কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব-০৯

0
1460

#কেয়ারিং_হাসবেন্ড
[পর্ব – ৯]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

সবুজের প্রশ্নের উত্তরে ডাক্তার একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — ভয় পাওয়ার কিছু নেই। খুশির খবর আছে আপনাদের জন্য।

— কি খুশির খবর ডাক্তার সাহেব?

— আপনি বাবা হতে চলছেন। মিষ্টি খাওয়ান আমাদের।

ডাক্তারের মুখে এমন কথা শুনে সবুজ মোটেও খুশি হলোনা। বরং সবুজের মুখটা মলিন হয়ে গেলো। সবুজ কোনো কথা না বলে নেহার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ডাক্তার সবুজকে বলল — ওনার এখন বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে।

কিন্তু সবুজ কোনো কথাই বলছেনা। ডাক্তার বের হয়ে চলে গেলো। সবুজ নেহার দিকে সন্দেহের নজরে তাকিয়ে রইলো। যেখানে মেডিকেল রিপোর্ট বলছে সবুজ বাবা হতে অক্ষম সেখানে নেহা কি করে প্রেগন্যান্ট হতে পারে? তাহলে কি নেহা অন্য কারোর সাথে সম্পর্ক আছে? নেহাকি অন্য কারো সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত আছে? এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবুজের মনে। সবুজ কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছেনা। সবুজ মাইসাকে রেখে ছাদের উপরে চলে গেলো। আর সে এসবের জন্য নিজেকেই দায়ী করছে। আর নেহাকে মন থেকে ঘৃণা করতে শুরু করে। সবুজ ছাদের উপরে বসেই কান্না করতে থাকে আর ভাবতে থাকে — নেহা কি ভাবে পারলো আমাকে এই ভাবে ঠোকাতে? আমার ভালোবাসা কি কম ছিলো যে তাকে অন্য কারোর সাথে শারীরিক সম্পর্কে যেতে হলো? আমি তো নেহার কাছে সন্তান চাইনি। আমি তো মাইসাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসি। আমার তো আর কোন সন্তানের প্রয়োজন নেই। আমি তো মাইসাকে নিয়ে হ্যাপি ছিলাম। এসব ভাবছে আর কান্না করছে সবুজ। সবুজের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।

দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেলো। কিন্তু সবুজ এখনো ছাদের উপরেই বসে আছে। আর সে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। আজকের আকাশে কোনো চাঁদ নেই। চাঁদ বিহীন আকাশে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবুজ। একটু পরে নেহা সবুজকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদের উপরে চলে আসে। ছাদের উপরে এসে দেখে সবুজ একা বসে আছে। নেহা সবুজের কাছে গিয়ে বলল — কি হয়েছে আপনার আপনি এখানে একা বসে আছেন কেন? আর অন্যদিকে আমি আপনাকে পুরো বাড়িতে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলামনা।

— এমনি বসে আছি। ভালো লাগিছে না তাই। আর আমার এতো খোঁজ না নিলেও চলবে।

— মানে কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছেনা কি হয়েছে আপনার? আপনি এমন করছেন কেন?

— কিছুনা আমি একটু একা থাকতে চাই।

— কিছু তো একটা হইছে বলুন আমাকে।

— কিছুনা। মাইসা ঘুমিয়েছে?

— হুম।

— এবার তুমিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমি একটু পরে আসছি।

— আপনিও আসুন।

সবুজ এবার রাগী কন্ঠে নেহাকে ধমক দিয়ে বলল — যেতে বলছিনা আমি? এক কথা এতো বার বলতে হয় কেন? যাও এখান থেকে আমি একা থাকতে চাই। আমাকে আর ডিস্টার্ব করতে আসবেনা।

সবুজের এমন রাগী মুখ দেখে নেহা একটু ভয় পেয়ে গেলো। এতো ভয় পেলো যে নেহা কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে। নেহা মাথা নিচু করে সবুজের সামনে থেকে চলে যেতে থাকে।

সবুজের রাগের কারণ কি নেহা এখনো বুঝতে পারেনাই। কারণ নেহাকে এখনো বলা হয়নি নেহা যে প্রেগন্যান্ট। নেহা এবার নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অনেক রাত করে সবুজ রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সবুজ অফিসে চলে যায় নেহাকে না বলেই। নেহা ঘুম থেকে উঠে দেখে সবুজ নেই। নেহা বুঝতে পারে সবুজ অফিসে চলে গেছে। কিন্তু আজ প্রথম এমন হলো সবুজ নেহাকে না বলেই অফিসে চলে গেলো। নেহার মন খারাপ হয়ে গেলো। নেহা সবুজকে ফোন দিতে থাকে। আর সবুজ বার বার ফোন কেটে দেয়। সবুজ নেহাকে ইগ্নোর করতে শুরু করে দেয়। অফিসে কাজ শেষ করে সবুজ বাসায় ফিরে নেহার সাথে কোনো কথা না বলে মাইসার সাথে দুষ্টমি করতে থাকে। সবুজ নেহার উপরে রাগ করে থাকলেও সে মাইসার কোনো অযত্ন করেনা। নেহা সবুজের কাছে এসে বলল — সকালে না বলে অফিসে চলে গেলেন আমি কল দিলাম তাও রিসিভ করলেন না যে?

সবুজ নেহার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে মাইসাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকে।

নেহা আবার বলল — কাল থেকে আপনি আমাকে ইগ্নোর করে যাচ্ছেন অথচ বলছেন না কিছুই।

সবুজ এবার খাট থেকে নেমে বাহিরে চলে গেলো। সবুজের এমন আচরণে নেহা অনেক কষ্ট পেতে থাকে। সবুজ ছাদের উপরে গিয়ে বসে থাকে চুপচাপ হয়ে। সবুজের ও খুব খারাপ লাগছে নেহার সাথে এমন করে। কিন্তু যখন নেহা প্রেগন্যান্ট এই কথা মনে পড়ে তখনই সবুজের মনে নেহার জন্য রাগ বেড়ে যেতে থাকে। আজকে আর নেহা সবুজকে ডাকতে আসলোনা। সবুজও অনেক রাত করে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আগের দিনের মতো আজও সবুজ নেহাকে না বলেই অফিসে চলে যায়। লান্স টাইমে সবুজ না খেয়ে কাজ করছে। সবুজ কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে। যেনো নেহার কথা তার মনে না আসে। হঠাৎ করে সবুজের ফোন বেজে উঠলো। সবুজ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে নেহা কল দিয়েছে। সবুজ ফোন কেটে দিলো। নেহা বার বার কল দিতে থাকে। সবুজ বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করে বলল — এতবার ফোন দেওয়ার মানে কি? ফোন কেটে দিচ্ছি দেখতে পাচ্ছো না?

— এখন তো লান্স টাইম এখন কাজ করছেন খাবেন কখন?

— আমার খাওয়া নিয়ে কাওকে চিন্তা করতে হবেনা।

এই কথা বলে সবুজ ফোন কেটে দিলো। ঘটনাটা সবুজের পাশের লোকটা দেখতে পেলো। আসলে লোকটা সবুজের খুব ক্লোজ। সে সবুজের দিকে এগিয়ে এসে বলল — কি ব্যাপার সবুজ তোমাকে তো এর আগে এমন রাগারাগি করতে দেখিনি। কি হয়েছে?

— তেমন কিছুনা ভাই।

— কিছু তো একটা হইছে। আমার সাথে শেয়ার করতে পারো।

তারপর সবুজ সব কিছুই খুলে বলল। সবুজের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে লোকটা সবুজকে বলল — সবুজ আমার মনে হয় কি তুমি আরেকবার পরিক্ষা করে দেখতে পারো।

— ভাই দেখে কি হবে? যেখানে আমি নিজের চোখে আমার রিপোর্ট দেখছি। সেখানে আর কি বলার আছে?

— তাও আরেকবার নাহয় পরিক্ষা করে দেখো সমস্যা কি? দেখো তুমিও কষ্ট পাচ্ছো তোমার স্ত্রীও কষ্ট পাচ্ছে। রিপোর্ট আসার পরে তো সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

— আচ্ছা ঠিক আছে ভাই। অফিসের কাজ শেষ করেই যাবো।

অফিসের সব কাজ শেষ করে সবুজ চলে গেলো পরিক্ষা করার জন্য। সবুজ সকল পরিক্ষা দিয়ে বাসায় চলে গেলো। রিপোর্ট কাল আসবে।

এই দিকে নেহা সবুজের এমন পরিবর্তন দেখে কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলছে। নেহার এমন অবস্থা দেখে সবুজের ও খারাপ লাগতে থাকে। কিন্তু সে রিপোর্ট পাওয়ার আগে নেহার সাথে কথাও বলতে চায়না। সবুজ মাইসাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। নেহাও কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সবুজ অফিসে চলে যায়। অফিসের সেই লোক সবুজের কাছে এসে বলল — টেস্ট দিয়েছিলে?

— হুম ভাই দিয়েছি। বিকালে অফিসের কাজ শেষ করে রিপোর্ট আনতে যাবি।

— আচ্ছা ঠিক আছে কাজ কোরো তাহলে। আমারও অনেক কাজ পড়ে আছে।

— ঠিক আছে ভাই।

সবুজ আবার নিজের কাজে মনযোগ দিতে থাকে। অফিসের কাজ শেষ করে সবুজ হাসপাতালের দিকে চলে গেলো। হাসপাতালে গিয়ে সবুজ ডাক্তারের কাজে গিয়ে বলল — আনার রিপোর্ট কি রেডি হইছে?

— হুম হয়েছে।

এই কথা বলে ডাক্তার সবুজের দিকে রিপোর্ট এগিয়ে দিলো।

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে