#কেয়ারিং_হাসবেন্ড
[পর্ব — ১১]
লেখক — শহীদ উল্লাহ সবুজ
এই দিকে নীলা বাসায় গিয়ে কান্না করতে থাকে। নীলার বাবা নীলার কান্না দেখে তার দিকে এগিয়ে আসে।
নীলার বাবা নীলাকে বলল — কিরে মা কি হয়েছে তোর? তুই এই ভাবে কান্না করছিস কেন? কি হয়েছে তোর?
নীলা তার বাবার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে কান্না করতেই থাকে। নীলার বাবা এবার রিয়াকে বলল — কিরে নীলা বাহিরে থেকে এসেই এই ভাবে কান্না করছে কেন?
রিয়া বলল — আপুর সাথে সবুজ ভাইয়ার দেখা হইছে। দেখা হওয়ার পর থেকেই আপু কান্না করেই যাচ্ছে।
— নীলা তুই ওই ছেলের জন্য কান্না করছিস কেন? যে ছেলের জন্য আজ তোর এই অবস্থা তার জন্য তুই কান্না করছিস?
রিয়া বলল — আব্বু আমিও আপুকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু আপু কান্না করেই যাচ্ছে। ওই ছেলেটা তো আবার বিয়ে করে দিব্বি সুখে আছে। আর আমার আপুকে ঠকাল। ও কোনো দিন ও সুখী হতে পারবেনা আমার আপুকে কাঁদিয়ে।
নীলার বাবা বলল — হুম। বিনা কারণে আমার মেয়েকে ডিভোর্স দিলো। ছেলেটাকে আমি অনেক ভালো জানতাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি এই ছেলের এমন সভাব। আমার তো মনে হচ্ছে ওর চরিত্রে সমস্যা আছে।
নীলা এবার বলল — চুপ করো তোমরা প্লিজ।
— আপু তুই এখনো ওর হয়ে কথা বলছিস? যে তোর জীবন নষ্ট করে দিয়েছে তার হয়ে তুই এখনো কথা বলছিস?
নীলা এবার তার বাবার কাছে গিয়ে বলল — আব্বু আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিয় প্লিজ।
— কিসের ক্ষমা? আর তুই কেন ক্ষমা চাইছিস?
— আব্বু আমি তোমাদের ওই দিন মিথ্যা কথা বলেছি। আসলে সবুজ আমাকে ডিভোর্স দেয়নি। আমি সবুজকে ডিভোর্স দিয়েছিলাম ভুয়া রিপোর্ট দেখিয়ে।
— মানে কি?
আসলে আমি সবুজকে মিথ্যা একটা অপবাদ দিয়ে ওর সাথে সব শেষ করে দিয়েছি। আর আমি সবুজকে জাল রিপোর্ট দেখিয়ে বলছি ও বাবা হতে অক্ষম তাই আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে তোমাদের কাছে এসে মিথ্যা বলছি যে সবুজ আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে।
নীলার কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে গেলো। নীলার বাবা বলল — তুই এমন করলি কেন?
— আব্বু একটা ছেলের সাথে আমার রিলেশন ছিল। আমি ওঁকে খুব ভালোবাসতাম কিন্তু ও আমাকে ঠকাল। সবুজ আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু আমি ওর ভালোবাসার মূল্য কোনো দিন দেইনি। ওর ভালোবাসাটা বুঝতেও পারিনি। সব সময় ওঁকে কষ্ট দিতাম। কিন্তু ও কোনো দিন আমার সাথে রাগ দেখিয়ে একটা কথাও বলেনি। কখনো কোনো কিছু নিয়ে প্রশ্ন ও করেনি।
— ছেলেটার কথা তো তুই আমাকে আগে বলিস নি। এখন এই ছেলে কই থেকে আসলো?
— আব্বু ছেলেটার নাম আবির । বিয়ের আগে থেকে আমাদের রিলেশন ছিল। ওর কোন জব ছিলনা বলে আমি তোমার কাছে ওর কথা বলতে পারিনি। তাই তোমার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করছি। বিয়ের পরেও আমি আবিরের সাথে সব সময় কথা বলতাম।
— আবির এখন কোথায়?
— ও অন্য কাওকে বিয়ে করে ফেলছে। আমি ওর জন্য সবুজকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু যার জন্য আমি এতো কিছু করলাম সেই আমার সাথে বেঈমানী করছে। আমাকে আজেবাজে কথা বলছে।
— তোর কোন কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি তুই আমাকে ক্লিয়ার করে সব বল।
তাহলে শোনো।
ফ্ল্যাশব্যাক
_____________________
আমি সবুজের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে চলে গেলাম আবিরের কাছে। আমি বাসা থেকে ফোন দিয়ে আবির কে একটা ঠিকানায় আসতে বললাম। সেখানে গিয়ে আবিরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। আবির অনেক্ষন পরে আসে।
আবির এসে বলল — কি হয়েছে? এই ভাবে জরুরি তলব কিসের?
— আবির আমি সবুজের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে চলে আসছি। ওঁকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিছি। চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। তারপর আমি তোমাকে নিয়ে আমার বাসায় চলে যাবো। আমরা নতুন করে আমাদের জীবন শুরু করবো। আমাদের মাঝে আর কোনো বাধা নেই।
— কিসের বিয়ে?
— কিসের বিয়ে মানে কি? তুমি না বলছিলে সবুজের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করলে তুমি আমাকে বিয়ে করবে? এখন কি সব ভুলে গেলে?
— বলছিলাম নাকি এই কথা? ঠিক মনে করতে পারছিনা। আর বলে থাকলেও সেসব ভুলে যাও। ওই সব অতীত ছিলো।
— মানে কি বলতে চাইছ তুমি আবির?
— সোজা কথা বুঝতে পারছো না? আমি বলছি আগে কি বলছি ভুলে যাও। আর হ্যাঁ আমি যদি তোমাকে বিয়ে করি এমন কি গ্যারান্টি আছে যে তুমি সবুজের মতো আমাকেও ঠকাবে না? আমার সাথে বিয়ের কিছু দিন পরে তুমি আবার আমার সাথে সম্পর্ক শেষ করে অন্যকারো কাছে চলে যাবেনা তার গ্যারান্টি কি আছে?
— কি বলছো এসব তুমি আবির? আমি তোমাকেই ভালোবাসি শুধু। আমি সারাজীবন তোমার সাথে থাকতে চাই।
— হাস্যকর ব্যপার। যে মেয়ে তার স্বামীকে রেখে অন্য পুরুষের কাছে চলে আসে তার মুখে এসব মানায় না। আর হ্যাঁ শোনো আমি বিবাহিত। আমি অনেক আগেই বিয়ে করছি আর আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট।
— কিহ?
— বলছি আমি বিবাহিত। আমার স্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী।
এই কথা বলতেই নীলা আবিরের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আবির ও সাথে সাথে নীলার গালে থাপ্পড় মেরে দিয়ে বলল — তোর এতো বড় সাহস তুই আমার গায়ে হাত তুলিস। আরে তুই কি করে ভাবলি আমি তোকে বিয়ে করব? আমার কি মাথা খারাপ যে আমি অন্যের সাথে রাত কাটানো মেয়েকে বিয়ে করবো? আরে তুই তো একটা ন*ষ্টা মেয়ে। যে মেয়ে নিজের স্বামী রেখে অন্যের সাথে সম্পর্কে থাকে সে মেয়ে কখনো ভালো হতে পারেনা।
— ছিহ আবির আমি ভাবতেই পারিনি তুমি আমার সাথে এমন ব্যবহার করবে। আমি যা করছি সব তো তোমার জন্য করছি। আর তুমিই আজ আমাকে এসব বলছ? তুমি আমাকে ঠকালে আবির।
— হাহা আর তুই যে একটা সহজ সরল ছেলেকে দিনের পর দিন ঠকিয়ে আসলি সেটা কি ছিলো?
— আমি তো এসব তোমার জন্য করছি। আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। তোমার সাথে থাকার জন্য এসব করছি। এখন মনে হচ্ছে আমি সত্যিই ভুল করছি। আমি তোমার জন্য একটা ছেলেকে অবহেলা করছি সব সময়।
— এখন বায় আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না। আজকের পর থেকে না আমি তোকে চিনি আর না তুই আমাকে চিনিস। আর শুন কিছু দিন পরেই আমি বাবা হচ্ছি গুড বায়।
এই কথা বলে আবির চলে গেলো। আর নেহা অঝোরে কান্না করতে থাকে ওখানে বসে বসে। আবির যাওয়ার সময় একটি বার ও পিছনে ফিরে তাকালো না।
এবার বর্তমানে ফিরে আসি,,,
নীলা এসব বলছে আর কান্না করতে থাকে।
নীলার বাবা নীলাকে বলল ছিহ আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে যে তুই আমার মেয়ে।
— আব্বু,,
নীলা আব্বু বলতেই নীলার বাবা নীলার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। আর বলতে থাকে– তুই তোর এই মুখে আমাকে আর আব্বু বলে ডাকবিনা। তুই কি জানিস তোর জন্য আমি সবুজকে কতো অপমান করছি? তোর জন্য আমি সবুজকে বলছি তোকে আমরা অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিছি। ছেলেটা এসব শুনে সেদিন অনেক কান্না করছে আমার সামনে।
— মানে?
তাহলে শুন।
ফ্ল্যাশব্যাক
__________________
সবুজ তোর খোঁজ নিতে এসেছিলো আমার কাছে আর আমি ওঁকে অপমান করছি।
সবুজ নীলার বাবাকে বলল — বাবা নীলা কেমন আছে?
— নীলা কেমন আছে সেটা জেনে তুমি কি করবে? আমার মেয়ে খুব ভালোই আছে।
— ওহ। নীলার সাথে কি আমার একটু কথা বলিয়ে দিতে পারবেন? আমি ওর সাথে একটু কথা বলতে চাই।
— না। আমি চাইনা আমার মেয়ে আর কোনো কষ্ট পাক। আজকের পর থেকে আমার মেয়ের সাথে কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেনা। তোমার মতো লম্পট কারেক্টার লেস ছেলে আমি আর দেখিনি। মনে হয় পরিবার থেকে কখনো ভালো শিক্ষা পাওনি। আমার মেয়েকে কষ্ট দিলে তুমি। তুমি কখনো সুখী হতে পারবেনা।
— বাবা আপনি আমাকে যা ইচ্ছে বলুন। তাও আমাকে একটি বার নীলার সাথে কথা বলিয়ে দেন প্লিজ আমি আপনার পায়ে পড়ছি বাবা। আমি শুধুই নীলার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
— আমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিছি অন্য যায়গায়। আমার মেয়ে সেখানে অনেক ভালো আছে। তুমি এখন আমার সামনে থেকে চলে যাও না হলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।
— আমি চলে যাচ্ছি। দোয়া করি ও সব সময় ভালো থাকুক। আপনিও ভালো থাকবেন। আর নিজের শরীরের যত্ন নিবেন।
এই কথা বলে সবুজ নিজের চোখের পানি মুছে ওখান থেকে চলে গেলো।
বর্তমান,,,,,
নীলার বাবা নীলাকে বলল — আমি ছেলেটাকে এতো কথা বললাম। তাও ছেলেটা আমার কোনো কথার প্রতিবাদ করে নাই। এমন ছেলে কয়জন পায়? আর তুই পেয়েও হারিয়ে ফেললি। তুই তো একটা অভাগী। তোর তো মরে যাওয়া উচিৎ।
নীলা এবার তার বাবার পায়ের উপরে পড়ে কান্না করতে করতে বলল — বাবা আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
— আমার কাছে ক্ষমা ছেয়ে কি হবে? যার সাথে তুই এমন অন্যায় করছিস তার কাছে গিয়ে ক্ষমা ছেয়ে নে।
— আব্বু সবুজকে আমার কাছে এনে দাওনা প্লিজ। আমি ওর পা ধরে ক্ষমা চাইব।
চলবে??