কে কোথায় যায়? পর্ব ৩১
অন্তিম পর্ব
শুভা ব্যাগপ্যাক করল।তামিমও রেডি।চুল স্পাইক,চোখে চশমা।শুভা জিন্স ও টি-শার্ট পড়েছে!হঠাৎ কারো ফোন আসল।
——–‘ইউর টাইম ইজ অভার শুভু!’
শুভার মিষ্টি মুখের হাসিটা চলে গেল।মুখে নেমে এল দুর্বার একরাশ কষ্ট।সে তামিমের দিকে তাকাল।তামিম বোকা বোকা ভাব নিয়ে তাকাচ্ছে।শুভা একা অন্যরুমে চলে গেল।অনেক সময় গেল।আবার এসে তামিমের দিকে তাকাল। শুভার তাকানো পাত্তা না দিয়ে তামিম বলল,
———–‘চল,তাড়াতাড়ি।’
শুভা কথা না বলে গাড়িতে উঠল।তামিম বসল পাশে।নীহারিকা কল দিয়েছে…
———-‘আসতেছি দোস্ত!’
শুভা বলল,
———‘বল,বড়ই পাতা জোগাড় করে রাখতে!’
তামিম থ বনে বলল,
———-‘বড়ই পাতা খাবি?হাহাহা।’
শুভা আর কথা বলল না।অনেক সময় গাড়িতে বসে রইল চুপচাপ।একটু পর পর তামিমকে দেখছে।হঠাৎ তামিমের হাত জড়িয়ে ধরে বলল,
———-‘দোস্ত বড় অশান্তি লাগতেছে!বড় অশান্তি চারদিকে,দোস্ত আমারে জড়িয়ে ধরে রাখ।যেতে দিস না প্লিজ!’
তামিম বুকে ঝাপটে ধরল শুভাকে।কাপা কাপা গলায় বলল,
———-‘কি হয়েছে তোর?পানি খাবি?কি হয়েছে বল না।’
শুভা তখন হাপাচ্ছে।কাপছে।তামিম কয়েকটা মানুষকে ডেকে আনল।সবাই শুভাকে ধরল।শুভা ছটফট করছে।ছটফাটানি শেষ হল,হ্যাঁ শেষ হল।শুভার শক্ত দেহ নরম হয়ে গেল।চোখ দুটো স্থির হল।হাত নিজ শক্তি চলে গেল।হাসি নিঃসঙ্গ হল।তামিম শুভাকে ধরে পাশের এক লোককে বলল,
———‘হেল্প মি প্লিজ!ওর কি হয়েছে?’
পাশের লোকটা হয়ত খানিক চিকিৎসা শাস্ত্রের সম্পর্কে ধারণা ছিল।সে শুভার নাড়ি পরীক্ষা করল।মুখ গম্ভীর করে বলল,
———-‘দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে মরহুমা!’
উপস্থিত জনতা শোর্কাত।তামিম কাঁদছে,প্রচুর কাঁদছে।কাঁদতে কাঁদতে এক প্রকার অজ্ঞান!একজন লোক বলে উঠল,
———-‘ওর মোবাইলটাতে কেউ পরিচিত কোনো নাম্বার দেখলে কল দাও!বিষয়টা বল,ছেলেটাকে তো নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।’
লোকটা কল দিল নীহারিকার কাছে।নীহারিকাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,
———–‘উক্ত ফোনের মালিকের সাথে যে মেয়েটা ছিল সে মারা গিয়েছে,ছেলেটা পাগলের মত আচরণ করেতেছে।কি করি?’
নীড়ে ফেরা পাখিদের কিচিরমিচির পুরোপুরি থেমে গেল।নীহারিকার মাথার উপরে এক পশলা রোদ্দুর যেন চলে গেল,যা তার একমাত্র সম্বল ছিল।সে নির্বাক।নিজেকে নিয়ন্ত্রণে এনে বলল,
———-‘আমরা ঢাকায় থাকি।কোথায়,কখন,কিভাবে কি হল?’
লোকটা নাখ কচকালো।ধীরে সুস্থে বলল,
———-‘মেয়েটা মারা গেছে গাড়িতেই।ছেলেটা লোক জড়ে করতে করতে মেয়েটা ওপারে চলে গেছে।এখন,আপনারা তো ঢাকায় থাকেন তাই না?এখানে আমরা দুজন ঢাকাইয়া লোক আছি।তাদের নিয়ে আসতেছি।বাসা নং?’
নীহারিকা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
———-‘১২২,ধানমন্ডি।’
ফোন কেটে গেল।নীহারিকা নিস্তব্ধ। রাফি হঠাৎ কোথা হতে আগমন করল।নীহারিকাকে চুপ থাকতে দেখে বলল,
———‘কি হয়েছে?আমার জানুটারে এমন আপসেট দেখলে চাঁদের বুড়ির মত লাগে।’
নীহারিকা উত্তর দিল না।রাফি এমন কান্ড দেখে রুদ্র ও ভোরকে ডাক দিল।দুজন বিরক্ত নিয়ে আসল।রুদ্র রুদ্র মূর্তি ধারণ করে বলল,
——-‘কি হইছে তোর?’
রাফি নীহারিকাকে দেখাল ইশারা করে।ভোর ও রুদ্র তাকাল নীহারিকার দিকে।ভোর পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,
——-‘কি হয়েছে আপু?সব ঠিকাছে?’
নীহারিকা মুখ খুলল।সরু গলায় সে বলল,
———‘না,ঠিক নাই রে।তোর আপুই আর নাই।সবাইকে ফেলে চলে গেছে পরপারে।আসতেছে ওরা, কয়েকজন লোক নিয়ে আসতেছে।’
সবদিকে পিনপতন নিরবতা।ভোর ও নীহারিকা কাঁদছে।রুদ্র ও রাফি যেন বোমা হয়ে চুপটি করে বসে আছে।একদম চুপ। চুপে চুপে মিলেমিশে একাকার।কয়েক ঘন্টার পর এক লোক এল।দরজা খুলতেই রুদ্রকে বলল,
———‘মরহুমাকে নিয়ে এসেছি।’
সবাই দৌড়ে এল।শিফনের মত মসৃণ চুলের মেয়েটার রুক্ষ চুল,ঠোঁঠ শুকিয়ে গেছে,মুখে এখনো ভয় লেগে আছে।তামিমকে সবাই ধরে এনে বিছানায় শুয়ালো।তামিম অজ্ঞান।তামিম সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই পড়ে রইল।কেউ তাকে তুলল না বা জাগানোর চেষ্টা করল না।জানাযার লাজ সম্পন্ন করল অন্যরা মিলে।জানাযা শেষে দোয়া মাহফিল হল।সব কাজ শেষ হল।রাত তখন নয়টা বেজে দশ মিনিট।তামিম তার শরীরটা টেনে তুলল।গলা ভাঙ্গা তার,সুর টেনে বলল,
———‘আমার শুভা কই?’
সবাই নিরব।নিরবতা এখন বড্ড দরকার। নীহারিকা শুভার ব্যাগ খুলল।তাতে ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটা গিফট বক্স।নীহারিকা দেখল প্রত্যেকটার উপরে নাম লেখা আছে।’নীহারিকা’ লেখা গিফট বক্স হাতে নিল নীহারিকা।রুদ্র, ভোর ও রাফিও যার যার বক্স হাতে নিল।নীহারিকা বক্স খুলে একটা জিন্স ও দুই প্যাকেট চকলেট পেল।সাথে আশ্চর্যজনক চিঠি।নীহারিকা পড়তে লাগল,
প্রিয় নীহু,
রাগিনী আমার,প্রিয়সী আমার।পড়তে পড়তে অনেক বড় হতে হবে তোকে।অনেক বড় হয়ে ডাক্তার হবি যে?মনে আছে এসব?দুই প্যাকেট চকলেট একা একা গিলিস না,রাফিকেও দিস।রাফি তোর হাত ধরে থাকবে সারাজীবন চকলেট খেয়ে শক্তি যখন বাড়বে।নীহু,দয়া করে তামিমটাকে দেখে রাখিস।মৃত্যু মুহুর্তেই চলে আসে তবে স্মৃতি রেখে যায় গভীর করে।
আচ্ছা, বাদ দে!ভালো থাক,ভালো রাখ।কখনো কবরে গিয়ে খবর নিস।
ইতি,
শুভা
নীহারিকা কাঁদছে।
রুদ্র চিঠি খুলল,
প্রিয় রোদ,
রোদ রে,ও রোদ।একবারও তো মনে করে বলিা নি, ভোরকে ভালোবাসিস।কেন?আমি খেয়ে ফেলতাম তোদের?রোদের মত উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে পাশে থাকবি ভোরের।তোর জন্য গিফট এনেছি,একটা শার্ট।শার্টটার ডিজাইন এন্ড কালার ভোরের প্রিয়।ওটা গায়ে দিয়ে ভোরের সামনে যাবি,ব্যাস প্রেম উড়ে উড়ে আসবে।
শুন,সময় নষ্ট করিস না আমার সাথে কথা বলে।যা,ভোরকে গিয়ে বল।
ইতি,
তোর বোন শুভা
রাফি সাহস পাচ্ছে না খোলার।সে একটা ছোট্ট চিঠি পেল।সাহস করে খুলল,
প্রিয় রাফি,
জীবনটাকে নিয়ে অনেক চিন্তা না তোর?তোকে বলতাম না,জীবন নিয়ে এত চিন্তা করিস না একদিন তো মরেই যাবি।শুনলি কই?চিন্তা করতেই আছিস।দেখ আমারে,আমি জীবনে কিছু না করেই ভালো করেছি।দেখ আজ শেষ দিন আমার এ ধরণীতে।
আচ্ছা এসব বলে কি লাভ?তুই সুন্দর করে থাকবি নীহুর সাথে।বুঝলি?
ইতি,
শুভা
ভোর কাঁদছে।কেদে কেদে চিঠি খুলল,
প্রিয় ভোরপাখি,
ভোরপাখির মন খারাপ?এটা সম্ভব?কত আপুই আসবে আর যাবে এতে এত কাঁদা কেন?রুদ্রটারে রাখিস যত্ন করে।ধরে রাকিস শক্ত করে।আমার মত ছেড়ে যাস না।আকড়ে ধরে থাকবি।
ইতি,
তোর আপুই
সবশেষে ব্যাগের নিচে একটা বক্স দেখা গেল।নীহারিকা দেখল ওটাতে তামিমের নাম লেখা।বক্স খুলে তামিমকে চিঠিটা দিল।তামিম হাতে নিল।
প্রিয় প্রিয়তম,
প্রিয়তম ডাকলাম তোমারে।তুমি তো সেই স্পন্দন আমার যারে ছাড়া আমি অসম্পুর্ণ। তুমি আমার প্রিয়তম। ছেড়ে চলে গিয়েছি?আরে,আর কত্ত মেয়ে পাবা।জানো কত ভালোবাসি তোমায়?কতটা জানো?জীবনের চেয়েও বেশি।অনেক বেশি।মুখে বলা হয়নি কখনো।শুনো,আমার ক্যান্সার ছিল।মরণদূত আমাকে আকড়ে ছিল।শুন,যেমন আছিস তেমন থাকিস,আমাকে তুই একটু হলেও মনে রাখিস।’
ইতি,
প্রিয়তমা
তামিম কাঁদছে।রুদ্র কাঁদছে।রাফি কাঁদছে।ভোর কাঁদছে।নীহারিকা কাঁধছে।ধরণী কাঁদছে।সবাই কাঁদছে।বিধি,এমন একটা সরল মেয়ে, কোথায় জন্ম হবে শুনি?
তামিমের গলা থেকে বেরিয়ে এল,
———–‘ভালো থাকিস প্রিয়তমা।’
(সমাপ্ত)
বিঃদ্রঃআমি খুব ছোট লেখক।লেখালেখি সবে চালু করেছি।এটা আমার চর্তুথ গল্প।লম্বা ছিল অনেক,সিরিয়ালের মত আর লম্বা করলাম না।সবাই মন্তব্য করবেন প্লিজ।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/