#কোন_কাননের_ফুল_গো_তুমি
#পর্ব_১৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_____________
মিতুল বার দুয়েক লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে নিল। অনিকের পিঠে তার কাঁপান্বিত হাতটি রেখে বলল,
“রিল্যাক্স! কী হয়েছে আমাকে খুলে বলুন।”
অনিক তখনো কাঁদছিল। পুরুষ মানুষের কান্না অন্তর্ভেদী এবং দুর্দমনীয়। সহ্য করা দুষ্কর। মিতুলও পারছিল না সহ্য করতে। তার ভীষণ খারাপ লাগছে এমন হাসি-খুশি অনিককে কাঁদতে দেখে। সে অনিকের দু’বাহু ধরে সোজা করে দাঁড় করাল। চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“প্লিজ কাঁদবেন না!”
অনিক ফোঁপাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলল,
“হঠাৎ করে মানুষ কী করে পালটে যায় মিতুল?”
মিতুল নিশ্চুপ। কী উত্তর দেবে সে? মানুষের মন যে আকাশের মেঘের চেয়েও দ্রুত রং বদল করে। এটা সে খুব ভালো করেই জানে। অনিক নিজেই বলল,
“এতদিনের সম্পর্ক নাকি এখন ওর কাছে ঠুনকো লাগছে। সম্পর্কে রাগ-অভিমান, ঝগড়া হয়। তাই বলে ছেড়ে যেতে হবে?”
“ব্রেকাপ করে ফেলেছে?”
“শুধু ব্রেকাপ হলেও এতটা ভেঙে পড়তাম না। ও অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য রাজিও হয়ে গেছে।”
“কোনোভাবেই কি সম্পর্ক ঠিক করা যায় না?”
“তিশা চায় না।”
“আমি কি আপুর সঙ্গে কথা বলব?”
অনিক তাকাল মিতুলের দিকে। কান্না কমে এসেছে এখন। সে রেলিঙের ওপর দু’হাত রেখে বলল,
“না।”
“নিষেধ কেন করছেন? আমি কথা বলে দেখি।”
“ও এখন আর কারও কথাই শুনবে না মিতুল। আমার বন্ধুরাও চেয়েছিল কথা বলে সব ঠিক করে নিতে। তিশা ওদের অপমান করেছে। আমি চাই না, ও তোমাকেও অপমান করুক। তাছাড়া যে চলে যেতে চায় তাকে আটকে রাখার সাধ্য আছে কার বলো?”
মিতুল এবারও কিছুই বলতে পারল না। এমন সিচুয়েশনে কাউকে কীভাবে সান্ত্বনা দিতে হয় তার জানা নেই। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে তার। অনিক চিন্তিত হয়ে বলল,
“আপুকে এসব কিছু বোলো না প্লিজ! টেনশন করবে।”
“বলব না।”
“থ্যাংকস।” মলিন ও শুষ্ক ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বলল অনিক।
কিছুক্ষণ পর দুজনেই একসাথে নিচে নেমে এলো। অনিক চলে গেল রুমে। মিতুলকে নিশ্চুপ দেখে রিনভী জিজ্ঞেস করল,
“কী হয়েছে?”
মিতুল হাসার অভিপ্রায়ে বলল,
“কই? কিছু না তো!”
রিনভী সোফার কুশনগুলো ঠিক করতে করতে বলল,
“দু’দিন হবে এই বাসায় এসেছে অনিক। আসার পর থেকেই দেখছি ওর মন খারাপ। কী হয়েছে কাউকে কিছু বলছেও না। কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলে, আমাকে নাকি দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই চলে এসেছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, ও কিছু লুকাচ্ছে আমার থেকে। তুমি কি জানো কিছু?”
সত্যিটা বলতে গিয়েও থেমে গেল মিতুল। গোপনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
“না, ভাবি। আমার সাথে তো ভালোভাবেই হেসে হেসে কথা বলল।”
রিনভী এবার একটু চিন্তিত হয়েই বলল,
“ওহ।”
মিতুল নিজের রুমে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়েও থেমে গেল। রিনভীর উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল,
“ভাইয়ার ছুটি কয়টায় আজ ভাবি?”
“বলল তো আটটায়। কেন?”
“বড়ো নদীর পাড়ে মেলা বসেছে শুনলাম। আজকেই শেষ হয়ে যাবে। ভেবেছিলাম যাব। কিন্তু তা তো আর হবে না।”
“অনিককে নিয়ে যাও।”
মিতুল হ্যাঁ, না বলার কিছু সুযোগ পেল না। রিনভী অনিকের রুমে গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে বলল,
“অনিক, মিতুলকে নিয়ে মেলা থেকে ঘুরে আয় তো। তোর দুলাভাই আসবে সেই রাতে। তখন কি আর যাওয়ার সময় থাকবে নাকি!”
অনিকের কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কিন্তু রিনভী এত জোরে কথাগুলো বলেছে যে মিতুলও নিশ্চয়ই শুনেছে। এখন মুখের ওপর না করে দেওয়াটা কেমন দেখায়? মিতুলেরও হয়তো মন খারাপ হয়ে যাবে। সে নিজের মন খারাপকে উপেক্ষা করে রাজি হয়ে গেল। রিনভীকে বলল,
“ঠিক আছে। রেডি হতে বলো।”
রিনভীও মনে মনে স্বস্তি নিল। তার ভাইয়ের যে কিছু একটা হয়েছে সেই ব্যাপারে সে নিশ্চিত। এই বাড়িতে আসার পর থেকেই সারাদিন, সারাক্ষণ মন ভার করে থাকে। হয়তো বেশির ভাগ সময় ছাদে কাটাবে। নয়তো রুম অন্ধকার করে শুয়ে থাকবে। এখন যদি বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসে তাহলে মন কিছুটা হলেও রিফ্রেশ হবে। তাই সে সুযোগটা হাত ছাড়া করল না। মিতুলেরও মেলায় ঘোরা হয়ে যাবে, অন্যদিকে অনিকেরও মন ভালো হবে। সে খুশি খুশি কণ্ঠে মিতুলকে বলল,
“যাও জলদি রেডি হয়ে নাও।”
মিতুল অস্বস্তি নিয়ে বলল,
“তাকে বলার কী দরকার ছিল ভাবি?”
“তুমি কি ইনসিকিউরড ফিল করছ ওর সাথে যেতে?”
“ছি! না ভাবি। সে অনেক ভালো একটা মানুষ। তোমাকে তো বলেছিলামই, তুমি এই বাড়ির বউ হওয়ার আগেও সে আমাকে দু’বার হেল্প করেছিল। আমি তার সাথে ইনসিকিউরড ফিল করব এটা তুমি ভাবলে কীভাবে?”
“তাহলে যেতে আপত্তি কোথায়? কোনো সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারো।”
“কোনো আপত্তি বা সমস্যা কোনোটাই নেই ভাবি। সে হয়তো মন থেকে যেতে চাচ্ছে না।”
রিনভী ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“কী ব্যাপার হুম? আমার ভাইয়ের মন দেখি আমার চেয়েও বেশি বুঝতে পারছ তুমি!”
“ভাবি!”
রিনভী শব্দ করে হেসে ফেলল। মিতুলের কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলল,
“ওর মনটা একটু খারাপ। কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়েছে। আমাকে বলছে না। বাইরে থেকে ঘুরে আসলে হয়তো মনটা ভালো হবে একটু। আর তোমারও মেলায় যাওয়া হলো।”
মিতুল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“আচ্ছা।”
সে মূলত অনিকের মন ভালো করার প্রয়াসেই যাওয়ার জন্য রাজি হলো। রিনভী ওর গাল টেনে বলল,
“আচ্ছা যাও রেডি হও।”
মিতুলের আগেই অনিক রেডি হয়ে বাইরে বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছিল। মিতুল মা এবং রিনভীর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। গেইটের বাইরে বেরিয়ে অনিককে দেখে তার কেন জানি রূপকের কথা মনে পড়ে গেল। সে কয়েক পল নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনিকের দিকে। অনিক সেটা লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করল,
“কী হয়েছে?”
মিতুল বড়ো করে শ্বাস নিয়ে বলল,
“কিছু না।”
“বাইকে ওঠো।”
মিতুল চুপচাপ বাইকে উঠে বসল। এখান থেকে বড়ো নদী খুব একটা দূরে নয়। ত্রিশ কি পঁচিশ মিনিটের মতো লাগে। বাইকে করে এসেছে বলে সময়টা আরও কম লাগল। একটা ফাঁকা জায়গায় বাইক রেখে দুজনে মেলায় ঢুকল। মানুষের ভিড়-ভাট্টার জন্য পা ফেলার অবকাশ নেই। অনেক কষ্টে ধাক্কিয়ে-ধুক্কিয়ে ওরা অর্নামেন্টসের দোকানের সামনে এলো। অনিক এত মানুষ দেখে বিরক্ত হয়ে বলল,
“মেলায় মানুষ আসে!”
মিতুলের দৃষ্টি ও মন তখন বাহারি রঙের ও রকমের চুড়ি, কানের দুল, পায়েলের দিকে। সে সবগুলো জিনিসই নেড়েচেড়ে দেখছে। এসব দোকানে মেয়ে, মহিলাদের ভিড় আরও বেশি। অনিক তাই সরে গিয়ে একটু দূরে দাঁড়াল। মিতুল অনিককে পাশে না দেখে ভয় পেয়ে গেল। ত্রস্ত দৃষ্টিতে পেছনে তাকাতেই অনিক হাত উঁচিয়ে ইশারায় বলল,
“আমি আছি!”
মিতুল স্বস্তি পেল। সব জিনিসই তার ভালো লাগছে। কোনটা রেখে কোনটা নেবে? অনিক তখন কল দিল মিতুলকে। এখান থেকে এখানে ফোন করার কী হলো? ফোন রিসিভ করে মিতুল বলল,
“কী হয়েছে?”
“তোমার যা যা পছন্দ হয় নাও। টাকা দিও না আবার। পছন্দ শেষ হলে আমাকে কল দিও।”
“কেন? আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
“কোথাও যাচ্ছি না। এখানেই আছি।”
“শুধু এক দোকান থেকেই জিনিস কিনব? আর দোকান ঘুরব না?”
“আচ্ছা আগে এই দোকান থেকে কী নেবে দেখো। তারপর অন্য দোকানে যাচ্ছি।”
“ঠিক আছে। রাখছি।”
অনিক ফোন কেটে অপেক্ষা করতে লাগল। তার মাথার ভেতর শুধু তিশার কথা ঘুরছে। মানুষ কীভাবে এত সহজেই বদলে যেতে পারে? সে ভাবেনি তিশা তার সাথে এমনটা করতে পারে। যেই মেয়ে একদিন কথা না হলে থাকতে পারত না সেই মেয়ে এখন কী করে কথা না বলেই থাকছে? সে আকাশপানে তাকিয়ে আল্লাহকে কতকিছুই না বলে। আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মিতুলের দিকে তাকাল। একদল ছেলে ঠিক তার পাশেই আছে। কেউ কেউ ইচ্ছে করে হাঁটার ভান ধরে মেয়েদের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে, কেউ বা অশ্লীলভাবে গায়ে হাতও দিচ্ছে। ভিড়ের মাঝে থাকায় বোঝার উপায় নেই আর চেনার উপায়ও নেই জা’নো’য়ারগুলোকে। এসব দেখে অনিকের মাথায় র’ক্ত চেপে যায়। সে দেখল একটা ছেলে মিতুলের কোমর ছুঁয়ে হাত সরিয়ে নিল। পাশের দোকান থেকে কিছু কিনছে এমন একটা ভান ধরল। মিতুল আশেপাশে তাকিয়েও বুঝতে পারল না কে করেছে এমন। সে একটু গুটিয়ে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়াল। হাতটি আবার এগিয়ে যেতেই ভিড় ঢেলে সেদিকে এগিয়ে এলো অনিক। হাতটা ধরেই মোচর দিয়ে নাক বরাবর একটা ঘু’ষি দিল। এরপর শার্টের কলার ধরে এলোপাথাড়ি কয়েকটা থা’প্প’ড় দিয়ে মাটিতে ফেলে দিল। মানুষজন সরে গিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে। ছেলেটির দুটো বন্ধু এগিয়ে এলে ওদেরকেও ধাক্কিয়ে সরিয়ে দিল অনিক। মিতুল অনিককে থামাবে কি ওর ধারেকাছেও ঘেষতে পারছে না। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে শুধু। অনিক মারছে আর বলছে,
“মেয়ে মানুষ দেখলেই শুধু গায়ে হাত দিতে ইচ্ছে করে না? তোদের ঘরে মা-বোন নাই? অন্যের মা-বোনের গায়ে হাত দেওয়ার আগে একবারও কি ওদের কথা মনে পড়ে না?”
ঘটনা যা বোঝার উপস্থিত জনতা বুঝে নিয়েছে। আরও কয়েকজন তরুণ যুবক এসে অনিকের সাথে যোগ হলো। সঙ্গে বেধড়ক মার খেতে হলো ঐ পিশাচের বন্ধুদেরও। অনিকের রাগ যেন কমছেই না। মিতু্ল কোনোমতে সাহস সঞ্চয় করে অনিকের হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো। অনিক রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই মিতুল চুপসে গেল। এভাবে কেন তাকাচ্ছে সে? অনিক কিছু বলল না অবশ্য। মিতুলের হাত ধরে ভিড় থেকে বের হতেই সামনে দেখতে পেল তিশাকে। ওর সঙ্গে একটা ছেলেও আছে। সম্ভবত হবু স্বামী। তিশা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অনিক আর মিতুলের দিকেই তাকিয়ে আছে। মিতুল অবশ্য তিশাকে দেখে খুশিই হলো। কথা বলার জন্য এগিয়ে যেতেই হাতে টান পড়ল তার। শক্ত করে চেপে ধরেছে অনিক। এরপর আর কিছু না বলেই মিতুলকে নিয়ে মেলা থেকে বেরিয়ে গেল। অনিক বাইকে ওঠার পর মিতুলও চুপচাপ বাইকে উঠে বসল। বাইক এসে থামাল নদীর অন্য সাইডে। যেখানে কোনো ভিড় নেই, মানুষ নেই। শুধু নদীর স্রোত ও কলকল ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। অন্ধকারও হয়ে আসছে। সূর্য অস্ত যাচ্ছে ধীরে ধীরে। মিতুল ভয়ে কোনো কথাই বলতে পারছে না। অনিক শান্ত দৃষ্টিতে নদীর পানে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর মিতুলকে ধমক দিয়ে বলল,
“তুমি এত বোকা কেন?”
হঠাৎ শান্ত পরিবেশে ধমক খেয়ে হকচকিয়ে গেল মিতুল। বিস্ময় নিয়ে শুধাল,
“আমি কী করেছি?”
“তুমি বোঝোনি তোমার গায়ে কেউ হাত দিচ্ছে? চুপচাপ সহ্য করে গেলে কেন?”
“বুঝেছিলাম। কিন্তু দেখিনি তো কে দিয়েছে। তাহলে আমি কী করতাম?”
“কিছু করতে হবে না তোমাকে।”
“তা তো বটেই। যা করার সব তো আপনিই করলেন। আপনার এত রাগ!”
“মেয়েদের অসম্মান করা জিনিসটা আমার একদম পছন্দ নয়। জানো, তিশার সাথে আমার এতদিনের সম্পর্ক কিন্তু আমি কখনোই রেগে গিয়ে ওকে একটা গালি পর্যন্ত দেইনি। এমনকি তুই করেও বলিনি। ধমক দিয়েছি, রাগ দেখিয়েছি তবে অভদ্রের মতো আচরণ করিনি কখনো।”
“আপনি তিশা আপুর সাথে আমাকে কথা বলতে দিলেন না কেন?”
“কী বলতে?”
“যা বলার বলতাম। আপনি এভাবে আমাকে নিয়ে এসে ঠিক করেননি।”
“তুমি দেখোনি ওর পাশে একটা ছেলে দাঁড়ানো?”
“উম! দেখেছি। ঐটাই কি আপুর হাবি নাকি?”
“হুম।”
“আপনি চিনলেন কী করে?”
“ওর বান্ধবী ছবি দিয়েছিল। তাছাড়া ওরা সম্পর্কে মামাতো-ফুপাতো ভাই-বোন।”
“ওহ।”
“তোমার কি মন খারাপ?”
“মন খারাপ হবে কেন?”
“এইযে মেলায় ঘুরতে পারলে না। কিছু কিনতেও পারলে না।”
“না, না ব্যাপার না। আবার মেলা হলে তখন না হয় আসব।”
অনিক বাইকে উঠে বলল,
“ওঠো।”
“কোথায় যাবেন এখন? মেলায়?” বাইকে উঠতে উঠতে জানতে চাইল মিতুল।
অনিক বলল,
“না। মেলায় যা পাওয়া যায় সেগুলো শপিংমলেও পাওয়া যায়।”
“ইহ না! আমি শপিংমলে যাব না। মেলায় ঘুরে ঘুরে কেনাকাটার মাঝে আলাদা একটা মজা আছে। সেটা কি আমি শপিংমলে পাব নাকি?”
“দোকান ঘুরে ঘুরে কিনলেই হবে।”
অনিক মিতুলের কোনো নিষেধই শুনল না। সোজা চলে এলো শপিংমলে। আগে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে তারপর ভেতরে প্রবেশ করল। মিতুল গাল ফুলিয়ে বলল,
“আমি কিন্তু কিচ্ছু কিনব না।”
“ঠিকাছে। আমি কিনব আসো।”
“কার জন্য?”
“আপুর জন্য। এবার তো যাবে?”
“হু।”
ওরা একটা দোকানে ঢুকল। সেখানে মিতুলের পছন্দে অনেক কিছু কিনল। অনিকও অবশ্য হেল্প করছিল সাজেস্ট করে। সব জিনিসই দুটো করে কিনতে দেখে মিতুলের বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এখানে একটা করে জিনিস তার জন্যও নির্ধারিত। কিন্তু সে দোকানে কিছুই বলতে পারল না। কেনাকাটা শেষে বের হয়ে অনিক জিজ্ঞেস করল,
“আর কী নেবে বলো?”
“আর কিছুই না। অনেক কিছু নেওয়া হয়ে গেছে।”
“শাড়ি?”
“না। আমার শাড়ি পরতে ভালো লাগে না।”
“আমার শাড়ি পরা দেখতে ভালো লাগে। আসো।”
“না।”
“আসতে বলেছি।”
ওদের বোঝাপড়ার মাঝেই সেখানে নওশাদ এবং চৈতি এসে উপস্থিত হলো। নওশাদের দৃষ্টি মিতুলের দিকে। অনিক নওশাদকে সালাম দিলেও মিতুল নির্বাক রইল। চৈতি হেসে নওশাদকে জিজ্ঞেস করল,
“চেনেন নাকি আপনি?”
নওশাদ মৃদু হেসে বলল,
“হুম। আমার স্টুডেন্ট।”
চৈতি এবার মিতুলকে বলল,
“কেমন আছো তুমি?”
“জি, ভালো আছি। আপনি?”
“আমিও ভালো আছি। এসেছিলাম বিয়ের কেনাকাটা করতে।”
মিতুল ছোটো করে বলল,
“ওহ।”
পেছনেই শাড়ির দোকানে নওশাদের পরিবারের লোকজন এবং চৈতির পরিবারের লোকজন। মিতুলের কেন জানি অস্বস্তি লাগছে। সেই অতীতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সে কোনোমতে বলল,
“আচ্ছা ম্যাম, আপনারা কেনাকাটা করুন। আমরা যাই।”
“তোমাদের কেনাকাটা শেষ?”
“হ্যাঁ, এখন বাড়ি যেতে হবে। আল্লাহ্ হাফেজ।”
এরপর সে অস্বস্তি ও উত্তেজনায় নিজেই অনিকের হাত ধরে দ্রুত সেখান থেকে চলে এলো। অনিক বলল,
“আরে আস্তে! এত দ্রুত হাঁটছ কেন?”
“শপিংমলে আমার ভালো লাগে না।”
“অদ্ভুত তো! মেয়ে মানুষের শান্তির জায়গাই তো শপিংমল।”
“সব মেয়ে এক না ওকে?”
“আচ্ছা বুঝলাম। তুমি কি স্যারের হবু বউকে আগে থেকেই চেনো নাকি?”
“হ্যাঁ, নওশাদ স্যার আমি স্কুলে থাকতে প্রাইভেট পড়াত। তার সুবাদেই ম্যামকে চিনি।”
“ওহ আচ্ছা। তোমরা তাহলে পূর্বপরিচিত।”
মিতুল টপিক চেঞ্জ করতে বলল,
“হু। ক্ষুধা লাগছে।”
“চলো কোথাও বসি।”
দুজনে একটা রেস্টুরেন্টে এসে বসল। পছন্দের খাবার অর্ডার দিয়ে দুজনেই বসে আছে। মিতুলের বেশ তেষ্টা পেয়েছে। সে পানি মুখে নিয়ে গিলে ফেলার পূর্বে হঠাৎ চোখ গেল এক কর্ণারে। কাপলরা পাশাপাশি বসে আছে। এতে অবশ্য আপত্তি ছিল না। আপত্তি হচ্ছে চুম্বনরত দৃশ্যটা সে দেখে ফেলেছে। পানি তার নাক-মুখ দিয়ে উঠে যায়। দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। শ্বাসও নিতে পারছিল না। অনিক ফোন চাপছিল। সে উঠে এসে মিতুলের পাশের চেয়ারে বসে মাথায় মৃদু চাপড় দিচ্ছিল। ব্যস্ত হয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,
“পানি খাও। ঠিক হয়ে যাবে।”
কোনো রকম নিজেকে সামলে পানি নিল মুখে। তবে গিলতে পারল না। সেই পানি বেরিয়ে এসে পড়ল অনিকের বুকে। শার্টের টপ দুটো বোতাম খোলা ছিল বিধায় পানিও খুব সহজেই গড়িয়ে বুকের মাঝখান দিয়ে পড়ল। সাদা শার্ট ভিজে স্পষ্ট হয়ে আছে। মিতুল কাশতে কাশতেই ভয়ে ভয়ে তাকাল অনিকের দিকে। অনিক অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
চলবে…