কোথাও হারিয়ে যাব পর্ব-২৫

0
445

#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-২৫

রাত আটটায় অর্ণব আবারও গেল বড় দাদার বাড়িতে। সন্ধ্যার পরই সাখাওয়াত ভাই বাড়ি ফেরে তা সে জানে বলেই আর দেরি করতে চাইছে না। গেইটের দারোয়ান কোন প্রশ্ন ছাড়াই অর্ণবকে ঢুকতে দিলেও বিপত্তি বাঁধলো ঘরের দরজায়। কলিংবেল বাজালো দু বার কিন্তু ওপাশ থেকে খোলার নামগন্ধ নেই। অফিস থেকে ফেরায় পরনে শার্ট, কোট। গরম লাগছে আজ ভীষণ তারওপর ক্লান্ত শরীরে দাঁড়িয়ে থাকতে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কোট খুলে হাতে নিয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতেই আরও একবার বেল বাজালো। দরজাটা খুলল বড় ভাই সাখাওয়াতের বউ। অর্ণব কোনমতে সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। বড় ভাবী সালামের জবাব দিয়ে প্রশ্ন করলো, মেজাজ চড়েছে মনে হচ্ছে কি ব্যাপার?

-এ বাড়িতে আজকাল একবার বেল বাজালো ঢোকা যায় না মনে হচ্ছে বিল গেটসের চেয়েও বেশি সিকিউরিটি একানে বসেছে৷

-ওমা এ কথা কেন! এই রিমি এক গ্লাস শরবত কর তো।

বড় ভাবী কাজের মেয়েটাকে শরবতের কথা বলে অর্ণবকে বসতে বললেন। সে বসলো না জানতে চাইলো সাখাওয়াত বাড়ি আছে কিনা? ভাবী জানালেন, আছে।

-আমি দাদার ঘরে যাচ্ছি ভাইকে বলবেন আমি এসেছি।

-এখানে বসো শরবত খেয়ে একটু জিরিয়ে নাও দেখে মনে হচ্ছে অফিস থেকে ফিরেছো।

-হু।

-শুনলাম বিয়ে ঠিক হয়ে যায় মিষ্টি ছাড়াই সংবাদ পেলাম এটা তো ঠিক না।

অর্ণব দাদার ঘরের দিকে এগুতে এগুতে শুনলো ভাবীর কথা জবাব দিলো না। রিমি ততক্ষণে শরবতের গ্লাস হাতে ভাবীর সামনে দাঁড়িয়েছে।

-যা ও ঘরে দিয়ে আয় আর এখানে থেকেও তখন গেট খুললি না কেন?

-তওবা কাটছি না সকালে এই বেডায় আইলে জীবনেও দরজা খুলমু না আমি।

-ওহ সকালে ওর কথাই বলছিলি?

-হ ছোট ভাবীরেও কইছিলাম তো।

-ও একটু রাগী তবে মানুষ ভালো। যা শরবত দিয়ে আয়।

-আমি যামু না বেডার সামনে। দেখলেই মনে হয় সিনেমার গুন্ডা বাস্তবে আইয়া পড়ছে।

সত্যিই আর কাজের মেয়েটি শরবত নিয়ে গেলো না। ভাবী নিজেই শরবত দিয়ে সাখাওয়াতকে জানিয়ে এলেন অর্ণব এসেছে।
___________

সকালে বাড়ি এসেই রিদওয়ান মা আর বৃষ্টির সাথে টুকটাক আলাপ সেরে ব্যাগ আনপ্যাক করে গিফটগুলো বের করলো। বৃষ্টি প্রায়ই তার শখের কিছু জিনিসের লিস্ট দিতো। রিদওয়ান বোনের লিস্টের প্রায় অধিকাংশ জিনিসই প্রতি মাসে কিনে রাখতো সেই সাথে আসার সময় অর্নি, বাবা-মা, রিমন, অর্ণবের জন্যও কিনেছে। কিন্তু আসার সময় ওজনের বেশি হওয়ায় অনেক কিছুই প্যাক করেনি তার মধ্যে অর্নি আর তার নিজের জন্য কেনা প্লাটিনামের কাপল ব্রেসলেট। ছোট্ট জিনিস ছিলো তবুও সেটা রেখে বোনের পছন্দের পেন্ডেন্ট আর রিংটা নিয়ে এসেছে। ব্রেসলেটটা আসলে জায়গার অভাবে না মূলত অর্নিকে নিজের কাছে নিয়ে কোন এক বরফ ঝরা রাতে পরানোর ইচ্ছে বলেই রেখে এসেছে। এ দেশে বরফকুচির বর্ষণ কোথায় পাবে তাই প্ল্যান কষেছে খুব শিগ্রই অর্নিকে নেওয়ার আয়োজন করবে। ব্যাগের সকল জিনিস বের করে বৃষ্টিকে দেখাতেই সে বেশ উচ্ছ্বসিত হলো। মাও খুশি হলেন তবে তিনি অপেক্ষা করছিলেন ছেলের কাছ থেকে কিছু শোনার জন্য। প্রায় একটা বছর পর দেশে এলো রিদওয়ান মায়ের মন ভীষণ আগ্রহে চেয়ে দেখছে ছেলেকে। চেহারায় বদল এসেছে ছেলের অনেকটা। স্বাস্থ্যে খুব পরিবর্তন নেই তবে গায়ের রঙটা যেন আগের চেয়ে ফর্সা হয়েছে আর মাথার চুলগুলো আগের চেয়েও ছোট লাগছে। এইতো এইটুকুই তো পরিবর্তন আর কি দেখতে চাইছে মা! মায়ের দৃষ্টি লক্ষ্য করে অপ্রস্তুত হলো রিদওয়ান। বলতে চাইলো, কি দেখছো আম্মু? করলো না এই প্রশ্নটা উল্টো বলতে লাগল, তোমায় ভীষণ মিস করেছি আম্মু। প্রতি বেলায় খেতে বসে আর ক্লান্তির সময়টুকুতে শুধু মনে হতো তুমি যদি একটু মাথায় হাত রাখতে!

হ্যাঁ, ঠিক এটাই যেন শোনার আগ্রহে উতলা হয়েছিল রায়নার কান, হৃদয়। অন্তর শীতল করতে এই বাক্যগুলোরই দরকার ছিল মায়ের। মা জাতি বড় অদ্ভুত। লক্ষ, কোটি টাকার সম্পদের চেয়েও বড় তাদের কাছে বরাবরই সন্তানের আকুলতায় নিজেকে খুঁজে পাওয়া। মা সত্তায় বুঝি সর্বাত্মক পাওয়া সন্তানের ভালোবাসাই। রিদওয়ানের মুখ নিঃসৃত মাকে অনুভব করা বাক্যগুলোই সুখের সর্বোচ্চটা দিয়ে দিলো রায়নাকে। রিদওয়ানও মায়ের অন্তর শীতল করে চলে গেল আব্বুর কাছে। অফিসে গিয়ে রিমনকে পেলেও আব্বুকে পাওয়া গেল না। লাঞ্চের পুরো সময়টা রিমনের সাথে কাটিয়ে বাড়ি ফিরলো কঠিন মন নিয়ে। আজ রাতটাই সে বাড়িতে কাটাবে আর বোনকে বুঝিয়ে বলবে অর্ণবকে বিয়ে না করতে। যে পুরুষের মনে আগে থেকেই কেউ আছে সে পুরুষের সাথে বোনের সুখ ভাবাটা বড্ড বোকামি। রাত হলো আব্বুও ফিরলো আজ তাড়াতাড়ি। পুরো পরিবারের একত্রে দেখা হলো রাতের খাবারে। খেতে বসে বাবার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়ে ধীরে সুস্থে খেতে লাগলো রিদওয়ান। পাশ থেকে রিমন বারংবার ইশারা করছে কিছু একটা তা বাবার চোখে পড়তেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিছু বলবে?

-আমি না আব্বু; ভাই বলতে চায়।

-কি?

-খাওয়া শেষ করো সবাই ড্রয়িংরুমে বোসো তারপর।

রিদওয়ান কথাটা বলে খাওয়ায় মনোযগী হলো। বাশার শেখ কৌতূহলী হলেও খাওয়া শেষ করলেন ধীরেই। বৃষ্টির হঠাৎ গলা শুকিয়ে এলো খাবার খেতে পারলো না একদমই। কিছু সময় পর যখন সবাই একত্রে বসলো বসার ঘরে বৃষ্টি তখন চিন্তিত মুখে দেখতে লাগলো ভাই দুজনকে। তার আগেই ভয় হচ্ছে ভাইয়ারা কি অর্ণব ভাইকে নিয়েই কিছু বলবে! দুরু দুরু ভয় বুকে চোখেও জল থৈ থৈ তার। রিদওয়ান খেয়াল করেছে বোনের সজল নয়ন। বুকটা এবার তারও শুকিয়ে এলো মুখ খোলার আগেই। মন বলল থাক না কথাগুলো বোনটা যাকে চায় তাকেই পাক। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা না পাক তার ছোট্ট পুতুলটা। সে তো জানো হারানোর আতঙ্ক ঠিক কতোটা ভয়ানক। রিমন তাকিয়ে ছিল ভাইয়ের দিকেই। কখন তুলবে কথাটা আগ্রহে উতলা হচ্ছে। সেও তো ভালোবাসে বোনকে সে কি খারাপ চায় বোনের! কিন্তু রিদওয়ানের চোখ মুখ বলছে অন্যকথা। ছন্নছাড়া ভাইরা বিয়ের পর খুব বেশিই আবেগী হয়ে গেছে বলে মনে হলো। ভয় হলো ভাই না আবার আব্বুর মতোই হঠকারী সিদ্ধান্তটিকে প্রাধান্য দেয়।

-আমিই কথা শুরু করছি।

রিদওয়ান শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে এই ভয়ে রিমনই মুখ খুলল।

-কি কথা?

-বৃষ্টির বিয়ের কথা।

রিদওয়ান কথা বলল। বাশার শেখ কি করে যেন বুঝে গেল ছেলেরা দুজনই অর্ণবের সাথে বৃষ্টির বিয়ের বিপক্ষে তাই আগে ভাগে তিনি জায়গাটা থেকে বৃষ্টিকে সরিয়ে দিলেন পড়াশোনার নাম করে। রায়না বসেছিলেন তাকেও পাঠালেন কফির বাহানায়। বসার ঘরটিতে তখন রইলো শুধু রিদওয়ান, রিমন আর তাদের বাবা। রিদওয়ানই বলল এবার, ‘হুট করে বিয়ের সিদ্ধান্ত কেন নিলে আব্বু?’

-বয়স হয়েছে মেয়েকে বিয়ে দেবো না?

– সামনে ফাইনাল পরীক্ষা বৃষ্টির আর তো কয়েকটা মাস তাছাড়া অর্ণবের সাথে কেন?

রিদওয়ান কথাটা শেষ করতেই বাশার শেখ ধমকে উঠলেন ছেলেকে।

-সেই কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে? আর তুমি কি ভেবেছো ভাইকে এনে আমার সামনে দাঁড় করালেই আমি তার কথা শুনবো?

শেষের কথাটা রিমনকে উদ্দেশ্য করে বললেন তিনি। রিমন জবাব দিতে চাইলে রিদওয়ান থমিয়ে দিলো তাকে।

-ও কিছুই বলেনি। আমি নিজেই তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি আব্বু। অর্ণব অন্য একটি মেয়েকে পছন্দ করে আজ নয়তো কাল সে মেয়েটিকে জানাবেও সে কথা আর বিয়েও……

-চুপ করো তুমি বেয়াদব ছেলে। নিজে যা ইচ্ছে করে পার পেয়ে গেছো বলে খুব বড় ভাবছো নিজেকে? আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি হবে সেটাই। অর্ণবকে নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না। আর হ্যা, দেশে যেহেতু এসেই গেছো বোনের বিয়ে খেয়ে তবে যেয়ো। এ মাসের শেষেই তারিখ ঠিক করবো। আমার মেয়ের ভালো মন্দ নিয়ে তোমরা কোন কথা না বললেই আমি খুশি হব।

নিজের বক্তব্যটুকু শেষ করেই বাশার শেখ স্থান ত্যাগ করলেন। রায়না কফি হাতে উপস্থিত হতেই ছেলেদের বিমর্ষ মুখ দেখলেন। স্বামী মানুষটাও এখানে নেই তবে কি তাদের মধ্যে কোন ঝামেলা তৈরি হলো! সকাল থেকেই তো মনটা কু ডাকছিলো তারওপর রিমন কয়েকদিন ধরে রেগে আছে তার বাবার ওপর। সব মিলিয়ে ভয় পাচ্ছেন রায়না। ছেলেদের সামনে কফি রেখে কি হয়েছে জানতে চাইলেন। রিদওয়ান অস্থির হয়ে মায়ের হাত দুটো ধরলো, আব্বুকে বোঝাও আম্মু এভাবে বিয়ে দিয়ে বৃষ্টি সুখী হবে না। একটিমাত্র বোন আমাদের তার জন্য হাজারটা খুঁজে ব্যাটার মানুষটাকেই আমরা আনবো।

রায়না শুনলেন ছেলের কথা জবাবে চুপ রইলেন। তিনি রিমনের মুখে যেদিন শুনলেন অর্ণব কাউকে পছন্দ করে সেদিন থেকেই মেয়েকে বুঝিয়ে চলছেন। বৃষ্টি কান্নাকাটি করছে তবুও কথা মানতে চাইছে না। কাল রাতে তো নির্লজ্জের মত বলেই বসলো, বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে আম্মু৷ পুরুষ মানুষ এক রাত কাটলেই সব ভুলে যাবে।

মেয়ের মুখের কথা শুনে তিনি কান চেপে সরে এসেছেন লজ্জায়। এরপর আর কিছু বলার নেই মেয়েকে। কিন্তু অর্ণব কেন চুপচাপ সেটাই তিনি বুঝতে পারছেন না।

___________

-অবহেলা করলে তা ফিরে আসবেই সে কথা জানেন তো!

স্পষ্ট রূঢ় আর গাঢ় অভিমানী স্বর শোনা গেল নুপুরের কণ্ঠে।

-ভুল ভাবছো। কাউকে অবহেলা করার ক্ষমতা আমার এখনো হয়নি৷ আগেই ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত বলে চাইছি। ক্ষমা করে দিও যদি আমার কথাবার্তাতে কোন প্রকার প্রশ্রয় পেয়ে থাকো তো!

– আরেহ না না…. আপনি আর প্রশ্রয়! আমারই ভুল। অবহেলা, প্রশ্রয় কোনটাই আপনি করেননি আমি ভুল বুঝে এসেছি। আজকের পর আর বুঝবো না। ভালো থাকবেন।

কথার সমাপ্তি টেনে কল কেটে দিলো নুপুর। অর্ণব ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো গলির অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তার কিনারায়। চোখ সওয়া আঁধারে বিষন্নতা সবেই গা ছুঁয়ে দিচ্ছিলো কি আবার মনে পড়ে গেল বড় দাদার ঘরের বাইরে হওয়া সাখাওয়াতের প্রচ্ছন্ন হুমকিটা। সাথে সাথেই পা বাড়ালো থানায়। যার জন্য গেল তাকেই পাওয়া গেল না। ফোন করে জানতে পারলো লোকটা নিজ বাড়িতেই আছে৷ অর্নব আবার গেল সেদিকে। পরিচিত পুলিশ সুপার আনোয়ারের সাথে কথা বলে একটা জিডি করতে চেয়েও শেষ মুহূর্তে মত পাল্টালো। বংশের লোকের সাথে এভাবে সরাসরি বোধহয় লড়াই করা যায় না। বড় দাদার সাথে কথা হলো খুব স্বাভাবিক আর কথা হলো ছোট দাদার গ্রামের পুরো বাইশ বিঘা কৃষি জমি নিয়ে৷ এই জমির কথা অর্ণব বহুবার শুনেছে দাদার মুখে, দাদীর মুখে কিন্তু নিজ চোখে সবটা দেখা হয়নি। অনেক বছর হয়েছে মনেও পড়তো না সেগুলোর কথা। গত বছর লোনের জন্য যখন প্রথম আবেদন করলো সে তখন দাদী এই জমির কথা বললেও আসল কাগজপত্রের হদিশ করতে পারেননি৷ অর্ণবও সে জমি বাদ রেখেই শুধু শহুরে জমিগুলোর পেছনে পড়েছিল যেহেতু এই জমিগুলোর আইনানুসারে অর্ণবের নাম করা। অথচ এখানেও পিঠ পিছে গুটি চালছিলো আপন রক্ত। সাখাওয়াত ভাইয়ের শীতল ধমকিটা তাই যেন বুঝিয়ে দিলো তাকে। এরপর আর মাথায় এলো না আবেগতাড়িত কোন কথা তাই নুপুরের ফোন কল পেয়ে মুখের ওপর বলে দিলো ক্ষমা করে দিও আমার মাধ্যমে কোন রূপ আঘাত পেয়ে থাকলে। তার কথার প্রেক্ষিতেই দু চার কথা বেড়ে গেল। নুপুরও ভেবে বসলো অর্ণব কোন কারণে তাকে অবহেলা করছে।

___________

গত রাতেই আব্বুর সাথে বাক বিতন্ডা শেষ করে রিদওয়ান বৃষ্টির সাথে কথা বলেছিলো। নিভৃতে বড় স্নেহের সাথে বুঝিয়েছে বোনকে যেন বাবাকে বোঝায় বিয়েটা ক্যান্সেল করতে। বৃষ্টিও চুপচাপ ভাইয়ের হ্যাঁ তে হ্যাঁ ভাইয়ের না তে না মিলিয়েছে। সকাল হতেই সেই হ্যাঁ না’তে বড় গোলযোগ বাঁধিয়ে বাবার সামনে উপস্থাপন করতেই শেখ বাড়িতে শুরু হলো ঝড়। মানসিক ঝড়ের সামনে প্রকৃতি যেন নগন্য তেমনটাই মনে হলো বাবা আর দুই ছেলের মধ্যকার ঝগড়ায়।রিমন বরাবরই কঠিন স্বভাবের। নিজেরটা আদায় করে নিতে সে সর্বাত্মক লড়াই চালাতে সক্ষম কিন্তু রিদওয়ান এ ব্যাপারে বড্ড আনাড়ি৷ বহু মুশকিল পথ পেরিয়ে না সে পেরোয়নি বরং রিমন পথ সুগম করে দেওয়ায় সে পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছে অর্নির কাছে। আজ কি করে জিতে যেতো বাবার সাথে! আজও ঢাল হলো রিমন তলোয়ার হলো রিদওয়ান। বাবার সাথে প্রথম এবং বোধকরি, শেষ বারের বেয়াদবি করে বাড়ি ছাড়লো সে। কিন্তু এভাবে কতদূর….।রাতের মধ্যে ফিরে গেল চট্টগ্রামে। হোটেলে রুম বুক করা না থাকায় রাতটা হোটেলের লবিতে চেয়ারে বসে কাটিয়ে পরের দিন রুম বুক করলো। জরুরি তলবে অর্নিকে নিয়ে এলো দুপুর নাগাদ। ভেবেছিল নিজেই সবটা সামলে নেবে তা আর হলো না বলে অর্নিকে জানিয়ে দিলো সবটা। একদফা কান্নাকাটি করে অর্নি ফোন দিলো ভাইকে৷ রিদওয়ানের শিখিয়ে দেয়া অনেকগুলো বাক্য একসাথে আওড়াতেই ধমক খেলো ভাইয়ের কাছে৷ অর্ণব মুখের ওপর বলে দিলো, ‘আমি কাকে বিয়ে করবো সেটা কি তুই আর তোর জামাই ঠিক করে দিবি?’

ফোন স্পিকার লাউড থাকায় সবটা শুনলো রিদওয়ান। অর্ণবের ধমকে অর্নির মত সেও প্রথমে থমকে গেল পরমুহূর্তেই বোকার মত প্রশ্ন করলো, বয়সে তুই বড় না আমি?

-দ্যাখ রিদওয়ান মাথা খারাপ করাবি না অফিসে আছি।

-তুই কোথায় আছিস তা শুনে আমি কি করবো? আমার এক কথা বৃষ্টির বিয়ে দেব না তোর সাথে।

-তুই বললেই হবে?

-অবশ্যই। আমি তার বড় ভাই।

-আমি অর্নির বড় ভাই।

অর্ণবের গম্ভীর স্বরের এই একটা বাক্য কেমন যেন বুকটা চেপে ধরলো রিদওয়ানের৷ না চাইতেও বুঝি একটুক্ষণের জন্য ভয় পেয়ে গেল সে তাই ভীত গলায় বলল, ‘তো! এ্যা এ্যাই অর্ণব আমার বিয়ে হয়ে গেছে থ্রেট দিবি না একদম বলে দিলাম।’

-আমি কিছু বলেছি? হেসে ফেলল অর্ণব।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে