কোথাও হারিয়ে যাব পর্ব-২৪

0
511

#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-২৪ (ক)

আজকের চেকআপে ডক্টর নিশ্চিত করেছেন অর্ণবের পুরোপুরি সুস্থতা। হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে নুপুরের ভার্সিটির সামনে গিয়ে কল দিলো তাকে। রিসিভ হলো না দেখে সে আবার রিকশা খুঁজছিলো বাড়ি ফেরার জন্য তখনই চোখে পড়লো কিছুদূরে নুপুর। এদিকেই আসছে ছুটে।

– ছুটি হয়ে গেছে?

-না একটা ক্লাশ আছে পনেরো মিনিট পর।

-চলে এলে যে!

-আপনার কল দেখলাম….

– ধরলে নাতো

– জানি তো এখানেই আছেন তাই চলে এলাম।

-কল দেখেই বুঝলে আমি এখানে আছি!

– এ সময় ভার্সিটিতে থাকি তা আপনার জানা। এখানে না আসলে আপনি কলই দিতেন না তাই বুঝেছি আপনি এসেছেন।

-ভাল।

নুপুর একবার আগাগোড়া দেখে নিলো অর্ণবকে। সমুদ্রনীল শার্ট গায়ে, চুলগুলো এলোমেলো, হাতে ঘড়ি আর মুখভর্তি কয়েকদিনের অযত্নে বেড়ে ওঠা দাঁড়ি। দেখতে তাকে লাগছে সদ্য ছ্যাকা খাওয়া প্রেমিক পুরুষ। নুপুরের স্থির দৃষ্টি দেখে হাসি পাচ্ছে অর্ণবের।

-মেয়েদের নজরও এতোটা বেহায়া হতে পারে!

কথাটা শুনে লজ্জা পেল নুপুর একটু বোধহয় অপমানিতও হলো তাই দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। আজ সকাল থেকেই রোদ ঝলমলে আকাশ কোথাও মেঘের দেখা নেই। রাস্তায় যেখানে তারা দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে কয়েক কদম পেছনেই ভার্সিটির মূল গেইট। অনেকেই আসছে যাচ্ছে কেবল কেউ আবার রাজার জমানার শাহানশাহের মত গোঁফ দেখে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে৷ চমৎকার, সুতনু, সুদর্শন এই ছেলেটাকে দেখে অনেকেই হয়ত জল্লাদের চেয়ে শাহেনশাহ খেতাবটাই বোধহয় দিচ্ছে মনে মনে কিন্তু নুপুরের যে আর ভালো লাগছে না এত লোকের নজর। অর্ণব অবশ্য সেসবে পাত্তা না দিয়ে হাসি হাসি মুখে অন্য কথায় গেল।

-বাড়ি ফিরবে এখন?

-কেন

-না ফিরলে আরেকটু সময় নিজেকে ভিজিয়ে নিতাম নি র লজ্জ দৃষ্টিতে। হা হা

নির্লজ্জ শব্দটাকে খুব করে টেনে ভেঙে ভেঙে বলেই সল্প আওয়াজে হেসে উঠলো অর্ণব। নুপুর বেশ বুঝতে পারলো অর্ণবের ঠাট্টা তাই রেগে গেল ভীষণ।

-চলে যান আমি যাব না।

-আরেহ আরেহ রাগ করলে নাকি! আমি কি হাত ধরে, গাল টেনে, নাক চেপে রাগ ভাঙাবো? এহ না লোকে কি বলবে, বোনের বান্ধবীর রাগ ভাঙাচ্ছি!

‘বোনের বান্ধবী!’ এবার যেন রাগের স্ফুরণ ঘটল আগের চেয়েও বেশি। কথায় কথায় আজকাল অর্ণব তাকে এভাবেই খুঁচিয়ে কথা বলে। সে বোঝে এটা শুধুই মজার ছলে বলা তবুও তাদের মধ্যে কি সম্পর্কটা কি এখনও অতটুকুই নাকি একটুখানি বদলেছে? হঠাৎই যেন মনে হলো নুপুরের এই কথাটা। আদতে তাদের মধ্যে এর বাইরে কিছু আছে কি! গত দিনগুলোতে অর্ণবের সাথে থাকা যোগাযোগটাকে সে একটু বেশিই কিছু ভেবে নিয়েছিলো। ঠিক এই মুহূর্তেই সে নিজের ভাবনার ভুল শুদ্ধ বিচারে ডুবতেই অর্ণব তাকে ভাসিয়ে নিলো একটানে এক বাক্যে।

– আমি ভাবছি কথা বলব তোমার আব্বুর সাথে।
-কেন?
আৎকে উঠে প্রশ্ন করলো নুপুর। অর্নবও সহজ ভাষায় জবাব দেয়।

-আমি কি নিব্বাদের মত প্রেমিকা নিয়ে ডেটের নামে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াবো নাকি! সাড়ে সাতাশ বছর বয়স হয়েছে, কাজেকর্মে অলস নই সংসার করার যোগ্যতাও আছে।

হাতে গুণে কথা বলা লোকটা সরাসরি না হোক ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বিয়ের কথাই কি বলল! লজ্জায় এবার মরি মরি অবস্থা যে হলো নুপুরের। প্রেম করবে না বিয়ে করবে আহ্ কি শখ!

এখানে আর দাঁড়িয়ে লাভ নেই।বাড়ি ফিরবে এখন?

নুপুর মাথা নেড়ে সায় দিতেই অর্ণব দুটো রিকশা ঠিক করলো। একটা নুপুরের জন্য অন্যটায় অর্ণব ফিরবে।

‘কাল যেও বাসায়।’

-কাল! অর্নি আসবে। রিদওয়ান আসছে আজ রাতের ফ্লাইটে।

-কই অর্নি তো কিছু বলেনি।

-ও নিজেও জানে না ইনফ্যাক্ট আমি ছাড়া কেউ জানে না।

-তাহলে অর্নি আসবে কি করে?

-সারপ্রাইজ দেবে বলে রিদওয়ান আগে অর্নির কাছে যাবে। ওকে সাথে নিয়ে ঢাকা আসবে।

-ওহ!

– আচ্ছা আর দাঁড়াতে হবে না রোদে। ওঠো রিকশায় বাড়ি পৌঁছে টেক্সট করে জানিয়ো।

নুপুর রিকশায় উঠে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় অর্ণবের দিকে। লোকটা আর একটুও ফিরে তাকালো না। হাড়ে-মজ্জায় একদম নিরামিষ একটা। একটু ফিরে তাকাবে মিষ্টি করে বিদায় জানাবে এমনটাই তো হয় পছন্দের মানুষগুলোর মাঝে৷ অথচ উনি কেমন দায়সারা সবটাতেই।দু দিকে চলে গেল রিকশা দুটো সেই সাথে মানুষ দুটোও।

______________
বসার ঘরটাতে চায়ের কাপ আর মিষ্টির শোরগোল। পাঁচ গদির সোফার সাথে যুক্ত হয়েছে সিঁড়ির নিচে থাকা ডিভানটাও। বসার ঘরে জায়গা অনেক থাকলেও প্রয়োজন হতো না বলেই অর্ণব নতুন কোন আসবাব কেনার চিন্তা করতো না। আজ বাড়ি ফিরতেই চোখে লাগলো বসার মত আসবাবের কমতি৷ তিন সেটের বড় সোফাটায় মাঝখানে বসা দাদী, তাঁর দু পাশে বৃষ্টি আর বড় খালামনি৷ বাকি দুই সোফায় একটাতে খালুজান, অন্যটায় বড় দাদা তাঁরই পাশে আলাদা চেয়ারে সাখাওয়াত ভাই। ডিভানে আছে সাখাওয়াত ভাইয়ের বড় ছেলে আর দু জন ছোট বাচ্চা ছেলে সম্পর্কে সে দুটোও ভাতিজা৷ চাচাতো ভাইদেরই সন্তান ওরা। সকলের আচমকা এই ভর দুপুরের উপস্থিতিতে ভড়কালো অর্ণব। সকালেও বাড়িতে দাদী আর রোজিনা খালা ছাড়া কেউ ছিলো না। আজ কি কোন বিশেষ কিছু আছে! নাহ তেমন কিছুই মনে পড়লো না তার। অর্ণবকে দেখতেই সাখাওয়াত ভাই বলে উঠলেন, আরে অর্ণব তোর জন্যই সবাই অপেক্ষা করছে আয় এখানে।

সালাম দিয়ে এগিয়ে যেতেই দাদী মুখ গোমড়া করে বললেন, ও আগে মুখ হাত ধুইয়া এট্টু বিশ্রাম করুক। মাত্রই তো অসুখ ছাড়লো।

– তা ঠিকই বলছো ছোট বউমা।

বড় দাদা সায় দিলেন দাদীর কথায়।সম্পর্কের সমীহ এখনো বৃদ্ধাদের মাঝে অটুট বলেই বাড়ির অন্যরা এখনো মুখের ওপর কথা বলেন না। তবে অর্ণবের এই দাদা-দাদীদের বিশেষ ভাব দেখানো বাশার শেখের খুব একটা পছন্দ নয়। তিনি মনে মনে বিরক্ত হলেও অর্ণবের মন মর্জিতে রাশ টানতেই তাদের কথায় কর্ণপাত করা। অর্ণব কৌতূহলী সকলের উপস্থিতিতে কিন্তু দাদীর কথা মেনে সে আগে ঘরে গেল৷ রায়না বেগমও আর বসলেন না। এতগুলো মানুষ একসাথে হওয়ায় তিনি নিজেই হাত লাগিয়ে রান্নার আয়োজন করেছিলেন এখন ভাবছেন কথাবার্তা পরে হোক আগে টেবিল সাজাবেন৷ বৃষ্টিও মায়ের সাথে উঠে গেল। তার পেছন পেছন গেল অর্ণবের সেই ছোট্ট ভাতিজা দুটোও৷ বৃষ্টির সাথে তাদের আবার খুব ভাব। খুব একটা সময় না নিয়ে অর্ণব গোসল সেরে ফিরে আসলো নিচে। খালামনি সবাইকে একসাথে খেতে ডাকলেন। খাওয়ার মাঝেই কথা পাড়লেন বড় দাদা, ‘অর্ণব আমি আর সাখাওয়াত এসেছিলাম ব্যবসায়িক কথাবার্তার জন্য কিন্তু এখানে এসে বাশারের কথা শুনলাম। তাই এখন সেই আলোচনাই হোক। রাতে ফ্রী হয়ে আমার ওখানে যাস।’

-কোন আলোচনা?

-বিয়ে-শাদির।

বড়দাদাই বললেন কথাটা। অর্ণব ভাতের লোকমা মুখে তুলতে গিয়েও থেমে গেল। হঠাৎই আনন্দের একটা অনুভূতি ছুঁয়ে গেল তাকে। এতদিনে তবে বোনের সংসারে পা রাখার আয়োজন হবে। রিদওয়ান কি তাহলে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যই দেশে আসছে!

– এটা তো আনন্দের খবর। কিভাবে কি করতে হনে আমাকে বলে দিয়েন খালু আমি সেভাবেই আয়োজন করব।

খালুর দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখে বলল অর্ণব। তার কথা শুনে বাবার পাশে খেতে বসা বৃষ্টি লজ্জায় লাল হলো। অর্ণব ভাই বিয়ের জন্য এত উদগ্রীব! বাবাহ কেমন ছটফট করে বলছে আয়োজন করবে। টেবিলে থাকা প্রত্যেকেই বোধহয় অবাক হলো কিছুটা।

-তোমাকে কিছু করতে হবে না অর্ণব। মেয়ে দিব আমি আয়োজনও আমিই করব তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।

খালুর কথা বোধগম্য হয়নি অর্ণবের। সে প্রশ্ন করতে গেলে খালু আবার বলে উঠলেন, তোমাদের বিয়ের দিনই রিদওয়ান অর্নিতার রিসেপশন হবে।

ভাদ্র মাসের প্রবল দাবদাহের আকস্মিক আগমন হলো যেন অর্ণবের খাবার টেবিলে। খালু কি বলল তার বিয়ে, তাদের বিয়ে! সে অস্থির হয়ে চোখ ঘোরালো দাদী নেই এখানে। একবার কেমন অবাক হয়ে বৃষ্টির দিকেও তাকালো। মেয়েটা তবে সত্যিই তাকে ভালোবাসার কথা সকলের সামনে প্রকাশ করে বসলো। খাবার আর গলা দিয়ে নামতে চাইলো না তার।

‘রাতে আমি দেখা করবো আপনার সাথে’ কথাটা বড় দাদাকে বলে উঠে গেল অর্ণব। টেবিলে উপস্থিত প্রত্যেকেই যেন কিছু বলার জন্য উৎসুক সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সে নীরবে চলে গেল দোতলায়। বৃষ্টির লজ্জা মাখা মুখটায় নেমে এলো আষাঢ়ে নীরদ। মনে পড়ে গেল রিমন ভাইয়ের বলা কথাগুলো। সকালেই রিমনকে জানানো হলো আজ অর্ণবের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হবে। রিমন জানতে চাইলো, কার বিয়ে?
বাশার শেখ সহাস্যে বললেন অর্নব, বৃষ্টির। তারপরই হয়ে গেল বাবা ছেলের মধ্যকার শান্ত লড়াই৷ রিমন বোনের দিকে তাকিয়ে সহজ করেই বলেছে, অর্ণব ভাইয়ার সাথে বৃষ্টির বিয়ে সম্ভব নয় আব্বু। আমরা অন্য ছেলে খুঁজব আমার বোনের জন্য৷

বাবা জানতে চাননি কেন সম্ভব নয় শুধু বলেছেন, আর কোথাও খোঁজাখুঁজি হবে না। আমি বলেছি মানে অর্ণবই ফাইনাল।

-অর্ণব ভাইয়ার অন্য জায়গায় পছন্দ আছে।

-সেসব জেনে কাজ নেই এখন আর। আজকের পর থেকে বৃষ্টিই হবে তার পছন্দ। লাঞ্চের সময়তুমিও চলে এসো ও বাড়ি আমরা একটু পরই চলে যাব।

রিমন আর কথা বাড়ায়নি এখানেও এসে উপস্থিত হয়নি। বৃষ্টির কান্না পাচ্ছে এখন। এতগুলো মানুষের সামনে কান্না করলে কি ভাল দেখাবে! সেও বসা থেকে উঠে গেল। সাখাওয়াত আর বড় দাদু পরিস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত খাওয়া শেষ করে বিদায় নিলেন।
__________

ঘরে ঢুকে ফোনের শব্দ পেলো অর্ণব। হাতে নিতেই দেখলো নুপুরের কল। ধরবে না ধরবে না করেও রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো রিনরিনে স্বর।

-নিজেই বলেছেন বাড়ি পৌঁছে জানিও এখন নিজেই মেসেজ সিন করছিলেন না।

– রাতে কল দিচ্ছি।

এতটুকু বলেই কল কেটে দিলো অর্ণব। হতভম্ব হয়ে গেল নুপুর এভাবে কেন কল কাটলো? অর্ণব কাউকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। রাতে যখন বাড়ি ফিরলো তখন পুরো বাড়ি নীরব, নিস্তব্ধ। বসার ঘরের আলো নেভানো শুধু দাদীর ঘরে তখনও আলো জ্বলছিল। অর্ণব আন্দাজ করলো কোন কারণে দাদী জেগে আছেন এখনো। রাত বাজে বারোটা এরই মাঝে নুপুরের একটা মেসেজ এসেছে, অর্নিতার একটি কল। নুপুরের মেসেজটা ইচ্ছে করেই দেখলো না। অর্নিতার কল রিসিভ করতেই সে জানালো রিদওয়ান এসেছে দেশে। অর্ণব কথা বাড়ায়নি, কাল ওর সাথে বাড়ি আয় বলেই কথা শেষ করলো। এবার ধীর পায়ে এগিয়ে গেল দাদীর ঘরের দরজায়।

খাটের পাশেই খালি জায়গায় ম্যাট্রেস বিছিয়ে, মশারি খাটিয়ে রোজিনা খালা ঘুমায়। ঘরের বাতি জ্বালানো বলে তিনি আজ মশারির ওপর পাতলা চাদর ছড়িয়ে দেওয়া। এ ঘরে থাকা দুজন মহিলাই তার ভীষণ শ্রদ্ধার। ঘরে ঢুকতে বরাবরই সে অনুমতি নেয় আজও অর্ণব বাইরে থেকে দু বার নক করে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। দাদী বুঝলো অর্ণব এসেছে তাই একবার রোজিনার বিছানায় তাকালেন।।

-ভেতরে আয়।

অর্ণব ভেতরে এসে দাদীর সামনে দাঁড়ালো।

-বয়

অর্ণব বসলো দাদীর পায়ের কাছে।

-কি কইবি?

-তুমি বলো।

– কষ্ট পাবি।

-তবুও বলো।

-বৃষ্টিরে বিয়া কর।

-আচ্ছা।

আর কোন কথা না বলে অর্ণব বেরিয়ে গেল নিঃশব্দে। রোজিনা খালার ঘুম আগেই ভেঙে গেছে এবার তিনি শোয়া থেকেও উঠে বসলেন। কাজের লোক হয়ে মনিবের কোন কাজে নাক গলানো উচিত নয় জেনেও সে মুখ খুলল।

– সারাদিন তো রাগ কইরা বইসা ছিলেন খালাম্মা এখন ক্যান এমন কইলেন?

-পোলার সুখ আর মাইয়ার সুখ একরকম না। অর্নিতার ঘর বদল হইবো কিন্তু অর্ণব নিজের বাড়ি, নিজের ঘরেই থাকব। তারে দশ কথা কইবার কেউ থাকবো না অথচ নাতিনডা যখন ওই বাড়ি যাইব সকাল বিকাল খোঁটা হুনব শুধু বৃষ্টিরে এই বাড়িতে না আনার জন্য। অর্ণব বিয়া না করলেও বৃষ্টির ভালা পাত্রের অভাব হইব না কিন্তু সবসময় অর্নির থাকব কষ্ট। বিয়া হইছে বছর গড়াইতাছে এহনও ওরা বউ ঘরে নেয় নাই আজকা বাশার কথায় কথায় বুঝাইয়া দিল তার মাইয়া এই ঘরে আইব আমাগো মাইয়া ওই ঘরে যাইব। এইবার বল তোর কি মনে হয় এই কথাতে।

বৃদ্ধার কথা মনোযোগে শুনলো রোজিনা খালা সেই সাথে শুনলো দরজার বাইরে থাকা অর্ণবও। সে ঘর থেকে বেরুয়েও আবার ফিরেছিল দাদীকে জানাতে রিদওয়ান এসেছে দেশে। বলা হলো না আর ফিরে গেল নতুন ভাবনা মাথায় নিয়ে।
__________________

চলবে

#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-২৪(খ)

কাল আর বড় দাদার সাথে দেখা করতে যায়নি অর্ণব। রাতে বাড়ি ফিরে দাদীর সাথে কথা শেষ করেই শুয়েছিল ঘুমের আশায়। শেষরাত অবধি ঘুম আর ধরা দেয়নি তাকে। ভোরের দিকে দু চোখে ঘুম নামতেই অতি পুরনো এক স্মৃতি দুঃস্বপ্ন হয়ে নেমে এলো চোখের দোরগোড়ায়। তখন তাদের সংসার উপর থেকে সাজানো, গোছানো চকচকে। বাবা নেশা করলেও তা বাড়ির বাইরে নির্দিষ্ট এক ডেরায়। মা বাড়িতে সংসার দেখেন, দিনে দু দিনে ঘুরতে যান, শপিং করেন আর অর্ণবের পড়াশোনায়ও খেয়াল রাখেন অর্নিতাটা বোধহয় তখনো বসতে শিখেনি। মায়ের সাথেই একদিন ঘুরতে বেরিয়েছে সে। ছুটির দিন ছিল বলে এক বিকেল বাইরে কাটিয়ে সন্ধ্যের দিকে তারা পৌঁছুলো মায়ের বান্ধবী আসমার বাড়িতে। বান্ধবীকে না জানিয়েই মা গিয়েছিল ভেবেছিল খুশিই হবে বান্ধবী তাঁকে দেখে। যাওয়ার পর ঘটনা ঘটেছে ভিন্নরকম। মায়ের বান্ধবীর কপাল ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে , হাত ভেঙেছে বাড়িতে তাদের ভীষণ ঝামেলা। মা সেদিন বাচ্চা অর্নি আর তাকে নিয়ে তড়িঘড়ি জায়গা ত্যাগ করলেও বছর খানেক পর খবর পেল সেই বান্ধবীটি আত্মহত্যা করেছে। অর্ণবের সবটা ঠিকঠাক মনে না পড়লেও কিছু কিছু মনে আছে মা বলছিল বাবাকে সেই আত্মহত্যার ঘটনা। ঘটনা ঠিক এমন ছিল, আসমা আন্টির একটি বোন আছে যাকে বিয়ে করতে চাইতো আন্টির দেবর। আন্টির বোন কিছুতেই রাজী হচ্ছিলো না বলে শ্বশুরবাড়ির লোকে তাকে অত্যাচার করতে লাগলো। নির্মমভাবে আঘাত করতো সবাই মিলে এমনকি তাঁর স্বামীও শামিল হতো। ধীরে ধীরে সেই অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরেই তিনি ফাঁস নিলেন৷ অর্ণব ছটফটিয়ে বিছানা ছাড়লো। এতবাজে স্বপ্ন কেন দেখলো! মোচড় দিলো বুকের ভেতর এটা কি তবে তার জীবনের সাথে সংযুক্ত কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেখলো? ভোরের আলোয় ঘরটা ঝাপসা আলোকিত। হঠাৎ মনে পড়লো লোকে বলে ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। ভয় আরও গেঁড়ে বসলো অন্তরে। খালুজান কি ইচ্ছে করেই কাল অর্নি রিদওয়ানের রিসেপশনের কথা তুললেন। তাকে কি কোন ভাবে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য ছিল সে কথা! নিজেই নিজের ভাবনায় বোকা হয়ে গেল অর্ণব অথচ বুঝতেই পারলো না তার এই স্বপ্ন আদতে তার কাল রাতের অতি ভাবনার ফল। না তার মায়ের জীবনে কোন বান্ধবীর সাথে এমন হয়েছে আর হয়ে থাকলেও সে কথা তার জানা নেই। যা দেখলো আর যা ভাবছে এখন সবটাই অলীক কল্পনা। ভয়ে ভীত মনের সাজানো রূপকথার ভয়ংকর গল্প বৈ কিছুই নয়। তবুও সারা সকাল তাকে অশনি অস্থিরতা ঘিরে রইলো। ধারালো, তীক্ষ্ণ চোয়ালে আতংকের লেগে রইলো সারাটাক্ষণ এরই মাঝে মনে হলো দাদার সাথে দেখা করা জরুরি। কোনমতে নাশতার পাট চুকিয়ে সে বেরিয়ে গেল ও বাড়িতে। ইচ্ছে করেই সে গেল দশটার পর যেন দাদার সাথে আলাপের সময়টাতে সাখাওয়াত ভাই কিংবা সোহরাব ভাই না থাকেন। বলতে নেই, বংশের সবচেয়ে বড় এই ভাই দুটোকে অর্ণব ভেতরে ভেতরে অসম্ভব অপছন্দ করে। তারা অর্থবিত্তের বলয় আবৃত মুখোশধারী গিরগিটি। তাদের দু ভাইয়ের বরাবরই ছোট দাদার সম্পত্তি, অর্ণবের দাদার সম্পত্তিতে কুনজর বহুদিনের। অথচ ছোট দাদার প্রয়োজনে কোনদিনও তারা পাশে দাঁড়ায়নি আর না তার বাবার মৃত্যুর পর তাদের পাশে। ইদানীং কোন এক কারণে যেচে পড়ে তারা বেশ খোঁজই রাখছে অর্ণবের তা বড়ই সন্দেহজনক ব্যাপার। ও বাড়ি যাওয়ার আগে অর্ণব ছোট দাদীকে জানিয়ে গেল। দাদীও যেন শঙ্কায় ছিলেন বড় দাদার এই অর্ণবের সাথে আলোচনার বিষয় নিয়ে৷ কি নিয়ে এত তলব তাদের! ভাসুরকে তিনি খুব অপছন্দ না করলেও ভাসুরের নাতিদের মতলব নিয়ে অর্ণবের মত তিনিও সন্দিহান তবুও বারণ করা যায় না বলেই অর্ণবকে পাঠালেন৷ অর্ণবের প্রস্থানের ঠিক পরপরই রিদওয়ান এসে হাজির হলো বাড়িতে। কথা ছিল অর্নিতাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে তা আর হলো না। গুরুত্বপূর্ণ ক্লাশের জন্য সে ঢাকায় আসতে পারেনি তাই রিদওয়ানই চলে এসেছে দুদিনের জন্য। বাড়িতে দুটো দিন থেকে আবার ফিরবে চট্টগ্রামে। নিজের পরিচিত তেমন না থাকলেও সাহায্যটা বাবার থেকেই নিতে পারবে বলে ভেবে নিয়েছে। ব্যবসায়ের সূত্র ধরে সেখানে বাবার পরিচিত অনেক মানুষজন আছেন। খোঁজ নিলে মাস খানেকের জন্য একটা ফ্ল্যাট, বাড়ি অথবা একটা ঘর যাহোক ব্যবস্থা করে নেবে। এতদিন পর দেশে এসে বউ থাকতেও ব্যাচেলর থাকার মানেই হয় না তাই এবার উপোষ ভাঙার ব্যবস্থাই করবে সে। ভদ্র সমাজে এ কথা মুখে না বলতে পারলেও সাধু তো সে নয় তাই যেন নিজে নিজেই সব পরিকল্পনা সাজিয়ে এসেছে। অর্নিতাকে সে কথা আগেই বলে রেখেছিল। এ নিয়ে তো মেয়েটা তাকে দিনরাত নতুন নামে ডাকে৷ ‘বেহায়া বর’ নামটা ভীষণ পছন্দ হয়েছে রিদওয়ানের।

রিদওয়ানকে দেখেই দাদী ভীষণ খুশি হয়েছেন৷ ভোর থেকেই তিনি রোজিনা খালাকে দিয়ে নাশতায় কত কি রেখেছেন সাথে সুজির হালুয়াটা নিজেই রান্নাঘরে বসে থেকে তৈরি করিয়েছেন। তা দেখেই অর্ণব দাদীকে চটিয়েছে, ‘বুড়ির ঢং দেখলে আর বাঁচি না। অর্নিতার না যেন নিজের বর আসবে তাই কত কি করছে কই আমার জন্য তো একবেলা দাঁড়িয়ে থেকে ভাতটাও খাওয়াও না।’

-তোর জন্য তোর বউ থাকবে যা এখন সামনে থেকে।

দাদীও তার ফাজলামোতে তাল মিলিয়ে যেন ভারী সকালটাকে হালকা করেছিল কিছুটা। এখন রিদওয়ানকে দেখে আরেকটু শান্ত হলো মন। সে বড় দাদার বাড়িতে চলে গেল রিদওয়ানও দাদীর সাথে বসে টুকটাক গল্প করছে। তাদের গল্পের মূল কেন্দ্রই রিদওয়ান কি করে একটা মাস বউয়ের সাথে কাটাবে। কথায় কথায় দাদী বললেন সেদিনের কথা বাশার শেখ অর্ণবকে মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। দাদী ভেবেছিলেন রিদওয়ান সব জানে। বৃষ্টির জন্য অর্ণবকে প্রস্তাব দেওয়া কথাটা শুনেই অবাক হয়েছে সে অবাক দাদীও হয়েছেন। বিয়ের মত একটা সিদ্ধান্ত হুট করে কেন নিলো বাশার শেখ তবে কি সত্যিই এখানে চালবাজির কোন ঘটনা আছে? অর্নিতাকে যে মানুষ একটা বছরে একটি দিনের জন্যও ছেলের বউ বলে বাড়িতে নিলো না সে এখন ধুমধামে ঘরে তুলবে এটা শুধুই তবে নিজের মেয়ের জন্য তা বুঝতে আর একটুও বাকি নেই। রিদওয়ানও যেন কিছু আঁচ করতে পারলো। বৃষ্টি তার একটিমাত্র আদরের বোন সেই বোনকে সে অতি আহ্লাদে না ভাসালেও আদরে কখনোই কমতি রাখেনি আর অর্ণবকেও সে বন্ধুর মত জানে। নুপুর মেয়েটাও বড্ড ভালো, অর্ণবও যে তাকে পছন্দ করে এ কথা তো অজানা নয়। বড় একটা ব্লান্ডার হতে চলছে টের পেতেই অস্থির হলো রিদওয়ান। এখানে আর বসে থাকা সম্ভব নয় ভেবেই দাদীকে নাশতার কথা বলল। বৃদ্ধা যে তার জন্য ভালোবেসে আয়োজন করেছে তা ফেলে উপেক্ষা করার সাধ্য রিদওয়ানের নেই। দাদীকে পাশে বসিয়ে দ্রুতই নাশতা শেষ করে বিদায় নিলো সে।

___________
বড় দাদা অর্থের দাপটে বরাবরই বংশে সবার উঁচুতে ছিলপন সম্মানেও কমতি নেই। বিশাল অর্থ ব্যয়ে বহু বছর আগে নিজেই একটি দালান গড়েছিলেন যা অর্ণবের থেকে দ্বিগুণ খরচে হয়েছিল। সেই বাড়িটি প্রায় চল্লিশ বছর পর আবার নতুন করে দাদার নাতিরা সংস্করণ করেছেন। আভিজাত্য আগেও যেমন ছিলো এখনও তেমনই৷ এ বাড়ির নতুন রূপ তৈরি হওয়ার পর অর্ণব একবারো আসেনি এখানে। আজ উপস্থিত হয়ে কিছুটা বিভ্রান্ত হলো বড় দাদাকে খুঁজে পেতে। বাড়ির সদর দরজায় বেল বাজাতেই নতুন একজন পরিচারিকা এসে দরজা খুললে পরিচয় চাইলো। এ বাড়িতে কখনো পরিচয় বলে তবেই প্রবেশাধিকার মিলবে এটাই বেশি বিব্রত করলো তাকে। তবুও ছোট্ট করে জানালো আমি অর্ণব বড় দাদুর সাথে দেখা করতে এসেছি। গৃহপরিচারিকা মেয়েটি অল্পবয়স্কা বুদ্ধিশুদ্ধিতেও বোধহয় একটু খাটো। সে শুধুই নামের পরিচয়ে ঢুকতে দিলো না অর্ণবকে। আবারও প্রশ্ন জুড়লো, সে কোথা থেকে এসেছে এবং কি কাজে তা যেন ছোট করে জানায় তাতে সে ভেতরে গিয়ে খবরটা দিয়ে তবেই অনুমতি পেলে ভেতরে ঢুকতে দেবে। প্রথমে যতটুকু বিব্রতকর লাগছিল এবার পরিস্থিতি উল্টে গেল৷ অর্ণবের দুশ্চিন্তা গ্রস্ত মাথায় রাগ ধরে গেল প্রচণ্ডরকম। ভদ্রতা বজায় রেখে দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্য্যটুকু সে নিমেষেই হারিয়ে এবার ধমকে উঠলো, এ্যাই সরতো সামনে থেকে কখন থেকে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। আগুন্তকের আচমকা জোর ধমক মেয়েটিকে ভড়কে দিলো ভয়ও পেলো। অর্ণব সেদিকে তোয়াক্কা করলো না পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলো। প্রাসাদ রূপ বাড়িটা ফটক পেরিয়েই চারকোণা বসার ঘর। চারপাশে তাকিয়ে কাউকে চোখে পড়লো না তার। আবারও তাই ঘাড় ফিরিয়ে মেয়েটির দিকে তাকালো, দাদুর ঘর কোনটা।

ভয়ে মেয়েটির যারপরনাই ভীত অবস্থা কোনমতে স্বর তুলল, বাম দিকের তিন নাম্বার ঘর।

আর কিছু শোনার ধৈর্য্য নেই সে বসার ঘর পেরিয়ে বা দিকের সফেদ রঙা দেয়াল দেখলো। পাশাপাশি লম্বাটে চারটে ঘরের তিন নম্বরটাতে টোকা দিলো বার কয়েক। সাড়া না পেয়ে এবার জোরে ডাকলো, বড়দাদা ঘরে আছেন?

কয়েকবার ডাকার পর দরজা খুলে গেল। ভেজা মুখ, তোয়ালে হাতে দাদা দাঁড়িয়ে আছেন।

– ঘুমাইছি নামাজের পর বাথরুমে তাই মুখ হাত ধুইতেছিলাম তাই দরজা খুলতে দেরি। রাতে অপেক্ষা করলাম তোর।

সালাম দিয়ে অর্ণব জনালো রাতে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেনি। দাদাও বললেন সমস্যা নাই কিন্তু এখন তো সাখাওয়াত বাড়ি নাই।

অর্ণব বুঝতে পারলো প্রয়োজনটা তবে সাখাওয়াত ভাইয়ের। নিশ্চয়ই এমন কোন কথা যার জন্য দাদার মতামত আবশ্যক।

-আচ্ছা দাদা তাহলে রাতে আবার আসি।

-আচ্ছা। এখন বোস নাশতা খেয়ে যাবি।

-না দাদা রিদওয়ান আসছে ওর সাথে নাশতা করতে হবে দাদী অপেক্ষা করছে।

-ওহ তাহলে নাত জামাইরে বল এখানে আসতে। দাওয়াত ও করা দরকাই ওরে জামাই মানুষ।

-পরে একদিন হবে আমি এখন যাই।

বিদায় নিয়ে অর্ণব চলে যেতেই কাজের মেয়েটি বাড়ির ছোট মালকিন সোহরাবের বউকে জানালো অর্ণবের ধমকের কথা। বউটি হেসে হেসে বলল, ও বাড়িরই ছেলে তাই রেগে গেছে। মাথাটা তার একটু গরম স্বভাবের পরের বার এলে প্রশ্ন করিস না। মেয়েটি সে কথা শুনে বিড়বিড় করতে লাগলল, তওবা কাটছি এই বেডারে দেখলে আমি দরজাই খুলতাম না।

_________

রিদওয়ান বাড়ি চলে গেছে শুনে অর্ণবও আর দেরি করেনি৷ নাশতা শেষ করে সেও গেল অফিসে। বহুদিন হয় সে ব্যবসা বানিজ্যে ভীষণ অনিয়ম৷ গত মাসের প্রোডাক্ট ডেলিভারিতে ঝামেলা হয়েছে বায়ার হাত থেকে ছুটে যাওয়ার অবস্থা প্রায়৷ এভাবে চলতে থাকলে রুজি পুঁজি সব হারাবে তা নিশ্চিত। অফিসে ফিরে কাজকর্মে প্রায় ডুবতেই বসেছিল হঠাৎ সেই ডুবকি থেকে তুলে আনলো নুপুরের ফোনকল। হাতের ঘড়িটাতে চোখ বুলিয়ে দেখলো দুইটা বেজে বাইশ মিনিট। নুপুর কি ক্লাশ শেষে কল দিলো তাকে! আকস্মিক টের পেল বুকটা জ্বলছে। না গ্যাস্ট্রিক না হৃদরোগে এই জ্বলন হৃদয়ে গড়া এক নিরদছাওয়া ঘর ভাঙার। হ্যা় ঘরই তো ভেঙেছে তার কালকের দুপুরে হওয়া বাক্যলাপে। আজ আরও একবার তার কষ্ট হচ্ছে কেন সে এতিম? বাবার কাঁধ, মায়ের আদর কিছুই কেন নেই তার কাছে? এই রুদ্ধশ্বাসে আটকে পড়া ময়দানে তাকে কে বাঁচাবে। কে বলবে তার সুখের কথা? কে জানবে তার অন্তরে বিঁধেছে ওই শ্যামাঙ্গিনী রুমঝুম মেয়েটি! কাকে বোঝাবে চাই না তার বদ্ধদশার জীবন তার যে জীবনে স্বস্তির নামে হঠাৎ আসা ওই এক টুকরো চঞ্চল হাওয়াকে ভীষণ দরকার।

কলটা আজও কেটে গেল অবহেলায়। ওপাশের মানুষটির বোধহয় ক্লান্তি নেই তাকে স্মরণ করতে তাইতো কাল রাতে তিনটের পর লাগাতার মেসেজ এসেছে প্রতিটা মেসেজে ভেসে এসেছে অদৃশ্য চিন্তার সুর৷ কালকে কি সে ভুল করেছে ওই একটি বাক্য বলে। ‘আমি ভাবছি কথা বলব তোমার আব্বুর সাথে’ কেন বলেছিলাম কাল! আফসোস হলো দুঃখও কি হচ্ছে না? ‘বড় ভুল হয়ে গেছে নুপুর ভালোবাসা আমার জন্য তো জীবন ভালোবাসার নয়।’

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে