Sunday, October 5, 2025







কোথাও হারিয়ে যাব পর্ব-৩০

#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-৩০(ক)

শান্ত স্বভাবের রিদওয়ান প্রচণ্ড ক্রোধে হাত মুঠো করে রেখেছে। শপিংমলের নিচতলায় একটি মোবাইল শপের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে অর্নিতা। পরিস্থিতি দিনকে দিন কত যে বিগড়োবে তা নিয়ে আতঙ্কিত অর্নিতা ধীর স্বরে বোঝাতে লাগলো স্বামীকে।

-তুমি প্লিজ রাগ করো না ভাইয়া হয়ত এই শেষ বার নুপুরের মুখোমুখি।

“তুই নিশ্চয়ই তোদের বাড়ি ফিরবি! আমি গেলাম” বলেই রিদওয়ান পা বাড়ায় মল থেকে বেরিয়ে যেতে। অর্নিতা হাত চেপে ধরে রিদওয়ানের।

-প্লিজ…

অর্নিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই তারা লিফটে নুপুরকে দেখতে পায়। গাল বেয়ে ঝরছে তপ্ত জল , মেয়েটা কোন দিক না তাকিয়ে বেরিয়ে গেল মল থেকে। রিদওয়ানও দেখলো নুপুরের বেরিয়ে যাওয়া। অর্নিতা একটু এগিয়ে ধরতে চাইলো নুপুরকে পারলো না। রিদওয়ানও এগিয়ে যায়, “দ্যাখ কি শুরু করেছে তোর ভাই। এই মেয়েটাকে ডেকে এনে কষ্ট দেওয়ার দরকার ছিল!”

-নুপুরের কাছে আমার ফোনটা ছিল।

-তোর ফোনের চিন্তা হচ্ছে? রিডিকিউলাস!

অর্ণব তখনও নিচে আসেনি৷ রিদওয়ান আবার উপর তলায় গিয়ে খোঁজ করলো অর্ণবের। সে বিন্দাস শপিং করছে। সে এখন অপেক্ষা করছে তার স্যুটের। রেডিমেড ব্ল্যাক কোট,প্যান্ট, সাদা লম্বা স্ট্রাইপের শার্ট, লাল রঙা টাই, ক্রিস্টাল স্টোনের ব্রোঞ্জ এক কথায় বিয়ের দিনের জন্য চমৎকার কমপ্লিট স্যুট সিলেক্ট করে নিয়েছে। রিদওয়ান, অর্নি পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই সহাস্যে প্রশ্ন করলো, তোর জন্য পছন্দ কর এবার। আমার বিয়েতে বোনজামাই হিসেবে তুই তো পাওনাদার।

সদা-সর্বদা নিরীহ আচরণ করা রিদওয়ান আজই প্রথম বোধহয় অর্ণবের ওপর ভয়ংকর রকম রেগে আছে। বয়সে অর্ণব ছোট সে হিসেবেও চাইলে পারতো দু চারটা থাপ্পড় মেরে নিজেকে শান্ত করতে কিন্তু নাহ, অসুস্থ মস্তিষ্কে রূপান্তর হওয়া মানুষকে আসলে মেরে-কে*টে কোনভাবেই কিছু বোঝানো সম্ভব নয়৷

-বাড়ি চল। এক্ষুনি বাড়ি ফিরে বলবি তুই এই বিয়ে করছিস না।

-ওকে নিয়ে বাড়ি যা অর্নি। কেনাকাটা আমি একাই করতে পারব।

-বাড়াবাড়ি করিস না অর্ণব…

রিদওয়ানের মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই তার শার্ট চেপে ধরলো অর্ণব। ফিসফিসিয়ে বলল, “আমি বাড়াবাড়ি করি না রিদওয়ান বাড়াবাড়ি করে আমার আমার অদৃষ্টের লিখন আর আমার কাছের মানুষজন।”

অর্ণবের আচমকা এই বজ্র আচরণে ভড়কে গেছে শপের ভেতর থাকা প্রত্যেকটা মানুষ, ভয় পেয়েছে অর্নিতা। তার মুখের ত্বক যেন মুহূর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছে। অর্ণব ছেড়ে দেয় রিদওয়ানকে চুপচাপ বিল মিটিয়ে ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে দ্রুত কদমে বের হয়ে যায় শপিংমল থেকে। কিছু সময় বাকরুদ্ধ থাকে রিদওয়ান -অর্নিতা। অর্ণবের চোখ জোড়া কি একটু ছলছলে ছিল! তেমনই তো দেখলো বোধহয় ভাবছে রিদওয়ান। নুপুরের চোখে জল, জলের আভাস অর্ণবের চোখেও এরপর আর কিভাবে রিদওয়ান চাইবে একমাত্র বোনটার বিয়ে হোক ওই অন্য পথের পথিকের সাথে!

অর্নিতা কষ্ট পাচ্ছে সেই সাথে লজ্জায় মাথা নত তার। তার স্বামীর শার্ট চেপে ধরে আহত করতে এগিয়ে এসেছিলো তারই ভাই। ছিহ, কি বিশ্রী এক পরিস্থিতি এই পাবলিক প্লেসে! তার চক্ষু ফেটে আগুনঝরা অশ্রু আসার পায়তারা করছিলো অমনি শুনলো স্বামীর ডাক।

-চল…

অর্নিতা জিজ্ঞেস করার সাহস পায় না কোথায় যাবে। রিদওয়ান তার হাত ধরে টেনে বেরিয়ে গেল মল থেকে। সি এন জি ডেকে নুপুরের বাড়ির ঠিকানা বলে উঠে বসলো তাতে। নির্বাক অর্নি কিছু বলতে চেয়েও বলল না। যা হচ্ছে হোক সে আর মুখটাই খুলবে না। আধঘন্টার মধ্যে তারা পৌঁছে গেল নুপুরদের বাড়ি৷ বলা বাহুল্য, রিদওয়ান এই ঠিকানায় আগে কখনো না এলেও অর্নির মুখে কয়েকবার শুনেছিলো নির্দিষ্ট এলাকায় পৌঁছে গেছে কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো নির্দিষ্ট বাড়ি বা গলি কোনটাই তার চেনা নয়। তাই এবার অর্নিতা বলল বাড়ির ঠিকানা৷ তারা যখন সিএনজি ছেড়ে প্রধান ফটকে পা দিলো তখন নাজিম সাহেব হন্তদন্ত হয়ে বের হচ্ছিলেন। অযাচিতভাবে রিদওয়ান ধাক্কা খেল নাজিম সাহেবের গায়ে।

-স্যরি আমি দেখতে পাইনি… আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।

নাজিম সাহেব নিজেকে সামলে তাকালেন সামনের যুবকটির দিকে। চেহারা দেখে পরিচিত মনে হলো না তবে পেছনে থাকা অর্নিকে দেখেই কপাল কুঁচকে ফেললেন। তিনি তো এখন সন্দেহবশত এই মেয়েটার ভাইয়ের কাছেই যাচ্ছিলেন মেয়ের খোঁজ নিতে। এখন সালাম শুনে আর তাদের দেখে থেমে গেলেন।

-তোমরা এখানে!

“আঙ্কেল আমরা নুপুরের সাথে দেখা করতে এসেছি আর…… আপনার সাথেও।” ইতস্তত করে বলল রিদওয়ান। নাজিম সাহেব বিশেষ অবাক হলেন এবার। রিদওয়ানও আবার বলল, “আমরা অর্ণব-নুপুরের বিয়ের প্রস্তাব এনেছি। আঙ্কেল আমি জানি আপনি মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন তবুও মেয়ের জন্যই আরেকবার ভাবুন প্লিজ। ছেলে-মেয়ে দুজনই একে অপরকে চায় প্লিজ আমরা তাদের আলাদা না করি। একটু ভাবুন কথাটা।”

রিদওয়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই নাজিম সাহেবের ফোন বাজছে। তিনি ফোনের স্ক্রীণে নজর দিতেই বলে উঠলেন, সরে দাঁড়াও আমার তাড়া আছে।

রিদওয়ান থেমে যাওয়ার পাত্র নয় সে অনুরোধের সুরে আবারও বলল, “আপনি হ্যা বলুন আঙ্কেল আপনার একটা হ্যাঁ তে সবাই সুখী হবে। আচ্ছা নুপুরকে ডাকুন তাকেই জিজ্ঞেস করুন কি চায় সে।”

এবার চোখ তুলে রিদওয়ানের দিকে ভালো করে তাকালেন তিনি। নুপুরকে ডাকতে বলছে এরা! অর্ণবের জন্য বিয়ের প্রস্তাব এনেছে! তবে কি নুপুর তাদের কাছে নেই? ভুল সন্দেহ করে অর্ণবের কাছে যাচ্ছিলেন তিনি! নুপুর কোথায়? মেয়ের বাবা বলেই বোধহয় সরাসরি প্রশ্ন করতে পারলেন না তিনি, নুপুর কোথায় তোমরা জানোনা? কে জানে পরে হয়ত তারা ভেবে নেবে তাঁর মেয়ের চরিত্র ভালো না। তিনি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে স্ত্রীকে ডেকে বললেন, মেইন গেইট লাগায়া দাও কেউ যেন ঢুকতে না পারে ভেতরে। অত্যাশ্চর্য চাহনি মেলে চেয়ে আছে অর্নিতা। তাদের মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিতে বলছে!

________

অর্নিকে বাপের বাড়িই রেখে নিজেদের বাড়ি ফিরলো রিদওয়ান। বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে হুট করে হলেও আয়োজন নেহাৎ কম করেননি বাশার শেখ। বাইরের আত্মীয় কম হলেও বংশের প্রায় সকল আত্মীয়কেই দাওয়াত করে ফেলেছেন দু দিনের সিদ্ধান্তে। বাড়িতে পা রেখে প্রথমেই দেখতে পেল বড় ফুপির ছোট মেয়েকে৷ তারপরই চোখে পড়লো নানী বাড়ির সব, দাদী বাড়ির তো আত্মীয়ের সাথে তাদের কাজের লোকজনও হাজির। একবার নজর ফিরিয়ে মাকে খুঁজলো সে৷ কোথাও চোখে পড়লো না। এবার খুঁজলো বৃষ্টিকে। তার প্রথমে দরকার বোনকেই। মেয়েটাকে ভালো করে বুঝিয়ে নিতে হবে এ বিয়ে সুখকর নয় তার জন্য৷ দূর্ভাগ্য বৃষ্টি গেছে পার্লারে। প্রি ওয়েডিং শুট নাকি করবে তাই সাজছে। বড্ড পাগল পাগল লাগে রিদওয়ানের বোনটার এত উৎসাহ দেখে৷ হঠাৎ বিয়ে তবুও সে ষোলআনা আনন্দ আয়োজন করতে চাইছে৷ বোনটা যদি বুঝতে পারতো তার পোস্ট ওয়েডিং দিনগুলো কেমন কাটবে তাহলে হয়ত এই প্রি ওয়েডিং শুট কল্পনায়ও আসতো না। ঘুরেফিরে সে যায় এবার বাবার কাছে।

“এখনও বিপদ হয়নি আব্বু বন্ধ করে দিন এই আয়োজন৷”

চলবে

#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-৩০(খ)

প্রি ওয়েডিং শুটে অর্ণবকে পাওয়া গেল না। বৃষ্টির একক কিছু শট নেয়া হয়েছে। বিয়ের দিনের ভিডিও থেকে অর্ণবের কিছু শটকাট জুড়ে দিয়েই নাকি সেটা কভার করতে পারবে বলেছে ভিডিওগ্রাফির লোক। পরেরদিন বৃহস্পতিবার বেশ জমজমাট হলো বৃষ্টির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। বাড়িভর্তি আত্মীয়ের ভীড়ে উপস্থিত ছিল ময়না আর তার মেয়ে। ছেলের বিয়ে কিন্তু ওই বাড়িতে পা রাখার অধিকার নেই আর সন্তানেরা তাকে মায়ের অধিকার দেয় তাই ভাগ্নির কাছে থেকেই স্বাদ মেটাচ্ছে ছেলের বিয়ের। অনেকটা, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত অবস্থা। অপরদিকে চৌধুরী বাড়িতে হলুদের ছোটখাটো আয়োজন করা হয়েছে বসার ঘরেই। আমন্ত্রিত মেহমান শুধুই বড় দাদীর বাড়ির বউ, নাতি-নাতনীদের দল। কিন্তু যার জন্য আয়োজন তার দেখা মিলল না সারারাত পেরিয়ে ভোর বেলাতেও। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার দিনটার সকল কাজের মাঝেও অর্নিতা আর রিদওয়ানের কেটেছে ভয়ংকর এক চিন্তার মধ্য দিয়ে। ঘরে যখন ফুল, বাতি দিয়ে হলুদের আসন পাতা হচ্ছিলো তখনই সেখানে উপস্থিত হয় নুপুরের বাবা আর বড় মামা। তাদের দেখে দাদী কিছুটা রেগে গেলেও অর্নিতা মনে মনে ভীষণ খুশি হয়েছিল। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছিলো যেন ভালো কিছু হয়, নুপুর যেন তার ভাইয়েরই হয় এবার। অর্নিতা এগিয়ে যায় নুপুরের বাবার সাথে কথা বলতে রিদওয়ানও এসে পাশে দাঁড়ায়। নিজের বাড়িতে বাবার সাথে রাগ করে রিদওয়ানও উপস্থিত হয়েছিল সেখানে। নুপুরের বাবা মলিন মুখে প্রশ্ন করেন, “নুপুর কোথায়?”

-নুপুর!

বসার ঘরে তখন দাদী,রিদওয়ান আর অর্নি ছাড়াও বড় দাদার বাড়ির অনেকেই ছিল সেখানে। প্রত্যেকেই নামটা শুনে কৌতূহলী হয়ে মনোযোগ দেয় তাদের দিকে। নাজিম সাহেব আবারও বলে উঠেন, কাজটা ঠিক করছো না তোমরা। নুপুর কোথায় ডাকো ওরে। কি করে পারলো সে এমন কাজ করতে!

অর্নিতা বোকার মত তাকায় নুপুরের বাবার দিকে। ওনার কথা কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার। রিদওয়ান কিছু আন্দাজ করতে পারলো।

-আঙ্কেল কি হয়েছে ঠিক করে বলুন, নুপুর কোথায় আমরা কি করে বলব?

-মিথ্যে বলো না আমি জানি নুপুর এখনেই আছে। সে কালকে দুপুরে অর্নিতার সাথে দেখা করতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি৷ অর্ণবকে কোথায়?

অর্ণব! আসলেই তো ভাইয়া কোথায় সকাল থেকে? কিন্তু উনি যে বলছেন নুপুরকে কাল থেকে পাচ্ছেন না। আতঙ্কিত হয়ে পড়ল অর্নিতা৷

রিদওয়ান প্রশ্ন করলো, “আঙ্কেল ঠিকঠাক খোঁজ নিয়েছেন সব পরিচিতদের কাছে?”

“দ্যাখো নাটক করবা না তোমরা আমি জানি আমার মেয়ে অর্ণবের সাথেই আসছে৷ বের করো ওকে। নুপুর এ্যাই নুপুর সামনে আয়৷ এত নাটক ভাল্লাগতাছে না। নুপুর জলদি আয়। মনে রাখিস এখন ভালোয় ভালোয় না আসলে আমি তোরে ত্যাজ্য করব।”

চেঁচিয়ে এক নাগাড়ে ডেকে হুমকি দিতে লাগলপন নাজিম সাহেব। বসার ঘরে এবার শোরগোল লেগে গেল বাকিদের কথাবার্তায়। রিদওয়ান, অর্নিতা কিছুতেই থামাতে পারছে না নাজিম সাহেবকে সাথে নুপুরের মামাও। অনেক কথার পর সকলেই শান্ত হলো সেই সাথে নুপুরের বাবাকে বিশ্বাস করানো গেল অর্ণবের সাথে নুপুর নেই। ক্ষণকাল স্তব্ধ থেকে বড় আকস্মিক হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন নাজিম সাহেব। পঞ্চাশোর্ধ প্রৌঢ় অনাত্মীয় মানুষ গুলোর সামনে এভবে বোধহয় একমাত্র হৃদয়ের কোন খন্ডে আঘাত পেলেই এভাবে কাঁদে। রিদওয়ান এগিয়ে এসে বাহু আঁকড়ে ধরলো। নুপুরও কাঁদছে আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে। এতক্ষণে প্রায় সকলেরই একটি ধারণা হয়ে গেছে, এই লোকটির মেয়ে নিখোঁজ। পরিস্থিতি অনুমান করে রিদওয়ান তাকালো নুপুরের মামার দিকে।

-আঙ্কেল থানায় ডায়েরি করেছেন?

-নাহ বাবা। নাজিম তো বলল, আমার ভাগ্নির নাকি এ বাড়ির ছেলের সাথেই আছে সে। কাল রাত পর্যন্ত খোঁজখবর নিয়ে না পেয়েই আমরা ধরে নিয়েছি মেয়েটা এখানে। মোবাইলটাও তো সাথে নেয়নি।

নুপুরের মামার কথা শুনে রিদওয়ান বুঝলো তাদের চিন্তাধারা ঠিক কি ছিল। কিন্তু এখন আর বসে থাকার জো নেই এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। সে এবার নুপুরের বাবা আর মামাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। যেতে যেতে অবশ্য অর্নিতাকে সতর্ক করে গেল অর্ণব যেন ঘুণাক্ষরেও কিছু টের না পায়। বসার ঘরের প্রত্যেকেই আন্দাজ করলো রিদওয়ান যেতে যেতে নিজের বোনের আনন্দ নষ্ট না হবার চেষ্টাও করে গেল। অর্নিতা সবাইকে বুঝিয়ে তো বলল একটু আগের ঘটনা কিছুতেই ভাইয়াকে জানানো হবে না কিংবা নিজেকে কি করে বোঝাবে! কাল তো নুপুর তার সাথেই ছিল তার ভাইয়ের সাথেও কিছু একটা হয়েছে৷ নইলে, তখন মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে গেল কেন আর ভাইয়ারও চোখ অমন জলে ভেজা। বুকের ভেতর তুফান চলছে নুপুর ঠিক আছে তো! উল্টাপাল্টা কিছু করে বসেনি তো আবার? নুপুরের কাছে তো তার ফোনটা ছিল অনেকবার কল করেছে সে রিদওয়ানের নম্বর থেকে একবারও তোলেনি৷ পুরো দিন আর রিদওয়ান বাড়ি ফিরতে পারেনি৷ প্রথমেই থানায় মিসিং ডায়েরি করে সম্ভাব্য সবরকম খোঁজ নিয়েছে নুপুরের বাবার সাথে মিলে তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে৷ সন্ধ্যে নাগাদ অর্নিতা ফোন করে কাঁদতে লাগল ভাইয়া ফোন ধরছেনা বলে। এ পর্যায়ে সে নাজিম সাহেবকে জোর করে বাড়িতে রেখে নিজে চলে গেল অর্ণবের খোঁজে। অর্ধরাত পেরিয়ে গেলেও অর্ণব ফোন তুলল না আর না তাকে খুঁজে পেল। রাত আনুমানিক তিনটার পর বাড়ির গেইটে কড়া নাড়লো অর্ণব৷ দারোয়ান গেইট খুলতেই সে বাড়ির ভেতর সদর দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। এতরাতেও দরজা খোলা! একটু অবাক হলেও তা কেটে গেল পরক্ষণেই। সোফার ওপর গা এলিয়ে পড়ে আছে রিদওয়ান৷ হলুদের জন্য পাতা হয়েছিল যে আসনটা সেটাতে চাঁদর মুড়ে শুয়ে আছে অর্নিতা৷ তা দেখেই অপরাধবোধ জাগলো অর্ণবের। ইশ, তার জন্যই বুঝি অপেক্ষা করতে করতে এখানে শুয়ে আছে বোনটা! রিদওয়ানটাও ঘুমায়নি দেখছি?

অর্ণব যখন অপরাধবোধে রিদওয়ানের দিকে সংকোচ নিয়ে তাকায় ঠিক তখনি তাকে ভড়কে দিয়ে রিদওয়ান এসে থাপ্পড় বসায় তার গালে। নিস্তব্ধ রাতে বোধকরি, থাপ্পড়ের আওয়াজেই ঘুমটা চটে গেল অর্নিতার। সে শোয়া থেকে উঠে বসতেই দেখলো তার স্বামী মানুষটা তার ভাইকে কেমন শাষণের সুরে কিছু বলছে। কি বলছে তা যেন তার সদ্য জাগা মস্তিষ্ক বুঝতে পারছে না। দু চার কথা বলেই রিদওয়ান দোতলায় উঠে গেল। অর্ণব ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গাতেই। এবার অর্নিতা ডেকে উঠলো, কোথায় ছিলে ভাইয়া?

-কারখানায়।

-এত রাত পর্যন্ত!

-হু, বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছিলো না। তাই নতুন মালগুলো নিজেই এক এক করে সব চেক করছিলাম।

-কেউ তোমাকে ফোন করেনি সারাদিন?

কৌশলে যেন জানতে চাইলো নুপুরের সাথে কথা হয়েছে কিনা। অর্ণব পকেট হাতড়ে ফোনটা বের করে বলল, ” ফোন সাইলেন্ট ছিল সারাদিন। এইতো অনেক গুলো মিসডকল দেখা যাচ্ছে। আটাত্তরটা কল! এত কল কি তোরাই করেছিস!”

– দেখো চেক করে অন্যরাও হতে পারে।

অর্নিতা নিজেই ভাবছে ভাইয়ের ফোনটা একবার দেখে নেবে কি! নাহ, অর্ণব নিজেই এতক্ষণে দেখে নিয়েছে। কল লিস্টের সব নম্বর রিদওয়ান, ম্যানেজার আঙ্কেল আর বৃষ্টির। ভাগ্যিস ফোনটা সাইলেন্ট ছিল নইলে তো বৃষ্টির কল দেখলে ধরে ফেলত আর উলটপালট কিছু বলে ফেলত৷

অর্নিতা আবার ডাকল, “ভাইয়া!”

-বল

-আর কয়েকঘন্টা বাদে বৃষ্টি আপুর সাথে তোমার বিয়ে সে কথা মনে আছে তোমার!

-আরেহ… আমার বিয়ে আমি ভুলে যাব?

তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো যেন গোমড়ামুখো ছেলেটা। অর্নি সে হাসি দেখে বলল, ভোর হতে চলল ঘুমিয়ে নাও একটু৷

-হ্যা রে একটু ঘুম দরকার তা না হলে কাল দেখতে খুব বিশ্রী লাগবে।

আর কোন কথা নেই ভাই-বোনেতে। অর্ণব নিজের ঘরে গিয়ে চোখ বুঁজে শুয়ে পড়লো বিছানায়। কাল রাত থেকে আজ রাত পর্যন্ত কোন দানা পেটে পড়েনি তার তবুও মনের ক্লান্তির চাপেই বুঝি ঘুম নেমে এলো চোখের পাতায়। ঘুম ভাঙলো দাদীর গলা শুনে। ঘুমটা এখন প্রচণ্ড গাঢ় তবুও তাকে উঠতে হলো বিছানা ছেড়ে। মসজিদ থেকে ভেসে আসছে খুতবার সুর। হঠাৎ মনে হলো আজ তো শুক্রবার তবে কি বারোটা বেজে গেল! এতক্ষণ ঘুমিয়েছে সে? এদিক সেদিক তাকিয়ে রিদওয়ানকে খুঁজলো এবার৷ রাতের থাপ্পড়টা সে ভুলে গেছে বিছানায় যেতেই৷ দাদী এবার নিচে থেকে ডাকলো, “দাদাভাই! নাশতা খাইতে আয়।”

” গোসল করে খাব দাদী।”
_________

সকাল আটটা থেকে রিদওয়ান ক্লিনিকে বসে আছে এখন বাজে বেলা বারোটা। সকাল সাতটায় সে ফোন পেয়েছে নুপুরের মামার । কোথাও একটা মেয়ের লাশ সনাক্ত করতে পুলিশ ডেকেছে তাদের। থানায় ডায়েরি যেহেতু নুপুরের বাবা করেছেন তাই প্রথম কলটা তাঁকেই করা হয়। তিনি সে সংবাদ শুনেই অচেতন হয়ে পড়েন৷ গতকাল রিদওয়ান সাথে সাথে ছিল বলেই তার ফোন নম্বরটা রেখেছিলেন ভদ্রলোক আর আজ বিপদ হতেই রিদওয়ানকে খবর দিলেন। নাজিম সাহেবকে হাসপাতালে রেখেই আবার সে লাশ দেখতে নিজেই গেল। নুপুরের অতিআপনজনদের প্রয়োজন পড়েনি রিদওয়ান নিজেই দেখে সনাক্ত করতে পারলো এটা নুপুর নয়। এ লাশের গায়ের রঙ ধবধবে সাদা আর নুপুরের শ্যামলা। নুপুরের প্রতি স্নেহ কাজ করলেও আজ মূলত অর্ণবকে সরিয়ে রাখতেই সে এত এগিয়ে এসেছে নাজিম সাহেবের বিপদে। অর্ণব যতক্ষণ নুপুর সম্পর্কিত ঘটনা না জানবে ততক্ষণ নিশ্চিত থাকা যায় বৃষ্টির বিয়েতে কোন বাঁধা আসবে না। হলোও তাই, কয়েকঘন্টার ব্যবধানে অর্ণব শার্ট,কোট, জুতো সেই সাথে নুপুরের দেয়া প্রথম উপহার সেই ব্রেসলেটটা পরে চলে গেল বিয়ে করতে। আয়োজন সে চায়নি বলেই মেহমান নেই তেমন। বরযাত্রী হিসেবে ছিলো শুধুই নিজের বাড়ির মানুষজন। অর্নিতা, বড় দাদা, দাদার ছেলে, নাতি আর তাদের স্ত্রী সন্তানরা। সব মিলিয়ে মাত্র ত্রিশ জন নিয়ে চলে গেল শেখ বাড়িতে।

চলবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ