ওভার টাইম করা লাগে ওর। আজ ইম্পোর্টেন্ট ক্লাস ছিল বলেই দেরিতে অফিস যেতে হয়েছে। সুতরাং টাইমটাও পূর্ণ করতে হবে ওভার টাইম করে।
শারমিন তরকারি বসিয়ে দু’কাপ কফি হাতে মেহেরের রুমে ঢুকলো। মেহের গোমড়া মুখে ল্যাপটপে খটখট আওয়াজ তুলে কাজ করছে। শারমিনকে রুমে ঢুকতে দেখে ম্লান হাসল সে। শারমিন কফির কাপ এগিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে নিজের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
” মন খারাপ কেন?”
” কই না তো।”
” ঢং করিস না। কী হয়েছে বল?” শারমিন পাশে বসে বললো
” আরে জাস্ট মুড অফ।” মেহের ল্যাপটপে দৃষ্টি অনড় রেখে কফিতে চুমুক দেয়। শারমিন এক চুমুক দিয়ে কফির কাপের কোনায় আঙুল নাড়াচাড়া করে বলে,
” তোর ব্যারিস্টারের কী খবর?”
মেহের এবার মুখ তুলে চায় শারমিনের দিকে। চোখ ছোট করে শারমিনের বাহুতে চড় মেরে বলে,
” তুই শুধরাবি না। শকুনের কান তোর। সব শোনায় লাগবে তাই না?”
” অবশ্যই। ইহা আমার বান্ধবীগত হক। বল কী বললো?”
” কাল আসবে বললো।”
” এখানে?”
” এখানে আসতে তো চায় না। তবে এবার আর ছাড়ছি না বুঝলি? যতো টাকি মাছের মতো ফসকানোর চেষ্টা করুক। টেনে টুনে এবার আনবোই আনবো।”
” দেখিস অঙ্গ প্রতঙ্গ যেন অক্ষত থাকে। তোর বলে ভরসা কম আমার। দেখা গেল টানতে টানতে হাত পা বেচারার নাই হয়ে গেল।”
” কুত্তি!”
মেহের কুশন ছুঁড়ে মারে শারমিনের দিকে। শারমিন তড়িৎ গতিতে দৌড়ে দরজার কাছে চলে আসে। এক চোখ টিপে হাসতে হাসতে বলে,
” বল তো কাল ঘরটা ফুলে ফুলে সাজিয়ে রাখব।”
” শারমিন! তোকে কিন্তু,,?
মেহের লজ্জায় ঠোঁট টিপে হাসে। শারমিন ততোক্ষণে গুনগুন করতে করতে চলে এসেছে রান্নাঘরে। রাত ন’টা কিছুক্ষণ পরই নীরা ফিরলো। বিধ্বস্ত চেহারা। এমনিতেই সে নরম ধাঁচে গড়া। অতিরিক্ত প্রেশার পড়লে তার অবস্থা এমন ঝড়ের কবলে পড়া পথিকের মতো হয়ে যায়। তাছাড়া অতীত ক্ষতের যন্ত্রণা তো আছেই। রুমে ঢুকতেই শারমিন জিজ্ঞেস করে,
” এতো দেরি হলো যে আজ তোর?”
” ম্যানেজার সবাইকে দেরিতে ছেড়েছে। কাস্টমার ছিল তখনও কিছু।” নীরা মৃদু স্বরে বললো
” বকেছে নাকি আজও? মুখটা ওমন মলিন কেন?”
” দুপুরে লাঞ্চ করা হয়নি। কলেজ থেকে বেরিয়ে সোজা কাজে গিয়েছিলাম। মলে ভীর ছিল আজ খুব৷ তারউপর,,,? এতোটুকু বলেই লম্বা শ্বাস নিল নীরা। শরীরের দূর্বলতা গলাতেও জেঁকে বসেছে।
” তারউপর কী?” শারমিন প্রশ্ন করে
” একটা কাস্টমার বাজে ভাবে ডিস্টার্ব করছিল। আমি ম্যানেজারকে বলায় উল্টো ঝারি খেয়েছি। আমার কিছুই ভালো লাগে না। আমার মতো অর্কমাকে দিয়ে কিছুই হবে না রে আপু। সব কিছুতেই ব্যর্থ আমি। কিছুই ঠিকমতো হয় না আমার দ্বারা। যতো সমস্যা আমাকে ঘিরেই হয়।” নীরা করতলে মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকে। শারমিন ধমক দিয়ে বলে,
” এতো অল্পতেই প্যানপ্যানানি কেন তোর নীরু? সবাই কী সব শিখে জন্মায়? ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে তবেই সামনে এগোতে হয়। এই তুই তিনমাস আগেও কী ভেবেছিলি জব করতে পারবি? কিন্তু আজ করছিস তো? দ্যাখ চাকরী পাওয়া এতো সহজ না। ম্যানেজার মেহেরের পরিচিত বলেই জব টা তুই পেলি। নয়ত সামান্য এইচএসসি পাসে চাকরী পাওয়া সহজ না। আমি নিজেও প্রথম ঢাকা এসে এই সেলস গার্লের পেশায় ঢুকেছিলাম। এখন দেখ আমাকে? মাস গেলে ত্রিশ হাজার টাকা, পদোন্নতিও বেড়েছে। তোকেও এমন হতে হবে। যদি অন্য জব পাস তো ভালো। নয়তো এটাতেই অভিজ্ঞতা বাড়াতে থাক। এই জবের মাধ্যমেই আত্মপ্রতিষ্ঠিত করবি তোর সব ক্ষেত্র। বোকা,সহজ সরল, ঘরকুনো হয়ে থাকলে সারাজীবন লাথি উষ্টা ছাড়া আর কিছুই পাবি না কারো কাছে। জীবন তোকে যথেষ্ট শিক্ষা দিয়েছে। তারপরও যদি এমন হতাশ হয়ে পারব না, হবে না আমার দ্বারা এসব বলিস তবে তোর বিষ খাওয়া উচিত। কথা কানে ঢুকছে তোর?”
নীরা বিষন্ন মুখখানা নত করে বসে আছে। শারমিনের সব কথা তীরের মতো তাকে বিদ্ধ করে। তার অসহ্য লাগে সবকিছু মাঝে মাঝে। অন্য সবার মতো চঞ্চল, স্পষ্টভাষী নয় সে। এই জবে টিকতে তাকে কী পরিমান কষ্ট করতে হচ্ছে কেবল সেই জানে। সেলসগার্লের জব সহজ নয় তার জন্য। একটা প্রডাক্ট দেখাতে গেলে যে পরিমান দক্ষতা দেখানো প্রয়োজন তার তা নেই। তবুও ম্যানেজার তাকে জবে বহল রেখেছে শুধু মাত্র মেহেরের কথা রাখতে। ম্যানেজার ভেতরের ক্ষোভটা আজকাল প্রায় ধমক দিয়ে নেয়। নীরা বোঝে ম্যানেজার তাকে বাদ দিতে চেয়েও পারছে না। নীরাও তাকে কাজ দেখিয়ে খুশি করতে পারছে না। আবার জব ছাড়াও তার পক্ষে সম্ভব নয়। শারমিন তাকে কিছুতেই এই জব ছাড়তে দেবে না। কারণ শারমিনের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। বিয়ে হয়ে গেলে নীরার কী গতি হবে? এসব চিন্তায় মাঝে মধ্যে ঘুম হয় না নীরার। জীবনের প্রতি পদে পদে কাটা বিছানো। পায়ের তলা শক্ত না করলে যে চলছেই না আর তার। শারমিন নানাভাবে তার এমন দূর্বল স্বভাবের জন্য তিরস্কার করে যাচ্ছে। নীরা জানে এই তিরস্কার তাকে ছোট করার জন্য নয়। মজবুত করার জন্য এই আঘাত গুলো শারমিন তাকে করে তার দূর্বল মুহূর্তে। নীরা উঠে গোসল খানায় ঢুকলো। চোখের পানি শাওয়ারের পানিতে মিলেমিশে একাকার। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাঁটু মুড়ে বসে রইল শাওয়ারের নিচে সে। নিজেকে তৈরি করতে হবে তাকে। সংগ্রামী জীবন পেয়েছে সে। সংগ্রাম ছাড়া ঠিকে থাকতে পারবে এই পৃথিবীতে।
চলবে,,,