#কে_আপনি
#পর্বঃ১১ (শেষ পর্ব)
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
শাওন পিছু ঘুরে যেতে নিবে তখনই তৌফিক তার কোমরে থাকা লুকানো বন্দুক বের করে শাওনের পিঠে গুলি করে দেয়। শাওন আহ শব্দ করে উঠে। সবাই শাওনের দিকে নজর দিতেই তৌফিক ওদের চোখে ফাকি দিয়ে পালিয়ে গেল।
——————–
শ্রেয়া পিটপিট করে তাকাতেই সবকিছু মনে পরতেই উত্তেজিত হয়ে শাওন অর্থাৎ আলিফকে খুজতে লাগে। সে চেচামেচি করতে থাকে আলিফ আলিফ বলে। তখনই হুড়মুড় করে রুমে প্রবেশ করে মাহিন। মাহিনকে দেখে শ্রেয়া শান্ত হয়ে গেল। মাহিনকে এখান দেখে কপাল কুচকে এলো শ্রেয়ার।
মাহিন বলল “দোস্ত শাওন ভাইয়ের গুলি লেগেছে।”
মাহিনের কথায় থমকে যায় শ্রেয়া। শ্রেয়া মাহিনের কথায় আরো একধাপ উত্তেজিত হয়ে পরে। মাহিন ওকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বসিয়ে দেয় বেডে। এবং সান্ত্বনা দেয় যে সে ওকে নিয়ে যাবে শাওনের কাছে।
মাহিন বলল “তুই হটাৎ করে শাওন ভাইকে আঘাত কেন করছিলি।”
শ্রেয়া টলমল চোখে মাহিনের দিকে তাকায়। আস্তে করে বলে উঠে “বুঝতে পারিনি যে ও আলিফ। পালাতে চেয়েছিলাম।”
মাহিন ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল “দোস্ত দেখ হয় তো আমার আসল পরিচয় শুনে তুই আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধও করে দিতে পারিস। তবে এইটুকুই বলবো আমরা মানুষের ভালোর জন্য কাজ করে থাকি।”
শ্রেয়া এবার তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় মাহিনের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলে উঠে “কে তুই? কি তোর আসল পরিচয়!”
মাহিন করুন চোখে তাকায় শ্রেয়ার দিকে। শান্ত কন্ঠে বলে উঠে “আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করিস না রে। আমি চাই না তোর মতো ফ্রেন্ডকে হারাতে। আমি শাওন ভাইয়ের ডান হাত হিসেবে আছি। এর অনেক কারণই আছে কিন্তু আমি তোকে বলতে পারবো না।”
শ্রেয়া “কিহ” বলে বসা থেকে দাড়িয়ে যায়। শ্রেয়া কিছু বলতে নিবে তার আগেই মাহিনের ফোন বেজে উঠে। মাহিন ঝটপট কল রিসিভ করে। রেদোয়ান কল করেছে। কল কেটে মাহিন শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল “আমাকে এখন যেতে হবে রেএ। কাজ পরে গেছে।”
——————————
শাওন পিটপিট করে তাকাতেই অনুভব করলো পিঠে চিনচিন ব্যথা করছে। উল্টো থেকে সোজা হয়ে শুতে পারছেনা সে। চেষ্টা করতেই পিঠে লাগছে তার। তার এই চেষ্টার মাঝেই কেউ এসে তাকে পিছন থেকে জরিয়ে নেয়। উষ্ণ স্পর্শে থমকে যায় শাওন। সে বুঝতে পেরেছে এটা শ্রেয়া। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো সে। পরক্ষণেই গম্ভীর কন্ঠে বলল “আমাকে ছাড়ুন আপনাকে ধরার অধিকার আমি আপনাকে দেই নি।”
শ্রেয়া নাক টানতে টানতে আরো শক্ত করে শাওনকে জরিয়ে ধরলো। এতে শাওন ব্যথা পাওয়ায় আহ করে উঠলো।
শাওনের আহ করায় শ্রেয়া তাড়াতাড়ি করে শাওনকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে কোথাও লেগেছে নাকি তা জিঙ্গাসা করতে লাগলো। শাওন শ্রেয়াকে লুকিয়ে একটা মুচকি দিয়ে আবার কপাট রাগ নিয়ে বলল “কি আর হবে আপনি তো খালি মানুষকে আঘাতই করতে পারেন। সেটাই করেছেন।”
শ্রেয়া আহত চোখে তাকিয়ে রইলো। রেদোয়ান আর মাহিন কেবিনে ঢুকতেই শ্রেয়া মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো বেডের পাশে। শাওন রেদোয়ানের সাহায্য এক কাত হয়ে শুয়ে পরলো। শ্রেয়ার দৃষ্টি মেঝেতে আবদ্ধ। শাওন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে। এতক্ষণ শ্রেয়ার চেহারা দেখতে পারছিল না। মেয়েটাকে অনেকটা এলোমেলো লাগছে শাওনের কাছে। চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে কান্না করতে করতে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। রেদোয়ান আর মাহিন এতক্ষণে শাওনের সঙ্গে কিছু কথা বলে চলে গিয়েছে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে।
শ্রেয়া অনেকক্ষণ পর চোখ তুলে তাকালো শাওনের দিকে। শাওন চোখ বন্ধ করে নিলো। শ্রেয়া শাওনের চোখ বন্ধ রাখা দেখে শ্রেয়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শাওনের মুখের দিকে। অনেকদিন পর এই মুখটা দেখতে পেল শ্রেয়া টলমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শাওনের দিকে। আজ শাওনকে অনেকটা সুন্দর লাগছে শ্রেয়ার কাছে। কিন্তু আবার মন খারাপ হয়ে গেল কারণ মাথায় ব্যান্ডেজের একমাএ কারণ হচ্ছে সে। শাওনের গায়ে কোনো জামা নেই। শ্রেয়া খুব মন চাচ্ছে শাওনের উন্মুক্ত বুকে মাথা রাখতে। শ্রেয়া খেয়াল করলো শাওন ঘুমিয়ে গিয়েছে।
শ্রেয়া ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে শুয়ে পরলো শাওনের পাশে। আরো একবার তাকালো সে শাওনের দিকে। শাওনের চোখ এখনো বন্ধ। শ্রেয়া আস্তে করে শাওনের বুকে মাথা রাখলো।
শাওন ফট করে চোখ খুললো। মুখে তার প্রাপ্তির হাসি ঝুলছে। শ্রেয়াকে ফোপাতে দেখে শাওন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শ্রেয়াকে মাথা উঁচু করতে দেখে শাওন চোখ বন্ধ করে নিলো আবার। শ্রেয়া চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলেছে। শ্রেয়া ঠোঁট শাওনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিলেই শাওন চোখ খুলে ফেলল। শাওন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে। শ্রেয়া শাওনের এমন আচমকা তাকানো দেখে শ্রেয়া থতমত হয়ে গেল।
শাওন অবাক হয়ে বলল “একজন সিআইডি অফিসার এতো কান্না করে আমার ধারণার বাহিরে ছিলো। নাকে জল চোখের জল এমন করেছো যেন মনে হচ্ছে আমি মরিই……
বলার আগে শ্রেয়া জোরে কেঁদে দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো শাওনকে। শাওন ও আলতো করে জরিয়ে ধরলো।
————————-
শাওন অস্থির হয়ে গেছে হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার জন্য। শাওনের জেদের কাছে হেরে গিয়ে রেদোয়ান আর শ্রেয়া ওকে বাসায় নিয়ে এসেছে।
শাওন বাসায় এসে কিছুটা রেস্ট করে শ্রেয়াকে নিয়ে একটা রুমে নিয়ে যায়। রুমটায় অনেকগুলো ছবি। একটা লোক আর একটা মহিলার সঙ্গে একটা ছোট বাচ্চা। শ্রেয়া মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তিনজনের ছবির দিকে।
শ্রেয়া বলল “এই ছোট বাচ্চাটা খুব কিউট। ছবি দেখেই গাল টেনে দিতে মন চাচ্ছে। ইশ কি সুন্দর!”
শাওন তার গাল এগিয়ে দিয়ে বলল “নেও সেই কিউট বাচ্চাটা তো তোমারই।”
শ্রেয়া চোখ গোল গোল করে বলল “মানে!”
শাওন মুচকি হেসে বলল “ওটা আমার ছোটবেলার ছবি।”
শ্রেয়া মিষ্টি হাসি দিলো। সে জিঙ্গাসা দৃষ্টিতে শাওনের দিকে তাকিয়ে বলল “এটা কি আপনার বাবা মা।”
শাওনের মুখ ছোট হয়ে গেল। শ্রেয়া বিষয়টি বুঝতে পারলো। শাওনকে মন খারাপ হতে দেখে শ্রেয়া শাওনের হাত টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে গিয়ে রুমটিতে আবার লাগিয়ে দিয়ে বলল “যেই কথায় আপনার মন খারাপ হয় সেই ব্যাপারে আমি কখনোই ঘাটাবো না। আমি কখনো জানতে চাইবো না আপনার অতীত সম্পর্কে। আমি শুধু আপনার ভবিষ্যতের চিন্তা করবো ঠিক আছে।”
শাওন শ্রেয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে হুট করে জরিয়ে ধরলো শ্রেয়াকে শক্ত করে। শ্রেয়াও জরিয়ে ধরলো শ্রেয়াকে। শ্রেয়া নম্রগলায় বলল “ভালোবাসি আপনাকে। অনেক বেশি ভালোবাসি আপনাকে।”
শাওন ও শ্রেয়ার গাল ধরে সারামুখে চুমু দিয়ে বলল “আমিও তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।”
তখনই শাওনের ফোনে মাহিনের কল এলো। তৌফিককে তারা খুজে পেয়েছে। শাওনের মুখে এক রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো। যা নিয়ে আর মাথা ঘামালো না শ্রেয়া। থাক না কিছু অজানা অতীত। দরকার কি অতীত ভেবে বর্তমান সময়টাকে নষ্ট করার। কি হবে এতো রহস্যের সমাধান করে। থাকনা কিছু রহস্য প্রকৃতির সঙ্গে। ভালো থাকুক সব ভালোবাসা।
#সমাপ্ত
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে লেখবেন। আর গল্পটি কেমন লাগল বলবেন।)