কে কোথায় যায়? পর্ব ৮
সূর্যাস্ত দেখে সবাই যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে!নীহারিকা তামিমকে বললো,
——–‘কি রে এখানেই পরে থাকবি নাকি?’
শুভা দৌড়ে আসলো।হাপাতে হাপাতে বললো,
——‘আমরা একটু আরেক জায়গায় যাবো!তোরা চলে যা।’
ভোর কথাটা শুনে নির্বিকার গলায় বললো,
—–‘আমিও আসি আপুই?’
শুভা হতচকিত হলো।হতচকানো কন্ঠে বললো,
—–‘ক্যান?না!’
ভোর মুখ গুমোট করে নিল।সেখান থেকে পদত্যাগ করলো।রুদ্রের পাশে গিয়ে বসলো!রুদ্র ভোরের মন খারাপ পরখ করে বললো,
——‘কি হয়েছে আপনার?মন খারাপ কেনো?’
ভোর ঠোঠ উল্টিয়ে অভিমানী সুরে বললো,
—–‘শুভা আপুই আর তামিম ভাই আমাদের সাথে হোটেলে ফিরবে না।কোথায় যেন যাবে বললো! আমি বললাম আমাকে নিয়ে যেতে আর আপুই দিল প্রলংয়কারী হুংকার!’
রুদ্র খানিকটা অপর দিকটায় মুখ ঘুরালো।কিছু ভাবলো মন ভরে!তারপর ভোরের দিকে তাকালো!সরু গলায় বললো,
——‘আমি কোথাও নিয়ে গেলে যাবেন?’
ভোর হাসলো।মিষ্টি গলায় বললো,
—–‘জ্বী কেন নয়?’
ভোর খুশীতে লাফাতে লাগলো।নীহারিকা জিপে উঠে বসলো।সবাইকে ডেকে ডেকে জিপে তুলছে!ভোর যখন পাশ কাটিয়ে খুশীতে লাপ দিয়ে যাচ্ছিলো তখন তাকে ডাকলো নীহারিকা।
——-‘এই ভোর,হোটেলে ফিরবে না?’
ভোর লাফাতে লাফাতে বললো,
—–‘ না আপুনি।রুদ্র ভাইয়ার সাথে পাশের স্থান গুলা ঘুরে বেড়াবো।’
রুদ্র নীহারিকার দিকে সরু চোখে তাকালো।নীহারিকা মুখ টিপে হাসছে।ভোর অন্য পাশটা হেটে হেটে দেখছে!নীহারিকা রুদ্রকে চিমটি মেরে বললো,
——-‘যা শালা!এবার তোর লাইন ক্লিয়ার।চট করে বলে দিস তোর মনের হাবিজাবি কথাগুলো!’
রুদ্ধ স্লান হাসলো!নীহারিকা ও বাকি যারা আছে তারা সন্ধ্যার খানিক পর রওনা দিল!
তামিম শুভা খানিক দূরত্বে অবস্থান করছে।কেওক্রাডং এর শীর্ষতে উঠবে।খুবই পিচ্ছিল পাথর!শুভা উঠতে পারছে না।তামিম চট করে একটার পর আরেকটা বেয়ে উঠছে আর শুভা সেই পিছনেই রয়ে গেছে।শুভা একেকটা পাথরে পা দিয়ে কাঁপতেছে।শেষ পর্যন্ত না পেরে তামিমকে ডাক দিল।
——‘এই শুন,একটু হাতটা ধর!ভয় করতাছে।’
তামিম সরু চোখে তাকালো একবার। নির্বিকারভাবে বললো,
——‘পারুম না।আমি কি তোর বফ নাকি যে আলগা পিরিত কইরা হাত ধরুম?’
শুভা চুপসে গেল।আর আগ থেকে একটা কথা বললো না।খানিক পরে তামিম নিজ থেকে এসে হাতটা ধরলো!কানের কাছে এসে বললো,
——‘বফের চেয়ে কম কিসে আমি তোর?’
শুভার ভিতরটা এই কথায় তোলপাড় করে দিল। কিছু বলতে গেল ঠিক তখনই আবার তামিম বললো,
——‘চল,এদিকটায় এসে বসি।’
শুভাও সায় দিল।এদিকে মানুষের আনাগোনা কম!দু’জন একটু দূরত্ব অবলম্বন করে বসলো।
সকালের উজ্জ্বল আলো যেমন বগালেককে দেয় সিগ্ধ সতেজ রূপ। ঠিক তেমনি রাতের বেলায় দেখা যায় ভিন্ন এক মায়াবী হাতছানি। রাতের বগালেক দিনের বগা লেক হতে একেবারেই আলাদা। আর যদি রাতটি হয় চাঁদনী রাত তবে এটি জীবনের সেরা রাতের একটি। কি অসাধারণ সে রূপ!নিকষকালো অন্ধকার রাতে পাহাড়ের বুক চিড়ে হঠাৎ একফালি চাঁদ মৃদু আলোর ঝলক নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে বগালেকের শান্তজলে।
নিস্তব্ধ পাহাড়ের নির্জনতায় নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করছিল তারা বগালেক-কেওক্রাডং পাহাড়ে!শীতের শুরুতে স্নিগ্ধতায় পাহাড়ের রুপে আসে অপরুপ লাবণ্যতা।একেকটি সুউচ্চ পাহাড় আর মেঘের ভাজে ভাজে সাথে দুজন কাটিয়ে দিচ্ছে নিজেদের।হয়তো এটা তাদের জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা! মেঘ পাহাড়ের রাজ্যে খেয়ালীপনায় নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে ওরা। নির্মল বিশুদ্ধ হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দিচ্ছে।
আরও ১ ঘণ্টা হাঁটলে দার্জিলিং পাড়া!ঔপনবেশিকতার থাবায় আজ এ পাড়ার সবাই নিজেদের আদি ধর্ম ছেড়ে খ্রিস্টান হয়ে গেছেন। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম গোছানো। এই আদিবাসী পাড়ার দোকানে চা, কফি, ক্যালসিয়ামসহ খাবারের ব্যবস্থা আছে।দার্জিলিং পাড়ার আসার রাস্তায় চারদিকল সবুজ সায়রে পরিবেষ্টিত! এখানে মেঘ যেন ভোর ও রুদ্রকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভাসাচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ৩ ঘণ্টা সেখানে থাকায় দু’জন এর চারপাশ উপভোগ করেছে দারুণভাবে।
এই তিনঘন্টা দু’জন খুব উপভোগ করেছে।বৃষ্টি না হলে আরো দু’একটা জায়গা দেখাতো রুদ্র!ভোর যেন এমন খুশী আর দ্বিতীয় বার হয়নি।রুদ্রের হাত ধরে বললো,
——-‘এত সুন্দর জায়গাগুলি আপনি কই থাইক্যা পাইছেন?’
রুদ্র আত্মভাব প্রবল করে বললো,
——‘গুগোল আপা কিস কাম কি হে?তার’ই সাহায্য নিলাম!’
ভোর মিষ্টি একটা হাসলো।বৃষ্টি থেমেছে,এই সুযোগে এখান থেকে বের হওয়া যাবে।রুদ্র ভোরকে তাড়া দিয়ে বললো,
——‘রাত অনেক হলো।বৃষ্টিও থেমেছে!চলুন হোটেলে চলুন।’
ভোরও বসা থেকে দাড়ালো।নির্বিকার গলায় বললো,
——-‘চলেন!’
হাটতে হাটতে তারা পাশের দু’একটা জায়গাও দেখে নিল।বলবক ঝর্ণা ও চিংড়ি ঝর্ণাও পরিদর্শন করলো।ভোর খুব বেশী খুশি!লাফাতে লাফাতে একপ্রকার চলছিল সে।হোটেলে পাশ আসতেই ভোর রুদ্রেরর হাত ধরলো!আকস্মিক হাত ধরার রহস্য উদঘাটন করতে রুদ্র পিছনে ফিরে তাকালো।ভোর মিষ্টি হেসে বললো,
——–‘এত সুন্দর জায়গাগুলো দর্শন করানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!’
রুদ্র কি বলবে?এটা কি সে আশা করেছে?মিষ্টি হেসে সে হাটতে লাগলো।ভোর পিছন পিছন হাটছিলো!আবার দৌড়ে এসে রুদ্রকে বললো,
——‘বন্ধু হবেন আমার?’
চারদিকে মাতাল হাওয়া!লক্ষ্মী পেঁচা তার লক্ষ্মীটির তরে গান গাইছে।চাঁদনী রাত!এতো প্রেমের গন্ধ!
©ইভা আহমেদ চৌধুরী
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/