#কেয়ারিং_হাসবেন্ড
[পর্ব- ১২]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
নীলার এমন অবস্থা দেখে নীলার আব্বু বলল — আগে আমি সবুজের সাথে কথা বলব। তারপর কি করা যায় দেখি।
— আচ্ছা।
অন্যদিকে সবুজ নেহাকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেলো। নেহা সবুজকে বলল — মাইসাকে গোসল করানোর সময় হয়ে আসছে। আমি ওঁকে গোসল করিয়ে নিয়ে আসি।
— তোমার যেতে হবেনা। আমার মেয়েকে আমিই গোসল করিয়ে দেবো।
এই কথা বলে সবুজ মাইসাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমের ভিতর চলে গেলো। আর সবুজ মাইসাকে গোসল করিয়ে দিয়ে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
নেহা সবুজকে বলল — আপনি কিন্তু এসব একটু বেশিই করছেন। এসব তো আমি করতেই পারি।
— বলছিনা আজ থেকে তোমার কোনো কাজ করার দরকার নেই। সব আমি সামলে নেবো।
— আচ্ছা আপনি একা পারবেন না আসফা কে বলি এখানে আসতে। ওর তো পরিক্ষাও শেষ।
— ঠিক আছে তোমার ইচ্ছে। আমাকে বাহিরে যেতে হবে। মাইসার তো দুধ শেষ হয়ে গেছে। ওর জন্য দুধ নিয়ে আসি। আর বাজার ও করতে হবে।
— আচ্ছা। তাড়াতাড়ি আসবেন।
— ঠিক আছে সাবধানে থাকবে কেমন?
এই কথা বলে সবুজ নেহার কপালে একটা চুমু দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে বাজারে চলে গেলো।
এই দিকে নীলার বাবা সবুজের খোঁজ করার জন্য সবুজের অফিসে চলে গেলো। নীলার বাবা অফিসের ভিতরে ঘুরাঘুরি করতে দেখে অফিসের একজন লোক বলল — আংকেল আপনি কি কাওকে চাচ্ছেন?
— হ্যাঁ বাবা, এখানে কি সবুজ নামের কেউ থাকে?
— হুম থাকে কেন কি হইছে?
— তেমন কিছুনা। সবুজ কোথায় বাবা?
— সবুজ তো আজ আসেনি। হয়তো ছুটিতে আছে। কাল আসবে।
— ওহ আচ্ছা ঠিক আছে আমি কাল আসবো।
এই কথা বলে অফিস থেকে বেরিয়ে চলে গেলো নীলার বাবা।
অন্যদিকে সবুজ বাজার শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেলো। রাত ৮টা বেজে গেলো। রাস্তায় কোনো গাড়ি না পেয়ে সবুজ হেটেই রওনা দিলো। হেটে হেটে যেতে যেতে সবুজের পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সবুজ বাসায় পৌছে গেলো। বাজার গুলো রান্না ঘরে রেখে সবুজ নিজের রুমে চলে গেলো।
নেহা সবুজকে বলল — এতো দেরি হলো কেনো আর আপনার এই অবস্থা কেন?
— আসলে রাস্তায় কোনো গাড়ি ছিলনা তাই।
ওহ আচ্ছা হাত মুখ ধুয়ে আসুন।
সবুজ হাত মুখ ধুয়ে এসে নেহার পাশে বসলো। এমন সময় কেউ এসে সবুজের চোখ ধরে বলল — কে আমি বলেন তো?
— আসফা নাকি?
— আপনি আমাকে কি করে চিনলেন?
— আমার তো মাত্র একটা মিষ্টি শালী। তাকে না চিনলে কাকে ছিনবো?
— আমার কিউট দুলাভাই। তা কেমন আছেন আপনি?
— এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। তুমি কেমন আছো?
— আমিও ভালো আছি।
— আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
এই কথা বলে সবুজ ওয়াশরুমের ভিতর চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সবুজ নেহার কপালে একটা চুমু খেয়ে অফিসে চলে যায়।
এইদিকে নীলার আব্বু অফিসে এসে সবুজের খোঁজ করতে থাকে। একজন এসে বলল — আপনি কাকে চান?
— সবুজ কি আজ অফিসে আসছে?
— হুম আসছে। আপনি কে?
— আপনি আমাকে চিনবেন না। আপনি সবুজকে বলেন যে ওনার কাছে হেলাল নামের একজন দেখা করতে আসছে।
— ঠিক আছে আপনি এখানে বসেন।
— আচ্ছা।
তারপর লোকটা সবুজের কাছে গিয়ে বলল — স্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে আসছে।
— কে আসছে?
— নাম তো বলল হেলাল।
— হেলাল? বয়স্ক?
— জ্বী স্যার।
সবুজ তাড়াতাড়ি করে উঠে চলে গেলো। সবুজ হেলাল সাহেবের সামনে গিয়ে বলল — বাবা আপনি?
— বাবা তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
— কথা পরে হবে আপনি আগে আমার সাথে চলুন।
সবুজ হেলাল সাহেবকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো। তারপর দুজনেই খাবার শেষ করে বসে থাকে।
সবুজ বলল — বাবা কি বলবেন? আর কিছু বলার থাকলে আমাকে তো একটা ফোন করতে পারতেন আমি চলে যেতাম আপনি কেন এতো কষ্ট করে আসতে গেলেন?
— সমস্যা নাই বাবা। তোমাকে যে কথা বলার জন্য আশা। আসলে বাবা আমি খুব দুঃখিত। আমি না যেনে তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করছি পারলে আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয়ো।
— বাবা এসব কি বলছেন? আপনি আমার গুরুজন। আপনি আমার কাছে ক্ষমা চাইলে আমার পাপ হবে। আর আপনার উপরে আমার কোনো রাগ নেই। বাসার সবাই কেমন আছে? মা রিয়া ওরা কেমন আছে?
— সবাই ভালো আছে।
— ওহ আচ্ছা। আর কিছু খাবেন আপনি?
— না বাবা। আচ্ছা তোমরা কি আগের বাসায় আছো নাকি বাসা চেঞ্জ করছো?
— না বাবা আগের বাসায় আছি কেন?
— এমনি।
— ওহ।
— আচ্ছা বাবা এখন আমি উঠি। বাসায় যেতে হবে আমাকে।
— চলুন আপনাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসি আমি।
— লাগবেনা আমি একাই যেতে পারবো।
— আরে চলুন তো আমি আপনাকে দিয়ে আসি বাসায়।
সবুজ অফিসের গাড়ি নিয়ে হেলাল সাহেবকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দেয়।
হেলাল সাহেব বলল — বাবা অনেক দিন পরে আসলে বাসা থেকে ঘুরে যাও একটু।
— ধন্যবাদ বাবা। আসলে আমার অফিসে কাজ আছে। আসি আমি ভালো থাকবেন।
এই কথা বলে সবুজ অফিসের দিকে চলে যায়। আর হেলাল সাহেব বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে কলিং বেলে চাপ দিতেই নেহার আম্মু এসে দরজা খুলে দিয়ে বলল — জামাইয়ের সাথে কি দেখা হইছে?
— হুম।
এই কথা বলে হেলাল সাহেব সোফায় গিয়ে বসে। এর মধ্যে নীলা আর রিয়া চলে আসে।
নীলা তার বাবার কাছে এসে বলল — আব্বু সবুজের সাথে দেখা হইছে?
— হুম।
— সবুজ কি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে?
— না। সবুজের মতো ছেলে হয়না। ও আমাকে দেখেই অনেক খুশি হয়ে গেলো।
তারপর হেলাল সাহেব সব ঘটনা খুলে বলল নীলাদের কাছে। হেলাল সাহেবের সব কথা শুনে নীলা বলল — বাবা আমি সবুজের সাথে কথা বলব। আমাকে নিয়ে চলুন ওর কাছে। আমি ওর কাছে ক্ষমা চাইবো।
— আচ্ছা কাল নিয়ে যাবো।
অন্যদিকে সবুজ অফিসের কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে গেলো। বাসায় গিয়ে সবুজ নিজের রুমে গিয়ে দেখে আসফা আর নেহা বসে বসে গল্প করছে আর মাইসা ঘুমচ্ছে।
আসফা সবুজকে দেখেই বলল — দুলাভাই আমার জন্য কি এনেছেন?
— সরি শালিকা। কিছুই আনতে পারিনি। আসলে খুব তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে আসলাম তাই কিছু কিনতে পারিনি।
সবুজের কথা শুনে মাইসা ঘুম থেকে উঠে গেলো। সবুজ মাইসাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল — ঘুম ভেঙে গেছে আম্মু?
— হুম আমার জন্য চকলেট এনেছো?
— হুম এনেছি। এই নাও।
সবুজ নিজের পকেট থেকে চকলেট বার করে মাইসার হাতে দিতেই মাইসা অনেক খুশি হয়ে গেলো আর সবুজের গালে পাপ্পি দিতে থাকে।
আসফা বলল — বাহ দুলাভাই মেয়ের জন্য ঠিকই নিয়ে আসলেন আর শালীর দিকে কোনো নজর নাই। আপনার সাথে কথা নেই আমি রাগ করছি।
— আচ্ছা।
— আবার আচ্ছা বলে। আপনি খুব পঁচা দুলাভাই।
সবুজ নিজের পকেট থেকে কিটক্যাট চকলেট বার করে আসফার দিকে এগিয়ে দিতেই আসফা সবুজের হাত থেকে চকলেট নিয়ে বলল — আপনি সত্যি খুব ভালো দুলাভাই।
— হুম দিলে সবাই ভালো।
এই কথা বলে সবাই খিলখিল করে হেসে দিলো। রাতের খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই।
সকালে নেহা সবার আগে ঘুম থেকে উঠে রান্না করতে চলে যায়। নেহা রান্না করছে এমন সময় দরজার কলিং বেলের শব্দ শুনে নেহা দরজা খুলতে চলে যায়। নেহা দরজা খুলে দেখে একটা মেয়ে আরেকটা বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে আছে।
চলবে?