কে আপনি পর্ব-১০

0
3302

#কে_আপনি
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

শাওন এগিয়ে যাচ্ছে শ্রেয়ার রুমে তখনই রেদোয়ান এসে শাওনের কানে কিছু বলে। এতে শাওনের মেজাজ বিগড়ে যায়। শাওন পাশে থাকা দেওয়ালে একটা ঘুসি মেরে দেয়। আর দাঁতে দাঁত পিশে বলল “সকাল দশটার মধ্যে সবকিছু রেডি কর। আজ একটা কিছু হবেই হবে। আর পারছিনা আমি। আজ হয় তৌফিক থাকবে না হয় আমি। এখন গিয়ে দেখে আসি শ্রেয়া কি করছে। তুই যাহ।”

রেদোয়ান মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। শাওন জোরে জোরে কয়েকটি নিশ্বাস ছেড়ে শ্রেয়ার রুমে ঢুকলো। শ্রেয়ার রুমে ঢুকেই সে অবাক হয়ে গেল। কারণ রুমে শ্রেয়া নেই। এতে যেন শাওনের অস্থিরতা যেন একধাপ বেড়ে যায়। শাওন অস্থির হয়ে শ্রেয়াকে এদিক ওদিক খুঁজতে নিবে তখনই মাথায় ভারী কিছুর আঘাতে সে পিছন ঘুরে তাকায়। শ্রেয়ার হাতে ফুলদানী। যা দিয়ে সে শাওনকে আঘাত করেছে। শাওন আঘাতের জায়গায় হাত দিয়ে উষ্ণ কিছুর অস্তিত্ব টের পেয়ে হাত সামনে এনে রক্ত দেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। শ্রেয়া ছুটে যেতে নিবে তখনই শাওন পিছন থেকে বলল “তুমি কি আলিফকে আর চাও না?” বলেই মাথায় হাত দিয়ে বেডে বসে পরলো শাওন।

শাওনের কথায় থেমে গেল শ্রেয়ার পা। সে যেন থমকে গেল শাওনের কিছুক্ষণ আগে বলা সেই কথায়। সে ছুটে শাওনের কাছে গেল। শাওনকে কিছু জিঙ্গাসা করবে তার আগেই শ্রেয়া বুঝতে পেরেছে শাওন জ্ঞান হারিয়েছে। শ্রেয়া চিৎকার করে বলতে লাগলো “কেউ আছে আসুন না। কেউ আছেন।”

শ্রেয়ার ডাকার সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড়িয়ে কিছু কালো কাপড় পরা মানুষ হয় তো শাওনের বডিগার্ড হবে। শ্রেয়া শাওনকে দেখিয়ে ও ব‍্যথা পেয়েছে বলে। বলতেই বডিগার্ড গুলো হুড়মুড়িয়ে শাওনের কাছে গিয়ে সব বুঝতে পেরে ডাক্তারকে কল করে। শ্রেয়া ধপ করে সোফায় বসে পরলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার এসে পরলো আর শ্রেয়াকে রুম থেকে বের হতে বলল কিন্তু সে যেতে নারাজ। বডিগার্ডদের কঠোর নির্দেশে ডাক্তার শাওনের মাক্স খুলে না। এতে যেন কপাল কুচকে যায় শ্রেয়ার। শ্রেয়া তীক্ষ্ণ চোখে ডাক্তারের সকল কাজ পর্যবেক্ষণ করে। ডাক্তার বলল “অনেকটাই ব‍্যথা পেয়েছে ওনি। জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে। ওনার রেস্টের প্রয়োজন। ঘুমাতে হবে তার। আমি ঔষধ লিখে দিচ্ছি সেগুলো সময়মতো খাইয়ে দিবেন।”

বলেই ওরা সবাই এক এক করে বের হয়ে যায়। শ্রেয়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে শাওনের দিকে। এতো কিসের লুকোচুরি বুঝতে পারছেনা শ্রেয়া। আর আলিফ এই লোকের কাছে আছে তার মানে। তাহলে আলিফ ভালো আছে। ভাবতেই ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো। শ্রেয়া অপেক্ষা করতে লাগলো শাওনের জ্ঞান ফিরে আসার অপেক্ষায়। সে অপেক্ষা করতে করতে সোফায় ঘুমিয়ে পরে।

ফোনের বিরক্তিকর আওয়াজে ধড়ফড়িয়ে উঠে পরে শ্রেয়া। শ্রেয়া দেখলো শাওনের ফোন বাজচ্ছে। শ্রেয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো বিকাল চারটা বাজে। ফোনের আওয়াজে কপাল কুচকে আসছে শাওনের। সে আস্তে করে হাত নাড়িয়ে ফোনটা তুলে নেয় হাতে। তার চোখ এখনো বন্ধ। সে ফোন কানে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর সে চোখখুলে চারপাশে তাকালো। শ্রেয়া তীক্ষ্ণ চোখে শাওনের দিকেই তাকিয়ে ছিল। শাওন ওর দিকে তাকাতেই ও আতকে উঠলো লালবর্ণ দুটো চোখ দেখে।

শাওন ধপ করে উঠে ধেয়ে আসে শ্রেয়ার দিকে। শ্রেয়ার গলা টিপে ধরে চেচিয়ে বলে উঠলো “আজ তোর জন‍্য শুধু মাত্র তোর জন‍্য আমি মেয়েগুলোকে বাঁচাতে পারলাম না। ওই নরখাদক তৌফিক পাচার করে দিয়েছে। আমি এই প্রথম অপরাধ করা ঠেকাতে পারলাম না। তুই আজ এমনটা না করলে হয় তো আমি পারতাম অসহায় মেয়েগুলোকে বাঁচাতে। তোর জন‍্য রেদোয়ান আজ হাসপাতালে।” বলেই শ্রেয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আর জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।

শ্রেয়া কান্না করছে। সে কি যেন ভেবে বলল “আপনি তো মেয়ে পাচার করেন। তাহলে মেয়ে বাঁচাতে পারলেন না।”

শাওন আবার গিয়ে শ্রেয়ার মুখ চেপে ধরে বলল “সবসময় তো তুই আমাকে ভুলই বুঝে গেলি। সেই প্রথম থেকে। যারা খারাপ কাজ করছে তাদের বাদ দিয়ে তুই আমার পিছনে পরলি। আমাকে বিয়েটাও করলি শুধুমাত্র সন্দেহের কারণে। ভালোবাসা কাকে বলে তুই বুঝতেই পারিসনি। ভালোবাসা থাকতে হলে অবশ্যই বিশ্বাস করতে শিখতে হয়। মিসেস চৌধুরী আপনি সেই সবকিছুতেই অক্ষম।” বলেই শ্রেয়াকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে চলে যায় শাওন।

শ্রেয়া কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকলো শাওনের যাওয়ার দিকে। সবকিছু বুঝে আসতেই শ্রেয়া চিৎকার করে বলে উঠলো “কে আপনি!”

শ্রেয়ার কথায় শাওন কোনো হেলদোল করলো না। শ্রেয়া কিছু বলতে নিবে তার আগেই রুমে একটা ডাক্তার প্রবেশ করলো। শ্রেয়া ছুটে শাওনের কাছে যেতে নিবে তখনই ডাক্তার মেয়েটা শক্ত করে আকড়ে ধরে। শ্রেয়া কিছুতেই পারছেনা মেয়েটি থেকে নিজেকে ছোটাতে। শ্রেয়া ছোটাছুটি করতে লাগলো। হঠাৎ হাতে চিনচিন ব‍্যথায় লাল চোখ নিয়ে শ্রেয়া তাকায় মেয়েটার দিকে। আরো কিছুক্ষণ হাতাহাতির করার পর ঢোলে পরে মেয়েটির কাধে।

শ্রেয়াকে ঢোলে পরতে দেখে মেয়েটি সস্থির নিশ্বাস ফেলে। শ্রেয়াকে খুব যত্ন সহকারে বেডে শুয়ে মেয়েটি বেরিয়ে চলে যায় রুম থাকে।

———————————–

শাওন নিজেকে একদম রেডি হয়ে গাড়ির কাছে এলো। গাড়ির কাছে আসতেই বডিগার্ডদের মধ্যে একজন গাড়ির দরজা খুলে দেয়। শাওন উঠে পরে গাড়িতে। রেদোয়ানসহ আরো কতোজন নিয়ে রওনা হয় নিজেকে গন্তব্যস্থলে শাওনের গ‍্যাং। সকালের মধ্যে যেতে পারলে হয় তো তৌফিকের কাছ থেকে সব মেয়েকে ঠিকঠাক মতো বাঁচিয়ে আনতে পারতো। কিন্তু এখন সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় হয় তো তারা ফেড়িঘাটে চলে গিয়েছে। সব প্লান শেষ হয়ে গেছে শাওনের শুধুমাত্র শ্রেয়ার জন‍্য। শ্রেয়া যে ওমনভাবে শাওনকে আঘাত করে বসবে তা ধারনার বাহিরে ছিল ওর। কিন্তু দ‍্যা গ্রেট শাওন চৌধুরীর প্লান করতে সময় লাগে না। খুব তাড়াতাড়ি সে পৌঁছায় এয়ারপোর্টে। সে ফ্লাইটেই যাবে ফেড়িঘাটে।

তৌফিক তাড়াতাড়ি করছে মেয়েগুলোকে বেশি দামে বিদেশে পাচার করার কাজে। তৌফিক কাটকাট গলায় তারা পোষা লোকগুলোকে হাত চালাতে বলছে। তৌফিক শেষ দুইটা মেয়েকে ট্রাক থেকে নিয়ে আসতে বলে তখনই সে খেয়াল যেই যাচ্ছে সেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে। তৌফিক এবার বিরক্তি নিয়ে রেগেমেগে এগিয়ে যায় ট্রাকের দিকে।

ট্রাকের দরজা খুলতেই তৌফিকের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা। কারণ তার পোষা দশটা লোকের নিথর দেহ পরে আছে। এতে যেন অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে তৌফিকের। মাথার পিছনে বন্দুকের অস্তিত্ব টের পেতেই তৌফিক ঘুরে তাকায়। রেদোয়ানকে দেখে চমকে উঠে সে।

রেদোয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল “কেমন লাগছে মিস্টার তৌফিক খুব তো শখ নারী পাচার করার। তা মিস্টার তৌফিক এখানেই যদি মেরে ফেলি তোকে। কেমন লাগবে? বল বল”

শাওন চিৎকার করে তৌফিক সামনে এসে বলল “কি হলো তোর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কেন এখন। কথা বল আমরাও শুনি তোর কথা।”

তৌফিক শাওনের পাশে থাকা সেই মেয়ে দুটিকে দেখতে পায়। তৌফিক রেদোয়ানের পায়ে নিজের পা দিয়ে আঘাত করে দৌড়ে সামনে থাকা একটা মেয়ের মাথায় বন্দুক ধরে। তৌফিকের এমন কান্ডে হো হো করে হেসে দেয় শাওন। শাওনের হাসি দেখে তৌফিক হতভম্ব হয়ে যায়।

শাওন হাসতে হাসতেই হঠাৎ শক্ত হয়ে দাড়িয়ে পরে। চোখমুখে অসম্ভব গম্ভীর ভাব এনে কড়া গলায় বলে উঠে “তুই খুব বোকা রে তৌফিক। তুই জেনে শুনে মরতে এসেছিস। তুই হয় তো ভুলে গিয়েছিস তুই কারসঙ্গে লাগতে এসেছিস।”

তৌফিক আর শাওনের কথার মাঝেই শাওনের একটা লোক তৌফিকে ধাক্কা দিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে যায়। তখনই শাওন তৌফিকের কলার ধরে ফেলে। শাওন একের পর এক ঘুসি মারতে লাগে তৌফিককে। শাওনের মার খেয়ে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পরে তৌফিক। শাওন একটা বডিগার্ডের দিকে তৌফিককে ছুড়ে বলল “ওকে আমাদের গোডাউনে নিয়ে যাহ। আজ মুড নেই ওকে মারার কাল দেখছি ওকে। মেয়ে নিয়ে খেলা ওকে বুঝিয়ে দিবো।”

তৌফিকের থেকে চোখ সরিয়ে শাওন রেদোয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল “রেদোয়ান তুই মেয়েগুলোকে সেফ জায়গায় দিয়ে আয়। আমি বাসায় যাচ্ছি।”

বলে পিছু ঘুরতে নিবে তখনই

চলবে……

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে