কোথাও হারিয়ে যাব পর্ব-২৩

0
438

#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-২৩

চোখের কোণের চিকন জলস্রোত দূর থেকেও স্পষ্ট ধরা পড়লো রিমনের চোখে। একে একে দুই, দুইয়ে দুইয়ে চার মিলেই গেল আজ তার কাছে। অর্নিতার এই বান্ধবীটি তবে অর্ণবের মনের মানুষ নাকি তার দেখায় ভুল! ভুল তো হওয়ার কথা না। অর্ণবের বাড়িতে মেয়েটির উপস্থিতি বান্ধবীর বাড়ি হিসেবেই অত বেশি পাওয়া যেত এ যুক্তি অগ্রহণযোগ্য লাগে রিমনের। কোন উপলক্ষ ছাড়াই প্রায় অনেক অনেকবার নুপুর সে বাড়িতে আসতো শুধু মাত্র অর্ণবের জন্যই তবে৷ করিডোরে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে রিমন। এবার তবে বয়সে পিচ্চি আরও এক ভাবীর ব্যবস্থা হয়ে গেল। অর্নি কফির কাপ হাতে সেখানে এসে রিমনকে দেখে অবাক হলো।

-হাসছো কেন ভাইয়া কখন এলে তুমি?

-এ্যা এ্যাই ওদিকে যা ওদিকে যা জলদি… বলে রিমন নিজেই অর্নিকে টেনে নিয়ে কেবিনের সামনে থেকে দূরে সরিয়ে নিলো।

-কি হয়েছে!

-ভাই ভাবীর হৃদয়ঘটিত মুহূর্ত চলছে আমরা আর না যাই সেদিকে৷

-বুঝলাম না।

-বুঝতে হবে না তোর কফি কার জন্য?

-নুপুর…

– সে অন্য কিছু খাচ্ছে এটা আমাকে দে।

রিমন ভাইয়া মজার মানুষ তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে তার একটি কথাও বোধগম্য হচ্ছে না অর্নিতার। সল্পভাষী মেয়ে অর্নি আর কৌতূহল প্রকাশ না করে একপাশে দাঁড়িয়ে কাপে চুমুক দিতে লাগল। রিমনও গরম গরম কফিতে চুমুক দিয়ে টের পেল ক্লান্তিতে আরাম মিলছে। কাজের চাপ বেশি থাকায় আজ নয়টা পর্যন্ত অফিস ঘরেই ছিল। এখন বেরিয়ে সোজা হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয়েছে অর্নিকে নিয়ে যেতে তারপর আবার তাকে ফিরতে হতো রাতটা কাটাতে। ডাক্তার জানিয়েছে অন্তত দশটা দিন তাকে রাখা দরকার হাসপাতালে শুধুমাত্র পায়ের জন্যই। কাজের মানুষ বাড়ি ফিরে অসাবধানতায় নড়াচড়া সমস্যা দ্রুত ঠিক হওয়ার পরিবর্তে আরও খারাপ হতে পারে ভেবেই বাশার শেখ নিজেই বলেছেন কিছুদিন এখানেই থাক৷

__________

বাড়ি ফিরে রাতের রান্না শেষ করে রায়না বেগম সবেই বিছানায় গা এলিয়েছেন একটুখানি বিশ্রামের আশায়। অতিরিক্ত টেনশনে ব্লাড প্রেশার অনিয়ন্ত্রিত আর প্রচণ্ড ঘাড়ের ব্যথায় এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন৷ অথচ কাউকে ডেকে বলতে ইচ্ছুক করছে না একটুখানি যত্নের জন্য৷ চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে তবুও চোখ বুঁজে দু দন্ড ঘুমিয়ে নেওয়ার জো নেই। মাথায় ঘুরছে অর্নিতাটা একা হাসপাতালে কিছু প্রয়োজন হলে কিভাবে কি করবে! বাশার শেখও আজ অফিস থেকে দেরি করে ফিরেছেন৷ এখন ফ্রেশ হতে বাথরুমে ঢুকেছিলেন। পোশাক বদলে, মুখ- হাত ধুয়ে বের হতেই স্ত্রীকে বিছানায় দেখে কপাল কুঁচকালেন।বরাবরই দেখেছেন এ সময়টা রান্না রান্নাঘরে থাকেন উনি ফিরলে এক কাপ চা নিয়ে দৌঁড়ে আসেন। আজ ব্যতিক্রম দেখে বুঝলেন পরিস্থিতির চাপ স্ত্রীকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। ঘাড়ের ওপর হাত দেখে আন্দাজ করলেন প্রেশার নিয়ন্ত্রণে নেই হয়তোবা। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে মেয়ের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। বৃষ্টি পড়ার টেবিলে মাথা ঝুকিয়ে বসা। দরজার বাইরে থেকে এই দৃশ্য দেখে ভাবলেন মেয়েটা বোধহয় পড়তে বসেছে ঠিক তখনই মনে হলো মেয়েটা কেঁপে কেঁপে উঠছে৷ বৃষ্টি কি কাঁদছে! বাবার মন মানলো না ফিরে যেতে তাই ঘরে ঢুকে মেয়ের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন। এইতো ফোপাঁনোর শব্দ৷

-বৃষ্টি! আমার মা কি হয়েছে কাঁদছো কেন মা?

বাবার গলার স্বর নিজের খুব কাছে শুনে কান্নার দমক যেন বেড়ে গেল বৃষ্টির। বাবার আদুরী কন্যা দুনিয়ার সকল দুঃসহ যন্ত্রণা যে মেয়েটি প্রথমে বাবাকেই জানায় সে আর এই মুহূর্তে লুকাতে পারলো না নিজের অনুভূতি। পেছন ফিরে বাবার কোমর জড়িয়ে উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগল। মেয়ের এমন কান্নায় হকচকিয়ে গেলেন বাশার শেখ। বুকটাও মুচড়ে উঠলো কলিজার টুকরো কন্যাটির কান্নার শব্দে। দু হাতে আগলে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে জানতে চাইলেন কি হয়েছে কেন কাঁদছে? বৃষ্টিও সব ভুলে কাঁদতে কাঁদতেই বলে চলল, অর্ণব ভাইয়া অসুস্থ তার কষ্ট লাগছে। কত ব্যথা পেয়েছে মানুষটা তার সহ্য হচ্ছে না। বাশার শেখ আগে থেকেই তো জানতেন মেয়ের মনের অভিপ্রায় আজ তা আরও স্পষ্ট হলো। এমনিতেও অনেক কিছু তিনি আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন মুশকিলে ফেলল তো গর্ধব রিদওয়ানটা তাই এতোদিন এ বিষয়ে কিছু ভাবতে পারছিলেন না। আজ আবার মাথায় ঢুকলো পুরনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা। মেয়ের মাতায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতলেন এই বলে, ‘ভয় পেয়ো না মা অর্ণব জলদিই সুস্থ হয়ে উঠবে। আমি নিজে ডাক্তারের সাথে আলাপ করেছিলাম তো। এ তেমন আঘাত নয় একটু বেডরেস্ট আর প্রোপার ট্রিটমেন্টে সে একদম ভাল হয়ে যাবে৷ আর তারপরই আমি তার সাথে কথা বলে দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলব। কাঁদে না মা আমার তোমার আম্মুও তো অসুস্থ হয়ে পড়ছে তাকে সান্ত্বনা দিতে হবে না!’

বাবার আহ্লাদের স্বরে বোধকরি হুঁশ ফিরলো বৃষ্টির। আবেগে কেঁদেকেটে কি বলছিলো সে এতক্ষণ। আব্বুই বা কি বলল দিনক্ষণ মানে! এবার কান্না আপনাআপনিই থেমে গেল তার৷ লজ্জা লাগছে খুব এখন তাই চোখ, মুখ মুছে সে বাবার জন্য চা বানাবে বলে চলে গেল রান্নাঘরে। বাশার শেখ ফিরে গেলেন নিজের ঘরে এখন দেখা যাক রায়নার জন্য কি করা যায়।
__________

প্রতি ঘন্টায় রিদওয়ানের ফোনকল চলছে আজ দু দিন ধরেই। দেশে না থাকলেও যেন আপন মানুষগুলোর খুব কাছে থাকার চেষ্টা। বয়সে দু বছরের ছোট অর্ণব তার জন্য বরাবরই বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। খালাতো ভাই কিংবা সুমুন্দি সম্পর্কের আগে অর্ণব তার বন্ধু এটাই বড় সত্যি তার মনে৷ তাইতো অর্ণবের দূর্ঘটনার খবর শুনতেই সে ছটফট করছে। লিসবনে এখন সবে দুপুর ফুরিয়েছে রেস্টুরেন্টে এখন মোটামুটি ভীড়। আজ সেখানে ছুটির দিন বলেই এক্সট্রা ইনকাম ভালো হচ্ছে তার। একটু আগেই আব্বু নিজে ফোন করেছেন তাকে। তার বিদেশ বিভূঁইয়ে এতগুলো মাসে এ পর্যন্ত মোটে চারবার কল করেছেন তাও কিনা নিজের প্রয়োজনে। গত তিনবার অফিস সংক্রান্ত ত্রুটির জন্য যা রিদওয়ানের দ্বারাই সৃষ্ট আর আজ করেছেন বৃষ্টির বিয়ের কথা বলতে। সেসময় রিদওয়ান খুব ব্যস্ত থাকায় আব্বুকে বলেছিল, একটুখানি সময় চাই তার। হাতের কাজটা শেষ হতেই কল করছি৷ বাশার শেখ জানতে চাইলেন ছেলে তার কি করছে এই মুহূর্তে৷ রিদওয়ানও বোধহয় হাসিমুখে বলল, পিজ্জা ওভেনে আছে হয়ে এসেছে সেটা নামিয়ে একটা অর্ডার সার্ভ করতে হবে। বেশি না আর বিশটা মিনিট লাগবে তার কাজগুলোতে৷ তা শুনেই যেন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন তার বাবা। যার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা, যার উত্তরাধিকারীরা কম করে হলেও কোটির সাথে শ’ যুক্ত করা সম্পত্তির অংশীদার সেই অংশীদার নাকি লোকের সম্মুখে মাথা ঝুকিয়ে কিছু ইউরোর অর্ডার নেয়, চাকরের মত মাথা ঠুকে খাবার সার্ভ করে! ভেতরে ভেতরে বোধহয় রাগও উথলে উঠছিল সমুদ্রের ফেনিল ঢেউয়ের মত। তিনি কল কেটে দিলেন তৎক্ষনাৎ। রিদওয়ান সেদিকে আর পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে মন দিল। ফ্রী হয়ে কল দিয়ে কথা বলে নেবে। অর্থ বিত্ত জরুরি কিন্তু তা নিয়ে বড়াই কিসের! কথায় আছে যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। আজ বেঁচে আছে বলেই অর্থ চাই কাল নিঃশ্বাস ফরিয়ে গেলে এই অর্থ, বৈভব কোথায় থাকবে তার কেন বোঝে না অহংকারে ডুবে থাকা মানুষগুলো! হাতের কাজ ফুরিয়ে যেতেই রিদওয়ান ফোন হাতে বেরিয়ে এলো কর্মস্থল ছেড়ে। দেশে এখনো রাত ফুরোয়নি এত রাতে বাবাকে কল দেয়াটা ঠিক হবে না ভেবে এবার কল দিলো অর্নির নম্বরে। একটু আগেও মেসেজ এসেছে অর্নির নম্বর থেকে তারমানে আজও রাতটা ঘুমাবে না পাগল মেয়েটা। হাঁটতে হাঁটতে কল ধরলো অর্নির নম্বরে। ওপাশে বোধহয় এই ফোন কলটার অপেক্ষাই চলছিলো তাইতো সেকেন্ডেই রিসিভ হলো।

____________________

ডান হাতের আঙ্গুল গুলো আর মুখটা ফুলে ফেঁপে যেন ফেটে যেতে চাইছে। আলতো স্পর্শে নুপুর প্রতিটা আঙ্গুলই ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে অর্ণবের। কেবিন জুড়ে আবছা আলো সেই আলোতেই নিভু নিভু চোখে অর্ণব দেখছে নুপুরকে। রাত শেষ হয়ে এলো প্রায় তবুও নুপুরের চোখে ঘুমের একটুও আভাস নেই যেন এটাই স্বাভাবিক। নুপুর যখন কপালে চুমু দিলো তখনই ঘুম ভেঙেছিল অর্ণবের কিন্তু চোখের পাতা খোলা মুশকিল তাই চেয়ে দেখেনি সেই মুহূর্তের মোহনীয় সৌন্দর্যটুকু। রিমন, অর্নিতা একসাথে কেবিনে আসার পর নুপুর সরে গিয়েছিল কিছুটা দূরে তা দেখে রিমনের খুব হাসি পেলো। সবকিছু বুঝে গেছে এমনটা ভাব করেই সে চাইছিলো একটু মজা করা যাক অর্ণব ভাইয়ের এই বাচ্চা প্রেয়সীর সাথে। তা আর সুযোগে মিলল না। আব্বু কল দিয়ে তাড়া দিলেন বাড়িতে ফিরতে হতে পারে আম্মুকে নিয়ে আবার আসতে হবে হসপিটালেই। পরিবারের মানুষগুলোর অসুস্থতায় ক্লান্তির অযুহাত চলে না তার কাছে একদমই। এদিক থেকে সত্যিই সে রিদওয়ানের চেয়ে যোগ্য সন্তান বাবা মায়ের। রিমন চলে যেতেই অর্নিতা আর নুপুর কেবিনের ভেতরেই বসেছিল চুপচাপ। মধ্যরাত অবধি জোর করে অর্নিকে নিজের কোলে চেপে রেখে গুমাতে জোর করেছে নুপুর। কাল থেকে একেবারে নিদ্রাহীন মেয়েটা সেও যে এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে৷ কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি৷ ক্ষণে ক্ষণে ভাইয়ের দিকে তাকিয়েই ফুপিয়ে উঠেছে কান্নায়। একটু আগে আর ভালো লাগলো না নুপুরের এই কান্নাকাটি তাই বলে বসলো, রিদওয়ান ভাইয়ার মেসেজগুলোর রিপ্লাই দিসনি উনি নিশ্চয়ই চিন্তিত হচ্ছেন। কাজ হলো বাক্যটায়; চোখ মুখ মুছে রিদওয়ানকে রিপ্লাই করলো আর এখন ফিরতি কল পেয়ে করিডোরে গেল কথা বলতে। নুপুর একাই এখন বেডের কাছে বসে অর্ণবের আঙ্গুল ছুঁয়ে দিচ্ছিলো। আবারও ঘুম ছুটলে এবার আর নুপুরকে সরতে দেয়নি। বা হাতে বড় কষ্টেই হাতটা ধরেছে সে নুপুরের। ভারী স্বরটা ব্যথায় আর্তনাদে আগের চেয়েও গম্ভীর আর ভাঙা ভাঙা হয়েছে। সেই ভাঙা ভাঙা স্বরেই অর্ণব বলতে লাগল, পাগলামি করে ফেললে কেন?

-হু!

-বোঝোনি?

মাথা নেড়ে ‘না’ জানায় নুপুর। সত্যিই সে বোঝেনি তার কথা।

– বান্ধবীর ভাইয়ের জন্য রাত বিরাতে এসে উপস্থিত হয়েছো!

অর্ণবের কথাটা কাঁটার মত খুঁচিয়ে দিলো নুপুরকে। সে তৎক্ষনাৎ হাত ছেড়ে দিলো অর্ণবের। সেদিকে খেয়াল করে অর্ণব বেলুনের মত ফোলা ঠোঁট দুটো অল্প টেনে হাসতে চেষ্টা করলো।

-হাত ধরলে ছাড়তে নেই।

নুপুর এবার বসা থেকেই উঠে পড়লো তা দেখে অর্ণব হাত বাড়ালো নুপুরের হাতের দিকে। কেবিনের বাতি বন্ধ বেড সাইড মেডিসিনের ড্রয়ারের ওপরে ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে নুপুরের ফোনটা রাখা। সেই সল্প, সাদা আলোটাতেই অর্ণব দেখতে পেল মেয়েটির চোখের কার্নিশ চিকচিক করছে। এবার আরেকটু এগিয়ে হাত বাড়িয়েই ধরলো হাত। নুপুর সরিয়ে নিলো আর নিজের হাতটাকে। নিঃসংকোচ, দ্বিধাহীন হয়ে অনুভব করলো অর্ণবের স্পর্শ।
-একটা সময় জোর করেই কথা বলতে চাইতে। আজ শুনতে কান পেতে রেখেছি বলেই কি চুপচাপ হয়ে আছো?

-অসুস্থ মানুষের এত কি কথা চুপ করে ঘুমান।

-যেন আরও একবার সুযোগ নিতে পারো!

-কি বলছেন এসব?

-ওই যে যা করেছিলে… আমার কপাল তোমার ঠোঁট…

কথা শেষ করার আগেই নুপুর ঠোঁট চেপে ধরলো অর্নবের। চোখ, কপাল একসাথেই কু্ঁচকে এলো হাতের চাপে। নুপুর বুঝতে পারলো ভুলটা দ্রুতই সরিয়ে নিলো হাত।

-স্যরি স্যরি আমি একটুও বুঝতে পারিনি।

-অস্থির হইয়ো না আমি ঠিক আছি।

-আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি।

-হুশশশ, ব্যথা পাইনি তেমন।

আরও কিছু বলার ছিলো হয়ত দুজনার বলা হলো না। অর্নিতা এসে ঢুকেছে কেবিনে। বাকি রাতটুকু আর কারোই ঘুম হলো না তবুও চুপচাপ রইলো তিনজনই। সকালে আটটার পরই নুপুর চলে গেল বিদায় নিয়ে৷ তারপর থেকে রোজই সে অর্ণবের খোঁজ নিতে থাকলো প্রথম প্রথম অর্নিতার মাধ্যমে৷ পরে অবশ্য অর্ণব কিছুটা সুস্থ হতেই ফোনকলে তার সাথেই কথা চলল। অর্নিতার পড়াশোনার কথা ভেবে দিন তিনেক পরই অর্ণব জোর করে তাকে পাঠিয়ে দিলো চট্টগ্রামে। হাসপাতালে পরের সময়গুলো মোটামুটি একা কাটলো তার। দিনের কিছু সময় বৃষ্টি, সন্ধ্যের পর রিমন আর রাতটা তার পাশে ওয়ার্ড বয়দের একজনকে রাখা হলো তার জন্য।ডাক্তার প্রথমে দিন দশের কথা বললেও পায়ের অবস্থা খারাপ থাকায় টানা আঠারোটা দিন তার কেটে গেল হাসপাতালের বদ্ধ কেবিনে। ম্যানেজার আঙ্কেল অফিসের কাজকর্ম ঠিকঠাকই গুছিয়ে রাখলেন সেইসাথে নিজ দ্বায়িত্বে দাদীর খেয়ালও রাখতে ভোলেননি। নাতির চিন্তায় দাদীও কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়েছেন তা দেখে অর্ণব একরকম জোর করেই হাসপাতাল ছেড়ে গেল। ওয়াক স্টিক ব্যবহার করে সাবধানে চলাফেরা শুরু করতেই অফিস যাতায়াত শুরু হলো তার। পুরোপুরি সেড়ে উঠতে দেড় মাসেরও বেশি সময় লেগে গেল তার। ততদিনে নুপুরের সাথে তার কথা বলা সহজ হয়ে গেছে। রোজ যেন নিয়মে বাঁধা পড়া কথা হয় তাদের। সে কথায় নেই ভবিষ্যত পরিকল্পনা, না আছে ভালোবাসা প্রকাশের প্রয়াস। তবুও তারা টের পায় একে অপরের অনুভূতির তীব্র আলোড়ন ভিন্ন এক জগত সৃষ্টি করছে তাদের। সে জগতে তারা একে অন্যের ধারক, বাহক সবটাই হয়ে উঠেছে অপার মায়ায়।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে