ক্যাকটাস?
পর্ব-১৪
Writer Taniya Sheikh- Tanishq
রাতে ফের আর আসে নি নীরা রাফসানের সামনে। অভুক্ত শুয়ে সারারাত কেঁদেছে ভাগ্যের নির্মমতা ভেবে ভেবে। শারমিন বুঝেও চুপ রইল। সে দেরিতে হলেও বুঝেছে তখন কথাটা ওভাবে বলা অনুচিত হয়েছে।উচিত, অনুচিত জ্ঞান সবসময় ধরে রাখা যায় না। শারমিন আজকাল নিজেই অনুধাবন করছে, সে নীরার সাথে বিরূপ আচরণ করছে হঠাৎ হঠাৎ। এতো ভাবনা চিন্তার প্রেশার নিতে না পারলেই এমন হচ্ছে। নীরার পরিবারে নীরার মা’ই কেবল গোপনে তাকে কল করে। নীরাও সেটা জানে না। বোন’ঝির কাছে তিনি সর্বদা কান্নাকাটি করেন মেয়েকে দেখে রাখার কথা বলে। নীরাকে তার পরিবার মেনে নিতে পারছে না এই মুহূর্তে। নীরার আরও দু’টো বোন আছে, ছোট্ট একটা ভাই আছে। তাদের ভবিষ্যত চিন্তা করেই, নীরার বাবা নিজাম তালুকদার বড় মেয়েকে বাড়িতে তুলতে চাচ্ছে না। এসব কারনেই শারমিন খালার কান্নাকাটিতে মাঝে মাঝে রেগে যায়। দু’তিন কথাও শোনাতে কুন্ঠিত হয় না সে। নীরা নীরার মায়েরই প্রতিরূপ। সব সহ্যের চরম ক্ষমতা এদের মধ্যে বিদ্যমান। শারমিন নিজেকে শান্ত করে। এতো চাপ নিলে শেষে ব্রেন স্ট্রোক করে বসতে পারে। মনে মনে রিলাক্স, রিলাক্স আওড়ায় সে। নীরার দিকে তাকিয়ে লম্বা করে শ্বাস নেয়। লাইটের সুইচ অফ করে শুয়ে পড়ে নীরার পাশে। মনে মনে প্রার্থনা করে একদিন নীরা অনেক স্ট্রং হবে,সকল দুঃখ দুর্দশা উপেক্ষা করে সফল হবে জীবনে। শারমিনের চাওয়া পাওয়াতে পরিণত হবে কীনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দিহান সে। তবুও চাইলো। রাতের গভীরতা বাড়ার সাথে তার চোখে ঘুম নেমে এলো। তলিয়ে গেল ঘুমের দেশে।
নীরার চোখে ঘুম নেই। উন্মীলিত চোখে জানালার বাইরের চাঁদের আলোয় অনুজ্জ্বল আকাশটাকে দেখছে সে। অপলক সিক্ত সে চাহনী।
পাশের রুমে শায়িত রাফসান। ঘুম তারও চোখে নেই। একটা মানুষকে ভালোলাগার অনেক কারন দাঁড় করানো যায়। কিন্তু ভালোবাসা কারন সহজে দাঁড় করানো যায় না। যদি কেউ বলে মেহেরকে তোমার কেন ভালো লাগে? সহজ উত্তর! মেহের আমারই মতো প্রাণখোলা, চটপটে বলে। বন্ধুত্বের সেরা উদাহরণ মেহের। অন্যদিকে যদি কেউ বলে নীরাকে ভালোবাসার কারণ কী? আমি নিরুত্তর হয়ে যায় বহুক্ষণ। ভাবি ভালোবাসতে কী কারণের আদৌ প্রয়োজন? ভালোবাসা তো হৃদয়ে টানে হয়। তাকে আমার হৃদয় উপলব্ধি করেছে,ভেবেছে হাজার বারন স্বত্বেও। এটা সত্যি একদিন তাকে করুনার চোখে দেখা মন আমার আজ কেবলই ভালোবাসার চোখে দেখে। এটা অনুচিত,অন্যায় হয়তো সবার চোখে। মৃত ছোট ভাইয়ের বউকে নিয়ে এসব ভাবাটাও অশোভন। কিন্তু কেউ কী জানে আমার মনের খবর? নিয়ম নীতি সে মানছে না। পৃথিবীর কতো মেয়েকেই এই দু’চোখ অবলোকন করেছে। কই মনে তো তারা বাসা বাঁধে নি। এই নীরাই কেন? কেন অন্য কেউ হলো না? মা’কে বলেছিলাম যাকে আমার মন পছন্দ করবে। বিনাবাক্য তাকে সবটা জানিয়ে আপন করে নেব। কেন পারছি না আপন করতে? কেন এতো বাধার দেয়াল? রাফসান উঠে বসে বিছানার উপর। সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে চলে আসে খোলা ব্যালকনিতে। নিস্তব্ধ শহর শুধু তার মনটাই অস্থির।
আহনাফের মৃত্যুর পর পুরো দু’টো সপ্তাহ তাকে নজরে নজরে রেখেছিলাম। হাসপাতালের বেডে মৃত রমনীর মতো পড়ে থাকতো নীরা।নির্বাক,স্থবির হয়ে পড়েছিল সে। না খেতে পারতো না বসতে।কী তীব্র যন্ত্রণা হতো এ দৃশ্য দেখে!যারা দেখেনি তারা বুঝবে না। তখনও বুঝিনি করুনার চোখে দেখা সেই মানবী আমার কতোটা দখল করে নিয়েছে। নিজের কর্তব্য হয়ে দাঁড়াল সে। আমাকে দেখে যখন নীরা চোখ ফিরিয়ে নিত ভীষণ কষ্ট অনুভব করতাম। ভেবেছিলাম দূরত্বে বুঝি তাকে নিয়ে ভাবনা কমবে। মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। ক্রমশ তাকে নিয়ে আকাশ পাতাল দুঃশ্চিতা হতে লাগলো। আগের চাইতেও বেশি ভাবলাম তাকে নিয়ে। বদলে যাচ্ছিলাম আমি আমারই অগোচরে। যা কিছু ঘটতে লাগলো সবকিছুর মধ্যে তারই ছায়া পড়ল। কী অদ্ভুত ছিল সেসব ভাবনা আমার। ভাবলাম মা’কে বলি। বলি মা! আমি সেই কাঙ্ক্ষিত নারীর সন্ধান পেয়েছি। পেয়েছি তাকে যাকে আমার মন এবং আমিও ভীষনভাবে ভালোবাসতে শুরু করেছি। বলার পূর্বেই জানলাম আমি তাকে যতোটা পছন্দ করি, আমার মা তাকে তারচেয়েও বেশি অপছন্দ করে। আর যাকে আমার মা পছন্দ করেছে সে আমারই প্রিয় বন্ধুটি। বান্ধবী বললাম না কারন তাকে আমি বান্ধবীর নজরে কোনোদিন দেখিনি। বন্ধুই ভেবেছি। আমার কষ্টের সীমা রইল না যখন জানলাম মেহেরও আমাকে ঠিক এমন করেই চায়, যেমন করে আমি নীরাকে চাই।
হার মানলাম। পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিকদের ধিক্কারে আমার উপর বর্ষিত হলো। আমি সফল,বাগ্মী ব্যারিস্টার হলেও সফল প্রেমিক হয়ে উঠতে পারলাম না। এই বেলায় আমার সব কথা গোলমেলে হয়ে যায়।
সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে ভোর হতেই তৈরি হয়ে নেয় চলে যাওয়ার জন্য রাফসান। শারমিনকে কল করে জানাতেই শারমিন দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে আসে। রাফসানের চোখ মুখ দেখে ভ্রুকুটি করলো শারমিন বললো,
” রাতে ঘুমান নি ভাই?”
রাফসান কথাটা শুনে অপ্রস্তুত হাসল। প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললো,
” সকাল সকাল বিরক্ত করলাম তোমাকে। কিছু মনে করো না। আসি তাহলে।”
” নাস্তা করে যেতেন। আমি নীরাকে ডেকে তুলছি।”
” আরে না! না! ওকে ঘুম থেকে তোলার প্রয়োজন নেই। আমার ইমার্জেন্সি কাজ আছে।সো যেতেই হবে এখন। ভালো থেকো।” কথা বলতে বলতে দু’জন দরজার কাছে চলে আসে। রাফসান সতর্কে একবার নীরার রুমের দরজার দিকে তাকায়। একবার দেখতে ইচ্ছা করছে আবার ইচ্ছেটাকে নিষ্ঠুরভাবে দমিয়ে নিচ্ছে সে। শারমিন পাংশু মুখে বললো,
” আবার আসবেন কিন্তু। ভালো করে আপ্যায়ন করতে পারলাম না। রাতে তো খেলেনই না। সকালের নাস্তা টাও খেয়ে গেলেন না।”
” পাগলি তুমি। আমি কী খাওয়ার জন্য আসছি এখানে? যথেষ্ট আপ্যায়ন করেছ। বরং আমার কারনে অযথায় তোমাদের কষ্ট হলো।”
” আরে কী বলেন এগুলা? আপনি আমাদের জন্য কী আর বলতে হবে মুখে? আমার বোনটা আজ স্বনির্ভর সে আপনারই জন্য। ওর ঐসময়ের চিকিৎসার খরচ,পড়ালেখার খরচ আপনিই বহন করেছেন। আপনি পাশে না থাকলে ওকে বাঁচাতে পারতাম না সে সময়। আজ ও যা সব আপনার আর মেহেরের বদৌলতে।”
” শারমিন! কতোবার বলেছি এসব মুখে আনবে না। সবই আল্লাহ বদৌলতে হয়েছে। আমি এবং মেহের মাধ্যম মাত্র। ”
” কেন ভাই? নীরার কী জানার দরকার নেই আপনি কী কী করেছেন ওর জন্য।”
” না প্রয়োজন নেই। আশা করবো এমন কথা নেক্সট টাইম তুমি মুখে আনবে না। আর হ্যাঁ ও বিধবা হোক আর যাহোক কোনোদিন এভাবে বলবে না। ওর স্থানে তুমি আমি নেই শারমিন। আমরা বুঝব না ওর কষ্টটা। যা বুঝব না তা বোঝার ভান করে ওর কষ্ট বাড়িয়ে দেওয়াটা অন্যায়। এমনটা তুমি করবে না আর আশা করি।” রাফসান রাগত স্বরে বলে।
” স্যরি ভাই।” শারমিন বললো
” আচ্ছা আসি। মেহেরের মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। ওর কল আসলে বলো আমি চলে গেছি। আর হ্যাঁ নীরার জন্যে ভালো জবের ব্যবস্থা আমি করে দেব। এসব নিয়ে খামোখা চিন্তা করো না তুমি।”
” জি ভাই।” শারমিনের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেল। স্বস্তি পেল মনে সে। রাফসান তৃষ্ণিত নজরে নেমে এলো নিচে। গাড়িতে বসে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ড্রাইভ করে ছুটে বেরিয়ে এলো রাস্তায়। গাড়ি চলছে ঢাকা হাইকোর্টের উদ্দেশ্যে। জরুরি কাজ আছে সেখানে। সেটা শেষ করে উঠবে হোটেলে। রাতে চেক আউট শেষে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হবে রাফসান। পেছনে রেখে যাবে মূল্যবান সম্পদটাকে।
রাফসান হোটেলে ফিরল বিকেলে। ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো সে। সারাদিন তেমন কিছু খাওয়া হয়নি ওর। শুকনো হয়ে আছে মুখটা। খাওয়ার মাঝেই মায়ের কল আসলো। রাফসান রিসিভ করতেই ওপাশে অস্থির কন্ঠে রাহেলা বললো,
” বাবু তুই কী রওনা দিয়েছিস?”
” না মা। একটু পর রওনা দেব। কেন বলো তো?”
রাহেলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। এ পাশে সে শব্দ স্পষ্ট শুনতে পায় রাফসান। তাতেই বেশ অবাক হয়ে সে। রাহেলা ছেলেকে হাসি হাসি স্বরে বলে,
” ভয় পেলি নাকি?”
” না তবে অবাক হয়েছি।”
” আরে অবাক হওয়ার মতো কিছু নাই। কাল সকালে আমিও ঢাকায় আসছি। জিজ্ঞেস করবি না কিন্তু কেন। বলবো না এখন। অনেক গুরুত্ব পূর্ণ কাজ আছে বুঝলি? সেটা অবশ্য তোর সম্বন্ধেই। সারপ্রাইজ দেব তোকে বুঝলি বাবু? আচ্ছা রাখি।” রাফসান কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই রাহেলা কল কেটে দেয়। মায়ের রহস্যময় হাসি,কথা এবং হঠাৎ ঢাকায় আসার অর্থ কী দাঁড়ায়? রাফসানের দম বন্ধ হয়ে আসছে অজানা আশঙ্কায়। যদিও সে জানে যা ঘটুক মেনে নেওয়া ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। সে তার মায়ের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। তার চেয়েও বড় কথা নীরা তাকে মেনে নেবে না। নীরার চোখের এই টুকু ভাষা তো পড়তে পেরেছে রাফসান। তার মনের কথা প্রকাশে এলোমেলো হয়ে যাবে সবার জীবন। নীরা বহুকষ্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাকে এসবের মুখোমুখি করে অপমানিত,লাঞ্ছিত করতে চায় না রাফসান। বুকের পাশটায় চেপে বসা যন্ত্রণাটাকে কিছুতেই কমাতে পারছে না সে। ব্যর্থ প্রেমিক হওয়ার মতো কষ্ট পৃথিবীতে আর নেই। কেন প্রেমিক হতে গেলাম? কেনোই ঐ প্রহেলিকার মায়ায় মন হারালাম?
গতকালের মতো আজও নীরা কর্মচাঞ্চল্য দেখাচ্ছে। কোনো রকম জড়তা প্রকাশ পাচ্ছে না তার কথা,আচরণে। মিতালি গতকাল থেকে বিষয়টা লক্ষ্য করে জ্বলছে। নীরার সহকর্মী মিতালি। নাম মিতালি হলেও মিল তার কারো সঙ্গেই হয় না। আশেপাশের মানুষকে ছোট করা,হেয় করা তার অন্যতম কাজ। নীরার কাজে ভুল ধরে সে পৈশাচিক আনন্দ পায়। ম্যানেজার নীরাকে পছন্দ করে না তার অন্যতম কারনও হলো এই মিতালি। সহজ,সরল, অদক্ষ নীরাকে কী করে ছোট করতে হয় কিংবা তার মন মানসিকতা কী করে ভাঙতে হয় তা খুব জানে মিতালি। নতুন নতুন সবাই অনভিজ্ঞ থাকে৷ মিতালি নিজেও একসময় ছিল। তবুও অন্যের সমস্যা সে মজা ভেবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। নীরাকেও কম করে নি। ম্যানেজারকে বুঝিয়েছে নীরা এ’কাজে অযোগ্য। মার্কেটিংএ একবিন্দু জ্ঞান তার নেই। আসলেই ছিল না নীরার। এটা ম্যানেজার জেনেই তাকে জব দিয়েছে। ভেবেছিল ধীরে ধীরে শিখে যাবে। নীরা শিখছে, ভুল ত্রুটি সংশোধনের জন্য সিনিয়র ভেবে মিতালির সাহায্য চেয়েছিল একসময়। সাহায্য করা তো দূরের কথা ঝাড়ি আর অবজ্ঞা ছাড়া কিছুই মেলে নি তার কাছে। এসব দেখে আরমান এবং শিলা নীরাকে গোপনে সাবধান করেছে মিতালির বিষয়ে। সেই থেকে নীরা মিতালির থেকে দূরুত্ব বজায়ে চলে। নীরা অন্য সবার মতোই মার্কেটিং বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। এ যেন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে মিতালির। নীরাকে ছোট করার মানসে লোক দেখানো হাসি হেঁসে নীরাকে বলে,
” সবাইকে দিয়ে সবকিছু হয় না বুঝলি তো?”
” চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? আজ না হলে কাল হবে।” নীরা মুখে উপর জবাব দিয়ে দেয়। মনে মনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেও বাহিরে হাসতে হাসতে বলে,
” তাই! কর চেষ্টা। দেখি কতোদূর তোর ভাঙা নৌকা ভাসে। চাপার জোর বাড়ালেই হয় না। আরও কিছু জানতে হয়।” মুখ ভেংচে চলে যায় মিতালি। নীরা ম্লান হাসে মিতালির দিকে চেয়ে। এই টুকু জীবনে কতো কিসিমের মানুষ সে দেখলো। মিতালির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কাজে মনোযোগী হয় নীরা। কাস্টমার সামলাইতে তার দিন কেটে যায়।
ডিউটি শেষে সবাই বাইরের রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। নীরা ব্যাগ থেকে চাদর বের করে গায়ে জড়িয়ে নিল। শীত করছে ওর। পাশে দাঁড়ানো আরমানের গম্ভির মুখ দেখে খারাপ লাগে ওর। আরমানকে গতকালের জন্য অনেক কথা শোনানোর পর থেকে তেমন কথা বলছে না সে নীরার সাথে। আরমানের মলিন মুখটা দেখে নীরার খারাপ লাগলেও মনে মনে চেপে গেল। ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলো নীরা। আগে একা বাসে উঠতে ভয় করত। এখন তেমন করে না। অভ্যাস হয়ে গেছে প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে করতে।
বাসায় এসে নীলা শুনলো মেহের এবং রাফসানের এনগেজমেন্ট ঠিক হয়েছে একটু আগে। কাল সন্ধ্যায় আংটি বদল হবে দু’পরিবারের উপস্থিতিতে। সে’কারনে মেহের আজও আসবে না। বরং ওদের দু’জনকেই কাল যেতে হবে মেহেরের ওখানে। নীরা হিজাবের পিন একটা একটা করে খুলতে খুলতে বললো,
” কাল তো ছুটি নাই আমার।”
” আরে হ্যাঁ! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোর ছুটি রবিবার হয়। এখন কী হবে তাহলে? ছুটি নিতে পারবি না একদিন?”
” না আপু পারব না। আমি না গেলেই বোধহয় ভালো হবে।”
” এটা কী বলিস? মেহের কতো কষ্ট পাবে তোকে না দেখলে।”
” তুমি বুঝছ না আপু। সেখানে রাফসান ভাইয়ের মা থাকবে সাথে উনাদের আরও আত্মীয় স্বজন,,,! ” নীরা মুখ নামিয়ে হাতের হিজাবটা মোচরায়। শারমিন নীরার কথাটা নিয়ে ভাবলো। চিন্তিত হয়ে বললো,
” ঠিক বলেছিস। আমারই ভুল হয়েছে রে। ভুলেই গেছিলাম ওদের এনগেজমেন্টের খুশিতে। আচ্ছা তাহলে তোর যাওয়ার দরকার নেই। মেহেরকে আমি বুঝিয়ে বলবো।
” হুমম।”
” মন খারাপ করেছিস?”
” না!” নীরা মৃদু হাসল।
” যা ফ্রেশ হয়ে নে। খাবার গরম করছি একসাথে খাব দু’জন। ”
” আচ্ছা! ”
শারমিন উঠে রান্না ঘরে চলে যায়। নীরা কাপড় হাতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। কাপড় পাল্টে খাবার খেতে বসে দু’বোন। অনেক কথায় হয় দু’জনের। নীরার কাজের কথা, শারমিনের হবু বরের কথা। তবে সবচেয়ে বেশি শারমিন বলে মেহের আর রাফসান সম্পর্কে। তার কথায় নীরা টের পায় রাফসান এবং মেহেরের পূর্ব রিলেশন ছিল। শারমিনকে বেশ উৎফুল্ল মনে হলো ওদের এক হওয়ায়। নীরার উৎফুল্ল, হতাশা কিছুই নেই। সবাই খুশি হোক,ভালো থাকুক এই দোয়ায় সে করবে। তার জীবনে যা হয়েছে অন্য কারো জীবনে যেন তার ছিটেফোটাও না পড়ুক। খাওয়া শেষে শারমিন মেহেরকে কল করে। বান্ধবীদের মধ্যে বেশ হাস্যকৌতুক শুনতে পেল রান্নাঘর থেকে নীরা। সেও মাঝে মাঝে মৃদু হাসছে সেসব শুনে। পরের সুখে সুখী হয়েও একধরণের আনন্দ উপলব্ধি করা যায়। সবাই তা বোঝে না।
মেহেরের মনে হচ্ছে সে কৈশোরে পা দেওয়া এক তরুনী। মনের মানুষ পাওয়ার আনন্দে তার মন সমুদ্র উত্তাল আজ। অযথায় হাসছে, বকবক করছে। মেহেরকে এতোটা উদ্বেলিত হতে আগে কখনো কেউ দেখি নি। পরিবারের লোকের কাছে যথেষ্ট বদমেজাজি ছিল সে। আজ যেন সম্পূর্ণ নতুন এক মেহেরকে দেখছে সবাই। মাসুদ সাহেব মেয়েকে পাশ বসিয়ে বললেন,
” তুই সত্যিই খুশি হয়েছিস মেহু?”
” আব্বু!” মেহের লজ্জা মুখ নুয়ে ফেলে। মাসুদ সাহেব হাসেন মেয়ের দিকে তাকিয়ে। মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলে,
” অনেক অন্যায় করেছি জীবনে। শাস্তিও পেয়েছি তবে তার তুলনায় কম। ভেবেছিলাম তুই বুঝি আমাকে কোনোদিন আর আব্বু বলে ডাকবি না?” মাসুদ সাহেবের কন্ঠস্বর বিগলিত হয়। মেহের বাবার মাথায় হাত রেখে ধমকের সুরে বলে,
” আব্বু তুমি আবার এসব শুরু করলে? ডাক্তার বলেছে টেনশন না করতে।”
মাসুদ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে বলে,
” রাগ না করলে একটা কথা বলি মেহু?”
” বলো?”
” রাগ করবি না বল?”
” করবো না বলো।” মেহের হাসে
” শোয়েব কিন্তু খারাপ ছেলে না রে মা। আমার মতো তো একদমই না। যৌতুকের বিষয়টা তুই যেমন জানতি না ও নিজেও জানত না। আমাদের দোষে ছেলেটা শাস্তি পেল। ওর বাবা সেদিন হাতে ধরে ক্ষমা চেয়ে গেছে। তার ছেলেটা তার সাথে কথা বলে না। একেবারে নাকি বিদেশ চলে যাবে আগামী মাসে শোয়েব। তুই ভাবিস না তোকে শোয়েবকে বিয়ে করতে বলছি আমি। শুধু চাচ্ছি ওর সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখিস না মনে।” মাসুদ সাহেব মেয়ের গম্ভীর হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে চেয়ে আছেন। তিনি কথাটা বলে ঠিক করলেন না ভুল ঠাহর করতে পারছেন না এই মুহূর্তে। তার মন বলছিল কথাটা মেহেরকে না বললেই নয়। ঝোঁকের বসে তাই বলেই ফেলেছেন। মাসুদ সাহেব আবার বললেন,
” রাগ করলি মা?”
” না আব্বু!” মেহের একচিলতে হাসল। পাঁচটা বছর ধরে যেই দোষী মানবমূর্তিকে সে মনে গড়েছে। তা এক মুহূর্তে ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল? সে দোষী নয়! দোষ তবে কার? মেহেরের?
” না! না! সব তারই দোষ। সে দোষী আমি নই!” মেহেরের মন বিদ্রোহ করলো নিজেকে দোষী মানতে। শোয়েব তারই দেওয়া শাস্তি বিনা অপরাধে বয়ে চলেছে। এ’কথা মেহের কিছুতেই মানতে পারছে না। অজানা এক কষ্ট এসে চেপে ধরেছে তার ভেতরটা।
” কেন বললে আব্বু? কেন শোয়েবের অপরাধী মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলে?” মেহের স্থির দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ রেখেছে। মাসুদ সাহেব মেহের মানসিক অবস্থা আন্দাজ করে চুপ করে রইলেন। বাবা মেয়ে চুপচাপ হাসপাতালের কেবিনে বসে আশে পাশাপাশি।
তাদের নিরবতা ভঙ্গ হলো মেহেরের মোবাইলের রিংটোনে। গতকালকের ঘটনার পর মেহের মোবাইল সাইলেন্ট মুডে রাখে না । স্থির চোখে দেখে নিল মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠা ব্যারিস্টার শব্দটা। বাবার পাশ ছেড়ে মেহের উঠে বাইরে বেরিয়ে এলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে রিসিভ করলো কল। দু’পাশে দু’জনই চুপ। একজন লজ্জায়, অন্যজন সঙ্কোচে। মেহেরই প্রথম কথা বললো মৌনতা ভেঙে।
সলজ্জিত কন্ঠে বললো,
” বোবা হয়ে গেলে যে?”
” মেহের তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিল। আসতে পারবে এখানে?” রসহীন কন্ঠে বললো রাফসান।
” এখনই?” মেহের জিজ্ঞেস করে
” হ্যাঁ! ”
” ঠিক আছে আসছি।” রাফসান কথা বাড়াল না। কল কেটে দিল সাথে সাথে। মেহের মোবাইলে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে ভাবছে,
” জনাবের এতো তাড়াহুড়োর কারণ কী হুমম?” মেহের হাসল। বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো রাফসানের অবস্থানরত হোটেলে। নিরিবিলি একটা পরিবেশ। রাফসান হোটেলের পাশের খোলা জায়গাটার ছাউনির নিচে বসা ছিল। আশেপাশে তেমন কেউ নেই এসময়। হোটেলটা ভিআইপি বলা চলে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মেহের এসে বসতেই রাফসান একপলক দেখি নিল তাকে। উজ্জ্বল মুখচ্ছবিখানি একটু পরই হয়তো কালো মেঘে ঢেকে মলিন হয়ে যাবে। তাই বলে তো তাকে রাফসান ধোঁকা দিতে পারবে না। সত্যিটা জানা মেহেরের দরকার৷ অনেক বেশিই দরকার৷ রাফসান নাক টেনে নিঃশ্বাস নিল। মেহের আজই প্রথম খুব বেশি লজ্জা পাচ্ছে রাফসানের মুখোমুখি বসে। আড়চোখে দু’একবার তাকিয়ে বুঝতে চাইল রাফসানের হাবভাব। তার বোঝার আগেই রাফসান মৃদু শব্দে গলা ঝেড়ে বললো,
” তোমাকে আজ একটা কথা বলতে চাই আমি মেহের। জানি না কথাটা শুনে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে আমার প্রতি। নিজের সাথে অনেক লড়াই করে এখানে এসেছি আমি মেহের। শুধু তোমাকে কথাটা বলবো বলে। জানি না এর পর কী হবে? তবুও বলব। কেন বলব জানো?”
মেহের মাথা নাড়ায় ভ্রুকুটি করে। রাফসানের কন্ঠস্বরে সে এমন কিছুর সংকেত পাচ্ছে যা সে মানতে পারবে না। মেহেরের বুক ধড়ফড় করছে। দু’চোখের পাতা কাঁপছে। রাফসান তার চোখে চোখ রেখেই বললো,
” আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটিকে ধোঁকা দিতে চাই না বলে। মেহের আমি অন্য কাওকে ভালোবাসি। সেই অন্য কেউ তুমি নও।”
মেহেরের কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল। ক্রমাগত ঢোক গিলছে সে। বিস্ফোরিত চোখদুটোর কোনা দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। বাকরুদ্ধ মেহের বসে আছে হাত মুঠ করে । মাটির উপর বসে আছে তবুও মনে হচ্ছে ভাসছে সে, মহাশূন্যে ভাসছে। রাফসান চোখ সরিয়ে নিল। তার কন্ঠস্বর কাঁপছে। রাফসান আবার বললো,
” তুমি যদি চাও আমি তোমাকে,,,!” মেহের হাত উঁচু করে রাফসানকে থামিয়ে দেয়। কান্না গলা অব্দি চলে এসে মেহেরের। সেটা ঠেলে গলা উঁচু করে কঠিন স্বরে বলে,
” আমাকে আগে বলো নি কেন?”
” প্রয়োজন কী ছিল আগে বলার?”
মেহের বিদ্যুত গতিতে ছুটে গিয়ে কলার চেপে ধরে রাফসানের। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
” ছিল না প্রয়োজন? বলো ছিল না? তুমি জানতে না আমি তোমাকে পছন্দ করি, ভালোবাসি?”
” তুমি কী জানতে না আমি তোমাকে বন্ধু ছাড়া ভিন্ন কিছুই ভাবিনি?” রাফসান অন্যদিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বললো
” কেন ভাবো নি বলো? কেন ভাবো নি ভিন্ন কিছু?”
মেহের এলোপাথাড়ি রাফসানের বুকে কিল চড় দিতে দিতে হাঁটু ভর করে বসে পড়ে নিচে। করতলে মুখ ঢেকে কাঁদছে মেহের। এক নিমিষে সব কিছু শেষ হয়ে গেল তার। রাফসান অশ্রুটলমল চোখে স্থির তাকিয়ে ভরাট স্বরে বলে,
” আ’ম স্যরি মেহের। আমি চাইনি তুমি ধোকার মধ্যে সুখ খোঁজো। আমার অবস্থানটা যদি আমি বোঝাতে পারতাম তোমাকে?”
” স্টপ ইট রাফসান। জাস্ট স্টপ ইট। আমার সামনে থেকে চলে যাও তুমি। যাও বলছি।”
” মেহের!”
” যাও,,,! মেহের নত মুখ চিৎকার করে ওঠে।
রাফসান প্রস্থান করতেই শব্দ করে কেঁদে ওঠে দু’হাটুতে কপাল ঠেকিয়ে মেহের।সত্যি তো বলেছে রাফসান। সে তো জানত রাফসান তাকে ভালোবাসে না। কিন্তু কাকে ভালোবাসে রাফসান? কে সে যে মেহেরের চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে উঠল হঠাৎ রাফসানের? মেহের দাঁত কামড়ে কাঁদছে।
” বিনা দোষে ভালোবাসার মানুষটির কাছে প্রত্যাখ্যাত হলে খুব কষ্ট লাগে তাই না মেহের?”
মেহের চমকে মুখ তোলে। কান্নাসিক্ত স্বরে বলে
” শোয়েব আপনি?” শোয়েব মৃদু হেঁসে এক হাত বাড়িয়ে দেয় মেহেরের দিকে। মেহের সেদিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসে ওঠে। শোয়েবের হাত অগ্রাহ্য করে উঠে দাঁড়ায়। চড়া গলায় বলে,
” শান্তি পেয়েছেন আমাকে এই অবস্থায় দেখে? খুশি হয়েছেন খুব তাই তো? আপনার জ্ঞাতার্থে বলি আমি আপনাকে বিনা দোষে শাস্তি দেই নি।”
” প্রথম কথা শান্তি আমি পায় নি তোমাকে কাঁদতে দেখে। দ্বিতীয় কথা, তোমারও বোঝা উচিত রাফসানও বিনা দোষে শাস্তি তোমাকে দেয় নি।”
” আপনি রাফসানের সাথে আমাকে তুলনা করছেন? আপনি কী জানেন? কিছুই জানেন না। ওকে তো আমি ছাড়বো না। কাকে ভালোবাসে আমিও দেখে নেব। খুন করে ফেলবো তাকে আমি।”
শোয়েব ঘুরে দাঁড়ায়। সামনে হাঁটতেই মেহের রেগে বলে,
” কী হলো যাচ্ছেন কোথায়? মজা দেখা শেষ আপনার শোয়েব ইব্রাহীম? ”
শোয়েব তড়িৎ বেগে ছুটে এসে মেহেরের বাহুদুখানি ধরে একদম নিজের মুখোমুখি নিয়ে আসে। চোয়াল শক্ত করে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে বলে,
” কতোবার বলবো তোমাকে এই অবস্থায় দেখে আনন্দিত নই আমি। সব জানি আমি তোমার বিষয়ে। তুমি রাফসানের ভালোবাসাকে মারতে চাচ্ছ। তাহলে আমারও তো উচিত রাফসানকে মেরে ফেলা তাই না? পাঁচ টা বছর মেহের। পাঁচটা বছর তোমার প্রত্যাখ্যানের আগুনে জ্বলছি আমি। বিনা দোষে শাস্তি দিয়েছ আমাকে তুমি। একটি অনুযোগও করি নি আমি। আমি চেয়েছি তুমি ভালো থাকো। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ভুল করেছিলাম সেদিন৷ তোমার মতো ভাবা উচিত ছিল আমার। আমার ভালোবাসাকে যে কেড়ে নিল তাকে মারবো না ভাবছো? তোমাকে কষ্ট দিয়েছে ও। ওকে তো শাস্তি পেতেই হবে।”
শোয়েব মেহেরকে ছেড়ে সামনে এগোতে থাকে। মেহের হাফাচ্ছে। শোয়েবকে এমন রূপে কোনোদিন দেখবে কল্পনাও করেনি সে। যে এতোকাল চুপ ছিল আজ কেন এলো? কেন বুঝিয়ে দিল মেহের দোষী। শোয়েবের সকল ব্যথার কাছে তার ব্যথা ক্ষুদ্র মনে হলো। শোয়েবকে হোটেলের দিকে যেতে দেখে ছুটে যায় মেহের। হাত টেনে ধরে নত মুখে ফুঁপিয়ে কাঁদে। বলে,
” আ’ম স্যরি শোয়েব। প্লীজ ক্ষমা করে দিন আমাকে। আমার ভুল হয়েছে। আপনি আমাকে শাস্তি দিন। মেরে ফেলুন৷”
শোয়েব দু’হাতে মেহেরের চোখের জল মুছে দিয়ে বলে,
” আমি তোমার কোনো ক্ষতি চাইনা মেহের। ভালোবেসেছি আমি তোমাকে। সারাজীবন এভাবেই বেসে যাবো। আমি যা পাই নি তোমাকেও তা পেতে দেব না এমন ভাবনা আমার নেই। তুমি সুখী হও সেটাই মনেপ্রাণে চাই আমি। রাফসানকে বোঝাব আমি৷ চলো আমার সাথে।” শোয়েব মেহেরের হাতটা নিজের হাতে নেয়। মেহের বিস্ময়ে দেখছে শোয়েবকে। এতোটাও উদার কেউ হয়? পরক্ষনেই তীব্র রাগ হলো ওর। এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে কড়া স্বরে বললো,
” ভালোবাসেন না ছাই। ভালোই যদি বাসতেন তবে এভাবে টেনে ধরে অন্যের সাথে মেলাতে নিয়ে যেতেন না। এতোকাল চুপ থেকে এখন কেন এসেছেন? কাওয়ার্ড একটা।” মেহের চোখ মুছে রাগ গজগজ করতে করতে গেটের দিকে হাঁটতে থাকে। শোয়েব মুচকি হাসে আর বলে,
” হায়রে নারী! এ’পথে গেলেও বারি, ও’পথে গেলেও আড়ি।”
চলবে,,