কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১২

0
666

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১২

সকাল,সকাল ঘুম থেকে উঠে ইরহা,লাবিবাকে ডেকে তুললো।
লাবিবা ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসবে।ইরহা বলে তুই আমার সাথে একটু ছাদে চল।
‘ধুর এতো সকালে ছাদে কেন?
‘আসতে বলেছি আয় এতো কথার কি আছে!
দু’বোন মিলে ছাদে আসলো। ইরহাদের বাড়িটা তিন তলা বিশিষ্ট। যদিও পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দেয়া৷ কিন্তু ইরহার বাবার মৃত্যুর পর কাজ বন্ধ।
ছাদে কোন গাছ নেই। গাছের ড্রাম বা টবগুলোতে ঘাস হয়ে আছে।
ইরহা বলে,জানিস লাবু, আমি এখানে ছোট একটা বাগান করেছিলাম৷ আমি যখন পরিচর্যা করতে পারতাম না,তখন বাবা পরিচর্যা করতো। বিকেলে ফ্লাক্সে চা ভরে কাপ নিয়ে, বাবা মেয়ে মিলে চলে আসতাম ছাদে। মা ও আমাদের ডাকতে এসে আমাদের আড্ডায় যুক্ত হয়ে যেতো। বাবাকে নিজের বন্ধু ভাবতাম। আমার ভার্সিটির ফাইনলা ইয়ারের স্টুডেন্ট ছিলো বাবার বন্ধুর ছেলে আহনাফ মাহমুদ। বাবা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল আহনাফ ভাইয়ার সাথে। ভার্সিটিতে গেলে রেগুলার তার সাথে দেখা হতো৷ উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের পুরুষ। অন্য কারো কাছে কেমন লাগতো জানা নেই,তবে আমি ধীরে ধীরে তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে যাই৷ ভাইয়াদের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ঠিক আগের দিন, ভাইয়া আমাকে প্রপোজ করে। নিজের পছন্দের মানুষটা আমাকে পছন্দ করে! মানা করিনি তার প্রপোজ রাজি হয়ে যাই৷ নতুন প্রেম তাও পছন্দের মানুষ। জীবনটা সদ্য ফোটা গোলাপের মত মনে হচ্ছিল। অথবা শত ডানার প্রজাপতি, যার মনে রঙের মেলা৷ সে উড়ে বেড়াচ্ছে মনের রঙে। কি যে ছিলো সে সময় টা। আর আহনাফ ভাইয়ার মত মানুষ হয় না। সে এতো ভালো ছিলো৷ তবে উড়তে উড়তে ভুলে বসেছিলাম। আমি কনজার্ভেটিভ পরিবারের মেয়ে।এখানে প্রেম ভালোবাসা এসব ঠুনকো। সবার আগে আমি বাবাকে বলি, সেদিন বাবা বলেছিল, তোমাকে একটা কথা বলি, হয়তো আমরা নয়তো তোমার দু’দিনের ভালোবাসা! তোমার যা খুশি। বাবা, মা, ভাই সবাই আমার উপর রেগে থাকতো। নিজেকে তখন গুটিয়ে নিয়েছিলাম নিজের মধ্যে। ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম ধীরে, ধীরে,নিজের কষ্টকে চাপা দিয়ে বাবার কথা মেনে নিয়েছিলাম৷ জানিস পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্ট হলো,নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসি, না এই কথাটা বলা। আমি যখন আহনাফ ভাইয়াকে বলেছিলাম৷ এরকম ভালোবাসা হয়েই থাকে, সময়ের সাথে সেসব শেষ হয়ে মানুষ আবার নতুন প্রেমে পরে। নতুন ভাবে ভালোবাসে।সে মৃদু হেসে বলেছিল,আমি বলবো না, ইরহা তুমি ভালো থেকো! কারন আমার ভালো থাকা কেড়ে নিয়ে তুমি কি ভালো থাকতে পারবে? আবার চাইবো না তুমি খারাপ থাকো।
যাকে ভালোবাসি, সে খারাপ আছে এটাও মানতে পারবো না। তবে আমি চাই, মাঝে মাঝে আমার কথা তোমার মনে পরুক। তুমি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নীরবে দু’ফোটা অশ্রু ফেলে বলো,হয়তো তুমি থাকলে জীবনটা অন্য রকম হতো। তোমার মত কেউ আমাকে ভালোবাসবে না।
“তুমি তাকে ছাড়লে কেন আপু? বিয়ে করে নিতে কয়েক বছর পর বাবা, মা মেনে নিতোই!
‘জীবন কি এতো সহজ? ধর আমি পালিয়ে বিয়ে করে নিলাম৷ সমাজ আর সমাজের মানুষ আমার বাবাকে কতটা অসম্মানিত করতো!যে মেয়েকে জন্ম দেয়ার পর থেকে আঠারো বছর এতো ভালোবাসা, আদর, স্নেহ দিয়ে বড় করলো, তার বিনিময়ে তার আদরের মেয়াটা তাকে সমাজের কাছে, লাঞ্ছিত, আর অপমানিত করে চলে যেতো? শোন টাকা হারালে টাকা আবার ইনকাম করা যায়। কিন্তু সম্মান হারালে আর তা ফিরে পাওয়া যায় না। তোকে এতো কথা বলছি,তার কারণ আমি চাইনা এই বয়সে তুই ভুল করিস। আমি প্রেম করেছি ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কত পরে।তখন আমি ম্যাচিউর। আর তুই সবে ইন্টারে উঠলি, এই বয়স আবেগের। তাই নিজেকে শুধরে নে।

” বনু আমি রাতুলকে ভালোবাসি।
‘কঠিন কথা বলি তোকে লাবু, মেয়েদের জীবন হলো কচু পাতার পানির মত। মানে বুঝেছিস, খুব ঠুনকো। খুব সহজে তাদেরকে আঘাত করা যায়। খুব সহজে তাদেরকে বদনাম করা যায়। তাই আমাদের পা’ফেলতে হয় ভেবে চিন্তে। একটা ভুল কদম মূহুর্তে আমাদের চরিত্রে দাগ লেপ্টে দিয়ে যায়।

সবাই বলে মেয়েরা স্বার্থপর!আসলেই স্বার্থপর, যখন নিজের ভালোবাসা আর পরিবারের সম্মানের মধ্য থেকে একটা বেছে নিতে হয়,তখন বাবা,মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক মেয়েই নিজের ভালোবাসাকে কবর দিয়ে দেয়। আমাদের জীবন হলো গন্তব্যহীন মুসাফিরের মত!যে বাড়িতে বড় হই সেটাও আমাদের হয় না। আবার যে বাড়ির জন্য জীবন শেষ করি সেটাও আমাদের হয় না। আমাদের ঠোঁটের কোনে হাসির আড়ালে,আমরা কত না বলা কথা আর দুঃখকে আড়াল করে রাখি, তা হয়তো সৃষ্টিকর্তা আর আমরা ছাড়া কেউ জানে না। আমরা সত্যি-ই স্বার্থপর। ভালেবাসাকে বেছে নিলে পরিবারের কাছে, পরিবার বেছে নিলে ভালোবাসার কাছে।
তুই এখনো ছোট কিন্তু অবুঝ না। ইরহা নিচে চলে আসলো। আহনাফের কথা মনে পরলে বুকটা ভারি হয়ে আসে। জীবন কত অদ্ভুত ভাবে রং বদলায়। কখনো ধুসর রাঙা মেঘ, তো কখনো রঙ ধনুর সাত রঙে রঙিন।


জেলখানার চৌদ্দ শিকের ভেতর বন্দী, রবিন। লামা শেষ পর্যন্ত এই কাজটা করেই ছেড়েছে।
শেফালী বেগম রুবি কল করলো,রুবি ঠান্ডা গলায় বললো,আমি আসছি। দেখি কি করা যায়! এসব তো হওয়ার-ই ছিলো।
শেফালী বেগম কল কেটে দিয়ে লামাকে বলে,আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনো। তুমি যে ভাবে চাও সব কিছু সে ভাবেই হবে।
“এখন বলে লাভ নেই, আপনার ছেলে যখন আমার গায়ে হাত তুলেছিল, তখন তো আরাম করে বসে ছিলেন৷ একবারও তো নিজের ছেলেকে বাঁধা দেননি! আপনার নামেও কেস করা দরকার ছিলো।
‘তুমি কি সংসার করার জন্য বিয়ে করো নি?
” সংসারের নামে অত্যাচার আমার সাথে চলবে না। আমাকে বিয়ে করে আবার ছেড়ে দেওয়া বউয়ের পা’ধরে তাকে ফিরিয়ে আনতে যাওয়া! আমি বানের জলে ভেসে আসিনি৷ আর আমি ওই বউয়ের মত না। যা করবেন মুখ বুঝে সহ্য করবো।
‘সহ্য করতে হবে না। তুমি যা বলবে তাই হবে। তবুও আমার ছেলেটাকে বের করে আনো।
‘আপনার ছেলে আগে ক্ষমা চাইবে, নিজের ভুল স্বীকার করবে, আমার কাছে নত হবে তারপর ভেবে দেখবো।নারী নির্যাতন মামলা এতো সহজে আপনাে ছেলে পার পাবে না।
রবিন আরো কিছু আসামিদের সাথে বসে আছে। নিজেকে আজ বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। তার টাকা তার সম্মান রক্ষা করতে পারলো না। একটা সুস্থ জীবনকে নিজের হাতে অসুস্থ করলো। এখান থেকে বের হলেও সম্মান তো আর ফিরে আসবে না। পত্রিকার হেড লাইন হবে বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী রবিন হাসানের বিরুদ্ধে তার ওয়াইফ নারী নির্যাতন মামলা করেছে। সবাই দেখবে,তার শত্রুরা মজা নেবে।হাসির পাত্র হবে সবার কাছে। অথচ তিন বছর একজন নীরবে সংসার করে গেলো।তারজন্য কখনো নত হতো হয়নি৷ ভুল করার পরে ভুল বুঝতে পারলেও, সব ভুল শুধরে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় না। কিছু কিছু ভুল বিষাক্ত কা’টার মত বিঁধে থাকে।সে ভুল আর শান্তিতে বাঁচতে দেয় না।


ইরহা আজকেও দু’টো ইন্টারভিউ দিয়েছে। কিন্তু শেষের ইন্টারভিউতে তাকে হ্যারাস মেন্টের শিকার হতে হয়েছে। ইনফ্যাক্ট ম্যানেজার থাকে চাকরির বদলে রাত কাটানোর অফার করেছে। সেখান থেকে মানা করে চলে আসলেও কথাগুলো তাকে বড্ড পিঁড়া দিচ্ছে।মেয়েরা কি কোন সেক্টরে সেভ না! একটা মেয়ে ডিভোর্সী শুনলেই কি তার দিকে নজর ঘুরিয়ে তাকাতে হবে?ইরহার মাথায় প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই দেখা হলো তার এক ভার্সিটি ফ্রেন্ডের সাথে।…….

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে