#কেয়ারিং_হাসবেন্ড
[পর্ব – ১৩]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
নেহা দরজা খুলে দেখে দুইজন অচেনা মানুষ তাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটা বয়স্ক লোক আর একটা মেয়ে। নেহা কাওকেই চিনতে পারছেনা কারা এরা?
নেহা বয়স্ক লোককে বলল — আপনাদের ঠিক চিনতে পারলামনা! কারো খোঁজ করছেন নাকি?
— সবুজ আছে বাসায়?
— জ্বী। উনি রুমে আছে। আপনারা কি ওনার কাছে আসছেন? আপনার কি সবুজের আত্মিয়?
— হ্যাঁ মা। তুমি হয়তো এই বাসায় নতুন তাই আমাদের চিনতে পারছোনা।
— ভিতরে এসে বসুন আমি সবুজকে ডেকে দিচ্ছি। উনি হয়তো এখনো ঘুমিয়ে আছে। আপনার ভিতরে এসে বসুন।
— ওহ আচ্ছা।
— ভিতরে আসুন আমি ওনাকে ডেকে দিচ্ছি।
তারপর হেলাল সাহেব বাসার ভিতরে যেতে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে নীলা দাঁড়িয়ে আছে। আর তার চোখের পানি টলমল করছে। আর বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে।
হেলাল সাহেব নীলার দিকে এগিয়ে এসে বলল — ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভিতরে চলে আয়।
— হুম।
নীলা আর হেলাল সাহেব ভিতরে গিয়ে বসে। নীলা বাড়ির চারো দিকে তাকিয়ে দেখি বাসা ঠিক তেমনি আছে। কোনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি।
এই দিকে নেহা সবুজের রুমে গিয়ে দেখে সবুজ এখনো ঘুমিয়ে আছে। নেহা সবুজকে ডাক দিয়ে তুলে বলল — আপনার সাথে দুইজন দেখা করতে আসছে।
— কারা?
— চিনিনা আমি একটা মেয়ে আরেকটা বয়স্ক লোক।বলল আপনার নাকি আত্মিয় হয়।
সবুজ বুঝতে পারছেনা কারা হতে পারে। সবুজ বিছানা থেকে নেমে নিচের দিকে চলে যেতে থাকে। সবুজ শোফার সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে যায়। সবুজকে দেখে নীলা আর তার বাবাও দাঁড়িয়ে যায়। সবুজ ধীর পায়ে নীলার বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — বাবা আপনারা এতো সকালে আমার বাসায় কোনো সমস্যা হইছে নাকি?
— না বাবা আসলে নীলা তোমার সাথে দেখা করতে চাইছে। তাই চলে আসলাম সকাল সকাল।
এই দিকে নেহা নীলার নাম শুনে বুঝতে পারে এরা আসলে কারা। এর মধ্যে আসফা আর সবুজের আব্বুও চলে আসে। সবুজের আব্বু নীলাদের দেখে বলল — আপনারা এখানে কেনো এসেছেন? আর কোন মিথ্যে অপবাদ দেওয়া বাকি আছে?
হেলাল সাহেব মাথা নিচু করে বলল — বেয়াই সাহেব।
— বেয়াই বলে ডাকবেন না। আপনাদের সাথে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই। আপনাদের মিথ্যে অপবাদ এর জন্য আমার ছেলেকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। আবার কি জন্য আসলেন? আবার কি নতুন কোনো নাটক সাজানো বাকি আছে নাকি?
সবুজ বলল – আব্বু দাড়ান একটু। আগে শুনুন ওনারা কেন আসছে। বলুন বাবা।
— আসলে বাবা নীলা তার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছে তোমার কাছে। ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। ও আজ দুই দিন ধরে কান্না করেই যাচ্ছে। বাবা হয়ে তো মেয়ের এমন অবস্থা সহ্য করতে পারিনা। তাই নীলাকে নিয়ে চলে আসলাম।
এবার নীলা সবুজের দিকে এগিয়ে এসে সবুজের পায়ে পড়ে কান্না করতে থাকে। সবুজের পা ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।
সবুজ বলল — কি করছেন এসব? ছাড়ুন। এমন পাগলামি করার কি আছে?
— না আগে বলো আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ? আমাকে ক্ষমা না করলে আমি তোমার পা ছাড়বোনা।
— আপনাকে তো আমি অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। এখন আর ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। উঠুন এবার।
নীলা সবুজের পা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল — সবুজ আমি তোমার সাথে খুব খারাপ কাজ করছি। তোমার সাথে অন্যায়ের সাস্থি আমি পেয়ে গেছি। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও।
— আর কিছু বলার আছে?
— তুমি কি এখনো আমার উপরে রেগে আছো সবুজ?
— আপনার সাথে রাগ করার তো কোনো মানেই হয়না। সবার উপর রাগ করতে হয় না। অভিমান করতে হয় না। রাগ অভিমান সেই মানুষটার উপরই করা উচিত যে মানুষটা রাগ অভিমানের মূল্য দিবে। আর আপনি তো আমার কেউনা তাহলে আপনার উপরে রাগ করে কেন থাকবো আমি?
— সবুজ আমি সবাইকে মিথ্যে বলছি তোমার ব্যপারে। আমি যার জন্য তোমাকে সব সময় অবহেলা করছি সে মানুষ টা আমাকে ধোকা দিয়েছে। আমি তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি তখন। এখন বুঝতে পারছি আমি কতো বড় ভুল করছি। একটা ভুল মানুষের জন্য আমি আসল ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। দিনের পর দিন তোমাকে আমি শুধুই নিজের প্রয়োজনে নিজের জন্য ব্যবহার করছি।
— এসব বলার জন্য কি এখানে এসেছেন আপনি?
— আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। জানি এই অন্যায়ের ক্ষমা নেই তাও আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
— আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তবে কিছু কথা না বললেই নয়৷ আপনি হয়তো জানেনা আপনার জন্য আমাকে কতটা কষ্ট পেতে হয়েছে। কতদিন না খেয়ে ছিলাম। আপনি সব সময় আমার সাথে খারাপ আচরণ করতেন আমি তখনও কিছুই বলতাম না। নিজের কষ্ট গুলো নিজের মধ্যেই রাখতাম। কখনো আপনার কোনো কাজে বাধা দিতাম না। আপনি রাত যেগে অন্যকারো সাথে ফোনে বিজি থাকতেন। আপনি কি মনে করতেন আমি ঘুমিয়ে থাকতাম? ভুল জানতেন। আমি রাত যেগে অনেক কান্না করছি তাও আপনাকে কিছুই বলিনি। রাতের পর রাত বোবা কান্না করছি। কখনো আমার কান্নার শব্দ আপনার কান অব্দি পৌছাতে দেয়নি। নিজের সব কষ্ট নিজের বুকে চাপা দিয়ে রেখেছি। কখনো বুঝতে দেয়নি আমার খুব কষ্ট হয় তোমার এমন আচরণে। ভাবতাম আর নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিতাম যে। একদিন হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। একদিন আপনিও আমাকে ভালোবাসবেন। আমার ভালোবাসা বুঝতে পারবেন। কিন্তু আমার সব ভাবনা সেদিন ভুল প্রমাণিত হলো যেদিন আপনি আমার হাতে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দিলেন। তখন আমার চাপা কান্না কেউ শুনতে পায়নি। একা একা অনেক কান্না করছি। আমি ভাবছিলাম তুমিই একটা সন্তানের জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেলে। তখন নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিতাম যে আমার জন্য কেন তুমি মা হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে? আমি চাইতাম তুমি মা হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করো। কিন্তু আমি বুঝতে পারনি তুমি আমার জন্য এমন একটা মিথ্যে নাটক সাজাবে।
সবুজ এসব বলছে আর তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। সবুজের কথা শুনে নেহার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে। কিন্তু নেহা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। কোনো কথা বলছেনা নেহা।
নীলা সবুজের সামনে গিয়ে বলল — আমি তোমার ভালোবাসা কখনো অনুভব করতে পারিনি। কারণ আমি কারোর মিথ্যে ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম। যখন বুঝতে পারি তখন অনেক দেরি হয়ে গেলো। আমি তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু কোন মুখে তোমার সামনে আসবো সেটা বুঝতে পারছিলাম না। তোমার সাথে আমি যে অন্যায় করছি তোমার সামনে আসার কোনো সাহস আমার ছিলনা। তবে একটা বিশ্বাস ছিলো তুমি আমাকে এখনও ভালোবাসো।
নীলার মুখে এই কথা শুনে সবুজ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — হ্যাঁ বাসতাম। তবে এখন আর বাসিনা। আপনার কথা শুনলেও নিজের উপরে ঘৃণা চলে আসে। আমার আর ভালো লাগছেনা আপনি চলে যান প্লিজ।
— হুম চলেই যাবো। একটা কথা বলব?
— বলুন।
— সবুজ আমি তোমাকে ভালোবাসি। সত্যিই অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
— হাহাহা। দেখুন আপনার মুখে ভালোবাসার কথা মানায় না। ভালোবাসা কি সেটা তো আপনি কখনো বুঝতেই পারেননি।
— সবুজ আমাকে প্লিজ তোমার বাসার একটা কোণে যায়গা দিবে? আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। আমি আমার সব ভালোবাসা তোমাকে বিলিয়ে দিতে চাই। আমার করা আগের ভুলের জন্য আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমি আর তোমাকে হারাতে চাইনা সবুজ। আমাকে কি আর একটি বার সুযোগ করে দিবে তোমাকে ভালোবাসার?
চলবে??