গল্পঃ কে তুমি ( তৃতীয় পর্ব )
লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী
হিমির কোমরের ঠিক সামান্য উপরে একটা জন্ম দাগ আছে, বিষয় হচ্ছে হিমি মারা গেছে এমনটা সবাই জানে, নাবিলাকে হুবহু হিমির মতো মনে লাগার কারণে নিলয়ের মনে কৌতূহল বেড়েই চলছে! এখন নাবিলার কোমরে ঐরকম জন্ম দাগ আছে কিনা সেটা শিওর হবার জন্য নিলয়ের মন ব্যস্ত সারাক্ষণ, কি এবং কোন উপায়ে সেটা সম্ভব ভেবে পাচ্ছে না নীলয়।
এই জন্মদাগ নিয়ে নানান কথা প্রচলিত, কিছু কুসংস্কার আবার এ নিয়ে গবেষনারও কম নেই, চলুন তেমন কিছু জানি–
অনেকেই হয়তো এমন তথ্যকে কুসংস্কার বলে অবজ্ঞা করতে পারেন। তবে এ নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। তবে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ্যে না এলেও, ১৯৬০ সালে চিকিৎসক ইয়ান স্টিভনসন এ নিয়ে নানা রহস্য ফাঁস করেছিলেন। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল জন্মদাগের কিছু গোপন কথা।
শরীরের আলাদা আলাদা জায়গার জন্মদাগের অর্থও আলাদা।
কারও পায়ে জন্মদাগ থাকলে সেই ব্যক্তি সাধারণত বিভ্রান্ত থাকেন। কোনও বিষয় নিয়ে চটপট সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও, তা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর অভাবে বাকিদের থেকে পিছিয়ে পড়েন তিনি।
কাঁধে জন্মদাগ বলতে বোঝায় অর্থে টান। এই ব্যক্তিরা প্রায় সারাজীবনই টাকার অভাবে ভোগেন। তবে ডান কাঁধে জন্মদাগ থাকলে সেই ব্যক্তি অত্যন্ত ভাগ্যবান। ভাগ্যের জোরেই বহুদূর এগিয়ে যান তিনি।
লক্ষ্য করে দেখুন তো, বুকের বাঁ-দিকে জন্মদাগ রয়েছে কি না। তাহলে যাতেই হাত দেবেন তা সোনা হতে বাধ্য। প্রতিটি পদক্ষেপে মিলবে সাফল্য। পাশাপাশি আপনার মধ্যে যে রসবোধ রয়েছে, সে বিষয়েও সকলে অবগত।
বুকের ডান দিকের নিচে জন্মদাগ থাকলেও, আপনি সৌভাগ্যবান। সম্পদ ও সৌভাগ্যে পরিপূর্ণ আপনার জীবন।
ঘাড়ের ডান দিকে জন্মদাগ থাকার অর্থ সেই ব্যক্তি বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থাকতেই ভালবাসেন। পরিবার ও বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে তিনি পছন্দ করেন। এক কথায় সংসারে শান্তি বজায় রাখতে বড় ভূমিকা রয়েছে সেই ব্যক্তির।
কোনও ব্যক্তির হাতে অথবা হাতের আঙুলে জন্মদাগ থাকলে তিনি নিজের কাজ নিজে করতেই ভালবাসেন। অন্যের দয়া বা সাহায্য নেওয়ার পক্ষপাতী নন তিনি। পেটের কোনও অংশে জন্মদাগ রয়েছে এমন ব্যক্তিকে সমঝে চলবেন। কারণ, সেই ব্যক্তি কিন্তু অত্যন্ত লোভী এবং স্বার্থপর। এমনকী ভালবাসার মানুষকেও তিনি রেয়াত করেন না।
নাকে জন্মদাগের অর্থ আপনি একজন সৃজনশীল ব্যক্তি। যে কোনওরকম আর্টে আপনার প্রতিভা রয়েছে।
পায়ের নিচে জন্মদাগ। তাহলে নিঃসন্দেহে সেই ব্যক্তি ঘুরতে ভালবাসেন। ভবিষ্যতে ট্রাভেলকে পেশা হিসেবেও বেছে নিতে পারেন।
এটা ছিল জন্মদাগ নিয়ে সংগৃহীত কিছু কথা।
নিলয় এক ধ্যানে নাবিলার দিকে তাকিয়ে আছে, কিছুক্ষণ সেটা লক্ষ্য করে নাবিলা গলা খাখারি দিয়ে বললো,– এই যে, এভাবে তাকিয়ে থাকলে নজর লেগে যাবে তো!
নিলয় থতমত খেয়ে বললো,– ইয়ে না মানে বিষয়টা অন্য ভাবে নিয়ো না, তোমাকে দেখতে খুব কাছের কেউ একজনের মতো হুবহু, তাই তোমার মাঝে তাকে খুজে পাই, এবং নিজের অজান্তে তোমার মাঝে হারাই।
নাবিলা মুচকি হেসে বললো,– এভাবে অন্যের মাঝে হারালে, ডুবলে বিজনেস চলবে কি করে মিস্টার নিলয়! আর কে সেই কাছের কেউ জানতে পারি?
: নাবিলা সে খুব কাছের!
: তো আমি কি বলছি সে খুব দূরের?!
: হা হা হা, না সে হৃদয়ের খুব কাছের তো তাই।
: তো আপনার কাছের মানুষটার কাছে গিয়ে তার মাঝে ডুবলেই হয়, তাকে রেখে আমার দিকে নজর দিলে হবে!
নিলয়ের চোখে জল টলমল করে উঠলো, টেবিলের ওপর থেকে টিস্যু নিয়ে চোখ মুছে নিলয় বললো,– নাবিলা, কাছের মানুষটা আজ এতটাই দূরে যে চাইলেই দেখা যায়না, ধরা যায়না, ছোঁয়া যায়না। এটাই সবথেকে বড়ো কষ্টের কারণ! যে মানুষটা অস্তিত্বে মিশে আছে তার বিরহ ঠিক মারাত্মক শ্বাসকষ্টের মতো। শ্বাসকষ্টের রোগী অক্সিজেনের জন্য যেমন ছটফট করে, বাঁচার জন্য অক্সিজেন যেমন ভীষণ দরকার হয়ে পড়ে। কাছের মানুষটাও বেঁচে থাকার সেই অক্সিজেন, তাকে ছাড়া বেঁচে থাকা চব্বিশ ঘণ্টা মৃত্যু যন্ত্রণা বয়ে চলার মতো কষ্টকর।
নিলয়ের কথা শুনে নাবিলার চোখেও জল টলমল করে উঠলো।
কথা শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়িয়ে নিলয় অফিস থেকে বের হয়ে গেল।
নাবিলাও বের হলো।
একটা কফিশপ অতিক্রম করে যাবার সময় নাবিলা খেয়াল করলো কফিশপের স্বচ্ছ কাচের দেয়ালের ওপাশে কয়েকজন যুবক যুবতী দাড়িয়ে সিরিয়াস কিছু নিয়ে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে, সেখানে মীরাও আছে এবং মীরাকে খুব আপসেট দেখাচ্ছে!
নাবিলা কাচের দরজা ঠেলে কফিশপে ঠুকে মীরার কাছে গিয়ে বললো,– কি হয়েছে মীরা, কোনো সমস্যা হয়নি তো!
মীরা ইশারায় সামনে দাড়ানো যুবককে দেখিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে বললো,– আমাকে এত এত ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়ে সে অন্য কারো সাথে আবার সম্পর্কে জড়িত। এই যে আজ জানতে পারলাম, ওর পাশের ঐ মেয়েটির সাথে ওর সম্পর্ক চলে সেটা আজ হঠাৎ এই কফিশপে কফি খেতে এসে হাতেনাতে ধরে ফেলেছি বলে আমাকে যাচ্ছেতাই বলছে।
মীরার প্রেমিক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,– তোর আবার প্রেম! তোর মতো বড়োলোকের মেয়েদের আছে টাকা আর অহংকার, কথায় কথায় ন্যাকামি, আর প্যারা ছাড়া কি দিতে পারিস!
নাবিলার মাথায় রাগ চেপেছে ভীষণ, মীরার প্রেমিককে বললো,– নাম কি তোমার?
মীরার প্রেমিক বললো,– আমি মজনু।
সবার সামনে টেনে মজনুর গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো নাবিলা।
মজনুর মনে হলো গালের ওপর দিয়ে বড়সড় একটা ঝড় বয়ে গেল, মাথায় চক্কর, দুচোখ ঝাপসা। থাপ্পড়ের ঠেলায় ঘুরে গিয়ে নিজের সাথে আসা বন্ধুকে বললো,– আমাকে থাপ্পড় মারা, এতবড় সাহস!
মজনুর বন্ধু মজনুকে ধরে ঘুরিয়ে নাবিলার সামনে দাড় করিয়ে বললো,– থাপ্পড় আমি মারিনি, ইনি মেরেছে।
মজনু সাথে আসা বন্ধুদের বললো,– আমাকে থাপ্পড় মারলো আর তোরা চুপ, মেজাজ কিন্তু গরম হচ্ছে খুব।
মজনুর কথা শুনে এক বন্ধু বললো,– বাহ! দোস্ত বাহ! কি দারুণ ছন্দ।
মজনু বললো,– চুপকর, কানের উপ্রে একটা দিয়ে কোমায় পাঠালে বুঝবি কি ভালো কি মন্দ।
একটা ছুরি বের করে নাবিলার গলায় ধরে মজনু বললো,– মজনু নাম শুনকে লাভার সামঝা ক্যা, কুস মজনু ডেঞ্জারাস ভি হোতাহে!
মজনুর হাবভাব দেখে ভয়ের বদলে নাবিলার হাসি পাচ্ছে খুব।
নাবিলাকে হাসতে দেখে ছুরিটা নাবিলার গালে চেপে ধরে মজনু বললো,– আমার গালে থাপ্পড় মেরেছিস, তোর গালে এই ছুরি দিয়ে এমন দাগ বসিয়ে দেবো, আজীবন দেখবি আর মনে মনে ভাববি ভুল স্থানে বাহাদুরি দেখানোর ফল কত ভয়ংকর হয়…
চলবে..