Sunday, October 5, 2025







কোথাও হারিয়ে যাব পর্ব-৩২

#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-৩২ (প্রথমাংশ)

অবিশ্বাস, অভিযোগ আর ক্রোধের সর্বোচ্চ পর্যায় সেই অক্ষিদ্বয়ে। কি যে অসহনীয় এক যন্ত্রণা অন্তর ছাপিয়ে তার গম্ভীর মুখটাতে ভেসে উঠেছিলো তা বোধকরি, রিদওয়ান এ জনমে দ্বিতীয়বার কল্পনাও করতে চায় না। পরাক্রমশালী রবের কাছে দু হাত ফেলে শুধু বলতে ইচ্ছে করছে সব ঠিক করে দাও ইয়া আল্লাহ! দূর করে দাও সকলের এই অন্তর্দাহ। বিছানায় বসে কনুইতে ভর দিয়ে দু হাতে মুখটা চেপে ধরে বসে আছে রিদওয়ান। এই কয়েক মিনিট আগেই এ ঘরে সে দেখতে পেয়েছে অর্ণবের অন্তরে তীরবেগে লাগা অদৃশ্য করাঘাত। দেখেছে অর্ণবের সেই দৃষ্টি যা রিদওয়ানের প্রতি অবিশ্বাসে পূর্ণ ছিল। অর্ণব চলে গেছে অফিসার শরাফতের দেয়া ঠিকানায়। অর্ণব যেতে যেতে রিদওয়ানের ফোন থেকে শরাফতের ফোন নম্বরটা নিতে ভুল করেনি । বাড়ি থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের পথ শেষ করতে তার আজ দেড় ঘন্টা লেগে গেল। মাথায় চলছিলো কত ভয়ানক রকম ভয়, আতঙ্ক। কখনো কিছুতে ভয় না পাওয়া অর্ণব আজ প্রচণ্ড ভয়ে কুঁজো হয়ে আসছিলো ৷ হাসপাতালে পৌঁছে দেখা পেল কয়েকজন পুলিশের। কাছে প্রশ্ন করলো অফিসার শরাফত আছেন কিনা। ভদ্রলোক সে মুহূর্তে ডাক্তারের সাথে কথা বলছিলেন। অর্ণব খোঁজ নিচ্ছে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার পরিচয়?

-অর্ণব চৌধুরী।

-ভিকটিম কে হয় আপনার?

নিরুত্তর অর্ণব। কে হয় সে নুপুরের? ভালোবাসার মানুষ? এমন জবাব দেয়া যায়! নাকি বান্ধবীর ভাই বলা যায়? বেনামি এক গাঁট যে আছে দুজনাতে সে কথ কি আজ মুখে আনা যায়।বেশ তো সেদিন তাড়িয়ে দিলো মেয়েটাকে নিজেই এসে হাজির হয়েছে। কিন্তু পুলিশ অফিসারের প্রশ্নে যেন সাগরের অতলে ডুবে গেল অর্ণব। ঠিক সে সময়েই তাকে বাঁচিয়ে দিলো নুপুরের মামা। ভদ্রলোক খবর পেয়েই কেমন করে যে এসে পৌঁছুলেন গন্তব্যে নিজেও জানেন না। নুপুরের বাবার অবস্থা এখনো স্বাভাবিক নয়। ঘুমের ঔষধের প্রভাবে তিনি অচেতন তাই মামা এসেছেন সঙ্গে আছে মামাতো ভাই আর এক খালু। নুপুরের মামাকে পুলিশ অফিসার আগে থেকেই চেনেন বলে জিজ্ঞেস করলেন, নুপুরের অভিভাবক হিসেবে তো রিদওয়ান শেখের থাকাটা জরুরি কোথায় উনি?

মামা জবাব দিলেন, ছেলেটার বোনের বিয়ে আজ সে আসবে হয়ত বিকেলের মধ্যেই আপনি আমাকে বলুন আমার ভাগ্নি কোথায়!

পুলিশ অফিসার আর নুপুরের মামার কথোপকথন শুনতে শুনতে মানসিক ভাবে যেন হোঁচট খেলো অর্ণব। নুপুর মিসিং ছিল তাকে খুঁজতে আইনি কাজে রিদওয়ান অভিভাবক। কি ঘটেছিলো, কবে ঘটেছিলো সে কেন কিছু জানে না! অর্নিতা গত দু দিন ধরেই লুকিয়ে কান্না করছে সে টের পেয়েছে। তার ধারণা ছিল ভাই ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করছে বলে বোনটি অমন ভেঙে পড়ছে। আসলেই কি তাই! পুলিশ আর নুপুরের আপনজন কারো কাছেই
কিছু জিজ্ঞেস না করে সে খুঁজতে লাগলো নুপুর কোথায় আছে? সরকারি হাসপাতাল তারওপর রোগী,নার্স, ওয়ার্ডবয় সব মিলিয়ে এত লোকজন চারপাশে সে ঠিক মানুষটাকে খুঁজেই বের করতে পারলো না। অনেকটা সময় ছুটোছুটি করে তার নিজেকেই পাগল মনে হচ্ছে। ঘুরেফিরে আবার এলো পুলিশগুলোর সামনে। দেখতে পেলো রিদওয়ান আর অর্নিতা এসেছে। হন্তারক হয়ে এবার রিদওয়ানকেই প্রশ্ন করলো, “নুপুর কোথায়? আমি ওকে খুঁজে পাইনা কেন রিদওয়ান কোথায় ও?”

ব্যর্থ প্রেমিকের গোপন ব্যথার প্রকাশ ছিলো যেন অর্ণবের আর্তনাদে। তার আশপাশে উপস্থিত প্রত্যেকটা মানুষই উৎসুক, চমকানো নজরে দেখছে তাকে। রিদওয়ান জবাব দিতে পারলো না। অর্নিতা মেয়ে মানুষ বলেই কিনা কে জানে কষ্ট চাপিয়ে রাখতে না পেরে অশ্রু বিসর্জন দিয়েই চলছে। কিছুটা সময় অর্ণব পুনরায় একই প্রশ্ন করলে শরাফত নিজে এগিয়ে এসে জবাব দিলো, “অপারেশন থিয়েটারে আছে। আপনি কে তা জানি না যেই হোন ধৈর্য্য ধরুন প্রিয় মানুষের জন্য শুধু দোয়া করুন আল্লাহ মালিক নিশ্চয়ই ভালো করবেন। রিদওয়ান আপনি থানায় দেখা করুন কিছু কাজ তো এখনও বাকি আর এই যে ফোনটা এটা আপাতত আমাদের হেফাজতে থাকবে ইনফরমেশনের জন্য। ”

শেষ কথাটা বলতে বলতেই শরাফত নুপুরের পাশে পাওয়া উদ্ধারকৃত ফোনটা দেখালো। অর্ণব আবার চমকালো, এটাতো অর্নির ফোন।

-অর্নি কে?

-আমার ওয়াইফ।
অর্নিকে দেখিয়ে রিদওয়ান জবাব দিলো।

-থানায় আপনার ওয়াইফকে নিয়েই তবে আসবেন । আমার হাতে সময় কম এখানে একজন কন্সটেবল থাকবেন পুরো টাইম৷

“ও কেন যাবে থানায়!” একই সাথে দুটি কণ্ঠ থেকে একই বাক্য বেরিয়ে এলো। অর্ণব, রিদওয়ান দুজনেরই মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়লো।

“এই ফোন যেহেতু ভিকটিমের না সেহেতু তার আশপাশের প্রত্যেকটা বস্তু,প্রাণী সবকিছুতেই ইনভেস্টিগেশন হবে। আশা করি আমার কাজে ব্যঘাত ঘটাবেন না।”

অর্ণবই এবার ক্রুদ্ধ স্বরে বলল, ও কোথাও যাবে না যা বলার দরকার এখানেই বলুন।

-কুল মিস্টার…. গরম রক্তের তেজ সব জায়গায় খাটাতে যাবেন না।
সাবধানী গলায় বলল পুলিশ অফিসার। নুপুরের মামা এবার মুখ খুললেন, “স্যার এই জায়গায় না রেখে ভাগ্নিকে আমি প্রাইভেট হাসপাতালে নিতে চাইতাছি ওর বাবা যেটায় ভর্তি আছে। তারজন্য কি কোন নিয়মকানুন আছে?”

শরাফত সাহেব জানালেন হ্যাঁ একটু ফরমালিটি আছে আর এমনিতেও মাত্র অপারেশন শুরু হয়েছে পেশেন্টকে নেয়া হয়ত সম্ভব হবে না। সত্যিই তাই হলো। ডাক্তাররা ইমিডিয়েট অপারেশনের পর রোগীকে আন্ডার অবজারভেশনে রেখেছেন টানা তিন ঘন্টা। এরপর অনুমতি দিতেই নুপুরকে নেওয়া হলো তার বাবা যেখানে এডমিটেড ছিলেন৷ আর দুশ্চিন্তার ব্যাপার হলো নাজিম সাহেব চেতনায় ফিরেই স্ট্রোক করেছেন মেয়েকে এক নজর দেখার পরপরই। পুরো পরিস্থিতি সেই সাথে একটা পরিবার সম্পূর্ণ ভেঙে খানখান হয়ে গেলো কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে। সেসবের সাক্ষী হিসেবে সব বোবার মত দেখতে লাগলো অর্ণব, অর্নিতা, রিদওয়ান আর নুপুরের মায়ের দিককার কয়েকজন আত্মীয়।
________

কনের স্বাক্ষর আর কবুল বলা হয়ে গেছে অনেক আগে। কাজী সাহেব আর অন্য মুরব্বিগণ নিচতলায় এসেছেন বরের কাছে। বর কোথায়! বোর কোথায়! বর কোথায়? এই এক রবে পুরো শেখ বাড়ি সরগরম হয়ে উঠলো বেলা তিনটা নাগাদ। তারপর কেটে গেছে আরও ঘন্টা তিনেক। দিনমনি অস্তাচলে মিশে গেছে, সন্ধ্যে নেমে তাও যাই যাই শহর ঢাকা পর্দা হয়ে রাত নেমেছে এ শহরের বুক জুড়ে। শেখ বাড়ির ভরা মজলিশে নিস্তব্ধতার মেলা বসেছে। দূর আত্মীয় সকলে বিদায় নিয়েছেন অনেক আগেই এখন খুব কাছের মানুষরাও বিদায় নিচ্ছেন একে একে। অর্ণব-অর্নিতার জন্মদাত্রী তো সেই দুপুরেই ত্যাগ করেছেন বোনের বাড়ি। এবার অন্য ভাই,ভাবী আর ছেলে মেয়েরাও বিদায় নিতে এসেছে রায়নার ঘরে। প্রেশার বেড়ে ঘাড়ের শিরা ফুলে উঠেছে প্রায় রায়না বেগমের। কাজের মেয়েটি একটা আস্ত লেবুর রস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাশেই রিমন মায়ের মাথায় পানি ঢালছে। বাশার শেখ অন্য ঘরে বসে একবার ডাক্তারকে ফোন করলেন এখন পুলিশকে করছেন অর্ণবের বিরুদ্ধে কোনো একটা ব্যবস্থা নেয়ার উদ্দেশ্যে। বৃষ্টি কাঁদছে নিজের ঘরে দোর এঁটে। দ্বিতীয় বার ভালোবেসে তাকে কাঁদতে হচ্ছে তবে কি তার ভাগ্যে ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার রেখাটা নেই? তাহলে কি লাভ বাপ-ভাইয়ের অত ক্ষমতা থাকার! হঠাৎই মনে হলো ভাই হ্যা তার ভাই-ই তো তার পরম শত্রু। দুই ভাই-ই তো শুরু থেকে বাঁধা দিয়ে আসছে তার সুখে। নিশ্চয়ই এদের জন্যই আজ তার বিয়েটা ভাঙলো। তারা নিশ্চয়ই পারতো অর্ণবকে তার প্রতি দায়িত্বে বাঁধতে। আর একবার দায়িত্বে বাঁধা পড়লে ভালোও বাসতো। শুধু মাত্র ভাইদের জন্যই তার আজ এই দশা। এমনটাই ভেবে ভেবে আক্রোশে ফেটে পড়লো বৃষ্টি। হঠাৎই মনে হলো সে কথা বলবে অর্ণবের সাথে এবং সে তৎক্ষনাৎ কাউকে কিছু না বলে বাবার গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাড়ি থেকে।

________

“মাফ করেন আমারে। আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্যই লাখ দেড়েক লাগব এই হাসপাতালে রাখতে৷ সস্তার হাসপাতালে নিলে চিকিৎসা ভাল হইব না আর আমার দরকার তিনি জলদি ভাল হোক নইলে আমার সংসারটা অচল হইয়া যাইব। ওই মাইয়ার যে অবস্থা দেখতাছি তাতে ওরে ভালা করতেও কম লাগব না তার উপ্রে কেমন ভাল হইব সেটাই কেডা কইতে পারে। এমনিতেই বিয়া শাদি আর দেওয়ার অবস্থা নাই এরে ঘরে তুললে আমার একটা বাড়তি বোঝা ছাড়া কিছুই বাড়ব না। সৎ মা হইয়াও এত বছর অনেক করছি এইবার আপনেরা বুঝেন গিয়া।”

নাজিম সাহেবের অবস্থা নাজুক জানিয়েছেন ডাক্তার। তিনি মূলত উচ্চরক্তচাপ আর অতিরিক্ত চিন্তায় ডায়বেটিস বেড়ে যাওয়ায় স্ট্রোক করেছেন। প্রথম স্ট্রোকেই তিনি যে মারাত্মক অবস্থায় আছেন তাতে অখন তখন কিছু একটা হতে পারে। ডাক্তারের উদ্দেশ্য যে ঠিক কেমন তা বুঝতে পেরেই নুপুরের মামা শঙ্কিত৷ নাজিম সাহেব যদি শয্যাশায়ী হন তবে নুপুরের দায়িত্বের নিঃসন্দেহে তাদের ওপর পড়বে। সে ভয়েই জলদি জলদি হাসপাতাল থেকে বেরুতে যাচ্ছিলেন তখনই নুপুরের ছোট মা পথ রোধ করলেন। ভদ্রলোক যে ভয় পাচ্ছিলেন সেটাও সত্যি করে তিনি জানিয়ে দিলেন নুপুরের দায়িত্ব যেন তারা নেন। তাদের এই সকল কথাবার্তা সবই একপাশে দাঁড়িয়ে শুনতে পাচ্ছিলো অর্ণব। ভেতরে ভেতরে তার একটা রাগ চিড়বিড় করে উঠছিলো। কতোটা অমানুষিক চিন্তা ভাবনা এই মহিলার! ঠিক কতখানি স্বার্থান্বেষী হলে মাত্র কয়েক ঘন্টার সমস্যাতেই এমন বলতে পারে! নুপুরের বাবাকে দেখেছে অর্ণব, তাদের আর্থিক অবস্থারও একটা আন্দাজ সে অনায়েসেই করতে পারে। কান খাড়া রেখে সে শুনতে চেষ্টা করলো নুপুরের মামা কি জবাব দেয়। হতাশ অর্ণব নুপুরের মামা কি বলল এটা! “আমার বোনই যেখানে নাই সেখানে আর কি থাকতে পারে!”

অর্ণব রেগে গেল প্রচণ্ড। একটা মেয়ে তার বাপের বাড়ির সম্পত্তিতেও হকদার হয় যেমনটা ছেলেরা হয় আবার মায়ের সম্পতিতেও। সে হিসেবে নুপুরও তো কিছু পায়? কে জানে হয়ত অনেক কিছুই পায়। অর্ণবের ইচ্ছে করলো এবার তাদের চেপে ধরে মুখের ওপর বলে দেয়, শালা তোদের সম্পত্তিতে আমি ইয়ে করি। আমার নুপুরের দায়িত্ব আমি নিজেই নেব।
চলবে

#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-৩২(শেষাংশ)

” প্রেমে পড়লেই জোর খাটাতে হবে এমন কোথাও লেখা নেই।”

-তাহলে এখন কেন খাটাচ্ছিস?

অর্ণবের কথার জবাবে অতিষ্ঠ হয়ে জিজ্ঞেস করলো রিদওয়ান। সে স্বার্থপর হয়নি একটিবারও কোন পরিস্থিতিতে অথচ প্রত্যেকেই রিদওয়ানকে ভেবে এসেছে স্বার্থপর, চতুর। কেউ বুঝতেই পারলো না এই ছেলেটা কখনোই নিজের বোনকে সাপোর্ট করেনি। সে বুঝিয়েছে বৃষ্টিকে, বুঝাবার চেষ্টা করেছে অর্ণবকে৷ স্নেহের পাত্রী নুপুরকেও একা ছাড়েনি কোন পরিস্থিতিতে। রক্তের চেয়ে আপন কি অন্য কিছু হতে পারে! রিদওয়ান জানে না সে কথা। সে রক্তের সম্পর্কের পূর্ণ মর্যাদার লক্ষ্যেই বাবাকে বলেছিলো অর্ণবের সাথে বোনের বিয়েটা না হোক। বৃষ্টিকে বলেছিলো, তোর জন্য সঠিক একজনকে খুঁজে বের করব তবুও ভুল মানুষকে বিয়েটা করিস না। বোনটাও শুনলো না। অর্ণবকে বোঝালো সময় তোর জন্য এখন ঠিক চলছে না৷ ঝোঁকের মাথায় রাজী হোস না আব্বুর প্রস্তাবে৷ তার আপন মানুষ কেউ শোনেনি তার কথা তাই বাধ্য হয়েই সে চাইছিলো বিয়েটা হচ্ছে হোক নির্বিঘ্নেই হতে পারে ওপরওয়ালার এটা সুন্দর সিদ্ধান্ত! নুপুরের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তাইতো সে অর্ণবকে না জানিয়ে একাই ছুটোছুটি করেছে সব জায়গায়। এখন এই মুহূর্তে এসে সে অর্ণবের রোষানলে পড়েছে, শুনছে ফোনের ওপাশ থেকে বাবার তির্যক স্বরের ধমকি আর বোনের অভিশাপ। এতকিছুর পরও সে চুপচাপ ছিলো কিন্তু এখন আর থাকতে পারলো না কোনভাবেই। অর্ণব এখন যা করতে চাচ্ছে তা নেহায়াতই অন্যায় আবদার। এইতো খানিক আগে নুপুরের বাবার জ্ঞান সম্পূর্ণ চেতনায় ফিরে মেয়ের কাছে ছুটে এলেন। ডাক্তার জানালেন পেশেন্ট এখন বিপদমুক্ত তবে মানসিক ট্রমা নিয়ে এক্ষুনি কিছু বলা যাচ্ছে না। দৈহিক কিছু আঘাতের ওপর চিকিৎসা হয়েছে আর তাকে বেডে দেয়া হয়েছে। এনেস্থিসিয়ার প্রভাব থাকলেও টুকটাক কথা বলতে পারছে। পুলিশ গেল বয়ান নিলো জানা গেল অপরাধী একজন নয় ছিলো জনা তিনেক। তার মধ্যে দুজন ভাড়া করা লোক হলেও অন্যএকজন প্রধান ধর্ষক। নুপুরের একটু আধটু বয়ানে পুলিশ সরাসরি কোন একশনই নিতে পারবেন না বোঝা গেল। তবুও সে যেই ছাড়া ছাড়া ঘটনা বলল, ভাড়াটে একজনের ফোনে লাগাতার একজন ব্যক্তির কল আসতো নাম, সাখাওয়াত। তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো একটি শপিংমলের সামনে থেকে। কিডন্যাপ হওয়ার পূর্বমুহূর্তে একটি অচেনা নম্বর থেকে কল আসে তার হাতের ফোনটিতে যে ফোন অর্নিতার। এবং, তাকে ধরে নেয়ার পর যেখানে রাখা হয় সেখানে সেদিন রাতেই নুপুরেরই বয়সী একটি ছেলে উপস্থিত হয়। ছেলেটির নাম জানে না তবে কোথাও আগেও দেখেছে বলে মনে পড়ে। সেই ছেলেটিই তাকে দেখে প্রথমে যে বাক্যটি উচ্চারণ করে, এ কাকে ধরে এনেছিস এই মেয়ে তো সে নয়। এমনকি ছেলেটি তাকে পেয়েও দারুণ খুশি হয় যেন সে নুপুরকে নিজের জন্যই চাইছিলো। তার গায়ে প্রথম হাতও সেই ছেলেটিই দিয়েছে। টুকিটাকি কথাবার্তায় কনফার্ম হয়েই যায় তার জায়গায় কিডন্যাপ হওয়ার কথা ছিলো অর্নিতার। ভাবতেই তার শিউড়ে ওঠে। পুলিশ সব কিছুই রিদওয়ানকেও জানায় আর থানায় অর্নিতাকেও যেতে হয় নিয়ামানুসারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য৷ এসবের পরই তারা হাসপাতালে পৌঁছে দেখতে পায় নুপুরের সৎ মায়ের বাকযুদ্ধ তার বাবার সাথে। ঘটনা একেবারে সংসার বিচ্ছেদ পর্যায়ে চলে গেলে অর্ণব ধমকে উঠে মহিলাকে। উপস্থিত সকলের সামনে বলে দেয়, আজ এবং এই মুহূর্ত থেকে নুপুরের সকল দায়িত্ব আমার৷ তা শুনেই বাঁধা দেয় রিদওয়ান। সে প্রশ্ন করে বসে, যখন প্রেমে পড়লি তখন কেন এড়িয়ে চলেছিস?

-“প্রেমে পড়লেই জোর খাটাতে হবে এমন কোথাও লেখা নেই।”

-তাহলে এখন কেন খাটাচ্ছিস

-জরুরি বলে।

অর্ণবের চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করলো, আমি যাকে জোর না খাঁটিয়ে ছেড়ে এসেছিলাম সে ছিলো অস্পর্শী, সমাজের চোখে পুতঃপবিত্র। তাকে আমি ছাড়লেও ভালোবেসে তার হাত ধরার জন্য কেউ থাকতো। বিনা বাক্যে সে নিজেই নিজেকে গুছিয়ে নিতো কিন্তু এই যাকে একটু আগেই সে দরজার আড়াল থেকে দেখে এলো ওই মেয়েটি ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সমাজের চোখে তার গায়ে লেগে আছে অপবিত্র কিছু ছোঁয়া যা সমাজ নামের এক জগৎ তাকে কথাবার্তায় দেবে অচ্ছুৎ হওয়ার অপবাদ। ওই মেয়েটাকে সে একা ছাড়বে কেমন করে? কিন্তু না মুখে বলতে পারলো না কিছুই। শুধু বলল, “তখন জরুরি ছিলো না।”

-এখন নুপুরের ওপর অধিকার খাটানো জরুরি?

-হ্যাঁ।

-আর বৃষ্টি!

এবার যেন টনক নড়লো অর্ণবের। দিন ফুরিয়ে রাত নেমেছে এ ধরায়। সেই দুপুরে সে বেরিয়েছে ও বাড়ি থেকে আর এখন মনে পড়লো সে কথা! বৃষ্টির সাথে তো আজ তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। আচমকা দু হাতে মাথা চেপে ধরে বসে পড়লো ফ্লোরে৷ রিদওয়ান দেখলো সে দৃশ্য তবুও নড়লো না জায়গা থেকে। অর্নিতাকে থানা থেকে ফিরে সোজা বাড়িতে পাঠিয়েছিলো রিদওয়ান সে দেখতে পেলো করিডর ধরে দ্রুত পায়ে এদিকেই ছুটে আসছে সে। পেছনে পেছনে আরও দেখতে পেলো বৃষ্টি আর রিমনও আছে। দৃশ্যপট বদলে গেল পলকের মধ্যেই। সেজেগুজে থাকা বিয়ের কনে এসে দাঁড়িয়ে আছে হাসপাতালের করিডোরে তারই ঠিক পায়ের কাছে বসে আছে পূর্ণ বয়স্ক যুবক। একটি বিয়ের লগ্নে অর্ধবিবাহিত কনেকে যখন শুনতে হয় তার বরকে পাওয়া যাচ্ছে না তখন তার ভেতরে কি চলে! ভালোবাসার মানুষের ধর্ষণের সংবাদ শোনা ব্যক্তির কি এই অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা থাকতে পারে না বলেই ধরা যায়। অর্ণবেরও ছিলো না তখন অথচ এখন ঠিক সে উপলব্ধি ফিরে এসেছে তার। কিন্তু….. এখানেই কথা থাকছে। সে বৃষ্টির অপরাধী তার পক্ষ থেকে পাওয়া শাস্তি এখন মাথা পেতে নিতে চাইছে সেই সাথে সে এও পরিষ্কার করেছে নুপুরকে সে ছাড়ছে না। এ দুইয়ের মাঝেই সে এখন অনড়, অটল, অবিচল এক পাথর হয়ে বসে আছে। তাচ্ছিল্য হেসে বৃষ্টিও তাল মিলিয়ে এবার জবাব দিলো, ওই মেয়েটাকে ছাড়তে পারবে না ঠিক আছে তাকে ধরে রাখো কিন্তু আমাকেও বিয়ে করতে হবে এটাই তোমার শাস্তি।

হাসপাতালের সরু করিডোরটাকে রিদওয়ানের মনে হলো এটা একটা নাট্যমঞ্চ, অর্ণব আর বৃষ্টি সেখানে চমৎকার দুই অভিনয়শিল্পী। ক্ষণকাল সে নিশ্চুপ সবটা অবলোকন করে আর স্থির থাকতে পারলো না। দু হাতে টেনে বোনকে সরিয়ে নিতে চাইলো। বৃষ্টি ভাইকে মেনে চলার পাত্রী নয় সে আবারও বলে উঠলো, যদি আমার কথা মানতে পারো তবে এক্ষুনি এই মুহূর্তে আমি নিজেই তোমার ওই মেয়েকে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিব।

-দ্যাখ বৃষ্টি পাগলামি করিস না।

রিদওয়ান বোনকে সতর্ক করতে উদ্বিগ্ন স্বরে বলল। তার কথায় কেউ পাত্তা দিলো বলে মনেই হলো না। অর্ণব সায় জানিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। নুপুরের বাবা মেয়ের কেবিনে বসে আছেন মেয়ের মাথার কাছে। তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পেলেন না এই মাত্র এখানটিতে তাঁর মেয়ের ভবিষ্যত সহসঙ্গী নির্ধারণ হয়ে গেল তারই অজানিতে।
____________

“আজ থেকে আমার জন্য রিদওয়ান মৃত। তার সাথে এ বাড়ির কারো কোন সম্পর্ক থাকবে না সেই সাথে চৌধুরী পরিবারের ওই কালসাপ দুটোর সাথেও নয়।”

অসুস্থ শরীরেই চেঁচিয়ে স্ত্রীকে শুনিয়ে কথাগুলো বললেন বাশার শেখ। রিমনও পাশের ঘর থেকে শুনেছে কথাটা তাই দু পা এগিয়ে সেও চেঁচিয়ে বলল, আর বৃষ্টির সাথে?

-আমার মেয়ের কথা তুলছো কেন সে কোন অন্যায় করেনি। তার জন্য এ বাড়ির দরজা সবসময়ই খোলা এমনকি ওই হতচ্ছাড়ার ভাগের সকল বিষয়াদিও আমি আমার মেয়েকে দেব।

রিমনের ভেতরে ভেতরে কিছুটা রাগ ছিলো বাবার ওপর সেটা জাহির করতে না পেরে বৃষ্টিকে নিয়েই কিছুটা উষ্কে দিতে চাইলো। একটু আগেই বৃষ্টি নিজে ফোন করে বাবাকে জানিয়েছে অর্ণব বিয়ে করছে তার প্রেমিকাকে কিন্তু তাকেও বিয়ে করবে। বাশার শেখ প্রথমে এ নিয়ে রেগে গেলেও মেয়ের কুমিরের কান্না আর জেদের কাছে মিইয়ে গেছেন। রিদওয়ানের মত রিমনও উদ্বিগ্ন তবে সে উপস্থিত সদ্বুদ্ধি মাথায় রেখে চলে বলেই বাবাকে সরাসরি কখনো চটায় না। আবেগ প্রকাশেও সে শতবার চিন্তা করে তবেই আগায় ঠিক সে কারণেই এই মুহূর্তে রিদওয়ান বাবার চোখে যতোটা অযোগ্য রিমন ঠিক ততোটাই যোগ্য। সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে আজকের এই পরিস্থিতির পেছনে দায়ী একমাত্র তার বাবা আর বোন। যে মানুষটার আগে থেকেই একজন মনের মানুষ আছে যেচে কেন সে মানুষটার জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি হতে হবে! নিজের প্রেমকে এতোটা হীন করার মত মন মানসিকতা কি সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষগুলোর থাকে? রিমন আজকের পর হয়তো আর বোনের ব্যাপারে কোন প্রয়োজনেও নাক গলাবে না বলে ভেবে নিলো।
_______

রাত এগারোটা ; থমথমে মুখে নাজিম সাহেব বসে আছেন মেয়ের মাথার কাছে তাঁর হাত দু হাতে চেপে ধরে আছে অর্ণব। বসে আছেন একজন কাজী সাহেব আর অর্ণব, নুপুরের কাছের কিছু মানুষ। অপেক্ষা একটি সম্মতির। ঘন্টা খানেক আগেই বৃষ্টির শর্ত মেনে অর্ণব বিয়ের জন্য রাজী। নুপুরের বাবাকে সরাসরি প্রস্তাব রাখতে চাইলে হঠাৎই তাকে আটকে দেয় নুপুরের ছোট মা৷ তিনি হঠাৎই নুপুরের খুব সজ্জন মানুষ হয়ে আকুতির স্বরে বলে উঠে, তুমি নুপুরের কত আপনজন তা আমি বুঝতে পারছি বাবা৷ তুমি তো মানুষ না একে্কেবারে ফেরেশতা তা না হইলে কেউ এত কিছু হওয়ার পর আমাগো মাইয়াডারে আপন করতো না৷ কিন্তু বাবা তোমার তো অর্ধেক বিয়া হইয়া গেছে এই কথা নুপুরের আব্বা জানলে তোমার হাতে মাইয়ার দায়িত্ব দিব না।

অর্ণব সেদিকে কান না দিয়ে চলে যাচ্ছিলো নুপুরের কাছে। মহিলা তাকে আটকে দিয়ে বোঝাতে লাগলেন, নুপুরের জন্য অর্ণবই যোগ্য কিন্তু তার জন্য আগে তো নুপুরের বাবার রাজী হওয়া লাগবে। আর বাপ রাজী না হলে নুপুর যে স্বজ্ঞানে কেন অজ্ঞানে অর্ণবকে বিয়ের জন্য রাজী হবে না এ অবস্থা কেন সে মৃত্যু পথযাত্রী হলেও হবে না। অর্ণব আর মহিলার কথার সময় বৃষ্টি আর রিদওয়ান পাশে ছিলো না, ছিলো না অর্নিতাও। সেই সুযোগটাকেই মহিলা চমৎকারভাবে কাজে লাগিয়ে অর্ণবকে বোঝালো নুপুরের ভালো করতে চাও তো একটু মিথ্যে বলো। বৃষ্টিকে বিয়েটা করবে বলে যে সম্মত হয়েছে সে কথা অজানা থাক নুপুরের বাবার। এতে করে তাদের কালো, ধর্ষিতা মেয়েটার জীবন বেঁচে যাবে। অর্ণব হয়তো বুঝতে পারলো একটা অন্যায় লুকানোর ছলে তাকে আরও দশটা করতে হবে তবুও ভালোবাসার কাঙাল ভালোবাসাকে পাওয়ার লোভ আর সংবরণ করতে পারলো না। সে মেনে নিলো সব কথা যা নুপুরের সৎ মা ঢেলে দিলো তার কর্ণকুহরে। মহিলা নিজে নুপুরের বাবাকে বললেন মেয়েটাকে এ অবস্থাতেও যে ছেলে চাইতে পারে তাকে পায়ে ঠেলে দেয়া অন্যায়৷ অনেক বুঝিয়ে লাভ হলো এবং সত্যিই নুপুরের মামাকে ফোন করে বলা হলো কাজী নিয়ে আসতে। ততক্ষণে বৃষ্টি আর রিদওয়ানের মাঝে হাসপাতালেই হয়ে গেল এক বাকযুদ্ধ। এরপর কাজী এলে বৃষ্টি নিজেই অর্ণবের স্বাক্ষী হতে এলো। নুপুরের জ্ঞান ফিরেছে সম্পূর্ণ চেতনায় ফিরে মাথার কাছে সকলকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরক্ষণেই থমকে যায় অর্ণবকে দেখে। চমৎকার সাজপোশাকে দাঁড়িয়ে আছে মানুষটা চোখ দুটিতে রক্ত জমাট বাঁধা। উনি কি কেঁদেছিলেন! বুকের ভেতরটা কেমন হাহাকার করে উঠলো নুপুরের৷ মনে পড়ে গেল গত দুদিনে তার সাথে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর সেই মুহূর্ত। চোখের পলক ফেলে ভুলতে চাইলো সেই হিংস্র স্পর্শগুলো যা দেহের উপরিভাগ থেকে ভেতর অব্দি তার খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছে৷ তারপর আবারও চোখ খুলে সে বাবাকে খুঁজতেই দেখতে পেল অর্নিতার ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টি। তার সাজানো মুখটা মনে করিয়ে দিলো আজ তো তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আবারও তাকালো জল্লাদমুখো মানুষটার দিকে। তবে কি তার খবর জানতে পেয়েই তারা স্বামী স্ত্রীতে তাকে দেখতে এসেছে! নিশ্চয়ই মনে মনে বলছে, আহারে মেয়েটা! অন্তর ছাপিয়ে চিৎকার বেরিয়ে আসতে চাইলো নুপুরের। নাহ, ওই মানুষটার মায়া, করুণা, স্নেহ কিছুই চায় না সে৷ চলে যাক অর্ণব, চলে যাক দূরে বহুদূরে। কিন্তু কই, একটি আওয়াজও তো কণ্ঠধ্বনি ভেদ করে উচ্চারিত হলো না। ঠিক সেই মুহূর্তেই বাবা বললেন, অর্ণব তোকে বিয়ে করতে চায় মা এক্ষুনি। তুই কি রাজী?

-নাহ

কম্পিত ক্ষীণ স্বরে তৎক্ষনাৎ জবাব দিলো নুপুর। অবাক হলো না উপস্থিত একটি মানুষও৷ অর্ণব এবার নিজেই প্রস্তাব রাখলো, “আমি তোমার আজীবনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাই আমাকে তোমার অর্ধাঙ্গের জায়গাটা দেবে নুপুর?”

করুণ আর্তরব ছড়িয়ে গেল নুপুরের কানে তবুও সে স্পষ্ট জবাব দিলো, “না”
অর্ণব আবারও প্রশ্ন করলো, বারংবার করলো। এক পর্যায়ে বুঝতে পারলো ওই মেয়েটি নিজেকে আর কিছুতেই তার যোগ্য মনে করছে না বলে এমন জবাব দিচ্ছে ঠিক তখনই অর্ণব নুপুরের বাবার হাত চেপে ধরলো। সপ্রতিভ কণ্ঠে সে এবার সরাসরি নুপুরের বাবাকেই বলল, আঙ্কেল আমি ধর্মমতে বিয়েশাদি সম্পর্কে খুব একটা জানি না তবুও যতটুকু আমার জানা বাবার জীবদ্দশায় একটা মেয়ের বিয়ের জন্য তার বাবার সম্মতি প্রাধান্য পায় প্রথমে। ঠিক সেদিক থেকেই আমি আপনার মতামত চেয়ে প্রস্তাব রাখছি, আমি আপনার একমাত্র মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাই। আপনি কি তার অনুমতি দেবেন? কথা দিচ্ছি আজকের পর থেকে তার সকল সুখ দুঃখের প্রতিটি সেকেন্ডের দায়ভার আমার থাকবে।”

নুপুরের বাবা মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন নীরবে। নুপুর তখনও বলে যাচ্ছে, এ বিয়ে হবে না আমি রাজী নই৷ নাজিম সাহেব কান্নারত অবস্থায় মেয়ের আঁচর খাওয়া মুখটাতে চেয়ে এবার সল্প আওয়াজে জবাব দিলেন, “আমি রাজী৷ আমি আমার মেয়ের সারাজীবনের দায়িত্ব তোমায় দিলাম।আমার মেয়ের আজকের পর কোন প্রকার কষ্টের কারণ তুমি হলে ওপরওয়ালার কাছে বাঁধা থাকবে মনে রেখো।”

এরপর আর জেদ খাটেনি নুপুরের। জোরজবরদস্তিই অর্ণব নুপুরকে দিয়ে সাইন করিয়েছে রেজিস্ট্রি পেপারে। কবুল বলা নিয়ে অবশ্য নাটকীয়ভাবে সময় পেরিয়েছে অনেকটা তবুও হাল ছাড়েনি অর্ণব। পুরো সময়টা জুড়ে বৃষ্টি আড়ালে দাঁড়িয়ে ফেলেছে অশ্রুজল। সে বুঝতে পেরেছে অর্ণবের জীবনে নুপুর কি! সে জেনেছে ভালোবাসা একতরফা কতোটা বিষাক্ত আর দু তরফা ঠিক কতোটা মধুর। দু তরফে ভালোবাসা থাকলে যন্ত্রণাও যে হার মেনে যায় তা সে বুঝে গেছে তবুও লোভী মন অর্ণবকে ছাড়তে চায় না৷ রিদওয়ান শেষ পর্যন্ত বোনের হাত চেপে ধরে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলো। বুঝিয়ে দিলো শত অন্যায়ের পরও বৃষ্টি তার বোন ঠিক কতোটা আদরের কতোটা ভালোবাসার তার কাছে। অথচ সে জানতেই পারলো না অপরদিকে সে পরিবার থেকে হয়ে গেল কতকটা দূর। বুঝতেই পারলো না এক জীবনে তার জন্য কত বেশি অবহেলা ছিলো আরও কতোটা বাকি রয়ে গেল।

চলবে

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ