কে কোথায় যায়? পর্ব ২৬

0
658

কে কোথায় যায়? পর্ব ২৬

পরদিন….
আজ এখানে সাপ্তাহিক ছুটি। তাই সবকিছু বন্ধ। ওরা ঠিক করল আজ সারাদিন যেখানে আছে তার আশেপাশে হেটে হেটে ঘুরে বেড়াবে। রাস্তার পাশে যা পাবে তাই খাবে। মানে কোন প্ল্যান ছাড়া যা “খুশি তাই করো” টাইপের একটি দিন। রাস্তায় মমো পেয়ে গেল। সেটা দিয়েই সকালের নাস্তা সারল।
শুভা মৃদু হেসে বলল,
———-‘কি মজা!’
দুপুরে “কস্তূরী” রেস্টুরেন্টে বাংলা খাবার খেল। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে পেয়ে গেল মিষ্টির দোকান। গোলাবজামুন, রসমালাই, রসগোল্লা, সন্দেশ আর দই গপাগপ মুখে পুরল দুজন। মিষ্টি খেয়ে দুই কদম হাটতেই পেল পানিপুরি।
শুভার উৎসাহ দ্বিগুণ! আমাদের দেশের ফুসকার মতই। খোলসটা বড়, টক বেশি দেয় আর আলু দেয় খুবই কম। এক প্লেটে একসাথে সব না দিয়ে একটি একটি করে দিবে। জিনিসটা ভালোই তবে আমাদের ফুসকার থেকে মজাদার নয়।
সন্ধ্যার পর বের হয়ে পার্ক স্ট্রিট গেল। পার্ক স্ট্রিটকে ঢাকা শহরের গুলশান-বনানীর সাথে তুলনা করা যায়। অভিজাত এলাকা। অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল শপ রয়েছে। Adidas এর শোরুমে গেলাম। এখানে ডিসকাউন্ট চলছে। এক জোড়া করে জুতা কিনল দুজন। তামিম Wildcraft এর দোকানে ব্যাগ দেখল কিন্তু পছন্দ হলো না।
ঘুরতে ঘুরতে খিদা লেগে গিয়েছে। পার্ক স্ট্রিটে হাটতে গিয়ে দেখা পেল Hard Rock Cafe। এটি একটি ইন্টারন্যাশনাল চেইন ক্যাফে যা অন্যান্য অনেক দেশে রয়েছে। ভেতরে ঢুকতেই আবছা আলো-ছায়ার খেলা দেখল। সামনে বড় স্টেজ। সেই স্টেজে গান হচ্ছে। এখানে লাইভ কনসার্ট হয়। তবে আজ কোন ব্যান্ড আসেনি। তাই রক মিউজিক ভিডিও ছেড়ে রাখা হয়েছে। এখানে খাবারের দাম বেশি। আমরা একটা ডিনার প্ল্যাটার ও ককটেইল অর্ডার দিয়ে তিনজন খেল।
তামিমের গলাটা ছিল খুব সুন্দর,সে জন্য শুভা জোর করতে লাগল গান গাইবার জন্য।এরইমাঝে তামিমের বাল্যবন্ধু শাকিলের পদার্পণ। তামিমকে দেখে জরিয়ে ধরল।নির্বিকারভাবে বলল,
———‘কতদিন পর দেখা।দূর থেকে তোকে দেখতেছিলাম,ভাবি তোরে কি অনুরোধ করতেছে?’
তামিম ছোট্ট করে বলল,
——–‘ভাবি না।’
শাকিলের মুখ লাল হলো।
শুভা স্বাভাবিক হয়ে বলল,
———-‘গান গাওয়ার কথা বলসিলাম!’
শাকিল জোর করে তামিমকে নিয়ে গেল।বাংলা গান গাইবে তামিম।কলকাতার মানুষ উত্তেজিত।তামিম গলা ঠিক করে গান গাইতে লাগল,
খোলা জানালা দখিনের বাতাসে
ঢেকে যায় পর্দার আড়ালে
তখন তুমি এসে হেসে
বলে দাও, আছি তোমার পাশে
বহুদূর পথ ভীষণ আঁকাবাঁকা
পথ চলতে ভীষণ ভয়
তুমি এসে বলে দাও, আছি আমি পাশে
করোনা কিছুতেই ভয়
কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি
আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে
কখনো বুঝিনি ফিরে আসবেনা
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে
অনেক পথের পথিক আমি ক্লান্তি সর্বশেষ
তোমার পথের ঠিকানা খুজে আমি আজ
অবশেষ
তুমি আমার প্রথম ও শেষ জীবনের
ভালোবাসা
তোমার মাঝেই তাইতো আমার জীবনের
শত আশা
কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি
আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে
কখনো বুঝিনি ফিরে আসবেনা
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে
সাদা আকাশে মেঘের ভেলা
রচে রঙের মেলা
কখনো কালো কখনো নীল
কখনো বা ধূসর সাদা
আমার আকাশ জুড়ে ছিল
তোমারই রঙের মেলা
সাদার মাঝে কালো বসিয়ে
তোমারই বিদায়ের পালা
কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি
আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে
কখনো বুঝিনি ফিরে আসবেনা
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে
খোলা জানালা দখিনের বাতাসে
ঢেকে যায় পর্দার আড়ালে
তখন তুমি এসে হেসে
বলে দাও, আছি তোমার পাশে
বহুদূর পথ ভীষণ আঁকাবাঁকা
পথ চলতে ভীষণ ভয়
তুমি এসে বলে দাও, আছি আমি পাশে
করোনা কিছুতেই ভয়
কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি
আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে
কখনো বুঝিনি ফিরে আসবেনা
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে!
সবাই নিশ্চুপ।তামিমের গলায় মোহিত সবাই।আচমকা করতালি দেয়া শুরু হল।
হার্ড রক থেকে বের হতে হতে রাত হয়ে গেল প্রায় ১টা। পার্ক স্ট্রিট দিয়ে হেতে হেতে হোটেলে গেল। রাতের পার্ক স্ট্রিট অসাধারণ। রাস্তার পাশের ক্লাব ও রেস্টুরেন্টগুলো থেকে মানুষ বের হচ্ছে। নিয়ন লাইটের আলো আর সাথে হালকা শীত। বেশ জমেছিল কিন্তু ব্যাপারটা!
কিন্তু যেতে যেতে পথে হেটে হেটে লেগে গেল পেটে ক্ষিদে। আর ক্ষিদে লাগলে খেতে তো হবেই। ঢুকল “দস্তরখান” রেস্টুরেন্টে। শিক কাবাব, হাড়িয়ালি কাবাব, চিকেন মালাই কাবাব আর পরোটা খেল। সাথে এক প্লেট বিরিয়ানিও ছিলো। এর মধ্যে চিকেন মালাই কাবাবটা সেরা ছিলো। খাবার শেষে পাশে এক আজব দোকান দেখলাম। দুধের দোকান! হোটেলের মধ্যে শুধু দুধ বেচা হচ্ছে আর বাটি ধরে টেবিলে নিয়ে কলকাতার দাদারা সুড়ুত সুড়ুত শব্দ করে চুমুক দিয়ে দুধ খাচ্ছে। খেতে ইচ্ছে করলেও পেতে আর জায়গা ছিলো না। পরে কোন এক সময় খাওয়া যাবে।শুভাকে নিয়ে এরকম স্থানে আড্ডা দেবার মন চাচ্ছিল না তামিমের।
রাস্তায় হাটতে হাটতে শুভা বলল,
———‘আই লাভ ইউ দোস্ত!এত সুন্দর গান আর দিন,উফফ।’
শিফনের মত মসৃণ হাওয়াটা শুভার খোলা চুল নিয়ে এলোমেলো খেলছিলো।
চলবে…..
©ইভা আহমেদ চৌধুরী

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে