কে কোথায় যায়? পর্ব ২৫

0
732

কে কোথায় যায়? পর্ব ২৫
শুভা তাকাল তামিমের দিকে।অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
———-‘কি বলতেছে নীহারিকা?কে আমার জামাই?’
তামিম কাপা কাপা গলায় বলল,
———‘মুই কি জানি?মোরে জিজ্ঞেস ক্যান করতেছিস?’
তামিম কম্বল দিয়ে মুখ ঢাকল।শুভা পাশে গিয়ে বসল।তামিমের এমন ব্যাবহার তো আগে কখনো পরখ করেনি শুভা।
শুভা আর কথা বলল না।তামিমের পাশে চট করে শুয়ে পড়ল।কাল সকালে আবার উঠে কোথায় যেন নিয়ে যাবে তামিম।চুলগুলো খুলে দিল,হাতের ব্রেসলেট খুলে বেড সাইড টেবিলে রাখল।
সকালে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল শুভা।তামিম এখনো কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।শুভা আয়নার সামনে গিয়ে দাড়াল সাজবে বলে!ব্রেসলেট,কানের দুল,লিপস্টিক বের করল পার্স থেকে।
ঠোঁঠে পিংক কালারের লিপস্টিক দিল।তামিম ইতিমধ্যে উঠে গেছে,শুভার সাজসজ্জা দেখতেছে।হঠাৎ নির্বিকারভাবে বলল,
———-‘আমি তোরে হেল্প করি?’
শুভা হাসলো।তামিম উত্তরের দিকে পরখ না করে হাতে লিপস্টিক নিল।গাঢ় খয়েরী লিপস্টিক লাগিয়ে দিল ঠোঠে।চুল আচড়ে দিয়ে বিনুনী বাধলো।পান্চ কিল্প মেরে ছোট চুলগুলো আটকালো।
শুভা সরু গলায় বলল,
——-‘বাহ,বেশ জানিস সব।তোর বউ বড়ই কপালি!’
তামিম হাসল।গাড়িতে উঠেই শুভাকে জানালো না ওরা কোথায় যাচ্ছে। চারদিক কেমন যেন!হঠাৎ গাড়ি থামতেই সাদা একটা মহল দেখল শুভা।
হেসে বলল,
———-‘তাজমহল!’
তাজমহল হল পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি যা প্রেমের নিদর্শন হিসেবে বানানো হয়েছিলো। এখানে ঘুরতে গেলে খারাপ লাগার মত কিছু নাই, যা আছে তা শুধু ভাল লাগা। এমন একটা ঐতিহাসিক যায়গায় যাওয়ার সুযোগ আসলে কখনোই হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। এত নিখুঁত স্থাপনা দেখার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
এখানে ঘুরতে গিয়ে ট্যুর গাইডের কাছ থেকে পাওয়া কিছু তথ্য দেওয়া হলো। সঠিক কিংবা বেঠিক যাচাই করার দরকার মনে করেনি তামিম।শুভা কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
———-‘এটা শাহজাহান কেন তাজমহল গড়লেন?সব কাহিনী জানিস?বল না!’
তামিম বলা শুরু করল,
———–‘তাজমহল নির্মান করেন সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয় স্ত্রী মমতাজ মহলের প্রতি ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে।তাদের বিয়ে হয় ১৬১২ সালে এবং তিন বউয়ের মধ্যে মমতাজ কে বেশী ভালবসতেন শাহজাহান।’
শুভা হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করল,
———‘এটা কি দিয়ে তৈরী?’
তামিম তাজমহলের দিকে তাকিয়ে বলল,
———-‘এটি আইভোরী সাদা পাথর দিয়ে নির্মিত যা যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। নির্মানে সাদা পাথর বেছে নেওয়ার কারন হলো অন্যান্য যেকোন রংয়ের পাথরের চেয়ে সাদা পাথরের স্থায়ীত্ব বেশী।’
শুভা আগ্রহ নিয়ে বলল,
———-‘বাহহ!’
———‘ মমতাজ মারা যাওয়ার পর তাজমহলের নির্মান কাজ শুরু হয়।মমতাজ মারা যান ১৬৩১ সালের ১৭ই জুন বুধবার তাদের ১৪তম সন্তান গওহর বেগমের জন্মের সময়। মমতাজ বুধবারে মারা যান তাই শাহজাহান ঐ সময় বুধবারে কোন উৎসব নিষেধ করেছিলেন।তাজমহল বানানোর কাজ শুরু হয় ১৬৩২ সালে এবং শেষ হয় ১৬৫৩ সালে। যদিও মুল কাজ শেষ হয়েছিল ১৬৪৩ সালে কিন্তু ফিনিশিংয়ের জন্য আরো ১০ বছর লাগে। ‘
শুভা জিজ্ঞেস করল,
———‘আর কিছু জানিস?’
তামিম বলল,
——–‘হুম,বলতেছি।­ তাজমহল ১৭ হেক্টর জমির উপর অবস্থিত এবং এর উচ্চতা ২৪০ ফুট।তাজমহল কিভাবে বানানো তার চিন্তা ভাবনা সম্রাট শাহজাহান নিজেই করেন এবং এর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিখ্যাত স্থাপত্যবিদদের আনা হয়েছিল; ওস্তাদ আহমেদ লাহোরী এবং ঈসমাইল আফুন্দি এ দুজনের নাম শোনা যায় বেশী।বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় একলাখ দর্শনার্থী ভীড় করেন এখানে।তাজমহল বানানোর সময় এর খরচ ধরা হয়েছিল ৩২ মিলিয়ন রূপি যার বর্তমান মুল্য আনুমানিক ৫৬ বিলিয়ন রূপি। তাজমহল নির্মানে ২০ হাজার শ্রমিকের ২২ বছরের পরিশ্রম করতে হয়েছে। কিন্তু তাজমহল বানানো শেষে তাদের আঙ্গুল কেটে নেওয়ার কথাটা একদম ভুয়া।’
তামিম নিশ্বাস নিয়ে বলল,
———-‘ তাজমহল একটা পারফেক্ট সিমেট্রিক ভবন, আপনি যেদিক থেকেই দেখ না কেন একই রকম দেখবি।তাজমহলের ঠিক মধ্যরেখা বরাবর মমতাজের কবর বিদ্যমান।মমতাজের আসল নাম আরজুমান্দ বানু বেগম।তাজমহলের ফিনিয়াল গুলোর দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট যার পুরোটাই স্বর্ন দিয়ে বানানো ছিলো। ব্রিটিশরা ব্রোন্জ মেটাল দিয়ে পরিবর্তন করে স্বর্ন নিয়ে গেছে।
শাহজাহান মারা যাওয়ার পর মমতাজের কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।’
শুভা চোখ মুখ উল্টিয়ে বলল,
——-‘ওমা!এত খবর জানিস?আরো বল।’
তামিম আয়েশ করে বলল,
———‘শুন,তাজমহলে যত ফুল বা নকশা দেখা যায় তার কোনটাই রং করা নয়, সবগুলই দামী পাথর খোদাই করে বসানো।দিনের আলোর পরিবর্তনের সাথে সাথে তাজমহলের রূপেরও পরিবর্তন হয়। সকাল, দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা কিংবা চাঁদনী রাত; প্রতি মুহুর্তে তাজমহলের হৃদয় পাগল করা রূপ দৃশ্যমান হয়। তবে চাঁদনী রাতের তাজমল সবচেয়ে সুন্দর।তাজমহলের সামনে গোছানো সুন্দর বর্গাকার বাগান আছে যার নাম চার বাগ বা মুঘল গার্ডেন। বলা হয়ে থাকে যে ১৬শ সালে হয়েছিল বলে এটি ১৬ ভাগে বিভক্ত।সম্রাট শাহজাহানের সাথে মমতাজের প্রথম দেখা হয় মেহতাব বাগ বা মুনলাইট গার্ডেনে, এবং সেখান থেকেই তাদের প্রেমের শুরু।শাহজাহান মমতাজকে এত বেশী ভালবাসতেন কারন মমতাজ তাঁকে সন্তানের মুখ দেখিয়েছিলেন। তার বাকী দুই স্ত্রী ছিলেন সন্তানহীনা।তাজমহল বানানোর জন্য মুল্যবান পাথর গুলো মাকরানা, চায়না, তিব্বত, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান এবং আরব থেকে আনা হয় এবং এর জন্য ১০০০ হাতি ব্যবহৃত হয়েছিল।’
শুভা বলল,
——–‘চল, সবদিকটা ঘুরে ঘুরে কথা বলি।’
চলবে….
©ইভা আহমেদ চৌধুরী
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে